জুনিয়র বর

জুনিয়র বর—— পর্ব -০৯

আজ আমি ভিষণ হ্যাপি। কারন আগামীকাল অভির পরিক্ষা
শেষ।
ও বলেছে পরিক্ষা দিয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা
দিবে। আমিও যেন তাড়াতাড়ি ওখানে যাই। আজকেই
যেতাম কিন্তু বাসায় আব্বু নেই। ঢাকায় গেছেন
ব্যবসার কাজে। রাতে আসবেন উনি।
আমি খুবই এক্সাইটেড আমার বরের আসার কথা
শুনে। কতোদিন আমরা শুধু ফোনে ফোনেই
কথা বলেছি। আমি এবং ও, আমরা দুজনই দুজনকে
দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছি।
খুবই আনন্দ লাগছে। আনন্দে গান গাইতে ইচ্ছে
করছে,, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে,,,,,
সে রাতটা আর ঘুম আসছেনা দুচোখে।
কিন্তু ঘুমোতে হবে, নইলে চোখের নিচে
কালি পরে যাবে। বর এতোদিন পর এসে যদি
আমাকে এ অবস্থায় দেখে তাহলে কেমন হবে,,
হয়ত রেগে গিয়ে বলেই দিবে তুমি সিনিয়র বউ
সেটা তোমার চেহারায় ফুটে উঠেছে,,,তাহলে
তো এটা হজম করা অনেক কষ্টের হয়ে যাবে।
প্রায় ঘুমিয়েই পরেছিলাম। কিন্তু মনে হলো
মুখের কিছু যত্ন করতে হবে। এরপর ঘুম কেটে
গেলো। মুখের জন্য ঘরোয়া কিছু ট্রিটমেন্ট
করলাম।
যেন চেহারায় হারানো লাবন্য ফিরে আসে।
এসব করতে করতে রাত দুটো বেজে
গেলো। তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে আম্মুর ডাকে জেগে গেলাম।
ঘড়িতে দেখি আটটা বেজে গেছে।
তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ এবং রেডি হয়ে খেয়ে নিলাম।
এরপর আব্বু এলো। তিনি একটা প্রাইভেট কার গাড়ি
এনেছেন। ওটাতে যাবো আমরা। আম্মু ও যেতে
চেয়েছিলো কিন্তু আম্মুর প্রেশার একটু
বেড়েছে, তাই আম্মু যাবেনা।
আমি আর আব্বু রওনা দিলাম। পৌছুতে প্রায় তিন ঘন্টা
লেগে যাবে।
গাড়িতে উঠে অভির সাথে কথা বললাম। ও তখন
পরিক্ষা দিতে যাচ্ছে। বললো আমি বিকেল চারটার
মধ্যেই পৌছুবো।
এরপর কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ
করে গান শুনতে শুনতে কল্পনার জগতের ভিতর
ঢুকে পরলাম। প্রথমে অভিকে যখন দেখবো
তখন কি করবো বুঝতে পারছিনা। একটু তো
সংকোচ লাগবেই। মন বলছে অভির যখন আসবে
তখন যেন আমি আমাদের রুমে থাকি। ও এসে যখন
সবাইকে দেখবে কিন্তু আমাকে দেখবেনা তখন
ও মনে মনে আমাকেই খুঁজবে। হয়তো,লজ্জায়
কাউকে জিগাতে পারবেনা। এরপর যখন রুমে চলে
আসবে তখন আমি লুকিয়ে থাকবো দরজার
আড়ালে। সে তো টেরই পাবেনা।যখনি ভিতরে
ঢুকবে তখনি পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরবো।
ও আমার স্পর্শ অনুভব করবে কিন্তু অবাক হবেনা,
কারণ ও তো এমনটি আশা করেছিলো।
এরপর আমাকে কোলে উঠিয়ে বিছানায় এনে
অনেক কথা বলবে।আর ক্ষণেক্ষণে বলবে
জানপাখি,, অনেক ভালোবাসি তোমাকে। নিজের
অজান্তে হাসি চলে এলো। কিসব ভাবছি আমি।
ড্রাইভার আব্বুর সাথে গল্পের ঝুড়ি খুলে
বসেছে। লোকটি খুবই কথা বলে।
হঠাৎ আচমকা এক ঝাঁকুনি খেলাম। অবর্ননীয় ব্যথায়
কুঁকরে গেলাম। এরপর কিছুই মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আবিষ্কার করলাম এক
অন্ধকুপের মধ্যে।শরীর যেন নিস্তেজ হয়ে
আসছে।শরীরে কোনই শক্তি পাচ্ছিনা।কই আমি
কিছুই বুঝতে পারছিনা। তবে এটা বুঝেছি আমাদের
গাড়িটার এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে।চারদিকে কাউকে
দেখতে পাচ্ছিনা।কিন্তু শোরগোল ঠিকই শুনতে
পাচ্ছি।
উফফফ নিজের হাতটি পর্যন্ত টেনে তুলতে
পারছিনা। মনে হচ্ছে দশমণ ওজনের পাথর কেউ
আমার হাতে উঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আব্বু কই,,?
তিনি ভালো আছেন তো,,আর কিছুই ভালো
লাগছেনা।
আমার মোবাইল কই,,? অভির সাথে তো কথা বলতে
হবে। কতোক্ষণ যে এভাবে আছি কে জানে,,,।
ও হয়তো আমাকে কল দিতে দিতে অস্থির হয়ে
পড়েছে।
পা দুটোয় পানির ছোঁয়া পাচ্ছি। কার ভিতর আছি আমি
বুঝতেছিনা।চোখেও কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। সব
অন্ধকার লাগছে।
এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো আমি মরে যাইনি
তো,,??
মানুষ মরে গেলে তাকে কবর দিয়ে দেয়।
আমাকে কবর দেয়নি তো,,?এখানে তো ঘুটঘুটে
অন্ধকার। এবার ভয়ে আমার খুবই কান্না পাচ্ছে। কিন্তু
একি,,! আমার সাউন্ড নেই যে,,! কথা বলতে আপ্রাণ
চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা।
আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে অভির কি হবে,,?ও
তো পাগলের মতো ভালোবাসে আমাকে। আমার
অভি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবেনা। আমিও
পারবোনা।
না, এভাবে আমার কিছু হবেনা। কিছু হতে দেয়া
যাবেনা। আমাকে এখান থেকে বেরুতে হবেই।
বের হওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। হঠাৎ মাথায় কিসের
যেন প্রচণ্ড আঘাত পেলাম। সংগে সংগে জ্ঞান
হারিয়ে ফেলি।
———চলবে——-