জীবনের গল্প

জীবনের গল্প !! Part- 06

-আমি চাইনা তুমি ওর প্রস্তাবে রাজি হও।
আশা করি আমার সব ইচ্ছের মত এই ইচ্ছেটারও মূল্য তুমি দিবে।
নীল এই কথাটা বলার সংগে সংগে ইচ্ছে করছিলো ওর গাল বরাবর সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে বলি,
কেন রে ভাই?তোর কি সমস্যা?
জীবন যখন আমার তাহলে ইচ্ছেটাও আমারই।ওকে?
কিন্তু কিছু না বলে চলে আসলাম।কারণ নিব্রাসকে যে আমার বিয়ে করা সম্ভব না।যদি সম্ভব হতো তবে আমি ঠিক এই কাজ টাই করতাম।আর নীলকে উচিৎ শিক্ষা দিতাম। আমি চাইনা আমার জন্য নিব্রাস কোন কারণে কষ্ট পাক।বা নিব্রাসকে ব্যবহার করে আমি কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেই।
নিব্রাসকে বিয়ে করলে আমি হয়তো নীলকে সাথে সাথে বাকি সবাইকে শিক্ষা দিতে পারবো।
কিন্তু নিব্রাসকে এতে করে ঠকানো হবে,
কেননা,আমিতো নিব্রাসকে ভালবাসিনা।
আর তাছাড়া ওর পরিবার আমাদের এই সম্পর্ক কোন দিন মানবেনা।
আবার ওই দিকে আমি যে ওরই ভাইকে ভালবাসতাম।
আবার ও আমার ১২ দিনের ছোট।
আবার ও দেখতে অসম্ভব সুন্দর,
আমি যে ওর যোগ্য না তা ঠিক নয় কিন্তু আমি যে এখন মুটিয়ে গেছি।
তাছাড়া নীল কোন দিন আমাদের শান্তি দিবেনা।ছায়ার মত পড়ে থাকবে আমাদের পেছনে।
না না কোন ভাবেই সম্ভব না ওকে আমার পক্ষে বিয়ে করা।
আমার আগামীকাল সকালেই মামার বাড়ী চলে যেতে হবে।জবে জয়েন করতে
হবে।

সকালে নাস্তার টেবিলে বসেই আম্মুকে বললাম আমি মামার বাড়ী চলে যাবো নাস্তা করেই।
আমার ফোন এসেছিলো,অফিসে জয়েন করতে হবে।
-আজই?আজ থেকে গেলে হয়না?
আগামীকাল থেকে জয়েন কর।
-না,আজই যেতে হবে।
-হ্যাঁ আজই যেতে হবে ওর।
আমাকেও ফোন দিয়ে বল্লো একজন।
কি মিথ্যাবাদী।আমাকে সাপোর্ট করছে মিথ্যে বলে।
যাতে আমি তাড়াতাড়ি চলে যাই নিব্রাসের চোখের সামনে থেকে।
নিব্রাস না খেয়েই কথা টা শুনে রুমে চলে যায়।
আমি অল্প নাস্তা করে ব্যাগ গুছাতে চলে যাই।
তড়িঘড়ি করে নিজের ব্যাগ গোছাচ্ছি।
আর নিব্রাস এসে হাজির।
এসেই অনেক টা ধাক্কা দেয়ার মত করে আমাকে টেনে ধরে।
আমার দু কাঁধে দু হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে বলে,
কি পেয়েছিস তুই হ্যাঁ?কি মনে করিস নিজেকে?
এভাবে আমাকে ফেলে চলে গেলেই আমি তোকে ভুলে যাবো?
নো,কোন দিন না।
আমি তোকে ভালবাসি,আর তোকেই বিয়ে করবো।
আর এটা আমার শপথ।
-ছাড় আমাকে নিব্রাস।
ছাড় বলছি।
-ছাড়বোনা।কি করবি?
-ছাড় আমাকে,ছাড় ছাড় ছাড়।
(চিৎকার করে)
ওকে আমাকে বিয়ে করতে চাস তো?
ঠিক আছে।আমি রাজি।
যা এবার তোর পরিবার আর আমার পরিবারকে রাজি করা।
কেউ মানবেনা এই বিয়ে।
কেউ মানবেনা।

-কেন মানবেনা?কেন?
-কারণ আমি তোর থেকে ১২ দিনের বড়।
আর দেখতে অনেক টাই মোটা।
বাকি কারণ গুলো আমি ওকে বলিনা যে ওর ভাইয়ের সাথেই যে আমার রিলেশন ছিলো।বা পরিবার মানবেনা এই কারণে।
বড় ছেলের সাথেই মানে নি,আর ছোট ছেলের সাথে কি মানবে।
-১২ দিন কেন ১২ বছরের বড় হলেও মানুষ ভালবাসার জন্য বিয়ে করে।
তাছাড়া প্রায় পুরুষ ই নারীদের চেয়ে ১০ ১২ বছরের বড় থাকে।কই তখন তো কারো সমস্যা হয়না।
তখন মেয়েদের বলা হয় মানিয়ে নে।
আর স্ত্রী এক দুই বছরের বড় হলেই যত সমস্যা।
তাছাড়া ১২ দিনের বড় কে কি বড় বলে?
সম বয়সী বলে সমবয়সী।
আর মোটা?
এই মোটা নিয়ে তুই নিজেকে অনেক ছোট ভাবিস তো?
আমি তোকে এই শরীরেই ভালবাসি।
কিন্তু তুই যেহেতু এই মোটার জন্য নিজেকে তুচ্ছ ভাবিস সেহেতু আমি তোকে কথা দিচ্ছি।
তুই আমার উপর বিশ্বাস রাখ,তুই তিন মাসের মধ্যেই সেই আগের বডি সেইপে ফিরে আসবি।
জাস্ট তিন টা মাস তুই আমার কথা মত চলবি।
পারবিনা চলতে আমার কথা মত?
বলনা পারবিনা?
-হুম পারবো।
-তুই শুধু আমার সাথে থাকিস।আমি শুধু দুই পরিবারই না বরং এই পৃথিবীও রাজি করিয়ে ফেলবো।
আমার ভালবাসাকে তুচ্ছ ভাবিস না।
তুচ্ছ ভাবিস না আমার ভালবাসাকে।
আমি তোকে খুব ভালবাসি।আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসি।
কথা গুলো বলেই নিব্রাস ওর চোখ দুটো মুছতে মুছতে চলে গেলো।
আর আমি কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লাম।
আর ভাবতে লাগলাম,
ছেলেটা আমাকে এত ভালবাসে,
যাকে আমি কোন দিন ভালও বাসিনি।
আর যাকে এত টা ভালবেসেছি সেই কিনা আমাকে….
কিছু ক্ষণ পর অফিসে ফোন করলাম আমি।
আর বসকে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিলাম আমি আর জব টা করতে চাইনা।
বাসায়ও জানিয়ে দিলাম জব টা ছেড়ে দিয়েছি আমি।
পরের দিন থেকেই শুরু হলো আমার স্লিম হবার জার্নি।
সকাল হতেই নিব্রাস আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে।
-কি হয়েছে?এত সকালে ডাকছিস কেন?
-ওঠ,ওঠ বলছি।
-এত সকালে উঠে কি করবো?
-হাঁটতে বেড়ুবে।
এক্ষুণি হাঁটতে বের হবো আমরা।
শুধু সকালই না।সন্ধ্যায়ও আমরা দুজন হাঁটতে বের হই।
আর বাসায় তো ওর কথা অনুযায়ী এক্সারসাইজ করাই লাগে।
আর খাবার রুটিনও ও তৈরী করে দিয়েছে।
-এই নে তোর খাবারের লিস্ট।
-এটা কি?চকোলেট থেকে শুরু করে মিষ্টি জাতীয় সব বাদ?ভাতও বাদ?শুধু ফলমূল,মাছ মাংস,আর শাক সবজি খাবো?
-তুই আপাতত তিন মাস আমার কথা মত চল প্লিজ।
জাস্ট তিন টা মাস।স্লিম হতে চাস কিনা?
-হুম চাইতো।
-তাহলে চুপচাপ আমার কথা মত সব ফলো কর।
আমি নিব্রাসের কথা মতোই সব ফলো করি।
এদিকে নিব্রাসের মা, বাবা,বোনও গ্রামের বাড়ীতে পার্মানেন্ট ভাবে এসে যায়।
কেটে যায় তিন টা মাস।
নিব্রাস বাসায় যাবার পর আমাকে ফোন দিয়ে দিয়ে রুটিনের সব কিছু মনে করিয়ে দেয়।
ঘুম ভাঙায়।
সব মেইন্টেন করায়।
আমি ওকে বলি,তিন মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত ও যেন আমার সামনে না আসে।
যদিও ও প্রথমে রাজি হয়না।
কিন্তু আমার জেদের কাছে পরে হার মানে।
কেটে যায় তিন তিন টা মাস।
ঠিক তিন মাস পর আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই।
এর আগে আমি আয়না দেখেছি একবার কি দু বার।
যদিও ড্রেস সব ঢিলেঢালা হয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারছিলাম।
আমি আমার চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
তিন মাসে আমার এত পরিবর্তন।
আমি নিব্রাসকে ফোন দিয়ে আসতে বলি ওই নদীর পাড়ে।
নিব্রাস আমি যাবার আগেই ওই খানে অপেক্ষা করে।
আমি গিয়ে পেছন থেকে ওর চোখ ধরি।
যখন আমি ওর চোখ ছাড়ি তখন ও আমাকে দেখে ওর মাথায় হাত রাখে।
(খুশিতে)
-কেমন লাগছে আমাকে?
-ও মাই গড।
-হুম হুম বলনা,
-তুই শাড়ী পরেছিস?
-অসভ্য,তুই আমার শাড়ী পরা দেখলি?
আমাকে দেখলি না?
-হা হা হা।

তোকে রাগাতে চেয়েছিলাম আমার অপ্সরী।
হয়ে গেছিস এত সুন্দরি।
এবার কি আমাকে পাত্তা দিবি?
আমি নিব্রাসকে কেন যেন কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলাম।
-হয়েছে হয়েছে এখন কান্না থামান।
কথাটা বলেই নিব্রাস আমাকে ছেড়ে মাটিতে বসে পড়ে।
আর পকেট থেকে ছোট্ট একটা বক্স বের করে সেটা থেকে একটা রিং বের করে নিয়ে রিংটা আমার সামনে ধরে হাত বাড়িয়ে বলে,
তো মিস তিয়াসা আহমেদ,
আপনি কি মিঃ নিব্রাস চৌধুরীর এক মাত্র স্ত্রী হবার জন্য প্রস্তুত আছেন?
-প্রস্তুত থাকলে কি?
এক চাপবো?
-হা হা হা।না এই রিং পরবি।
-তুই না পরিয়ে দিলে পরবো কি করে হুম?
নিব্রাস এক টানে আমাকে কাছে এনে আমার আঙুলে আংটিটা পরিয়ে দেয়।
আর আমার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
আমি আজই সবাইকে বাসায় গিয়ে তোর কথা জানাবো।
তুই কোন চিন্তা করিস না।
আমরা দুজন দুজনের বাসায় চলে আসি।
কিন্তু আমি জানি,
ওর পরিবার কোন দিনও এই সম্পর্কের জন্য রাজি হবেনা।
কিন্তু নীলকে একটা শিক্ষা যে আমার দিতেই হবে।
চলবে…