অঙ্ক টিচার

গল্প ¦ অঙ্ক টিচার— পর্বঃ- ৭

শার‌মিন আক্তার
____‌লিমাঃ আয়াত তোর আবার কোন বড় ধর‌নের অসুখ ক‌রে‌নি তো?
আয়াতঃ আরে না।
(এ গ‌ল্পে আমার কোন বড় ধর‌নের রোগ শোক হ‌বে না লে‌খিকা বল‌ছে 😀😀😀)
সমস্যাটা তুই জা‌নিস হয়‌তো খেয়াল নেই?
‌লিমাঃ কি সেট‌া আয়াত!
আয়াতঃ তুই‌তে‌া আমার বড় ভাইয়া আয়ান এর কথা জা‌নিস?
‌লিমাঃ হ্যা সে একটা মে‌য়ে‌কে ভা‌লো‌বে‌সে পা‌লি‌য়ে বি‌য়ে করে‌ছি‌লো ব‌লে তোর বাবা তার সা‌থে কোন সম্পর্ক রা‌খে নি।
আয়াতঃ হ্যা। কিন্তু ভ‌াইয়া ভা‌লোবে‌সে বি‌য়ে ক‌রে‌ছে ব‌লে বাবা ততটা রাগ ক‌রে‌নি। আস‌লে বাব‌া তার বন্ধুর এক মে‌য়ের সা‌থে ভাইয়ার বি‌য়ে ঠিক ক‌রে‌ছি‌লো। কিন্তু ভ‌াইয়া বাব‌া‌কে কিছু না ব‌লে বি‌য়ে করায় বাবার বন্ধুর তা‌কে অনেক অপমান ক‌রে‌ছি‌লো। কিন্তু বাবা তার অপমা‌নে অতটা কষ্ট পায় নাই যতটা ভাইয়া তার কা‌ছে স‌ত্যি লু‌কি‌য়ে‌ছে ব‌লে পে‌য়ে‌ছে। বাবা আগেই ব‌লে‌ছে তি‌নি মিথ্যা‌কে ঘৃনা ক‌রেন। আর তাছাড়া বাবা সবসময় আমা‌দের সা‌থে বন্ধু সুলভ ছি‌লো। কিন্তু তবুও ভাইয়া ব‌লে‌নি।
তারপর থেকে বাবা ভাইয়ার সা‌থে কোন সস্পর্ক রা‌খে‌নি। আমি অনেকবার চেষ্ট ক‌রে‌ছি বাবা‌কে বুঝানোর কিন্তু তি‌নি আমার কোন কথাই শো‌নেন‌নি। আস‌লে মানুষ একবার তীব্র কষ্ট পে‌লে তার মনটা পাথ‌রের মত হ‌য়ে যায়। তখন শত অা‌বেগ অনুভু‌তি তার মন‌কে ছু‌তে পা‌রে না। বাবার ক্ষে‌ত্রেও তাই হ‌য়ে‌ছে।
‌লিমাঃ কিন্তু আয়াত তোর ভাইয়ার ভা‌লোবাসার সা‌থে তোর ভা‌লোবাসার কি সম্পর্ক?
আয়াতঃ হ্যা। সেটাই বল‌ছি? আচ্ছা লিমা তুই কি জা‌নিস তনয়া আমা‌কে ঠিক কত দিন ধ‌রে ভা‌লোবাসে?
‌লিমাঃ হ্যা প্রায় চার বছর।
আয়াতঃ নাহ। তিন বছর আট মাস ধ‌রে আমি তনয়ার চো‌খে আমার জন্য ভা‌লোবাসা দে‌খে‌ছি। কিন্তু জা‌নিস আমি তনয়া‌কে ঠিক কত দিন ধ‌রে ভা‌লোবা‌সি?
‌লিমাঃ ঠিক কত দিন বলে‌তে পার‌বো না? ত‌বে তনয়ার থে‌কে কম দিন।
আয়াতঃ (কিছুটা হে‌সে) চার বছর তের দিন ।
‌লিমাঃ অবাক হ‌য়ে কি? তুই তনয়া‌কে আগে থে‌কে চিন‌তিস?
আয়াতঃ হ্যা। তনয়া‌কে আমি প্রথম দে‌খি আমার এক বন্ধু র‌বির বাসায়। আর প্রথম দেখায় তনয়ার উপর কেমন যে‌নো একটা অনুভু‌তি কাজ করা শুরু ক‌রে দি‌য়ে‌ছি‌লো। র‌বির ছোট বোনের জন্ম‌দি‌নে এসে‌ছি‌লো তনয়া। কারন তনয়া র‌বির বো‌নের বান্ধ‌বি। জা‌নিস র‌বির ছোট বোন কে?
‌লিমাঃ কে?
আয়াতঃ তনয়ার সব চে‌য়ে কা‌ছের বান্ধ‌বি নেহা! তারপর নেহার থে‌কেই তনয়ার সমন্ধে সব কিছু জা‌নি। সব জে‌নে দেখলাম তনয়া আমার থে‌কে প্রায় ছয় বছ‌রের ছোট। আর এত ছোট বয়‌সি মে‌য়ের সা‌থে রি‌লেশন করাটা নেহাৎ বোকা‌মি। আর তাছাড়া তনয়া তখন রি‌লেশ‌নে জড়া‌লে ওর পড়া‌লেখায় ক্ষ‌তি হ‌তো। ওর ভ‌বিষ্যৎ অন্ধকা‌রের দিকে যে‌তো। যা‌কে এতটা ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে‌ছি তার ভ‌বিষ্যৎ কিভা‌বে নষ্ট ক‌রি বল?
আর তাছাড়া দু‌টো মানুষ যখন রি‌লেশ‌নে থা‌কে তখন একে অপ‌রের মা‌ঝে কিছু দিন পর শয়তা‌নের তারনায় একটা আলাদা অনুভু‌তি তৈরী হয়। চুম্ব‌কের বিপরীত মেরু যেমন এ‌কে অপর‌কে আকর্ষন ক‌রে ঠিক তেম‌নি প্রে‌মিক প্রে‌মিকার ম‌ধ্যেও এ আর্কষন কাজ ক‌রে। আর তখন তারা না চাই‌তেও নোংড়া‌মি‌তে জড়ি‌য়ে প‌রে। আমি‌তো ছে‌লে নোংড়া‌মি ক‌রে পার পে‌য়ে যেতাম কিন্তু আমার তনয়া‌তো ছোট ও হয়‌তো সমা‌জের পেচ বুঝ‌তে না পে‌রে নি‌জের ক্ষ‌তি ক‌রে বস‌তো। তাই সবসময় তনয়ার থে‌কে দূ‌রে দূ‌রে থে‌কে ওকে ভা‌লো‌বে‌সে‌ছি।
‌কিন্তু উপরওয়ালা বোধয় আমা‌দের নি‌য়ে খেল‌তে ভা‌লোবা‌সে আমি তনয়া‌কে পড়া‌নোর কথা শু‌নেই না করে দিলাম কিন্তু বাবার কথা ফেল‌তে পারলাম না। কিন্তু তারপর তনয়া‌কে প্রথম বার পা‌র্কে এই কার‌নে চড় মেরে‌ছিলাম যে তনয়া যে‌নো ভুল প‌থে পা না বাড়ায়! আমি হয়‌তো তনয়া‌কে পড়াতাম না তাই অন্য কোন ছে‌লে যা‌তে না পড়ায় তাই তনয়ার জন্য আমিই টিচার ঠিক ক‌রে দিলাম। তনয়া‌কে স্কু‌লে কেউ প্র‌পোজ করার আগেই তা‌কে যেভা‌বেই হোক তনয়ার থে‌কে দূ‌রে স‌রি‌য়ে দিতাম। তনয়া হয়‌তো দু বছ‌রে আমা‌কে একবার‌ও দে‌খে‌নি কিন্তু দুবছ‌রের এক‌টি দিনও আমি তনয়া‌কে না দে‌খে থা‌কি‌নি।
তারপর হয়‌তো আমার ভা‌গ্যের জো‌ড়ে তনয়া আমার ক‌লে‌জেই ভ‌র্তি হ‌লো। জা‌নিস তখন আমি কতটা খু‌শি ছিলাম। যে রোজ তনয়া‌কে দেখ‌তে পা‌বো। রোজ রোজ ক্লা‌সের সবাই‌কে পড়া‌নোর বাহানায় বার বার তনয়া‌কে চো‌রের মত দেখতাম। কিন্তু তার কিছু‌দিন পরই ভাইয়া ঐ ঘটনাটা ঘটা‌লো।
তারপর তনয়া যখন সি‌ড়ি দি‌য়ে প‌ড়ে গি‌য়ে ব্যাথা পে‌য়ে‌ছি‌লো তখন ওর অবস্থা দে‌খে আমার প্রচন্ড কষ্ট হ‌তো। তনয়া সুস্থ হওয়ার পর ক‌য়েক মাস খুব সুন্দর ছি‌লো জা‌নিস । তনয়ার সা‌থে খুব ভা‌লো বন্ধুত্বও হ‌য়ে গে‌ছি‌লো। কিন্তু সমস্যাট‌া হ‌লো ক‌য়েক মাস আগে। তারপর থে‌কেই আমি তনয়া‌কে এভো‌য়েট ক‌রে চল‌তে থা‌কি।
‌লিমাঃ কি হ‌য়ে‌ছে কয়েক মাস আগে?
আয়াতঃ ক‌য়েকমাস আগে এক‌দিন রা‌তে বাবা আমায় বল‌লো আয়াত তো‌কে কিছু কথা বল‌বো রাখ‌বি? আমি বাবা‌কে বললাম কেন রাখবোনা বাবা ব‌লো কি বলবা?
বাবাঃ তোর ভাইয়া‌তো আমার কোন কথা শু‌নে‌নি! আমার সম্মা‌নের কথাও ভা‌বে‌নি! কিন্তু আমি তোকে সব থে‌কে বে‌শি ভরশা ক‌রি। তুই কি আমার বিশ্বাস রাখ‌বি?
আয়াতঃ হ্যা বাবা ব‌লো। অবশ্যই রাখ‌বো!
বাব‌াঃ আমা‌কে ছু‌য়ে ওয়াদা কর?
আয়াতঃ হ্যা বাবা এই তোমাকে ছু‌য়ে ওয়াদা করলাম তু‌মি যা বল‌বে তাই শুন‌বো। এবার তো ব‌লো?
বাবাঃ আমি আমার বন্ধুর মেয়ের সা‌থে তোর বি‌য়ে ঠিক ক‌রে এসে‌ছি।
(কথাটা শু‌নে আয়া‌তের পুরো পৃ‌থিবীটা যে‌নো উল্টে গে‌লো।) মে‌য়েটা বর্তমা‌নে বাই‌রে আছে। ক‌য়েক মাস পর দে‌শে আস‌বে তার কিছু দিন পর তোর সা‌থে তার বি‌য়ে হ‌বে। কি‌রে তুই রা‌জি‌তো? না‌কি তুইও আয়া‌নের মত কাউ‌কে ——–?
আয়াত ওর বাবা কথা ভে‌বে নি‌জের ভা‌লোবাসার কথাটা লু‌কি‌য়ে বল‌লো না বাবা তেমন কিছু না! তু‌মি যা ভা‌লো বোঝ তাই ক‌রো। আমি তোমার বিশ্বাস কখ‌নো ভাঙ‌বো না।
বাবাঃ আমি জানতাম তুই এই কথাই বল‌বি। এই নে মে‌য়েটার ছ‌বি। ফোন নাম্বার নি‌বি?
আয়াতঃ তার দরকার নাই বাবা! তু‌মি যখন পছন্দ ক‌রে‌ছো তখন ভা‌লোই হ‌বে।
বাবার এই কথা শোনার পর থে‌কেই আমি তনয়ার থে‌কে দূ‌রে দূ‌রে থাকতাম। কারন যতই ওর কা‌ছে যা‌বো ততই ওর মায়ায় জ‌ড়ি‌য়ে পড়‌বো। কিন্তু পা‌জি মে‌য়েটা আমা‌কে ক্ষেপা‌নোর জন্য নয়ন এর সা‌থে কথা বলার নাটক কর‌লো। সেটা দে‌খে মাথা গরম হ‌য়ে যায় তার পর ওকে চড় মে‌রে‌ছিলাম। কিন্তু ওকে চড় মারায় ও যতটানা ব্যাথা পে‌য়ে‌ছে তার থে‌কে শতগুন বে‌শি ব্যাথ‌া আমার হৃদ‌য়ে লে‌গে‌ছে। তাই‌তো নি‌জের ভা‌লোবাসাটা‌কে আড়াল কর‌তে না পে‌রে ওকে পাগ‌লের মত জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে রে‌খে ছিলাম।
আমি য‌দি তনয়া‌কে এসব কথা ব‌লি মে‌য়েটা পাগ‌লের মত হ‌য়ে যা‌বে লেখা পড়ার অবস্থা খুব খারাপ হ‌য়ে যা‌বে। তাই‌তো ওকে ব‌লে‌ছি ওর পরীক্ষার পর ওকে সব স‌ত্যিটা ব‌লে দে‌বো। ‌কিন্তু আমি ভাব‌ছি আমি য‌দি ওকে স‌ত্যিটা ব‌লি তাহ‌লে তখন ওর অবস্থা কি হ‌বে?
এবার বুঝ‌ছো কি সমস্যা?
‌লিমাঃ গাধা, গদ্রভ , উল্লুক, বলদ তোর মাথায় কমন‌সেন্স ব‌লে কিছু আছে? তুই তোর বাবার কোন কথা না শু‌নেই বোকার মত ওয়াদা জ‌রে বস‌লি? আরে আগে আঙ্কেল এর কথাটা শু‌নেতো নি‌তি?
আয়াতঃ এখন কিছু করার নেই রে?
‌লিমাঃ হ্যা তা থাক‌বে কেমনে? করার পথ তো তুই বন্ধ ক‌রে দি‌ছোস? আচ্ছা মে‌য়েটার ছ‌বি আছে এখন তোর কা‌ছে?
আয়াতঃ হ্যা আমার মোবাই‌লে ম‌নে হয় আছে?
‌লিমাঃ দে‌খি!
আয়াত মোবাইলটা বের ক‌রে অনেক্ষন খ‌ু‌জে ছ‌বিটা লিমা‌কে দেখা‌লো।
‌লিমাঃ ছ‌বিটা হা‌তে নি‌য়ে বল‌লো। এই চুন্নি। আরে তনয়া‌তো এর থে‌কে হাজার গুন বে‌শি সুন্দর। তনয়ার সাম‌নে তো এটা চা কম পা‌নি লাগ‌বে। আচ্ছা মে‌য়েটার সা‌থে কথা বল‌ছিস?
আয়াতঃ তোর মাথা ঠিক আছে নাহ?
‌লিমাঃ তোর ওপর যা রাগ হ‌চ্ছে না। আমি য‌দি তনয়ার জায়গায় থাকতাম ত‌বে তো‌কে মে‌রে এই সমু‌দ্রেই ফে‌লে দিতাম। জা‌নিস যখন বল‌লি তোর বাবার বন্ধ‌ুর মে‌য়ে এক মূহু‌র্তেই ম‌নে হ‌য়ে‌ছি‌লো হয়‌তো মে‌য়েটা তনয়া। কিন্তু সব ধারনা সবটা স‌ঠিক হয় না‌রে।
আয়াতঃ জ‌া‌নি। কিন্তু এখন আমার আর কিছু করার নাই।
‌লিমাঃ তা কিভা‌বে পার‌বি? এবনরমাল আবাল ছে‌লে কোথাকার!
এই ব‌লে রাগ ক‌রে লিমা চ‌লে গে‌লো। লিমার রাগ হওয়াটা অস্বাভা‌বিক কিছুনা।
আয়াত চুপচাপ ওখা‌নে বা‌লির ওপর ব‌সে সাগ‌রের পা‌নে অপলক দৃ‌ষ্টি‌তে তা‌কি‌য়ে আছে। আর চোখ থে‌কে টপ টপ ক‌রে নোনা তরল গু‌লো ঝ‌ড়ে পড়‌ছে, যেগু‌লো আবার নোনা বা‌লিগু‌লো নি‌জের বু‌কে ধারন ক‌রে নি‌চ্ছে।
তনয়া আয়া‌তের সামনে এসে কিছুক্ষন দা‌ড়িয়ে দেখ‌ছে কিভা‌বে আয়া‌তে‌র চোখ থে‌কে জল ঝড়‌ছে? হঠাৎ তনয়া আয়া‌তের চো‌খের পা‌নিটা ধ‌রে ফেল‌লো। আয়াত তনয়ার দি‌কে তাকা‌লো। তনয়া বল‌লো
তনয়াঃ জা‌নেন স্যার আমার মা ব‌লে‌ছি‌লো ছে‌লেরা না‌কি খুব বে‌শি কষ্ট না পে‌লে কাঁ‌দেনা? আর য‌দি কাঁ‌দে তাহ‌লে ছে‌লে‌দের চো‌খের জলগু‌লো না‌কি মু‌ক্তোর চে‌য়েও দা‌মি হয়। আর আপ‌নি এত দা‌মি জি‌নিস গু‌লো‌কে এভা‌বে অপচয় কর‌ছেন।
আয়াত তারপরও অপলক দৃ‌ষ্টিতে তা‌কি‌য়ে আছে। তনয়া আবার বল‌লো****
তনয়াঃ মা আরো ব‌লে‌ছেন য‌দি আমা‌দের ম‌নে খুব বে‌শি কষ্ট লা‌গে তাহ‌লে নি‌জের কা‌ছের মানু‌ষের কাউ‌কে জড়ি‌য়ে ধ‌রে কাঁদ‌লে না‌কি কষ্টা ক‌মে যায়।
আপ‌নিও আপনার কা‌ছের কাউ‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরে কাঁদুন দেখবেন মন হালকা লাগ‌বে। দাড়ান আমি লিমা আপু‌কে ডে‌কে দি‌চ্ছি।
এই ব‌লে তনয়া সাম‌নে পা বাড়া‌নোর আগেই আয়াত তনয়ার হতটা টে‌নে ধর‌লো। তনয়া পিছ‌নে ফি‌রে তাকা‌নোর সা‌থে সা‌থে আয়াত তনয়া‌কে টান দ‌য়ে নি‌জের বু‌কের মা‌ঝে চে‌পে ধ‌রে। শক্ত ক‌রে তনয়া‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে আয়াত কান্না কর‌ছে। তনয়া কিছু হতভম্ব হ‌য়ে গে‌লো। কিন্তু আয়া‌তের এ অবস্থা দে‌খে কিছু বল‌লো না। শুধু বল‌লো কি হ‌য়ে‌ছে স্যার ? আমা‌কে কি বলা যায়?
আয়াত তনয়া‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে আছে আর ভাব‌ছে আমি তোমা‌কে সারা জীব‌নের জন্য আমার বু‌কে রাখ‌তে চাই। কিন্তু আমি জা‌নি আমি হয়‌তো তোমা‌কে পা‌বো না। কিন্তু তবুও বেহায়া মনটা সবসময় তোমা‌কে আমার ক‌রে পে‌তে চায়।
তনয়া আয়া‌তের থে‌কে নিজেকে ছা‌ড়ি‌য়ে বল‌লো_____
তনয়াঃ চলুন স্যার কিছুক্ষন সাগ‌রের পা‌নি‌তে পা ডু‌বি‌য়ে হা‌টি। সমু‌দ্রের বিশালতায় তা‌কি‌য়ে নিজের কষ্ট গু‌লো‌কে সমুদ্রের ঢেউ এর সা‌থে মি‌শি‌য়ে দেই। যা‌তে ঢেউ পা‌রে এসে আমা‌দের সকল কষ্ট গু‌লো‌কে নি‌জের সা‌থে ভা‌সি‌য়ে নি‌য়ে গি‌য়ে সমু‌দ্রের বু‌কে মি‌লি‌য়ে দেয়। তারপর তনয়া আয়া‌তের হাত ধ‌রে সমু‌দ্রের পা‌রে হাট‌তে লাগ‌লো।
আয়াত তা‌কি‌য়ে দেখ‌ছে তনয়া‌কে। তনয়ার চুল গু‌লো প্রবল বাতা‌সে বার বার ওর মু‌খে পর‌ছে। আর তনয়া সেগু‌লো বার বার সরা‌নোর বৃথা চেষ্টা কর‌ছে। আয়া‌তের মন চা‌চ্ছে তনয়ার অবাধ্য চুল গু‌লো নিজ হা‌তে ওর কা‌নের পিছ‌নে গু‌জে দিতে। আল‌তো ক‌রে তনয়ার গালটা‌কে ছু‌য়ে দি‌তে। ওর চো‌খে দি‌কে তাকি‌য়ে ‌চো‌খের গভীরতায় হা‌রি‌য়ে যুগ যুগ কা‌টি‌য়ে দি‌তে। আর বার বার বল‌তে ইচ্ছে ক‌রে। আই লাভ ইউ তনয়া , আই লাভ ইউ এ লট।
হঠাৎ ফো‌নের রিং এর শ‌ব্দে আয়া‌তের ভাবনায় ছেদ পর‌লো।
আয়াতঃ হ্যা লিমা বল?
‌লিমাঃ স্য‌রি। তখন তোর উপর রাগ উঠে গে‌ছি‌লো। তাই তো‌কে যাতা ব‌লে ফে‌লে‌ছি।
আয়াতঃ ইট’স ওকে।
‌লিমাঃ শোন আয়াত ভ‌বিষ্য‌তে কি হ‌বে তা হয়‌তো আমরা জা‌নি না? কিন্তু বর্তমানটা‌কে‌তো আমারা নি‌জে‌দের মত সাজা‌তে পা‌রি? তোর জীব‌নে পরবর্তীতে কি হবে ত‌া আল্লাহর উপর ছে‌ড়ে দে। কিন্তু যে দু‌দিন তুই এখানে আছিস তনয়ার সা‌থে ভা‌লো ভা‌বে কথা বল। ওর সা‌থে ভা‌লো সময় কাটা। হতে পা‌রে এই দু‌দিন তোর জীব‌নের সব‌চে‌য়ে সু‌খের মূহুর্ত হ‌য়ে স্মৃ‌তির পাতায় র‌য়ে যা‌বে। পার‌লে আমার কথাটা রা‌খিস। বাই ।
‌লিমা ফোনটা কাটলে আয়াত ফোনটা প‌কে‌টে রে‌খে তনয়া‌কে বল‌লো—-
আয়াতঃ তনয়া!
তনয়াঃ হ্যা বলুন স্যার?
আয়াতঃ আচ্ছা তনয়া যে দু‌দিন আমর‌া এখা‌নে থাক‌বো সে দু‌দিন কি আমরা বন্ধু হ‌তে পা‌রি?
তনয়াঃ মি‌ষ্টি একটা হা‌সি দি‌য়ে কেন নয়?
আয়াতঃ থেংক্স।
তনয়া আয়াত‌কে ধাক্কা মে‌রে পা‌নিতে ফে‌লে দি‌য়ে হাস‌ছে।
আয়াতঃ এটা কি কর‌লে?
তনয়াঃ কেন আমরা না এখন বন্ধু!
আয়াতঃ আচ্ছা দাড়াও তোম‌া‌কেও চোবা‌বো এখন।
তনয়াঃ নো ব‌লে দি‌লো দৌড়।
সারা‌দিন দুজ‌নে অনেক মজা কর‌লো। তারপর সন্ধ্যা‌বেলা যখন দুজন হে‌টে হে‌টে হো‌টে‌লে ফির‌ছি‌লো তখন আয়াত হাট‌ছে আর ভাব‌ছে যে‌দিন তনয়া স‌ত্যিটা জান‌বে ও ঠিক কি রকম রিয়াক্ট কর‌বে তা ভে‌বেই মনটা সমু‌দ্রে ওঠা অশান্ত ঝ‌ড়ের মত উথাল পাথাল কর‌ছে—–
চল‌বে——-