জীবনের গল্প

জীবনের গল্প !! Part- 07

কিন্তু আমি জানি,
ওর পরিবার কোন দিনও এই সম্পর্কের জন্য রাজি হবেনা।
কিন্তু নীলকে একটা শিক্ষা যে আমার দিতেই হবে।
নিব্রাস বাসায় গিয়েই আমাকে ফোন দেয়।
-অপ্সরী,
-কিছু বলবি?
-না কিছুনা।
-আচ্ছা।
লাইন কেটে দেয়।
আবারো ফোন,
-সুন্দরি,
-বল,
-না কিছুনা,রাখছি।
আবার ফোন,
-বউ,ও বউ
-কিইই?বড় আপু বল।
আমি না তোর ১২ দিনের বড়?
-ধুর আর ফোনই দিবোনা রাখলাম।
-হি হি হি।রাখ।
আবার ফোন
-হুম ছোট ভাই বল।
-দাঁড়া,আগে বিয়েটা করে নেই।তারপর এর প্রতিশোধ নিবো আমি।
-এই জন্যই তো বিয়েই করবোনা।
-কিই?
-জ্বী।
-তোকে বিয়ে কে করতে বলেছে?বিয়েতো করবো আমি।তুই তো বিয়ে বসবি।
হা হা হা।
-বাদুড় কোথাকার।
-রাখছি।খেয়ে নিস।মিস ইউ।
-হুম,তুইও খেয়ে নিস।
রাতে নিব্রাস রাতের বেলা খাওয়াদাওয়া শেষ করে ওর বাবা মা ভাই বোন সবার সামনে বলে,
-আমি সবাইকে কিছু কথা বলতে চাই।
-কি কথা ছোট?
-বাবা,মা আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি।
আর ওকে বিয়ে করতে চাই।
ভাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানের দিনই আমি বিয়েটা করে ফেলতে চাই।
অনার্সের এক্সামতো দিলামই।এখন একটা জবে জয়েন করবো।
তারপর মাস্টার্সটা শেষ করবো।
তোমাদের কোন আপত্তি আছে?
-নারে বাবা কোন আপত্তি নেই আমাদের।

আমরা তো আরো খুশি।
আমাদের দুই ছেলের বউ এক দিনেই বাড়ীতে পা রাখবে।
তো মেয়েটার বাসা কই?কি করে নাম কি?
-মেয়েটা আর কেউ নয়।আমাদের তিয়াসা।তিয়ারা ভাবীর বোন।
কথা টা শোনার সাথে সাথে নীলাদ্রীস বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।
-কি বলছিস তুই?
-কেন?কোন সমস্যা?
-এটা কি করে হয়?ও আমার ওয়াইফের বড় বোন।
-তাতে কি?
-তুই আমার ছোট ভাই,আর আমার বউ এর বড় বোনকে বিয়ে করবি?
-আজব তো,এখানে সমস্যা কোথায়?
-সমস্যা এই,
তিয়াসা তোর থেকে বড়।
-বড়?
-হা হা হা।
মাত্র ১২ দিনের বড়।
এটাকে কি বড় বলে নাকি সেইম এজ বলে?
-বাবা মা তোমরা কিছু বলো।
-নিব্রাস,তুই বিয়ে করতে চাস আমি তোকে বিয়ে করাবো।
কিন্তু তিয়াসাকে না।
অন্য মেয়ে কালই আমি দেখবো।যা এখন তোর রুমে যা।
-আমি ভালবাসি তিয়াসাকে।
সো অন্য কাউকে বিয়ে করার প্রশ্নই উঠেনা।
আর ওর সমস্যা কোথায় দেখাও আমায়।
-ও তোর ভাবীর বড় বোন এটাই সমস্যা।
তাছাড়া তোর সম বয়সী।
বউ নিজের থেকে কমসে কম ৫ বছরের ছোট হতে হয়।
তাহলেই সংসারে সুখ আসে।
নয়তো সম বয়সী হলে সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে।ঝগড়া বিবাদ মারামারি লেগেই থাকে।
-এসব কথা কোন ডিকশনারিতে পেয়েছো তোমরা?
আমি তো আজো পেলাম না।
-এসব চোখে দেখা।
-সম বয়সী হলে দুজনের মধ্যে বুঝাবুঝিটা ভালো হয়।
দুজন দুজনের মন বুঝতে পারে।
ঝগড়া বিবাদ সব সংসারেই হয়।
মানিয়ে নেয়াটাই আসল বিষয়।
তাছাড়া তিয়াসা খুবই ভালো মনের একটা মেয়ে।ও অবশ্যই আমাদের সংসারটাকে গুছিয়ে রাখবে।
আর যেহেতু ভাবী আর তিয়াসা দুই বোন।সেহেতু মিলেমিশেই থাকবে।
কোন ঝামেলাও হবেনা।
-শোন নিব্রাস,তোর সাথে ওকে মানায় না।তুই কত হ্যান্ডসাম।আর ও কত মোটা দেখেছিস।
-হা হা হা ভাই,তুমি হয়তো ওকে এখন দেখনো।
ও আর আগের ও নেই।
-আমি তো ওদের বাসায় তোর ভাবীর সাথে মাঝে মাঝে দেখা করতে যাই।আমার সামনে আসেনা এখন আর।
-সেই জন্যই দেখোনি।
ও পুরা অপ্সরী এখন।
যদিও আমি ওকে সব ভাবেই ভালবাসি।
-মা ও কি বলছে শুনছো?(নীল)
-বাবা তুমি কি বলো?তিয়াসার জন্য তুমি রাজি?আমি তো রাজি না।
-আমিও রাজি না।(মা)
এ বিয়ে তুই করতে পারবিনা।
-কিন্তু আমি রাজি.(বাবা)
-আমি আমার ছেলের মনে কষ্ট দিবোনা।
আমি তিয়াসাকেই ছোটর বউ করে এ বাড়ীতে আনবো।
-আমিও রাজি ভাই,তুই তিয়াসা ভাবীকেই বিয়ে করে আনিস।(বোন)
-কি বলছো তুমি নীলদ্রীসের বাবা?
-হ্যাঁ ঠিকই বলছি।
-ওই তুই জানিস,এই মেয়ের অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে তাই ও বিয়ে করেনা।
-শোন মা,আমি সবই জানি।ও একটা বেঈমানকে ভালবেসেছিলো।
যে ওকে কষ্ট দিয়েছে।
এতেতো ওর কোন দোষ নেই।ওই বেঈমানের অপেক্ষায় থেকেই ও কাউকে বিয়ে করেনি।এখন আর ওই বেয়াদবের সাথে ওর কোন সম্পর্ক নেই।
কারণ ওই ব্যাটা ওর সাথে বেঈমানি করেছে।
নিব্রাসের কথা শুনে নীলাদ্রীসের মুখ কাল্প হয়ে যায়।
ওদের মা নিব্রাসকে চুপ করতে বলে।
আর বলে দেয়,
তুই এই মেয়েকে বিয়ে করতে পারবিনা।
আমার সব কথার এক কথা।
-আর আমিও বলে রাখলাম,
আমি বিয়ে করলে ওই তিয়াসাকেই করবো।
কথা টা বলেই নিব্রাস ওর রুমে চলে আসে।
কিছু ক্ষণ পর নিব্রাসকে আমি ফোন দেই।
রিসিভ করে,তবে বোঝাই যাচ্ছে ওর মন খারাপ।
-কি হয়েছে?মন খারাপ কেন তোর?
-ও কিছুনা।
-কেউ রাজি হয়নি তাইনা?
আমি জানতাম কেউ রাজি হবেনা।
-না, বাবা আর বোন রাজি।
-কি?
-হুম।
শুধু ভাইয়া আর মা রাজি না।
আর ভাবীতো তোর বাসায়,তাই তার কথাও জানিনা।
-এখন কি হবে?
-কি আর হবে,তোর আর আমার বিয়ে হবে।
-কিভাবে হবে?
তোর ভাই আর মা যে রাজিনা।
তাছাড়া আমার পরিবারের সবাইকেও তো বলা লাগবে।
উনারা রাজি না হলে আমার পরিবারও রাজি হবেনা।
ওগুলো তুই আমার উপর ছেড়ে দে।
দেখ শুধু আমি কি করি।
পরের দিন সকালেই নীলের ফোন আমার মোবাইলে।
-হ্যালো,
-কি শুনছি এসব?

-কি শুনছেন?
-নিব্রাস গত কাল রাতে বাড়ীর সবার সামনে বেহায়ার মত বলেছে ও তোমাকে বিয়ে করতে চায়।
-ও ওর মনের কথা প্রকাশ করেছে।এতে বেহায়া হওয়ার কি আছে?
পরিবারের কাছে নিজের কথা প্রকাশ করবেনাতো বাইরের মানুষের কাছে করবে?
-শুধু বেহারার মত না।নির্লজ্জের মত এও বলেছে,বিয়ে যদি করতে হয় তবে তোমাকেই করবে।
কি এমন কালা জাদু করেছো তুমি আমার ভাইকে যে ও তোমার প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছে।
-মুখ সামলে কথা বলো।
কে নির্লজ্জ?নিব্রাস?
নিব্রাস নির্লজ্জ নয়।
বরং তোমার মত কাপুরুষ নয় ও।
যে কিনা ভালবাসার মানুষের জন্য পরিবারকে রাজি করাতে পারেনি।
আর ভালবাসার মানুষকে রেখে তারই ছোট বোনকে বিয়ে করে নিয়েছে।
-ভালো ভাবে কথা বলো তিয়াসা।
-আমি এখনো ভালো ভাবেই কথা বলছি।
কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ভালো ব্যবহারের উপযুক্ত তুমি নও।
রাখছি,
২য় বার আর ফোন দিবেনা তুমি আমায়।
-কিন্তু আমার কথা শোন,
এ বিয়ে তুমি করবেনা।
-আমি তোমার বাড়ীর বউ হয়ে আসবো নীলাদ্রীস,আর তা নিব্রাসকেই বিয়ে করে।
ছোট ভাইয়ের বউকে বরণ করতে রেডি থাকো।
-তবে শুনে রাখো,
তুমি চাইলেই এখন আর সব করতে পারোনা।
কারণ তোমার ছোট বোন এখন আমার হাতেই বন্দি।
-মানে?কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
-হ্যাঁ আমি তিয়ারাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছি এটা ঠিক।
তবে আমার স্বার্থে আঘাত লাগলে ওকে কষ্ট দিতে আমি এক সেকেন্ডও ভাব্বোনা।
এবার ভাবো,
কি চাও তুমি?
বোনের সুখ নাকি নিজের জেদ বজায় রাখা?
-নীল,এসব কি বলছো তুমি?তুমি এমন টা করতে পারবে?
-হা হা হা।আমি সব পারি।
-তুমি আজই নিব্রাসকে জানিয়ে দিবে তুমি নিব্রাসকে বিয়ে করতে চাওনা।
নয়তো কি হবে তা তো বোঝই।
নীল ফোন রেখে দেয়।
এদিকে আম্মু আমাকে ডেকে পাঠায়।
-কি হয়েছে?এভাবে ডাকছো কেন?
-কি শুনছি এসব?
-কি শুনছো?
-নীলাদ্রীসের মা ফোন দিয়েছিলো।
-হুম।
-তুই নাকি নিব্রাসকে বিয়ে করতে চাস?
-হ্যাঁ চাই।
-কিন্তু আমরা কেউ তো রাজি না।
আর ওরাও কেউ রাজি না।
এ বিয়ে তুই করতে পারবিনা।
আজই নিব্রাসকে তুই না করে দিবি।
-কিন্তু আম্মু,
-আমি আমার মেয়ের সংসারে কোন অশান্তি চাইনা।
-তুই নিব্রাসকে না করবি এটাই আমার শেষ কথা।
আমি তোর জন্য অন্য ছেলে দেখছি।
আম্মু কথা গুলো বলে চলে যায়।
আর আমি আমার রুমে গিয়ে কাঁদতে থাকি।

এক দিকে নিব্রাস,অন্য দিকে আর সবাই আর আমার বোনের সংসার।
কি করবো এখন আমি?
বড় বোন হয়ে ছোট বোনের সংসারে আগুন লাগাবো?
এদিকে নিব্রাসের ফোন।
মোবাইল বেজেই যাচ্ছে আমার।
একের পর এক কল আসছে,
কিন্তু আমি রিসিভ করছিনা।
কিছু ক্ষণ পর লাইন কেটে দিয়ে মোবাইল টাই অফ করে ফেলি।
যাতে নিব্রাস আর ফোন না দিতে পারে।
চলবে…