ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 10

আমি ছিটকে গিয়ে ফ্লোরে পরলাম। আপু আমার হাত ধরে টেনে উঠালো।আমাকে ঝাঁকিয়ে বলল কেন এমনটা করলাম আমি।আমি আপুকে বললাম হৃদ ভালো ছেলে না।ওকে বিয়ে করলে তুমি কখনো সুখি হতে পারবে না আপু।আপু আমার অন্য গালটাতে চড় মেরে বললো হৃদ যেমনই হোক ও আমার।আমি ওকে ভালোবাসি।সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবেসে আসছি ওকে।ওকে আমার চাই।তুই না মেঘকে ভালোবাসিস।মেঘের সন্তান তোর গর্ভে।আমার কথা শোন তুই কাউকে বলিস না হৃদের সাথে তোর বিয়ে

হয়েছে।যা চেঞ্জ করে নে।আমি হৃদের বউ তুই না।আপু আমাকে ধাক্কা দিলে আমি বলে উঠলাম হৃদের ভিডিওটা দেখার পরও তুমি ওকে কিভাবে ভালোবাসো আপু? আপু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কথাটা শুনে।আমার কাছে জানতে চায় কোন ভিডিওর কথা বলছি আমি।আমি আপুকে বলি সেই ভিডিওটার কথা যেটা আপুকে মেসেঞ্জারে পাঠিয়েছিলাম।আপু এমন ভাব করছে যেন কিছুই জানে না।আমি বললাম আপু তুমি কি ভিডিওটা দেখও নি? আপু মাথা নাড়িয়ে বলল না।আমার ফোনটা তো পানিতে পরে নস্ট হয়ে গেছে।তখন আমি আপুকে পাঠানো ভিডিওটা আমার মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখালাম।পুরো ভিডিওটা দেখে আপু আমার দিকে তাকালো।আর বলল এর জন্য তুই হৃদকে বিয়ে করেছিস? আমি হ্যাঁ বলে উঠতেই আপু আমায় জড়িয়ে ধরলো আর বলল দেখ মেঘ তো নির্দোষ ওকে থানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছি।এই ভিডিওটা ডিলিট করে দিই।হৃদকে আমি খুব ভালোবাসি ফুল।ওকে সবাই খারাপ ভাবুক সেটা আমি চাই না।কথাটা বলেই ভিডিওটা ডিলিট করে দিলো আপু।তারপর আমাকে বলল তুই তো মেঘের সন্তানের মা হবি।তুই মেঘকে বিয়ে করিস।তোর জন্য মেঘকে ফিরিয়ে এনেছি আমি।প্লিজ হৃদকে আমায় দিয়ে দে।আমি কিছু বললাম না।বুঝতে পারছি আমি আপু হৃদকে কতটা ভালোবাসে।আর ওকে বাঁচাতে যা ইচ্ছা করতে পারে।তারজন্য তো ভিডিওটা ডিলিট করে দিলো।আমার ফোনে আর কোনো প্রমাণ রইলো না হৃদের অপরাধের।এখন যদি আমি আপুর কথা না শুনি।যদি বলি আমি প্রেগনেন্ট না তাহলে আবির চৌধুরী আবার ডা.মেঘ স্যারকে পুলিশে দেবে।তাই আমাকে স্যারের কথা ভেবে অন্তত এই মিথ্যাটা বলতে হবে।

আমি আপুর কথা মতোন চেঞ্জ করে নিলাম।শাড়ি, গহনা আপু পরে নিলো।মিনি, নিশি, প্রিয়া পুরো ব্যাপারটা দেখেও কিছু বলল না।আমাদের দুজনের থেকে খানিকটা দূরে দাড়িয়ে রইলো।কারণ আপুকে ওরা তিনজন খুব ভয় পাই।হৃদের সাথে বিয়েটা হওয়ার পেছনে ওদেরও যে হাত ছিলো।হসপিটালের একজন সিনিয়র ডাক্তারের সাথে এমনটা করায় যদি ওদের কেরিয়ারের কোনো ক্ষতি হয় তার জন্য ওরা নিশ্চুপ হয়ে আছে।
আমার হাত ধরে আপু নিচে নিয়ে গেলো।আপুকে বিয়ের সাজে দেখে আবির চৌধুরী আর স্যার দাড়িয়ে পরলো।আবির চৌধুরী আপুকে বিয়ের সাজ দেখে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে তার আগেই আপু বলে উঠলো উপরে গিয়ে ফটাফট শাড়ি, গহনা পরে কাজি রুমে ঢুকার আগেই বসে পরলাম।আর হয়ে গেলো আমার বিয়ে।হৃদ এখন আমার স্বামী। আপুর মুখে কথাটা শুনে স্যার খুব কস্ট পেলো।অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আপুর দিকে।আপু চিৎকার করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল ফুলের সাথে মেঘের বিয়ে দিতে হবে। ফুল মেঘের সন্তানের মা হতে চলেছে।

আপুর কথা শুনে স্যারের ধ্যান ফিরলো।ভাবলো একি বলছে নূর? এগিয়ে এসে আপুর সামনে দাড়িয়ে বলল মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? আপুর মুখের সামনে আঙুল তুলে বলল তুই আমাকে এতোটা দুশ্চরিত্র মনে করিস যে আমি একটা স্টুডেন্টের সাথে অবৈধ ভাবে ওসব করবো?
আবির চৌধুরী স্যারকে ধমক দিয়ে বলল নিজের ভুল স্বীকার করো।ফুলের সাথে যে সত্যি তোমার কোনো সম্পর্ক ছিলো সেটা আমি বিশ্বাস করেন।ফুল যখন বলেছে ওর সন্তান তোমার তখন তোমারই।
স্যার কিছুতেই তার বাবাকে বোঝাতে পারছে না।আবির চৌধুরী কড়া গলায় বলল ফুলকেই তোমার বিয়ে করতে হবে।আর আমার মনে হয় তোমাকে ফুল অনেক ভালোবাসে।কাল যখন সবাই তোমাকে নিয়ে নানান কথা বলাবলি করছিলো, অবিশ্বাস করছিলো।তখন একমাত্র ফুলই তোমাকে বিশ্বাস করেছে।ফুলকেই তুমি বিয়ে করবে।আর এটাই আমার শেষ কথা।

স্যার ঘুরে এসে এবার আমার সামনে দাড়ালো।আমাকে কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম আপনার সাথে আলাদাভাবে একটু কথা বলতে চাই আমি।স্যার রাজি হলো।আর আমার সাথে রুমে আসলো।আমি দরজাটা বন্ধ করে ঘুরেই মাথাটা নিচু করে হাঁটু নুইয়ে বসে পরলাম স্যারের সামনে।স্যারের কাছে ক্ষমা চাইলাম আর বললাম এই মিথ্যাটা ছাড়া আপনাকে থানা থেকে ছাড়াতে পারতাম না আমি স্যার।আর আপনার ভালোবাসা নূর আপুকেও আপনার কাছে ফিরিয়ে দিতে পারতাম না।আমি আপনাকে খুব সম্মান করি স্যার।যদি আমার কোনো ভুল হয়ে থাকে এতে তাহলে আমায় ক্ষমা করবেন।
স্যার মুখটা মলিন করে বলল নূরের বিয়ে হয়ে গেছে হৃদের সাথে। আমি মাথা ঝাঁকিয়ে না বললাম। উঠে দাড়িয়ে স্যারের মুখোমুখি হয়ে বললাম না হয় নি।আপনার নূরের সাথে নয়। হৃদের বিয়ে আমার সাথে হয়েছে।কিন্তু আপু হৃদের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছে।তাই হৃদের সব অপরাধের কথা যেনেও ওকে শাস্তি দিতে চাই না।আর এই মিথ্যাটা না বললে আপনাকে আপনার বাবা আবার পুলিশে দেবে তাই এই মিথ্যাটা আমাকে বলতে হয়েছে।আপনার কাছে একটা অনুরোধ স্যার একটু অভিনয় করুন।নিচে গিয়ে বলুন আমাকে বিয়ে করবেন। কিন্তু আজ না।কিছুদিন পর।আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি কিছুদিনের মধ্যে আপুর মনে আপনার প্রতি ভালোবাসা আমি তৈরি করবো।আপু আপনার থেকেও বেশি ভালোবাসবে আপনাকে।
স্যার বলল আর তোমার কি হবে? জেনে বুঝে হৃদের মতো একটা খারাপ ছেলেকে বিয়ে করেছো তুমি।ওকে পারবে কখনো ভালোবাসতে? সুখি হতে?
আমি স্যারকে বললাম ওকে তো আমি বারো বছর ধরে ভালোবেসে এসেছি স্যার।কিন্তু ও নিজের এসব নোংরা কাজের জন্য আমার চোখে আজ অনেকটা নিচে নেমে গিয়েছে।এখন ভালোবাসার জায়গাটা পূর্ণ করেছে ঘৃণা।কথাটা শুনে স্যার বলল নিচে চলো ফুল।
চলবে,,,,