তোকে চাই

তোকে চাই !! Part- 02

দেখতে দেখতে এসে গেলো সেই কাল বেলা ২৫ সেপ্টেম্বর….সকাল থেকেই সবার ব্যস্ততা শুরু।।সাজুগুজু করে কে কাকে হার মানাবে সেই চেষ্টা সবার।।আমিও আর বসে থাকবো কেন??লাল কাথাঁন শাড়ি,, হাত ভরা চুরি,, চোখে গাঢ় কাজল,, লম্বা রেশমি চুলগুলো খুলে দিয়ে তৈরি হয়ে নিলাম।।।আমার আপুরা তো রীতিমতো আটা ময়দার দোকান সেজে আছে।।তাদের একেক জনকে চিনতেও আমার ব্যাপক কষ্ট হয়েছে।।যায়হোক বর এলো,,,সাথে প্রায় ত্রিশজন।।এই ত্রিশজনের মধ্যে একটা মুখ দেখে আমার সব আপুরা রীতিমতো ক্রাশিত।।।আর সেই একজনই ছিলো শুভ্র ভাইয়া।।আমিও যে আড়চোখে তাকায়নি তা নয়।।সেই লেভেলের ক্রাশও খেয়েছিলাম কিন্তু বড় আপুদের জিনিসে চোখ দেওয়ার সাহসই হয় নি।।তাই প্রথম থেকেই ভাইয়া বলেই মেনে নিয়েছিলাম।।।মজার বিষয় হলো আজ আমি তারই বউ।।বরপক্ষের খাওয়া শেষ হলে,,মার সাথে দাড়িয়ে কথা বলছিলাম,,,হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠল,,,,,
ঃঅরি,,,,,

 

মা মনে হলো চমকে উঠলো।।পেছনে তাকিয়েই স্তব্ধ হয়ে গেলো,, তার চোখ যে ছলছল করছিলো তা বেশ বুঝতে পারছিলাম।।।কিন্তু কেনো তা কিছুতেই বুঝে ওঠতে পারছিলাম না।।তাই একবার মা তো আরেকবার মধ্যবয়স্ক লোকটির দিকে তাকাচ্ছিলাম,,,লোকটির চোখও ছলছল করছিলো।।।আমি আরো অবাক হলাম যখন দেখলাম মা লোকটিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদঁতে শুরু করলেন।।।আমিও স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি,,মাকে কখনো এভাবে কাদঁতে দেখি নি,,,আর সবচেয়ে বড় কথা লোকটি কে??এর আগে তো কখনো দেখি নি,,,আমি আর ভাবতে পারছিলাম না,,,ছোট্ট মাথায় হাজার প্রশ্নের স্তুপ নিয়ে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম,,,,মা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন,,,

মাঃ তুমি কেনো এমন করলে??বলো কেনো??এতটা ভালো হওয়ার কি দরকার ছিলো?? তোমাকে কতো খুজেঁছি আমি,জানো??

লোকটিঃ জানি তো,,(মার মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে)

মাঃ নাহ,,,জানো না তুমি,,,কিচ্ছু জানো না(হাউমাউ করে কাদঁতে কাদঁতে)কোথায় ছিলে তুমি বলো??উত্তর দাও,,,,২৮ টা বছর,,,,কম সময় নয় তো,,,এতো বছর পর ফিরেই বা কেনো এলে???কেনো??আমি আজ সব হিসেব নিবো তোমার থেকে,,,

লোকটিঃ আচ্ছা নিও।।আগে শান্ত হও সবাই দেখছে তো।।লক্ষী মেয়েরা এমন করে না।।।এখনও বাচ্চাই রয়ে গেলে অরি,,,,

 

লোকটির কথা শুনে আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম,, বলে কি??আমার ভাইয়ার বয়স ২৭,,, আপুর বয়স ২০,, আর আমার ১৭…..এতো বড় বড় ছেলেমেয়ের মাকে বাচ্চা বলে কেমনে,,, আজিব….কমনসেন্স টুটালি জিরো,,,হুহ।।।আচ্ছা এই লোকটা আম্মুর প্রাক্তন প্রেমিক নয় তো??এমা ছি ছি।।নিজের মাকে নিয়ে কিসব ভাবছি।।তাছাড়া আমার জানা মতে বাবা -মার লাভ মেরেজই ছিলো তাহলে উনার সাথে প্রেমই বা কখন করলেন।।।উফফফ,,,,আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে,,,,,আর লোকটি যেভাবে অরি অরি করছেন আর কিই বা ভাবা যেতে পারে??আমি শুধু নানুভাইকেই অরি নামে ডাকতে শুনেছি তারপর উনি।।।প্রশ্নগুলো নিয়ে যখন খিচুড়ি পাকাচ্ছিলাম তখনই বাবা সামনে এসে দাড়াঁলেন।।।আমার হাত-রীতিমতো ঠান্ডা হয়ে আসছিলো।।এটা যদি মার প্রোক্তন হয় তাহলে বাবা তো লঙ্কাকান্ড শুরু করে দিবেন।।ভয়ে তো আমার গলা শুকিয়ে কাঠ।মার সেদিকে খেয়ালই নেই।।কিন্তু লোকটি খেয়াল করলো,,, মাকে টেনে নিজের থেকে ছাড়িয়ে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন।।।আমি চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছি,,এখনই নিশ্চয় বাংলা ছবির মতো ফাইটিং শুরু হবে,,,, কিন্তু একি??কোনো শব্দই তো শোনা যাচ্ছে না,,,,চোখ পিটপিট করে খোলে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।।।বাবা লোকটিকে জড়িয়ে ধরে আছে।।আমি অবাকের সপ্তম আকাশ পাড়ি দিয়ে শান্ত হয়ে দাড়ালাম,,,সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল।।।নিজের বউয়ের প্রোক্তনকে বুকে জড়িয়ে নিবে এমন পুরুষ মানুষও দুনিয়ায় আছে জানতাম না।।আমার বাবার নাম অবশ্যই ইতিহাসের পাতায়,ছাপা উচিত।।হঠাৎ বাবার কথায় ভাবনায় ছেদ ঘটলো,,,

বাবাঃ রোদ মা??এটা তোমার ইকবাল মামু।।।
আমি চিনতে পারলাম না,,,কখনো শুনেছি বলেও মনে হয় না।।।ভদ্রতার খাতিরে বললাম,,, আসসালামু আলাইকুম মামু,,, ভালো আছেন??

ইকবাল মামুঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।।ভালো আছি মা,,তুমি কেমন আছো??

 

আমিঃ জি ভালো

মাঃ তুমি বিয়ে করো নি?মানে পরিবার??

ইকবালঃ আরে তোমার ভাবিও এসেছে,,,সাথে দুই ছেলেও(মুচকি হেসে)দাড়াও পরিচয় করিয়ে দেই।।

 

 

কিছুক্ষন পরই একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা,,,আর দুজন ছেলে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন।।।তারমধ্যে একজন ছিলেন শুভ্র ভাইয়া,,,,আমার বুঝতে বাকি রইলো না উনি মামুর ছেলে।।।মামু পরিচয় করিয়ে দিলেন,,,অভ্র, শুভ্র তার দুই ছেলে।।অভ্র ভাইয়া ব্যবসায় হাত দিয়েছে আর শুভ্র ভাইয়া অনার্স কমপ্লিট করছেন।।এবার ফাইনাল ইয়ার।।।মামানি তো মাকে দেখেই জড়িয়ে দড়লেন,,,মামু নাকি মামানিকে মার কথা রোজ বলতো,,,বোনটাকে বড্ড ভালোবাসেন তিনি।।।আমার নিজের গালেই চড় মারতে ইচ্ছা করছিলো,,ছি ছি,,,আমি না জানি কি কি ভাবছিলাম,,,,,,,


আজানের শব্দে বাস্তবে ফিরে এলাম।।।ঝটপট উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলাম,,,এতোক্ষণে খেয়াল হলো উনি রুমে নেই,,,হাজার হলেও স্বামী তো,,চিন্তা তো হয়ই।।কেমন যেনো অস্থির লাগছে,,,হঠাৎ মনে পড়লো,,উনি তো কাল রাতে ব্যালকনিতে গিয়েছিলেন,,, দৌড়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখলাম উনি ফ্লোরে পড়ে ঘুমুচ্ছেন,,,পাশে অসংখ্য সিগারেটের টুকরো,,,,বুকের ভেতরটাই কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো,,,,


#চলবে