1. নতুন গল্পঃ3. রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলোঃখুব যতনে ভালোবাসি তাঁরেলেখাঃ রিয়াদ আহমদ ভূঁইয়া

খুব যতনে ভালোবাসি তারে !1 লেখাঃ রিয়াদ আহমদ ভূঁইয়া

খুব যতনে ভালোবাসি তারে

মেয়েটি তার বান্ধবীদের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেলোনা। অন্যদের চেয়ে তার বোরকাটাও ভিন্ন। বেশ ঢিলেঢালা। আরো বিস্মিত হলাম যখন সে ফুচকা খাওয়ার পর বসে পানি পান করলো। আমি একটি চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চে বসা। পাশেই বাইক রাখা। ওরা এবার নিজেদের মধ্যে গল্প করছে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আসায় তাতে চড়ে বসে ওরা। আমিও তাড়াহুড়ো করে চায়ের বিল মিটিয়ে বাইক নিয়ে ওদের ফলো করতে লাগলাম।

(বিঃ দ্রঃ “খুব যতনে ভালোবাসি তারে !1 লেখাঃ রিয়াদ আহমদ ভূঁইয়া” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)

একটা জায়গায় এসে অটোরিকশাটি থামলো। আমিও থেমে গেলাম। না, ঐ মেয়েটি নামেনি। অন্য একটি মেয়ে নেমেছে। আবার চলতে লাগলো গাড়িটি। কিছুদূর গিয়ে আবার গাড়িটি থামলো। এবার নামলো সেই মেয়েটি। নেমে গাড়িতে থাকা বান্ধবীকে কি না কি বলে গেটের ভেতর ঢুকে গেলো। আমি সামনে এগিয়ে দেখে নিলাম ভালো করে। গেটে লিখা, ‘মায়ের দোয়া ভিলা।’ মনে মনে কিছুটা প্রশান্তি অনুভব করলাম, যাইহোক মেয়েটির ঠিকানাটা তো জেনে গেলাম। ভাবতে লাগলাম, ইস মেয়েটাকে যদি বউ হিসেবে পেতাম!

রাত দশটার দিকে বাড়ি ফিরলাম। মা বসে আছেন। জিজ্ঞেস করলাম,
-কি ব্যাপার, এখনো ঘুমাওনি তুমি?

উত্তরে মা কিছু না বলে পাল্টা আমাকে বকুনি দিলেন। বললেন,
-তোর কি সে খেয়াল নেই যে, বাড়িতে মা অসুস্থ। তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। বিয়ে করে নিলেই তো পারিস। তারপর যখন খুশি বাড়ি ফিরিস অসুবিধে নেই।

বিয়ে নিয়ে মা আমার উপর প্রচণ্ড চটে আছেন। কারণ, চাকরী করি তিনবছর হতে চললো অথচ, এরমধ্যে বাবা মারা যাবার পর মায়ের অনেক অনুরোধ করা সত্বেও আমি বিয়ের জন্য রাজি হইনি। মায়ের খুব শখ তিনি তার নাতি নাতনির মুখ দেখতে চান। তাদেরকে কোলেপিঠে করে মানুষ করে রেখে যেতে চান। কিন্ত সে কি বললেই আর হয়। আমার যে সেভাবে কোন মেয়েকেই মনে ধরেনি। এবার গিয়ে মায়ের কোলে বাধ্য ছেলের মতো শুয়ে পরলাম। আমাকে এভাবে শুয়ে যেতে দেখে মা বলে উঠলেন,

-কি বাছাধন, মতলবটা কি হুম?

মায়ের আঁচলের একটি অংশ আঙ্গুলের মাথায় পেঁচাতে পেঁচাতে আমি বললাম,
-মা, মাগো! ও মা, আজ না একটি মেয়েকে দেখে এলাম।

এই বলে থেমে গেলাম আমি।

আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে এবার মা বললেন,
-ভালো কথা। তা মেয়েটির বাড়ি কোথায় আর কি করে?

আমি বললাম,
-সেটা তো জানিনা। তবে, মেয়েটির বাসা আমাদের নেত্রকোনা শহরেই। আমি তাকে একটি বাসায় ঢুকতে দেখেছি। এটাই হয়ত তাদের বাসা। এর বেশি কিছু জানিনা।

মা বললেন,
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি যাব কাল ওদের বাসায়। কখন নিয়ে যাবি?

আমি কিছুটা অবাক হলাম। বললাম,
-কালই যেতে হবে তোমার? পরে গেলে হয়না?

এবার মা আমার কান টেনে ধরে বললেন,
-মেয়েটির যদি কোথাও বিয়ে দিয়ে দেয় পরে কি হবে? আর এখনো যে মেয়েটির বিয়ে হয়নি বা বিয়ে ঠিক হয়নি সেটাও তো আমরা জানিনা তাইনা?

মায়ের কথাগুলো শুনে আমি আর কিছুই বলতে পারলামনা। চুপচাপ উঠে ডাইনিং রুমের দিকে চলে গেলাম।

মা বাইকের পেছনে বসে থাকতে পারেননা তাই সিএনজি নিয়ে রওয়ানা হলাম। মা ছেলে বসে বসে পাত্রী দেখার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। মাকে শিখিয়ে দিচ্ছি কোন প্রসঙ্গে কোন কথাটি বলতে হবে। কিন্ত মা আমার উপদেশ গ্রহণ করতে নারাজ। তিনি তাঁর মতো করেই সবকিছু করতে চান। আমাদের বাড়ি থেকে জেলা শহর সিএনজি যুগে এক ঘন্টার পথ। আমাকে চাকরীর সুবাদে সপ্তাহের পাঁচদিনই নেত্রকোনা থেকে কেন্দুয়ায় যাতায়াত করতে হয়। আর তাই বাইক কেনা। পথিমধ্যে মায়ের কথায় চার কেজি বালিশ মিষ্টি ও কিছু পান-সুপারি কিনে সাথে নিয়ে নিলাম। খালি হাতে কি আর সম্বন্ধ দেখতে যাওয়া চলে। কিছুক্ষণ পরই গিয়ে মায়ের দোয়া ভিলার সামনে সিএনজিটি থামলো।

মাকে বললাম,
-মা, এটাই সেই বাসা। কাল এই বাসাতেই মেয়েটিকে ঢুকতে দেখেছিলাম।

মা এবার হেসে দিয়ে বললেন,
-আল্লাহই ভালো জানেন এই বাসাটা ঐ মেয়েরই নাকি অন্য কারোর।

আমি বললাম,
-অন্য কারোর বলতে! কি বলতে চাইছো তুমি?

মা,
-আরে গাধা, বাসাটি তো মেয়েটির কোন আত্মীয়ের বাসাও হতে পারে অথবা সে এখানে টিউশনি পড়ায় এমনও তো হতে পারে তাইনা?

আমার মাথায় এতকিছু আসেনি আগে। ভাবলাম, মা তো ঠিকই ধরেছেন। তাই তো, তেমনকিছুও তো হতে পারে।

গেট খোলাই আছে। কি করবো বুঝতেছিনা। সিএনজি রিজার্ভ করেই এনেছি। ড্রাইভার আমাদের এসব দেখে জিজ্ঞেস করলো,
-না জানিয়েই কি এসেছেন নাকি?

আমি,
-জ্বী ভাই। হুট করে না জানিয়েই আসা। এখন কি করব বুঝতেছিনা।

ড্রাইভার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
-দাঁড়ান আপনারা, আমি দেখছি কি করা যায়।

বাসাটির বিপরীত পার্শ্বে একটি চায়ের দোকান রয়েছে। ড্রাইভার সেখানে গিয়ে দোকানদারের সাথে কথা বলে এলো। এসে বলতে লাগলো,
-আপনারা তো ভুল জায়গায় চলে এসেছেন।

আমি,
-ভুল জায়গায় মানে?

ড্রাইভার,
-এই বাসার মালিকের বিয়ের উপযুক্ত কোন মেয়ে নেই। ছোট দুটি বাচ্ছা আছে। মানে, কিন্ডারগার্টেনে পড়ে এমন।

বুঝতে পারলাম, মায়ের ধারণাই সঠিক প্রমাণিত হলো। মাও শুনলেন ড্রাইভারের কথা। এবার মা বললেন,
-তুই এখানে দাঁড়া আমি ভেতরে গিয়ে কথা বলে আসছি।

আমি আর কিছু বললামনা। জানি, এই ভুলের জন্যেই আমার উপর দিয়ে সুনামি বয়ে যাবে। মা ভেতরে গেলেন। বাইরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি। প্রায় পনেরো মিনিট পর মা ফিরে আসলেন।

বললাম,
-কিছু জানতে পারলে?

মা,
-মেয়েটি এখানে বাচ্ছাদেরকে পড়াতে আসে। ফোন নম্বর নিয়ে এসেছি। কি করবি এখন? ফোনে কথা বলে মেয়েটির বাসায় যাবি নাকি ফিরে যাবি?

আমি,
-দেখো তোমার কাছে যা ভালো মনে হয় করো।

আমার দিকে একটি কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
-এই নে, এতে মেয়েটির ফোন নম্বর লিখা রয়েছে। কল দিয়ে আমাকে দে কথা বলি।

নম্বরটি ডায়াল করে মায়ের হাতে দিলাম ফোনটা। মা একটু দূরে চলে গেলেন কথা বলার জন্য। আমি চুপচাপ বসে রইলাম সিএনজিতে। ভাবতে লাগলাম, কপালে এসবও লিখা ছিলো!

মা এসে সিএনজিতে উঠে বসে বললেন,
-মেয়েটির মায়ের সাথে কথা হয়েছে। বাসায় যেতে বললো।

আমি,
-আলহামদুলিল্লাহ্। তা বাসার ঠিকানা বলেনি?

মা,
-হুম, বলেছে।

এই বলে ড্রাইভারকে মেয়েটির বাসার ঠিকানা বললেন মা। ড্রাইভার এবার আমাদের নিয়ে চলতে লাগলো কাঙ্ক্ষিত নতুন গন্তব্যে।

মিনিট দশেক পর একটি বাসার সামনে এসে সিএনজিটি থামলো। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম,
-এটাই কি ঐ জায়গা?

ড্রাইভার,
-জ্বী, এটাই। নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করে আরো নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন।

আমি নামলাম এবার। মাও নামলেন। মা বললেন,
-ঐ নম্বরে কল দে তো আবার। বল আমরা সিএনজি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। কেউ যেন আসে।

মায়ের কথামতো কল দিলাম আমি। রিং হচ্ছে। রিসিভ করতেই আমি সালাম দিলাম,
-আসসালামুআলাইকুম।

ওপাশ থেকে সুরেলা কণ্ঠে জবাব আসলো,
-ওয়ালাইকুমুসসালাম। আপনারা এসেছেন?

আমি,
-জ্বী, আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। কাউকে পাঠালে ভালো হতো।

ওপাশ থেকে,
-একটু অপেক্ষা করুন। পাঠাচ্ছি।

এই বলে ফোনটা কেটে দিলো। সুর শুনেই একেবারে কাঁত হয়ে গেলাম আমি। এত মিষ্টি সুর! এমন সময় মা বললেন,
-কিরে, কি বললো?

আমি,
-পাঠাচ্ছে কাউকে। দাঁড়াতে বললো।

মা আমার দিকে তাকিয়ে শুধু হাসছেন। আমি আর কিছু বলছিনা। জানি, আজ যদি মেয়ে পছন্দ না হয় তাহলে আমার কপালে দুঃখ আছে। মিনিট দুয়েক পরই একটি ছেলে আসলো। চেহারাটা বেশ মিষ্টি। আমাদের দেখেই বুঝে ফেললো মেহমান আমরাই।

বললো,
-ভেতরে আসুন। আসুন আমার সাথে।

গেলাম ছেলেটির পিছুপিছু। একটু ভেতরে ঢুকেই তিনতলা একটি বিল্ডিং। আমাদেরকে নিয়ে দুতলায় গেল ছেলেটি। দরজায় দাঁড়িয়ে বললো,

-এটিই আমাদের ফ্ল্যাট। ভেতরে চলুন!

ফ্ল্যাটটি বেশ বড়সড়ই দেখাচ্ছে। আমাদেরকে গেস্ট রুমে নিয়ে বসানো হলো। মিষ্টি আর পান-সুপারিগুলো ছেলেটিকে নিয়ে যেতে বললাম। একে একে সে সেগুলো নিয়ে গেল ভেতরে। সবকিছু বেশ সাজানো গোছানো। মা বললেন,

-বলতো মেয়েটি কেন টিউশনি পড়ায়?

আমি,
-কেন আবার, হতে পারে সে তার শিক্ষার চর্চার জন্য এটি করে।

মা,
-হুম, ঠিক ধরেছিস। আমারো তাই মনে হচ্ছে। দেখা যাক সামনে কি হয়।

এমন সময় মায়ের বয়সী একজন ভদ্র মহিলা আসলেন। সালাম ও কুশল বিনিময় হলো উনার সাথে। বসলেন আমাদের সামনের সোফায়। তারপর মাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন,
-এবার তাহলে বলুন এপর্যন্ত কি করে আসা হলো!

মা বলতে লাগলেন,
-আসলে, আমার ছেলে এখানেই চাকরী করে। গতকাল নাকি সে একটি মেয়েকে দেখে এবং পিছু নেয়। মেয়েটি গাড়ি থেকে যে বাসায় ঢুকে সে ভেবে নেয় মেয়েটির বাসা সেটাই। তারপর বাড়ি ফিরে রাতে আমাকে সে সবকিছু বলে। তারপর আমিই ওকে নিয়ে আজ একেবারে চলে আসি সম্বন্ধের জন্য কথাবার্তা বলতে। ঐ বাসায় গিয়ে জানতে পারি মেয়েটির বাসা সেটি নয়। সেখানে নাকি সে পড়াতে যায়। তখন ওদের থেকে নম্বর নিয়ে কথা বলে এখানে আসা। এই হলো পুরো কাহিনি।

মায়ের মুখে এসব শুনে ভদ্রমহিলা মুচকি হাসলেন। বললেন,
-হায় আল্লাহ্, এতকিছু ঘটে গেছে! যাইহোক, আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তবে, আপনার ছেলে যে মেয়েকে দেখেছিলো সে আসলে আমাদের মেয়ে নয়। বলতে, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে। গতবছর একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আমার একমাত্র ভাই আর ভাবী মারা যান। তানহাই তাদের একমাত্র সন্তান ও উত্তরসূরী। এরপর থেকে ও আমাদের সাথেই আছে। আমিই নিয়ে এসেছিলাম আমার কাছে। খুব আদরের মেয়ে ছিলো ও। আমাদের কাছেও আদরেই আছে। কখনো ওর বাবা-মায়ের অভাব বুঝতে দিইনি। এখন আপনি চাইলে ওর সাথে কথা বলতে পারেন। আমি ওর উপর কোনকিছু চাপিয়ে দিতে পারবোনা। যা হবে ওর ইচ্ছেমতোই হবে। মাকে উদেশ্য করে শেষের কথাগুলো বললেন উনি।

এবার মা বললেন,
-তাহলে, আমি প্রথমে তার সাথে একান্তে কথা বলে নিই। তারপর না হয় আমরা সে বিষয়ে কথা এগুবো।

মায়ের কথায় ভদ্রমহিলা সায় দিলেন। মাকে সাথে করে উনি চলে গেলেন অন্য রুমে। এদিকে আমার হার্টবিট বেড়েই চলেছে। কি হতে কি হতে চলেছে আল্লাহ্ মালুম। মেয়েটি বিয়ের জন্য রাজি হবে তো? মেয়েটিকে মায়ের পছন্দ হবে তো? মেয়েটিকে যদি মায়ের খুব পছন্দ হয় আর মেয়েটি যদি বিয়ে করবেনা বলে দেয় তখন কি হবে? এরকম রাজ্যের সকল ভাবনা এসে জড়ো হতে লাগলো আমার মাথায়। প্রতিটি মুহুর্তই আমার কাছে খুব দীর্ঘ মনে হচ্ছিলো। কিন্ত মায়ের ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা আমার।

চলবে ——- খুব যতনে ভালোবাসি তারে

বিঃ দ্রঃ ” লেখাঃ রিয়াদ আহমদ ভূঁইয়া ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন…………

 

👉আমাদের ফেসবুক পেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *