জীবনের গল্প

জীবনের গল্প !! Part- 09

তিন দিনের মধ্যে আমি নিব্রাসকে বিয়ে করে তোদের বাসায় পা রাখবো।
তুই দুইটা ফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষা কর,
ভাই আর ভাইয়ের বউ এর গলায় পরিয়ে তাদের বরণ করার জন্য।
নীলাদ্রীস বাসায় গিয়ে নিব্রাসকে অনেক বকাঝকা করে।
নিব্রাসের একই কথা,
আমি তিয়াসাকে বিয়ে করবোই।

নিব্রাস এই দিকে আমার বাবাকেও ফোনে জানায়।
ও আমাকে বিয়ে করতে চায়।
আব্বু অবাক হয় প্রথমে,তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে সেও রাজি হয়ে যায়।
এদিকে ছেলের পাগলামির কারণে নিব্রাসের মাও রাজি হয়।
শেষ পর্যন্ত রাজি সবাই হয় শুধু মাত্র নীলাদ্রীস ছাড়া।
নীলাদ্রীস ওর মাকে অনেক বোঝায় আর বলে এ কি করে সম্ভব মা?
কিন্তু ওর মায়ের কথা,
রাজি না হওয়া ছাড়াতো কোন উপায় দেখছিনা।
নয়তো দেখা যাবে একদিন সত্যি সত্যি বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দিবে।
নিব্রাস আমাকে ফোন করে জানায় অল সেট।
আমি বলি,
তোর মাকে বল আমার আম্মুকে ফোন করে প্রস্তাব দিতে।
তিনিই না করেছিলো না আমার আম্মুকে?
তাকেই এবার বলতে বল।
তারপর নিব্রাস আম্মুকে বলতে বলে ওর মাকে।
ওর মা আম্মুকে ফোনে বলে।
আমি নিব্রাসকে বলি আগামীকাল বিয়ের সব শপিং শেষ করতে হবে।পরশু গায়ে হলুদ আর তিন দিনের দিন মানে তার পরের দিনই বিয়ে।
এবং তারপরের দিন বউভাত।
আব্বুও ওইদিকে টিকিট ওকে করতে চলে যান।
মালিক ভালো হওয়ায় ঝামেলাও হয়নি কোন।
নিব্রাসের কথায় সব কিছুই হুট করে হয়ে যায়।
আমি নীলাদ্রীস,নিব্রাস রিয়ারা বিয়ের শপিং করি।
আর ওইদিকে আমাদের পরিবারের বড় সদস্যরা বিয়ের আয়োজন করেন।
মেহমান দাওয়াত দেন।
আম্মু ছোট বেলায় বলতেন টাকা থাকলে সব কিছু এক চুটকিতে হয়ে যায়।
দুনিয়াতে টাকারই খেলা।
আসলেই তাই।
টাকার জোরে সবই অল্প সময়ে হয়ে গেলো।কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব।
হয়ে গেলো আমাদের হলুদ সন্ধ্যা।
তিয়ারার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা আর আমার বিয়ের লগ্ন।
আমাকে আর তিয়ারাকে এক স্টেজে বসানো হয়।
আর তারপর নিব্রাসের বাসার লোকজন আসে আমাদের হলুদ দিতে।
কিন্তু আমি তখনই আকাশ থেকে পড়ি যখন দেখি নিব্রাসও ছেলে পক্ষের সাথে একটা পাঞ্জাবি পরে আমাদের হলুদ দিতে এসেছে।
আমি ওকে বকা দিলে ও আমাকে বলে,চান্সে নিজের বউটাকে হলুদ দিয়ে গেলাম।
ওদিকে নীল বাসায় বসে ফুলছিলো।
তিয়ারাও মন খারাপ করে বসেছিলো নীল আসেনি বলে।
এরপর রাতে আমি তিয়ারাকে আর তিয়ারা আমাকে মেহেদী পরিয়ে দেয়।
আম্মুও আমাদের হলুদ মেখে দেয়।
আব্বু হলুদের দিন বাংলাদেশে উপস্থিত হতে না পারলেও বিয়ের দিন ঠিকই উপস্থিত হন।
খুব দ্রুত হলেও,স্বপ্নের মত হলেও।
অবশেষে সবার দোয়ায় বিয়ের দিন টা চলেই আসে।
আমাকে বিয়ের দিন নিব্রাসের পছন্দ করা শাড়ী পরানো হয়।
আমি নিজেই নিজেকে আয়নায় দেখে অবাক হচ্ছিলাম।
কাউকে বিয়ের সাজে এত সুন্দর লাগতে পারে?
এটা বড়াই করে বলছিনা,
কিন্তু বিয়েতে সবাই বলছিলো পারফেক্ট জুটি আমাকে আর নিব্রাসকেই লাগছে।
সব থেকে সুন্দর জুটি আমাদেরই নাকি লাগছিলো।
অবশেষে হয়ে যায় নিব্রাস আর আমার ঝড় তুফানময় বিয়ে।
এত ঝড় তুফানের পর অবশেষে সবার উপস্থিতিতে হলো আমার বিয়ে।
নিব্রাস জেদ না করলে হয়তো কোন দিনও সম্ভব হতোনা বিয়েটা।
বিয়ের সময় নীল শুধু আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
জানিনা কি চলছিলো ওর মনে।
কেনই বা তাকিয়ে ছিলো ওভাবে আমার দিকে।
আম্মু আব্বু দু বোনকে দোয়া করে বিদায় দিলেন।
আমি বিদায়ের সময় কাঁদছি,নিব্রাসও কাঁদছে আমার কান্না দেখে।
মনে মনে ভাবছি,

এই ছেলে আবার কাঁদে কেন?
আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার শশুড় বাড়ীতে আমি বাইকে করে যাবো।
নীল আমাকে বাইকে করে ওর বাড়ীতে নিয়ে যাবে।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে যে সত্যি সত্যি ই নিব্রাস বাইকে করে আমাকে ওদের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরী করে ফেলবে তা আমি কল্পনায়ও ভাবিনি।
কিন্তু নিব্রাস কি করে জানলো আমার মনের কথা?
তিয়ারা গাড়ী করে আর আমি বাইকে করে পৌছালাম আমার শশুড় বাড়ী।
নিব্রাসের বন্ধু গুলো বাইকে করে আমাদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়।
এত্ত গুলো বাইক এক সাথে।
কনে বর বাইকে।
বর বাইক চালাচ্ছে,কনে বরকে ধরে পেছনে বসে আছে।
অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছিলো।
দেখতেও অসাধারণ লাগছিলো সব কিছু।
বাসায় পৌছানোর পর মহিলারা আমাকে আর তিয়ারাকে মিষ্টি মুখ করায়।
নীল আর নিব্রাসের বন্ধুরা বাসর ঘর সাজানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আমি নিব্রাসকে এক ফাঁকে বলেই ফেলি,
আচ্ছা,আমি যখন বিদায়ের সময় কান্না করছিলাম।
তুইও কেন কাঁদছিলি?
-তোর কান্না টা আমার সহ্য হচ্ছিলোনা যে।
-পাগল কোথাকার।
নিব্রাসকে কেউ একজন ডাকে।
আর তিয়ারা ওয়াশরুমে যাবে বলে নিব্রাসের বোন ওকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।
আমি বসে আছি,
হঠাৎ নীল এসে হাজির,
-বিয়ে টা করেই নিলে তাহলে!
তোমার সাহস আছে বটে।
-হুম,নিলাম তো।

আর আমার কথা মত তিন দিনের দিনই আমি এ বাড়ীতে বউ হয়ে পা রাখলাম।
-স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।
তা হয়তো জানো নিশ্চয়।
-স্বাধীনতা অর্জন বীরেরাই করতে পারে।
কাপুরুষেরা না।
এটাও জানো নিশ্চয়ই।
-দেখা যাক কত দিন টেকো এ বাড়ীতে তুমি।
-দেখতে থাকো তাহলে।
-খুব বেড়ে ছিলে না?
এবার কমবেও।
কারণ তোমার দুঃখের চাবি যে আমার হাতে।
-কি বলতে চাইছো?
-হা হা হা,
নিব্রাস যদি আজ এই মধুর লগনে জানতে পারে তারই নববধূ।
তারই এক মাত্র ভাইয়ের সাবেক প্রেমিকা।
আর তার ভাইয়ের বউ হয়ে আসার জন্য এক সময় পাগল ছিলো।
তাহলে আজকের এই লগণ টা মধুময় থাকবেতো তিয়াসা?
নাকি বিষময় হয়ে যাবে বলোতো?
চলবে…