ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 11

স্যার আমার হাতটা ধরে নিচে নামলেন।সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন ফুলের গর্ভে আমার সন্তান।আর ফুলকেই আমি বিয়ে করবো।কিন্তু এখন নয়।কিছুদিন পর।আবির চৌধুরী রেগে গিয়ে বললেন বিয়ে তোমাকে আজই করতে হবে মেঘ।তখন আমি তাকে বুঝালাম স্যার যখন চাচ্ছে কিছুদিন সময় নিতে নিক।স্যার নিজের সন্তানকে স্বীকার করেছে এটাই অনেক।বিয়ে আজ হোক কিংবা কিছুদিন পর হোক তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।আমার মুখে কথাটা শুনে হৃদ রেগে বসা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে হাতের সরবতের গ্লাসটা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে দিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।আর আপুও হৃদের পিছনে ছুটলো।আবির চৌধুরী আমার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে চলে গেলেন।আর আমি স্যারের সাথে হসপিটালে আসলাম।হসপিটালে আসার পর মিনি, নিশি, প্রিয়ার সাথে ক্লাস রুমে ঢুকলাম।এরই মধ্যে ডাক পরলো নিচে মিটিং হচ্ছে।আমরা সব স্টুডেন্টরা মিটিংয়ে আসলাম। আর আবির চৌধুরী বলল আমি জানি মেঘ যা অপরাধ করেছে তার ক্ষমা হয় না।কিন্তু ওর সাথে আরও দুইটা জীবন জুড়ে গেছে যারা নির্দোষ।এই হসপিটালটা আমার।মেঘ আমার সন্তান হওয়ায় ওর স্ত্রী আর সন্তান হবে আমার পরিবারের কেউ।আর আমি চাইনা ওর অপরাধের শাস্তি তারা পাক।আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি কার কথা বলছি।তাহলে শুনুন। আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে দেখিয়ে নাম ধরে ডেকে উঠে বললেন ফুল। এর কথা বলছি। আমার ছেলের হবু বউ।কিছুদিন পর ফুলের সাথেই মেঘের বিয়ে হবে।কথাটা শুনে সকলে অবাক।প্রিয়া তো পারলে কেঁদেই দেবে এমন অবস্থা। আবির চৌধুরী আবারও বললেন যেহেতু হসপিটালে মেঘের পজিশনটা ডা.হৃদকে দিয়েছি সেহেতু আমি কনফিউজড মেঘকে এখন কোন পজিশনটা দেবো।তাই আমি চাই হসপিটালের সকল কার্যক্রম নতুন করে শুরু করতে।সকল ডাক্তার, নার্স, স্টুডেন্ট আর স্টাফদের মধ্যে ভোটের আয়োজন করা হবে।যে যাকে যোগ্য মনে করবে তাকে ভোট দেবে।যাদের ভোট সর্বোচ্চ হবে। তারাই হবে হসপিটালের কাজের প্রতিটা স্তরের প্রধান।যে যে নিজেকে যোগ্য মনে করেন তারা নামের লিস্ট আমার চেম্বারে এসে দিয়ে যাবেন।আপনারা যে যেভাবে ইচ্ছে একে অপরের কাছ থেকে ভোট চাইতে পারবেন।দুইদিন পর আপনাদের ভোট প্রদানের কাজ সম্পন্ন হবে।এই দুইদিন স্টুডেন্টদের কোনো ক্লাস হবে না।নিজের কথা শেষ করে চলে গেলেন আবির চৌধুরী।

সকলের মধ্যে বিবেচনা হচ্ছে কে কাকে ভোট দিবে।আপু নিজের নাম না দিয়ে হৃদের নামটা লিস্টে দিয়ে আসে।আর ভাবে ডা.মেঘ স্যারকে কেউ ভোট দিবে না।হৃদই জিতবে।সকল ডাক্তার আপুকে অনেক অনুরোধ করার পরও আপু এবার নিজের নামের বদলে হৃদের নামটা দিয়ে হৃদকে সাপোর্ট করে। সকলকে অনুরোধ করে হৃদ বিদেশ থেকে পড়ে আসা ভালো ডাক্তার ওকে ভোট দিলে হসপিটালের জন্য ভালো।সকলে রাজিও হয়ে যায় হৃদকে ভোট দেওয়ার জন্য।
এদিকে স্টুডেন্টদের মধ্যে প্রিয়া, মিনি, নিশি আর আমি দাড়িয়েছি ইলেকশনে।হৃদকে কোথাও দেখছি না হসপিটালে। আমি হৃদকে খুঁজতে খুঁজতে ওর চেম্বারে চলে আসলাম।দরজায় নক করে কোনো সাড়া না পেয়ে ভেতরে ঢুকে দেখলাম টেবিলের উপরে মদের বোতল নিয়ে বসে আছে আর মাতলামো করে মদ খাচ্ছে।আমাকে দেখেই মদের বোতলটা এক বাঢ়ি দিয়ে ভেঙে ফেললো।আমি এগিয়ে আসতেই ভাঙা বোতলটা একটানে আমার পেট পর্যন্ত নিয়ে আসলো।ভয়ে চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে উঠলাম আমি।আর হৃদ থেমে গেলো।আমাকে বলল তুই সত্যি একটা নস্টা।আমি চোখ খুলে দেখলাম বোতলের ভাঙা অংশটুকু নিজের হাতের সাথে খুব শক্ত করে মুঠো বন্দি করে চেপে রেখেছে।আর রক্ত বেয়ে পরছে ওর হাত থেকে।ওর চোখদুটো লাল হয়ে আছে।আর আবল তাবল বকছে।এমন অবস্থায় ওকে দেখে খুব কস্ট হচ্ছে আমার।কিন্তু কেন করছে ও এমন? আমি ওর হাত থেকে ভাঙা বোতলটা একটানে নিয়ে নিচে ফেলে দিলাম।দেখলাম ছোট ছোট কাচ হাতের সাথে লেগে আছে।আমি ছাড়াতে গেলেই আমার চুলের মুঠি টেনে ধরে বসলো।আমাকে টেবিলের উপরে উল্টো ঘুরিয়ে চেপে ধরে বলল তোর সন্তানকে আমি এই পৃথিবীতে কখনোই আসতে দেবো না।মেঘের সন্তানকে নিজের গর্ভে এনে তুই আমার ভালোবাসাকে অপবিত্র করেছিস।তোর উপর রাগ দেখিয়ে নূরকে বিয়ে করে আমি ভুল করেছি।ওকে আমি ডিভোর্স দেবো।আর এই হাতে তোর ভালোবাসা মেঘকে খুন করবো আমি।

আমি হৃদকে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাড়ালাম।টেবিলের উপরে বসে হৃদকে টেনে ধরে চিৎকার করে বললাম কি হয়েছে আপনার? এমন কেন করছেন আপনি? তাকান আমার দিকে। কিসের এতো শত্রুটা মেঘ স্যারের সাথে আপনার? একটু আগে আপনি কি বললেন? আমাকে আপনি ভালোবাসেন? বলেন ভালোবাসেন?
হৃদ আমায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল ঘৃণা করি তোকে আমি।আমি এগিয়ে এসে আবার ওর কাছে জানতে চাইলাম। ঝাকিয়ে বললাম ওকে বলেন কি আছে আপনার মনের মধ্যে।নিজেকে কেন কস্ট দিচ্ছেন এভাবে? কেন খুন করবেন আপনি মেঘ স্যারকে? কেন ফাঁসিয়েছিলেন স্যারকে? উনাকে তো আপনি চিনতেনও না।তাহলে কেন করলেন এসব?

হৃদ ওর রক্তাক্ত হাতটা দিয়ে আমার গালটা চেপে ধরল।আমার মুখের সামনে নিজের মুখটা এনে চিৎকার করে বলল তোর জন্য। ছোটবেলা তোর সাথে আমি যা যা অন্যায় করেছি তারজন্য নিজের ভেতরে অনেক অপরাধ বোধে ভুগেছি।কিন্তু নিজের ভুল শোধরানোর সুযোগ পাই নি।তার আগেই বাবা-মা আমাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।ওখানে যাওয়ার পরও আমি শুধুই তোর কথা ভেবেছি।তোর কথা ভাবতে ভাবতে ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোকে আমি।এতোগুলো বছর পর দেশে ফিরে ভেবেছিলাম তোকে নিজের মনের সব কথা বলব কিন্তু না।এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার সময় নূর আমাকে বলেছে মেঘ আর তোর অবৈধ সম্পর্কের কথা।এটাও বলেছে তুই আমাকে ঘৃণা করিস।ঘৃণা করিস আমাকে তুই।কথাটা বলেই কেঁদে উঠলো হৃদ।আমাকে ছেড়ে দিয়ে টেবিলের উপরে শুয়ে পরলো।

আমি কিছুক্ষণ নিরব থেকে ওকে টেনে উঠিয়ে বসালাম।ওর গালে হাত রেখে বললাম না আমি তোমাকে ঘৃণা করি না।ভালোবাসি তোমাকে আমি।হৃদ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল তুই মিথ্যা বলছিস।তুই তো প্রগনেন্ট। মেঘ তোর সন্তানের… এটুকু বলতেই আমি হৃদের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিলাম।ওর সারাগালে চুমু একে দিয়ে বললাম না ওসব মিথ্যা।সত্য এটা আমি তোমার স্ত্রী। নূর আপুর সাথে না।আমার সাথে বিয়ে হয়েছে তোমার।কবুল আমি বলেছিলাম।
চলবে,,,,,