00

তারা দুজন !! Part- 02

– আমার বয়ফ্রেন্ড আছে, এই বিয়েটা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

আফসারার কথা শুনে অর্কের মাথা প্যাঁচ লাগার জোগাড়। যদি বয়ফ্রেন্ডই থাকে তাহলে এই বিয়ের কি মানে হয়। নিজেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছে অর্ক। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে কিন্তু হয়ে উঠছে না। অর্ককে বিচলিত দেখে ধীর গলায় আফসারা বলে উঠে,
– বাবা আমার অমতে বিয়েটা দিয়েছেন, অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেও হয়ে উঠে নি।
– বিয়ের আগে কেনো বলো নি?? তোমার অমতে বিয়ে হচ্ছে! (উত্তেজিত হয়ে)
– অনেকবার বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাবার কারণে বলা হয়ে উঠে নি। আমাকে বাবা হুমকি দিয়েছিলো যদি আপনাকে বলি তাহলে আমি তার মরামুখ দেখবো। আমার সত্যি কিছু করার ছিলো না।
– তোমার বয়ফ্রেন্ড ও জানে?
– হুম জানে, ও এখন হসপিটালে রয়েছে। আমার ভাইয়ারা ওকে খুব ক্যালিয়েছে। আসলে আমরা পালানোর কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু ধরা পড়ে যাই। আর তারপর ভাইয়ারা অরিন্দমকে ক্যালিয়ে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে রেখেছে। আসলে আপনি জানেন ই আমার বাবা কত বড় পলিটিকাল নেতা৷
– অরিন্দম?
– হ্যা, ও হিন্দু। এটাই সবচেয়ে বড় ইস্যু, উপরে ও বেকার। মানে আমরা তো এখনো স্টুডেন্ট। পাশ করি নি। বাবাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি, বিশ্বাস করেন।

আফসারার কথা শুনে ভো চক্কর দিয়ে উঠলো অর্কের মাথা। বেছে বেছে শেষে কিনা এই মেয়েকে সিলেক্ট করেছে ওর বড় মা। নিজেকে কোনোমতে সামলে বললো,
– এখন তুমি কি চাও?
– পাশ করা অবদি আমাকে এ বাড়িতে থাকতে দিবেন? পাশ করে চাকরি পেয়ে গেলে আমি এ বাড়ি থেকে চলে যাবো। আমি অরিন্দমকে খুব ভালোবাসি, আমি জানি বাবা এখন আমাদের মানবে না। কিন্তু ও চাকরি পেয়ে গেলে আমরা এখান থেকে পালিয়ে যাবো।
– মানে কি?? এগুলো ফাযলামি নাকি?? ( অবাক হয়ে) আমি কি সমাজসেবা করতে বসছি?? মানে তোমার আর তোমার প্রেমিকের প্রেমমিলনে কি আমি প্রভাবক হিসেবে কাজ করবো?
-……
– আর আমি যতদূর জানি তুমি এখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে রাইট?
– জ্বী
– তাহলে পাশ করে চাকরি পেতে পেতে দুই থেকে আড়াই বছর, এই দুই বছর আমি তোমাকে আমার ঘরে কেনো রাখবো? আমাকে কি তোমার অনন্ত জলিল লাগে? নাকি জীবনটা তোমার সিনেমার মতো লাগে?? আমি তোমাকে আজকের দিন সময় দিবো। আমাকে ডিসিশন দিবা হয় আমার সাথে সারাজীবন থাকতে হবে তোমাকে নয় দুই ফ্যামিলিকে জানাবো, তারা মিলে যা সিদ্ধান্ত নিবে সেটা তোমাকে মেনে নিতে হবে।

এরই মাঝে দরজায় নক পরলে অর্ক নিচের দিকে রওনা দেয়। আফসারা ক্ষনিকের মধ্যে খানিকটা বিচলিত হয়ে পড়ে। এমন তো হবার কথা ছিলো না। এখনই কাউকে ফোন করা খুবই জরুরি, হিতে বিপরীত হওয়ার আগে। মিনিট পাঁচেক পর আফসারা নিচে আসে। রাশেদা বেগম ইতিমধ্যে চলে এসেছেন। আফসারাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্মিত হাসি দিয়ে বসতে বলেন। নাস্তার টেবিলে কম করে হলেও ২০ জন মানুষ। ওদের ডাইনিং টেবিলে বারোটা চেয়ার, কেউ টুল, সোফা যেখানে জায়গা পেয়েছে বসে গেছে। অর্কদের পরিবারটা জয়েন্ট ফ্যামিলি, আফসারা সহ মোট ১১জন পার্মানেন্ট মেম্বার। অর্কের বড় চাচা আনোয়ার সাহেব, বড়মা রাশেদা বেগম, ছোট চাচা দিলোয়ার সাহেব, ছোট মা নাজমা বেগম আর সাথে দিশা, অরনী, শেলী, চাচাতো ভাই দাউদ আর তার স্ত্রী প্রাপ্তি। আফসারাকে এতো বড় জয়েন্ট ফ্যামিলিতে বিয়ে দেওয়ার কারণ একটাই মেয়েটার ছেলেমানুষী যাতে একটু হলেও কমে। নাস্তার টেবিলে আফসারা শুধু অর্ককে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। অর্ককে খুবই স্বাভাবিক দেখাচ্ছে যেনো কিছুই হয় নি, অথচ এতো বড় বোম্ব ফাটালো আফাসারা। অর্কের জায়গায় অন্য কেউ হলে একটা হুলস্থুল কান্ড বাধিয়ে দিতো। নাস্তা শেষে আফসারাকে জোর করে অরনীর রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। ননদগুলো বড্ড পাকা, আফসারাকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কাল কি হয়েছে, না হয়েছে সব জিজ্ঞেস করতে লাগলো। দিশা বাদে সবাই আফসারার সমবয়সী, শুধু দিশার ই অনার্স কমপ্লিট এছাড়া বাকি তিনজনের একজন ইন্টার ফার্স্ট, একজন ইন্টার সেকেন্ড আর আরেকজন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে এ পড়ে। আফসারা এমন জেরার মধ্যে পড়ে খুব অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। কালরাতে সে যা করেছে সেটা এদের বললে এরা সব কয়টা ফিট খাবে। ননদের দল যাই জিজ্ঞেস করে না কেনো, আফসারা শুধু মুচকি হাসিতে উত্তর দেয়। বেশকিছুক্ষন পর প্রাপ্তি রুমে আসলে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আফসারা। আফসারার অনুনয়সূচক দৃষ্টি প্রাপ্তিকে বুঝিয়ে দেয় যে এখান থেকে তাকে বাঁচানোর আকুল আবেদন করছে আফসারা। হালকা কাশি দিয়ে বলে,
– অর্ক তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছে আফসারা, এখানে আড্ডা দিলে হবে? ওদিকে আমার দেবরটা যে তোমাকে খাবি খাওয়া মাছের মতো খুজছে!!
– ও ভাবী কি জাদু করলে গো? আমার রোবট ভাই কিনা তার বউকে চোখে হারাচ্ছে!!( শেলী)
– তোমরা গল্প করো আমি আসি। (লজ্জিত কন্ঠে)
– এখন ভাইয়ার জন্য ছাড় পেলে, পরে কিন্তু আমাদের সব বলতে হবে। ( অরনী)
– ওরে অরনী, বড্ড পেকেছো দেখি। আম্মাকে বললে সব পাঁকামো বের করে দিবেন। আর দিশা, তুমি না বড় তুমিও এদের সাথে তাল দিচ্ছো?

অরনীর কান মুলে প্রাপ্তি কথাটা বলে। দিশা বাঁ চোখ মেরে বলে,
– বউমনি তুমিও যোগ দেও। এ সুযোগ সীমিত সময়ের।
– আরে আফসারা তো আর কোথাও যাচ্ছে না, এখানেই আছে। সুযোগ তো আসবে আর যাবে, মাত্র তো বিয়েটা হলো। আর এখন তাদের রোমান্স না করতে দিলে শোনার মতো কোনো মোমেন্ট ই তৈরি হবে না।

প্রাপ্তির কথায় যেন হাসির রোল পড়ে যায়। আফসারা লজ্জায় লাল বেগুনি হলুদ হতে থাকে, কোথায় ভেবেছিলো বউমনি তাকে বাঁচাবে কিন্তু তিনিও এদের সাথে যোগ দিয়েছেন।

কোনোমতে সেখান থেকে পালিয়ে রুমে এলে, দেখে অর্ক রুমে নেই। অর্ককে কোথাও না দেখতে পেয়ে আফসারা ভাবে, শাড়িটা বদলে নিবে। এমনেও তার অভ্যাস নেই, উপরে বিরক্তও লাগছে বারবার আঁচল সামলাতে। একটা টিশার্ট নিয়ে প্রথমে ওয়াশরুমে যাবে, কিন্তু পরে ভাবলো রুমেই বদলে নিবে; যেহেতু রুমে কেউ নেই। শাড়ির কুচি খুলে ব্লাউজে হাত দিতে খট করে ওয়াশরুমের দরজাটা খুলার শব্দ আফসারার কানে এলো। পেছনে ফিরতেই চোখ বেরিয়ে আসার জোগাড়, অর্ক ওয়াশরুমের ভেতর থাকতে পারে এটা ভাবতেও পারে নি আফাসারা। অপরদিকে আফসারাকে এরুপ অবস্থায় দেখবে এটা কল্পনাও করে নি অর্ক। না চাইতেও বেহায়া চোখ শুধু আফসারা উন্মুক্ত সাদা পেটের দিকে চলে যাচ্ছে। নিমিষেই অর্কের শিরদাঁড়ায় শীতল রক্তের স্রোত বয়ে গেলো। এই প্রথম কোনো মেয়েকে এই পরিস্থিতিতে দেখছে সে। অপরদিকে আফসারা যেনো স্ট্যাচু হয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে ঠিক কি করা উচিত যেন মাথায় আসছে না তার। পরক্ষনেই অর্ককে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে দ্রুত শাড়ি দিয়ে নিজেকে ঢেকে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলে শাড়ির প্যাঁচে পা আটকে মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে নেয়। আচমকা মেঝেকে নিজের কাছে আসতে দেখে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে আফসারা। কিছুক্ষনের মাঝে পেটে কারোর হাত পরায় চোখ খুলে দেখে ঠিক সিনেমার পোজে অর্ক তাকে পেছন থেকে আগলে ধরেছে। একে বিব্রতকর পরিস্থিতি এর উপরে নিজের এতো কাছে অর্ককে দেখে যেন দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আফসারার। এসির মধ্যেও প্রচন্ড ঘামছে সে। আফসারার অস্বস্তি অর্কের চোখ এড়ালো না। নিজেকে শান্ত রেখে আফসারাকে সোজা করে দাঁড় করালো সে, তারপর সামনে পেছনে না দেখেই সোজা ওয়াশরুমে চলে যায় অর্ক। অর্কের চলে যাওয়ার পরও আফসারার বুক ধুকপুকানি যেনো কমছেই না। অপরদিকে নিজেকে শান্ত করার জন্য ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে যায় অর্ক। এতো জোরে হার্টবিট করছে যেনো নিজের কানের পর্দাও ফাঁটাতে সক্ষম। এতো পাগলি টাইপের মেয়ের জন্য তার হার্টবিট মিস হচ্ছে এটা যেনো অবিশ্বাসকর। একে অপরের হৃদয়ের মাঝে এতো দূরত্ব হয়েও কি কাছাকাছি আসতে পারবে তারা দুজন?? সময়ের ফোঁড়ে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে কে জানে?

চলবে