অঙ্ক টিচার

গল্প ¦ অঙ্ক টিচার— পর্বঃ- ৬

শার‌মিন আক্তার
_আয়াত পা‌র্কে ব‌সে আবার তনয়া‌কে একটা চড় মার‌লো। পা‌র্কের অনেক লোক তা‌কি‌য়ে আছে এ অবস্থা দে‌খে।
তনয়া গা‌লে হাত দি‌য়ে দা‌ড়ি‌য়ে আছে। আজ ওর চোখ থে‌কে অশ্রু নদী বই‌ছে না কিন্তু খু‌শি‌তে চোখ দু‌টো ছলছল করছে।
আয়াত ওকে চড় মে‌রে কিছুদূর গি‌য়ে নি‌জের হাতে স‌জো‌ড়ে একটা আঘাত কর‌লো তনয়া দৌ‌ড়ে গি‌য়ে ওর হাতটা ধ‌রে বল‌লো।
তনয়াঃ মাথা ঠিক আছে আপনার?
আয়াত কোন কথা না ব‌লে তনয়া‌কে নি‌জের বু‌কের সা‌থে শক্ত ক‌রে চে‌পে ধ‌রেলো। তনয়া হতভাগ হয়ে গে‌লো। তনয়া নি‌জে‌কে ছাড়া‌নোর চেষ্টা কর‌ছে কিন্তু পার‌ছে না। কারন আয়াত ওকে এতোটা শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে আছে তনয়া চেষ্টা ক‌রে নি‌জে‌কে ছাড়া‌তে পার‌ছে না।
নেহা আর নয়ন( তনয়ার ক্লাসমেট) ওদের দি‌কে তা‌কি‌য়ে মুচ‌কি মুচ‌কি হাস‌ছে। কারন ওদের প্ল্যান কাজে দি‌য়ে‌ছে।
প্ল্যানটা কি? চলুন তিনমাস আগে—–
‌লিমার সা‌থে কথা বলার পর তনয়া অনেক বার বি‌ভিন্নভা‌বে আয়া‌তের সমস্যাটা জান‌তে চেষ্টা ক‌রে‌ছে কিন্তু সব বারই ব্যার্থ হ‌য়ে‌ছে। তাই ভাব‌লো আয়াত স্যার যেমন লিমার নাম ক‌রে আমা‌কে ক্ষে‌পি‌য়ে‌ছে তেমন কিছু কর‌লে কেমন হয়?
তাই নেহার সা‌থে কথ‌া বল‌লো। কারন নেহা তনয়া বিষ‌য়ে প্রায় সব কথাই জা‌নে। তাই‌ নেহা বল‌লো সেটাই ঠিক হ‌বে। তুই অন্য কারো সা‌থে রি‌লেশন ক‌রো শুন‌লে আয়াত স্যা‌রের ভিষন হিংসা হ‌বে।
তনয়াঃ কিন্তু নকল বয়ফ্রেন্ড কোথায় পা‌বো?
‌নেহাঃ এককাজ কর আমার বয়‌ফ্রেন্ড মা‌নে নয়ন‌কে ক‌য়েক‌দি‌নের জন্য ধার‌ নে! আর আমার আর নয়ন এর সম্প‌র্কের কথা‌তো তেমন কেউ জা‌নে না । তাই স‌ন্দেহ হ‌বে না। নয়ন‌কে আমি বু‌ঝি‌য়ে বল‌বো।
শুধু দুজন আয়াত স্যা‌রের সাম‌নে হে‌সে হে‌সে কথা বল‌বি। আর কিছু কর‌বি না কিন্তু! নয়ন কিন্তু আমার ম‌নে রা‌খিস!
তনয়াঃ চুপ! আমার টেস্ট অত খারাপ না যে অন্যের ইউস করা জি‌নিস নিজে ব্যবহার কর‌বো। আমার জন্য‌ তো আমার অঙ্ক টিচারই ঠিক আছে!
‌নেহাঃ মুখ ভেং‌চি কে‌টে হুমমমম।
প‌রের দিন থে‌কে প্ল্যান মত কাজ করা শুরু কর‌লো। আয়াত ক্লা‌সে আস‌লে তনয়া নয়ন এর সা‌থে কথা বল‌তো হাসাহা‌সি করতো। ক‌লেজ থেকে প্রায়ই একসা‌থে যে‌তো।
এমন‌কি আয়া‌তের বাসায় গি‌য়েও দুজন একসা‌থে বস‌তো কথ‌া বল‌তো।
আয়াত সেগু‌লো নো‌টিশ কর‌তো। আর ভিষন রা‌গি চো‌খে তনয়ার দি‌কে তাকা‌তো।
তনয়া সেগু‌লো দে‌খে মনে ম‌নে হাসতো। আর বল‌তো আমা‌কে কষ্ট দেয়া না। এবার দেখ‌বে আর জ্বল‌বে আর লু‌চির মত ফুল‌বে। হি হি হা হা।
‌তো সে‌দিন আয়াত পা‌র্কে আস‌বে সেটা তনয়া জান‌তে‌া তাই আগে থে‌কেই নয়‌নের সা‌থে পা‌র্কে গি‌য়ে ব‌সে বসে কথা বল‌ছে আর জো‌ড়ে হাস‌ছে। সেটা দে‌খে আয়া‌তের পা থে‌কে মাথা পর্যন্ত গরম হ‌য়ে গে‌লো।
সা‌থে সা‌থে গি‌য়ে তনয়ার সাম‌নে দাড়া‌লো। তনয়া হাতটা টান দি‌য়ে দাড় ক‌রি‌য়ে।
ঠাসসসসসস
আয়াত এখ‌নো তনয়া‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে আছে। তনয়াও এখন নি‌জে‌কে ছাড়া‌নোর বৃথা চেষ্টা কর‌ছে না। আয়া‌তের বু‌কে কান পে‌তে ওর হৃদ‌য়ের আওয়াজটা শোনার চেষ্টা কর‌ছে। চোখ বন্ধ ক‌রে অনুভব কর‌ছে ওর হৃদ‌য়ের আওয়াজটা।
হঠাৎ কি একটা ম‌নে ক‌রে আয়াত তনয়া‌কে ছে‌ড়ে দি‌য়ে চ‌লে যে‌তে চাই‌লো। এবার তনয়া আয়া‌তের হাতটা টে‌নে ধর‌লো।
তনয়াঃ দাড়ান!
আয়াত মাথা নিচু ক‌রে দা‌ড়ি‌য়ে আছে।
তনয়াঃ যখন তখন আমা‌কে চড় মার‌বেন আবার জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌বেন! আমার গাল‌টাকি বাংলা‌লিং দা‌মে পাই‌ছেন। চড় মার‌লেন তো মার‌লেন তারপর টানা দশ মি‌নিট জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে রাখ‌লেন। দে‌খেন লোকজন কেমন ক‌রে তা‌কি‌য়ে আছে। আপনার সমস্যাটা কি? বল‌বেন?
আয়াতঃ কোন সমস্যা নাই। আমার কাজ আছে!
তনয়াঃ যতই কাজ থাকুক আমার প্র‌শ্নের উত্তর না দি‌য়ে যে‌তে পার‌বেন না?
আয়াতঃ আমি তোমার প্র‌শ্নের উত্তর দি‌তে বাধ্য নই!
তনয়াঃ বাধ্য একশ বার বাধ্য।
তনয়া আয়া‌তের হাতটা ধ‌রে টে‌নে নি‌য়ে নদীর পা‌রে নি‌রি‌বি‌লি একটা জায়গায় নি‌য়ে বল‌লো——-
তনয়াঃ স্যার আমি জা‌নি আপ‌নি আমা‌কে____ কিন্তু আপ‌নি কেন আমায় ইগ‌নোর কর‌ছেন সেটা বল‌বেন প্লিজ? আর হ্যা নয়‌নের সা‌থে আমার কোন সম্পর্ক নাই। এত‌দিন যা দেখ‌ছেন সবটাই আপনা‌কে রাগা‌নোর জন্য।
আয়াত অবাক চো‌খে তনয়া দি‌কে তা‌কি‌য়ে বললো——
আয়াতঃ তনয়া তোমার বয়স কত?
তনয়াঃ কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খে‌য়ে এ্যা! আপনার তো অন্যকিছু বলার কথা?
আয়াতঃ আগে ব‌লো তারপর বল‌ছি।
তনয়াঃ স‌তে‌রো বছর
আয়াতঃ আঠে‌রো বছর হ‌তে কত‌দিন বা‌কি ?
তনয়াঃ এইচ এস সি পরীক্ষার বা‌কি‌তো প্রায় ৫ মাস আর পরীক্ষার ম‌ধ্যেই আঠে‌রোতে পা দি‌বো।
আয়াতঃ তোমার প্র‌শ্নের জবাব গু‌লো আমি তোমার এইচ এস সি পরীক্ষার পর দি‌বো। কিন্তু তার আগে তোমা‌কে আমা‌কে একটা ওয়াদা কর‌তে হ‌বে?
তনয়াঃ কি ওয়াদা?
আয়াতঃ তোমা‌কে পরীক্ষায় ভা‌লো রেজাল্ট কর‌তে হ‌বে। য‌দি তা না ক‌রো তাহ‌লে আর আমার সা‌থে কথা বলার চেষ্টাও করবে না।
তনয়াঃ ওকে ডান।
তনয়া প‌রের দিন থেকে তনয়া ক‌লে‌জে যে‌তো। আয়াত ক্লাস করা‌তো কিন্তু তনয়ার দি‌কে তাকা‌তো না পর্যন্ত। তনয়ার ম‌নে ম‌নে খুব অভিমান হ‌তো আয়া‌তের উপর। এমন‌কি আয়াত‌দের বাসায় পড়‌তে গে‌লেও আয়াত চুপচাপ পড়া‌তো কিন্তু সহ‌জে তনয়ার দিকে তাকা‌তো না। আয়া‌তের এমন আচার‌নে তনয়া খুব কষ্ট লাগ‌তো। আয়া‌তের এভা‌বে ইগ‌নোর করাটা তনয়া মে‌নে নিতে পার‌ছি‌লো না।
ক‌য়েক মাস মাত্র বা‌কি পরীক্ষার। তাই ক‌লেজ ক‌মি‌টি আর স্যাররা মি‌লে সিদ্ধান্ত নি‌লো সব পরীক্ষার্থীদের নি‌য়ে কক্সবাজার ঘুর‌তে যা‌বে। যে‌হেতু সব টিচারা যা‌বে তাই আয়াতও তা‌দের সা‌থে যা‌বে। তনয়া সেটা শু‌নে ভাব‌লো আমি গে‌লে হয়‌তো স্যার ঠিকমত এনজয় কর‌তে পার‌বে না। ত‌ার থে‌কে আম‌র না যাওয়াই বেটার। তাই ওর বন্ধুদের বল‌লো ও যা‌বেনা। নেহা সেটা আয়াত‌কে ব‌লে দেয়।
প‌রের দিন আয়াত ক্লা‌সে এসে ব‌লে
আয়াতঃ স্টু‌ডেন্ট এটা একটা শিক্ষা সফর আমার ম‌তে এখা‌নে সবার যাওয়া উচিৎ। কেউ নি‌জের ব্য‌ক্তিগত সমস্যা এটার ম‌ধ্যে টে‌নে না আন‌লেই বোধয় ভা‌লো হ‌বে।
তনয়া বুঝ‌লো আয়াত কথাগু‌লো ইনডায়‌রেক‌লি তনয়া‌কে ব‌লে‌ছে। তনয়া তারপর কি ভেবে যে‌নো যাওয়ার জন্য রা‌জি হ‌য়ে গে‌লো। আগে আয়াত যতটা তনয়া‌কে ইগ‌নোর করতো তনয়া এখন তার থেকে তিনগুন বে‌শি আয়াত‌কে ইগ‌নোর ক‌রে। এসব কর‌তে তনয়ার কষ্ট হয় খুব কষ্ট লা‌গে। কিন্তু তবুও আয়া‌তের উপর রাগ দে‌খি‌য়ে কাজগু‌লো ক‌রে।
আজ ওরা সবাই শিক্ষাসফ‌রে যা‌চ্ছে। তিনটা বাস।। প্র‌ত্যেক বা‌সেই টিচার আছে। কপাল গু‌নে আয়াত তনয়ার বা‌সেই উঠ‌লো। এবং নেহা বু‌দ্ধি খা‌টি‌য়ে আয়াত‌কে তনয়ার পা‌শে ব‌সি‌য়ে দি‌লো। তনয়া সেটা দে‌খে জানালা দি‌য়ে বাই‌রের দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। বাসটা সাই সাই‌ চল‌ছে। প্রায় চৌদ্দ থে‌কে ষোল ঘন্টা বা‌সে থাকা লাগ‌বে। য‌দিও বাস মা‌ঝে মা‌ঝে প‌থে থাম‌বে। কিন্তু তবুও তনয়ার বা‌সে চড়ার তেমন অভ্যাস নাই।
আর তাছাড়া তনয়ার বে‌শিক্ষন জা‌র্নি কর‌লে ব‌মি পায়। তাই তনয়া ব্যাগে ব‌মির, মাথা ব্যাথার ঔষধ নি‌য়ে‌ছি‌লো। কিন্তু বোকার মত সেগু‌লো হ্যান্ড ব্যা‌গে না নি‌য়ে জ‌ামাকাপ‌ড়ের ব্যা‌গে রে‌খে দি‌য়ে‌ছে। যেটা বা‌সের ব‌ক্সে রাখা হ‌য়ে‌ছে। বাস চলার ঘন্টা তিন‌য়ের ম‌ধ্যেই তনয়ার মাথা ব্যাথা শুরু হ‌লো। সা‌থে মাথাও ঘুরা‌চ্ছে ব‌মি পা‌চ্ছে। কিন্তু খুব ক‌ষ্টে তনয়া সেটা আটকা‌নোর বৃথা চেষ্টা কর‌ছে।
আয়াত তনয়ার দিকে তা‌কি‌য়েই বুঝ‌লো ওর খুব কষ্ট হ‌চ্ছে। কারন ইতিম‌ধ্যে তনয়ার চোখ মুখ শু‌কি‌য়ে গে‌ছে। আজ প্রায় দু মাস পর আয়াত তনয়ার সা‌থে ঠিকমত কথা বল‌ছে—-
আয়াতঃ তনয়া তোমার কি খুব কষ্ট হ‌চ্ছে?
তনয়াঃ মাথা না‌ড়ি‌য়ে বল‌লো না।
আয়াতঃ দে‌খে‌া তনয়া কোন সমস্যা হ‌লে না বল‌লে কিভা‌বে বুঝ‌বো?
তনয়াঃ মাথা——
এটুকু বলার সা‌থে সা‌থে ব‌মি করে দি‌লো। আর কোন কথা বলতে পার‌ছে না। শুধু ব‌মি করা‌টা‌কে থামা‌নোর বৃথা চেষ্টা কর‌ছে।
আয়াত সা‌থে সা‌থে ড্রাইভার‌কে বাস থামা‌তে বল‌লে‌া। ড্রাইভার বাস থা‌মানোর পর আয়াত তনয়া‌কে রাস্তার ধা‌রে ব‌সি‌য়ে পা‌নি দি‌লো। তনয়ার ব‌মি করা দে‌খে কোন বন্ধুই ওর কা‌ছে আস‌লো না। কারন ব্যাপারটা স্বাভা‌বিক মানুষ ব‌মি জি‌নিসটা‌কে বড্ড অস‌স্তিকর বিষয় ভা‌বে।
‌কিন্তু আয়াত তনয়ার কা‌ছে গি‌য়ে ওর পি‌ঠে হালকা ভা‌বে হ‌াত বু‌লি‌য়ে দি‌চ্ছি‌লো। ওকে পা‌নি খাই‌য়ে দি‌লো ওর মুখটা ভা‌লোভা‌বে প‌রিষ্কার ক‌রে দি‌চ্ছি‌লো। তনয়া অপলক দৃ‌ষ্টি‌তে আয়া‌তের দি‌কে তা‌কি‌য়ে ভাব‌ছে লোকটার প্র‌ত্যেকটা কা‌জে আমার প্র‌তি ভা‌লোবাসার অনুভু‌তি পাই। কিন্তু কেন আমা‌কে নিজের থেকে এত দূ‌রে রা‌খে? কি তার সেই সমস্যা?
তারপর তনয়া‌কে ঔষধ খাই‌য়ে সবাই আবার বা‌সে উঠে। ব‌মি করার পর তনয়া অনেকট‌া ক্লান্ত হ‌য়ে পরে। যার কার‌নে তনয়া কিছুদূরে যে‌তেই ঘু‌মি‌য়ে প‌রে। বা‌সের প্রায় সবাই অনেক হইহুল্লর করার কার‌নে ক্লান্ত হ‌য়ে ঘুমা‌চ্ছে। আয়াত দেখ‌লো তনয়ার মাথাটা বার বার নি‌চের দি‌কে প‌রে যা‌চ্ছি‌েলো। যেমন ঘু‌মের মা‌ঝে মানু‌ষের হয়। তাই আয়াত নি‌জের হাতটা তনয়ার কা‌ঁধে রে‌খে তনয়ার মাথাটা‌কে নিজের কাঁ‌ধে রাখ‌লো।
আয়াত অপলক দৃ‌ষ্টি‌তে তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। আর ভাব‌ছে ইস য‌দি সারা জীব‌নের মত তোমাকে এভা‌বে রাখ‌তে পারতাম। কিন্তু হয়‌তো আমার ভা‌গ্যে তোমা‌কে পাওয়াটা নাই! তোমা‌কে পে‌লে হয়‌তো জীব‌নে কোন চাওয়া থাক‌তো না। কিন্তু বি‌বে‌কের কা‌ছে আবেগ আর সমস্ত চাওয়া সবসময় পরা‌জিত। আমি জা‌নি তোমা‌কে ভালোবাসাটা আমার তুচ্ছ আবেগ না। কিন্তু স‌ত্যিকা‌রের ভা‌লোবাসাটাও একধ‌রনের তীব্র আবেগ।
খুব ইচ্ছা ক‌রে এই পি‌চ্চি তনয়াটা‌কে আমার হৃদয় খাচায় সারাজীবনের জন্য ব‌ন্দি ক‌রে রা‌খি। কিন্তু আমি জা‌নি হয়‌তো তা সম্ভব না। আমি তোমা‌কে আমার সমস্যার কথাগু‌লো বল‌লে হয়‌তো তোমার জীবটা তছনছ হ‌য়ে যা‌বে। তোমার ভ‌বিষ্যৎটা নষ্ট হ‌য়ে যা‌বে। কারন কষ্ট সহ্য করার বয়সটা যে তোমার এখ‌নো হয়‌নি।
আয়াত তনয়ার দিকে তা‌কি‌য়ে থাকতে থাক‌তে ঘু‌মিয়ে প‌রে। কিছুক্ষন পর তনয়ার ঘুম ভা‌ঙে। কিন্তু তনয়ার ম‌নে হ‌চ্ছে কা‌রো হৃদ‌য়ের মা‌ঝে আছে ও। মাথাটা হালকা উঠা‌তেই দেখে আয়াতের কাঁ‌ধে ওর মাথাটা রাখা। নি‌জের অজা‌ন্তেই তনয়ার মু‌খে হা‌সি ফু‌টে উঠ‌লো।
তনয়া ভাব‌ছে ভ‌বিষ্য‌তে আমি আয়াত স্যার‌কে পা‌বো কিনা জা‌নি না? তার সা‌থে সারা জীবন কাটা‌তে পার‌বো কিনা জা‌নি ন‌া! কিন্তু এই যে মূহুর্ত গু‌লো তার সা‌থে কাটা‌চ্ছি। এর থে‌কে সুন্দর মূহুর্ত আর আমার জীব‌নে আস‌বে কি না আমি তাও জা‌নি না! কিন্তু এই মূহুর্তগু‌লো‌কে আমি আমার সবটা দি‌য়ে উপো‌ভোগ কর‌তে চাই!
হঠাৎ রাস্তার উচু‌নিচু ঢা‌লে বাস লা‌ফি‌য়ে ওঠায় আয়া‌তের ঘুমটা ভে‌ঙে গে‌লো। তনয়াও অনেকটা হ‌চকি‌য়ে উঠ‌লে‌া। তনয়া আয়া‌তের দিকে তা‌কি‌য়ে লজ্জা পে‌য়ে বা‌হি‌রের দি‌কে তাকা‌লো।
আয়াতঃ তনয়া তোমার এখন কেমন লাগ‌ছে?
তনয়াঃ আগের থে‌কে অনেকটা বেটার স্যার।
আয়াতঃ কিছু খা‌বে?
তনয়াঃ নাহ স্যার।
এর ম‌ধ্যেই ব‌াস ঢাকা পৌ‌ছে গে‌লো। ঢাকায় প্রায় ঘন্টা খা‌নেক বাস থাম‌লো। সবাই খাবার জন্য হো‌টে‌লে ডুক‌লো। সবাই যে যার মত খা‌চ্ছে কিন্তু আয়াত তনয়া‌কে শুধু ভাত, ক‌রোলা ভা‌জি আর ডাল দি‌লো।
তনয়াঃ আমি এগুলো খা‌বো না! মুখ বা‌কি‌য়ে
আয়াতঃ সেটা বল‌লে তে‌া হ‌বে না। এখে‌া‌নো অনেকটা পথ জা‌র্নি কর‌তে হ‌বে। অন্য কিছু খে‌লে তু‌মি আবার ব‌মি কর‌বে! দে‌খে‌া তোমা‌কে সা‌পোর্ট কর‌তে আমিও একই খাবার খা‌চ্ছি। প্লিজ খাও তনয়া। নয়‌তো তোমার শরীর আরো খারাপ লাগ‌বে।
তনয়া আয়া‌তের কথা আর ফেলতে পার‌লো না। তাই কষ্ট হ‌লেও খাবারটা খে‌য়ে নি‌লো। তারপর আয়াত ওকে ব‌মির আর মাথা ব্যাথার ঔষধ খাওয়া‌লো
ঢাকা থে‌কে কক্সবাজার পৌছ‌া‌তে অনেক রাত হ‌য়ে গে‌লো। তনয় আর ব‌মি ক‌রে‌নি। হো‌টেল আগে থে‌কেই বু‌কিং করা ছি‌লো তাই কোন সমস্যা হ‌লো না। যে‌হেতু রাত অনেক সবাই খুব ক্লান্তও ছি‌লো তাই খে‌য়েই সবাই ঘু‌মি‌য়ে পর‌লো।
প‌রের‌দিন সকা‌লে সবাই যে যার মত বি‌চে ঘুর‌তে গে‌লো। আয়া‌ত আর তনয়ার আসার কথা শু‌নে লিমাও সেখা‌নে আস‌লো। কারন লিমাতো চট্টগ্রা‌মেই থা‌কে।
‌লিমা‌কে আয়াত তনয়ার সা‌থে হওয়া কথ‌া সবটা খু‌লে বল‌লো।
‌লিমাঃ কিন্তু আয়াত তুই‌কি স‌ত্যিই ওকে ভা‌লোবা‌সিস না?
আয়াতঃ মাথ‌া নিচু ক‌রে নাহ।
‌লিমাঃ এই মিথ্যাটানা তুই অন্য কা‌রো কা‌ছে বলিস। একে বা‌রে ফ্লপ মার্কা এ্যাক‌টিং।
আয়াতঃ ওকে সারা জীব‌নের জন্য আমা‌র ক‌রে পাওয়া মনে হয় আমার কপা‌লে নেই রে?
‌লিমাঃ কি সমস্যা আয়াত? বলনা প্লিজ? ———
চল‌বে———-