জুনিয়র বর

জুনিয়র বর—— পর্ব -(১০ ও শেষ পর্ব)

এরপর যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি হসপিটালে। দু চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। আম্মুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। আম্মুকে ডাক দিলাম,, আআআম্মম্মু,,,কথা বলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
আম্মু কাকে যেন বলছে, নদীর জ্ঞান ফিরেছে ডাক্তারকে তাড়াতাড়ি ডেকে আনো।
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে চিন্তা করিস না। ডাক্তার বলেছেন তুই ভালো আছিস এখন।। ঠিক হয়ে যাবি অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই।
আমি আব্বুর কথা জিজ্ঞেস করলাম আব্বু কই,, কেমন আছে।
আম্মু কাঁদছে। বললো ভালো আছে।
এরপর অভির কথা বললাম ও কেমন আছে,,
আম্মু বললো সবাই ভালো আছে। তুই তাড়াতাড়ি সেরে উঠ।
এরপর ডাক্তার এলেন রুমে। আম্মুকে রুম থেকে বাহিরে যেতে বললেন।
আমি ডাক্তার কে বললাম আমি চোখে দেখতে পাচ্ছিনা কেনো?
উনি বললেন,আমার নাকি চোখের লেন্স একটা ড্যামেজ হয়ে গেছে। আরেকটায় সামান্য আঘাত পেয়েছে।
এরপর আমি ডাক্তারকে বললাম আমি যেসব প্রশ্ন করবো,সবটারই উত্তর ঠিক ভাবে দিবেন প্লিজ। আমি মিথ্যা আশা নিয়ে নিশ্বাস নিতে চাইনা। আমার অভিকে আমি মিথ্যে আশা বুকে বাঁধতে দিবোনা।
কথাগুলো খুবই ক্ষীণ কন্ঠে আসছে আমার। কথা বলতে পারছিনা। অনেক কষ্ট হচ্ছে।
একটা নার্স আমাকে চুপ করতে বললেন, উনাকে থামিয়ে দিয়ে ডাক্তার বললেন কি বলতে চান আপনি, বলুন,,,
— আমি বললাম এবার সত্যি করে বলুন আমি কতোক্ষণ বেঁচে থাকবো,
— কেনো এভাবে বলছেন
— আমি জানি, আমি আর বাঁচবোনা। মরে যাওয়ার আগে আমার কিছু কাজ করে যেতে হবে।
তাড়াতাড়ি বলুন,
— নির্দিষ্ট করে সেটা বলতে পারবোনা,, তবে দু তিন ঘণ্টা ও হতে পারে কিংবা বেঁচেও যেতে পারেন।
আপনার হার্টে একটা ইঞ্জেকশন পুস করা হইছে। যেটার কার্যকর শুরু হয়ে গেছে। যার কারনে আপনি জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন। এটাই আমাদের শেষ চিকিৎসা ছিলো। 50% বাঁচার এবং 50% মৃত্যের সম্ভাবনা।
এরপর ডাক্তার আমাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিতে বললো। আমি ডাক্তারকে অনেক রিকুয়েস্ট করি মৃত্যর আগে একবার অভির সাথে কথা বলতে চাই। এবং এক নজর দেখতে চাই।
ডাক্তার আমার কথা মেনে নিলেন। উনি আমার চোখের বান্ডেজ খুলে দিলেন। চোখে সবকিছুই ঝাপসা দেখাচ্ছে।
খানিকবাদে অভি এলো।
আবছা আবছা দেখতে পাচ্ছি, ওর এক হাতে লাল রেশমি চুড়ি আর অন্য হাতে নুপুড়।
আমি কিছু বলতে যাবো ও মুখে হাত রেখে চুপ করতে বললো। এলোমেলো চুল, ময়লাটে শার্ট গায়ে। কেমন যেন পাগল পাগল দেখাচ্ছে। চোখ দুটি কেমন ফুলিয়ে লাল হয়ে আছে। খুবই কেঁদেছে বুঝি।
ও আস্তে করে আমার পায়ে নুপুর পড়িয়ে দিলো। বামহাতে একগোছা চুড়ি।
এরপর কপালে একটা চুমু একে দিলো।
আমি আস্তে করে ওর
হাত ধরলাম। মিনমিন করে বললাম এই জুনিয়র বর, আমার একটা কথা রাখবে,,
–ও বললো হ্যাঁ বলো
— আমি মরে গেলে তুমি আরেকটা বিয়ে করে নিও,,
— একদম চুপ,, আর একটি কথাও বলবেনা। কে বলেছে তুমি মরে যাবে হু,, তুমি মরে গেলে আমাকে ছোট্ট নদী কে দিবে শুনি।
তোমার কিছু হয়ে গেলে আমিও নিজেকে শেষ করে দিবো। তারপর আকাশে তারা হয়ে দুজনই জ্বলবো।
— অভি এই অঅভি
— হুম বলো
— আব্বু কেমন আছে
— উনার তেমন কিছু হয়নি। পায়ে ও বুকে একটু আঘাত পেয়েছে। ডাক্তার বলেছে সেরে উঠতে কিছু সময় লাগবে।
— জানপাখি
— বলো
— আমাকে কথা দাও, আমার অবর্তমানে নিজেকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসবে,,
— পারবোনা তো
— পারতে হবে। নইলে মরে গিয়েও শান্তি পাবোনা।তোমাকে ভালো থাকতে হবে।
অভি কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
— কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো বলো,,,,ডাক্তার কই,, অই সিস্টার ডাক্তার ডাকেন,, আমার নদীর কষ্ট হচ্ছে
,,এই খুব কষ্ট হচ্ছে কি,
— এই পাগল ছেলে,, কাঁদছ কেনো,,আমি ঠিক আছি। ডাক্তার ডেকোনা। কিছু সময় তোমার সাথে কাটাতে চাই। আমাকে ক্ষমা করে দাও অভি। সারাজীবন তোমার পাশেপাশে চলতে খুব ইচ্ছা করছে কিন্তু কঠিন এ দুনিয়া। কাউকেই ছাড় দেয়না।
— ওই এসব বলা বন্ধ করে দাও প্লিজ,,আমি শুনতে পারছিনা।
— অভি তোমার বুকে আমার মাথাটা রেখে দাও ,,তাহলে আমার বেশি কষ্ট হবেনা।
— এই মেয়ে তোমার সাথে আমিও কিন্তু,,,
আমি আর কথা বলতে পেলাম না। দেখতে পাচ্ছি অভি চিল্লায়ে চিল্লায়ে আমাকে ডাকছে।
খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে ওকে বুকে জড়িয়ে রাখি। আমার অভি তো কষ্ট পাচ্ছে।ওর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছিনা। নিরবে চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
এদিকে ডাক্তাররা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন বুঝি আমার সময় শেষ। আম্মুকে কাছে থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
মনে মনে আল্লাহর কাছে আমার অভির সুখ চাইলাম ।
বললাম মৃত্যর আগে সবার ইচ্ছা পুরণ করা হয়,আল্লাহ আমার ইচ্ছাটা হলো অভি এবং
আমার পরিবারকে ভালো ও সুস্থ রাখো। অভির জন্য একটা সংগি খুঁজে দাও যে আমার মতো করে অভিকে ভালোবাসবে।
আর কিছুই ভাবতে পেলাম না।
———————————————-
তিন বৎসর পর,,,,,
হঠাৎ কোনো একদিন আমি চোখ মেললাম। সেদিন অভি ও মা আমার পাশে ছিলো। বাবাও হুইল চেয়ারে করে আমার কাছে এলেন।
অভির মুখ ভর্তি দাড়ি হইছে। আমার মাকে কেমন জানি বুড়ি বুড়ি লাগছে।
অভি আমার কপালে চুমু দিয়ে বলছে, আর কতোদিন এভাবে চেয়ে থাকবে। আমাকে তোমার অই চোখ অনেক কিছু বলে। কিন্তু আমি তো তোমার কোনো কথাই মানতে পারিনা।
আমি বললাম কেনো পারোনা,,
ও বললো ভুল শুনেছি,,তুমি একটা কথাও বলোনি।
আমি বললাম বেশি ফাজলামো করলে মাথা ফাটায়ে দিবো, হুহ।
এবার অভি বুঝি বিশ্বাস করেছে আমি কথা বলছি।
ও আম্মু আব্বু কে ডাক দেয়। সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমি নদী না অন্য কেউ।
আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলেন।
খুবই ক্লান্ত আমি।
আম্মুকে বললাম ভাত খাবো,, খুব ক্ষুধা লেগেছে।
— আম্মু জলদি গেলো আমার জন্য খাবার আনতে।
আস্তে আস্তে সব মনে পরে গেলো। ফাইনালি আমি বেঁচে আছি। বিশ্বাস করতে পারছিনা।
এরপর আমার অভি আর আমি দুজন মিলে আমাদের জীবন নিজেদের মতো করে সাজালাম। একটা স্বপ্ন ও অপুর্ণ রাখতে দিবোনা ।
আমাদের ঘর আলোকিত করে ছোট্ট অভি এলো।
অনেক আনন্দেই দিনগুলি কেটে যাচ্ছিলো। হঠাৎ ছেলে একদিন বলে উঠলো মা তোমাদের লাভষ্টোরি শুনবো। গন্ডোগোল ওখানেই বেঁধে গেলো।অভি বলে আমি বলবো কিন্তু আমি বলি অভি না আমি বলবো। শেষমেষ আমার সোনার ছেলে রাগ করে চলে গেলো। আবার এদিকে অভি ও নিজের কাজে ব্যস্ত,,নদী একটি দাও প্লিজ,ছেলে বড় হইছে কিন্তু বর আমার এখনো জুনিয়র থেকেই গেলো।
বিদ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
—- শেষ—-