তারে আমি চোখে দেখিনি

তারে আমি চোখে দেখিনি ! সিজনঃ-2 !! Part- 04

আজ ২০ বছর পর জেল থেকে বের হলো মাহির।তবে মনে কোন প্রশান্তি নেয়।এতোগুলো বছর পরিবার থেকে মায়ার থেকে দূরে থাকার পর আজ মাহির বাড়িতে ফিরছে।মনে সংকোচ বোধ হচ্ছে।ভাবছে, সেই মায়া কি আজও আগের মতো আছে? তার জন্য অপেক্ষা করছে? মাহির কখনো ভাবে নি আবার সে মায়ার কাছে ফিরে আসবে।কিন্তু ভাগ্য আবার মাহিরকে মায়ার কাছে ফিরিয়ে আনছে।মাহির মির্জা প্যালেসে এসে দরজায় বেল বাজালে কিছুক্ষণের মধ্যে মায়া এসে খুলে দেয়।মায়া সামনের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাই নি।এই মুহূর্তটা মায়া একদম স্তব্ধ হয়ে আছে।ভাবছে, সে কি স্বপ্ন দেখছে?

এই ২০ বছরে মাহিরের চেহারারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।বয়সের ছাপ স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে।আচ্ছা জাবৎ জীবন জেল হবার পরও মাহির কিভাবে আসবে।এ মায়ার চোখের ভুল নয়তো? মায়া চোখের ভুল ভেবে দরজাটা বন্ধ করতে যায়। কিন্তু পারে না।তার আগেই মাহির ভেতরে চলে আসে।তারপর মায়ার সামনাসামনি মুখ করে দাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ডাকে মায়াকে।

মাহিরঃ মায়া?

মাহিরের ডাক যেন মায়ার বুকে তীরের মতোন ঘাতছে।তাহলে এটা ভুল নয়। এ মাহির।মায়ার মাহির।এমন সময় মায়া কিছু বলতে যাবে পেছনের থেকে আয়াত মাম্মাম বলে ডাকতে ডাকতে এগিয়ে আসে।

আয়াত তো জানে না তার বাবা বেঁচে আছে।আর এই মুহূর্তে আয়াতের সামনে সত্যিটা আসতেও দেওয়া যাবে না।তাই তাড়াহুড়ো করে মায়া টেনে মাহিরকে নিয়ে তার রুমে বন্ধ করে রেখে আসে।আর আয়াত এসে তার মাম্মামকে বলে,

আয়াতঃ মাম্মাম ভার্সিটিতে যাবে না?

মায়া অনেকটা ঘাবড়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।এমন ঘাবড়ে থাকতে দেখে আয়াত তার মাম্মামের কাছে যানতে চায়।

আয়াতঃ কি হয়েছে মাম্মাম? তুমি কি অসুস্থ?

মায়া মাথাটা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে।বলে,

মায়াঃ আমার মাথাটা খুব ব্যাথা করছে আজ তুমি তোমার দাদুর সাথে ভার্সিটিতে যাও।কাল থেকে আমিও যাবো।

আয়াত যেতে চাই না।কিন্তু তার মাম্মামের অনেক জোড়াজুড়িতে রাজি হয়ে যায়।তারপর মায়াকে বিশ্রাম নিতে বলে ভার্সিটিতে চলে যায় আয়াত।

আয়াত চলে গেলে মায়া তার রুমের দরজাটা খোলে।দেখে মাহির বিছানার উপরে বসে আছে।মায়াকে দেখে উঠে দাড়ায় মাহির।ছলছল চোখে ধীর গতিতে হেঁটে মায়ার দিকে এগিয়ে এসে মাহির।তারপর মায়াকে ছুঁতে যাবে এমন সময় মায়া বাঁধা দেয়।

মায়াঃ ছোবেন না আমাকে আপনি!

মাহিরঃ মায়া!

মায়াঃ হ্যাঁ ছোবেন না।আপনি তো আমাকে বিয়ে করতে বলেছিলেন তাই না? এখন কেন ফিরে আসলেন বলুন? এই ২০ টা বছরে একটাবার আমার সাথে দেখাও করেন নি আপনি।

মাহিরঃ মায়া আমার কথাটা তো শোনো?

মায়াঃ কি শুনবো আপনার কথা? নিজেকে অনেক মহৎ মনে করেন তাই না? কেউ না জানুক এটাই সত্যি স্নিগ্ধাকে আপনি না আমি খুন করেছিলাম।

মায়া কথাটা বলার সাথেই মাহির মায়ার মুখটা চেপে ধরে।

মাহিরঃ আস্তে কথা বলো মায়া!

মায়া মুখ থেকে মাহিরের হাতটা সরিয়ে নেয়। তারপর আবার বলে,

মায়াঃ কেন আস্তে কথা বলবো? সবাই জানুক আপনি কতোটা মহান যে আমার অপরাধের শাস্তি নিজে পেয়েছেন এতোগুলা বছর ধরে।শুধু তাই নয় আমার মতো খুনির সাথে আপনি থাকবেন না বলে আমাকে বিয়ে করতে বলেছিলেন।এমন কি আমার সাথে একটাবার দেখাও করেন নি পর্যন্ত।

মায়া কথাগুলো বলার পর পাশ ফিরে দেখে বাড়িতে থাকা সকল সদস্যরা দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে।মাহির আর মায়ার মধ্যে হওয়া কথাগুলো শুনে নিয়েছে তারা।

রাইশা, মিরা, রাইসূল এগিয়ে আসে।মাহিরকে দেখে তারা সবাই অবাক।তাদের চোখে পানি।মাহিরের কাছে সবাই জানতে চাই সে কিভাবে জেল থেকে বেড়িয়ে আসলো।উত্তরে মাহির বলে,

মাহিরঃ হ্যাঁ, আমার জাবৎ জীবন জেল হয়েছিলো। কিন্তু এই দীর্ঘ ২০ বছরে আমার স্বভাব চরিত্র সবকিছুকে কেন্দ্রে রেখে আজ আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।একটা নতুন জীবন উপহার দিয়েছে। বলেছে, আবার নতুন ভাবে জীবনটাকে শুরু করতে।

কথাটা বলে মাহির মায়ার দিকে তাকালে মায়া পাশ ঘুরে চলে যায় মাহিরের সামনে থেকে।

ভার্সিটিতে,,,

সকাল থেকেই অপেক্ষা করছে লাবন্য কিভাবে আয়াত আর আয়াতের মাম্মামকে শায়েস্তা করবে ভেবে।লাবন্য তার চ্যালাপ্যালাদের বলে রেখেছে।ওরা আসতেই যেন ওদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে স্টোর রুমে নিয়ে গিয়ে বন্দী করে রাখা হয়।। একদিন বন্দী থাকলে ওদের সব দাপট আর মুখ কেলানি কর্থাবার্তা সব হারে হারে টের পাবে।

লাবন্যর কথা মতোন আয়াত ভার্সিটিতে ঢুকলেই চ্যালাপ্যালারা সব আয়াতের সামনে এসে হাজির।সবাই মাটিতে শুয়ে হাত জোড় করে অনুরোধ করে প্লিজ আমাদের ক্ষমা করে দিন ম্যাম।আপনি ক্ষমা না করলে আমাদের চাকরি থাকবে না।

আয়াত তাদের কাছে ব্যাপারটা খোলাখুলিভাবে জানতে চাইলে তারা বলে, কালকের ব্যাবহারের জন্য তাদের ম্যাম নেহা চৌধুরী তার মেয়েকে অনেক বড় শাস্তি দিয়েছে আর তাদের চাকরি থাকবে না সেটাও বলেছে।এখন যদি আয়াত গিয়ে নেহার সাথে কথা বলে তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

আয়াত জানতে চায় নেহা চৌধুরীকে কোথায় পাবে।আর তারা আয়াতকে স্টোর রুমের দিকে ইশারা করে।আয়াত স্টোর রুমের কাছে গেলেই তারা ধাক্কা দিয়ে আয়াতকে স্টোর রুমের মধ্যে ফেলে দেয় আর বাইরে থেকে দরজাটাই তালা ঝুলিয়ে দেয়।

আয়াত স্টোর রুমের মধ্যে ধপাস করে পরতেই কেউ একজন আয়াতকে ধরে বসে।অন্ধকারে তার মুখটাও ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না।আয়াত তার নাকের কাছে একটা পারফোমের ঘ্রান পায়।আর বুঝে ফেলে এটা কোনো মেয়ে না পরপুরুষ। আর বোঝামাত্রই এক ধাক্কা দিয়ে তাকে মেঝেতে ফেলে দিয়ে দরজার কাছে এসে দরজায় টাক দিতে থাকে আর বলে,

আয়াতঃ বাঁচা! কে আছো বাঁচাও!

চলবে,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *