ও আমায় ভালোবাসেনি- সিজন ২ – Part- 02
এডিটিং ভার্সন
____
গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আজ ডেটে যাওয়ার কথা তানভীরের । এবার একটা বড়লোকের মেয়েকে পটিয়েছে একে বাগে আনতে পারলে অনেক টাকা পয়সা পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
এমনিতেও মা টাকা পয়সা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে আর বন্ধুরাও ধার দেয়না- নেশাদ্রব্য কেনার টাকা নেই । দুই সপ্তাহ থেকে পেটে নেশাদ্রব্য পড়েনি মাথা গরম হয়ে আছে একদম ।
তৈরি হয়ে বেরুবার সময় ডাইনিংয়ে মিথিলার সাথে দেখা হলো । ও তখন ল্যাপটপে কিছু আ্যাসাইনমেন্ট করছিল । তানভীর কে হঠাৎ বেরিয়ে যেতে দেখে প্রশ্ন করলো_
— কই যাস?
— কাজ আছে একটা ।
— কিসের কাজ? আমাকে বলে যা আর তোর না ক্লাস আছে ভার্সিটিতে!
— ভার্সিটিতেই যাচ্ছি রে বাপ ।
— মিথ্যে কথা । তুই প্রতিদিন বলিস ভার্সিটিতে যাচ্ছি কিন্তু যাস না । দিন দিন বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছিস তুই । আমাদের শখ , স্বপ্ন সব ভুলে বসে আছিস ।
— তুই একদিনও ঠিকমত বেরুতে দিবিনা আমাকে তাইনা? আর এত শখ , স্বপ্ন তো নিজেই পূরণ করলে পারিস । সব জায়গায় আমাকে জড়াতে হবে কেনো?
— তোকে জড়াতে হবে কেনো মানে! তুই এই পরিবারের একমাত্র অবলম্বন , আমাদের ভবিষ্যৎ তুই ।
— দেখ আপু ইমোশনাল কথাবার্তা বন্ধ কর তো এমনিতেই মাথা আমার গরম আছে ।
— তানভীর! বেয়াদবীর একটা লিমিট থাকে । বড় বোনের সাথে কথা বলার ম্যানার্সটাও তোর মধ্যে নাই?
— ধুরর বাল ।
হাতে থাকা ফোন টা আছাড় দিয়ে ভেঙে বেরিয়ে গেলো তানভীর ।
ওর পিছু পিছু দৌড়ে এসেও কাজ হলো না গাড়ি চলে গেছে ও ।
রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ির ভেতর চলে আসলো মিথি । ভাগ্যিস মা নেই বাসায় । এসব দেখলে খুব কষ্ট পেতো ।
খুব খারাপ লাগছে নিজের ছোট ভাইয়ের এমন অধঃপতন দেখে । হঠাৎ যে কি হয়ে গেলো ওর বুঝতে পারছে না । বাবার মৃত্যুর পর প্রায় সব দায়িত্ব এসে গেছিলো মিথির কাঁধে । ওসব সামলে , পড়াশোনা ঠিক রাখা খুব টাফ ছিলো । যার ফলে তানভীরের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়নি ও কাদের সাথে মিশছে কি করছে কিছুই দেখা হয়নি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে লাগাম বাঁধার সময় আবার এসে গেছে ।
মা কে কিছু জানানো ঠিক হবে না যা করার ও নিজেই করবে। তারপর মনে হলো শব্দ’র থেকে কি কোনো হেল্প নেয়া যেতে পারে!
বেশ কয়েকদিন যাবৎ ওর সাথে কথা হচ্ছে । ভালো মানুষ বলেই মনে হয় ছেলেটাকে ।
কিন্তু নাহ্ এখনো ওর সাথে গভীর সম্পর্ক হয়নি আগেই কিছু জানাতে গেলে প্রেস্টিজ ইস্যু না হয়ে যায়!
ভাবনাচিন্তা’র মধ্যেই শব্দের কল এলো ; আজ দেখা করতে চাইছে । একসাথে লাঞ্চ করবে ।
মিথিও না করতে পারলো না , এসময় যত বেশি দেখা সাক্ষাৎ হবে তত ভালো । যাকে লাইফ পার্টনার বানাচ্ছে তার সাথে আন্ডারস্ট্যান্ডিং গ্রো করা বড্ড জরুরী ।
কথাবার্তা শেষ করে আ্যাসাইমেন্ট কমপ্লিট করে নিলো তারপর মা কে কল করলো ।
ওর মা বড় খালার সাথে এক কলিগের ছেলের আকদে গেছে ,বেশ ব্যস্ত । কাজের মধ্যে থাকায় ফোন রিসিভ করতে পারলো না ।
কয়েকবার ফোন দিয়েও যখন পেলো না তখন মেসেজ করে দিলো “মা ফ্রী হলে কল দিও”
দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে গেলো অনেকটা ।
শাওয়ার নিয়ে এসে তৈরি হতে বসলো মিথিলা ।
মা এখনো ফোন রিসিভ করছে না । বড় খালা কে একবার কল দিয়েছিলো খালা রিসিভ করে স্রেফ বলেছে “ব্যস্ত আছি সন্ধ্যায় কল দিস” মিথিলা কথা বলার সুযোগই পায় নি ।
তেমন কোনো বন্ধু বান্ধবও নেই যাকে জিজ্ঞেস করা যাবে আজ কিরকম ড্রেসাপ করে গেলে ভালো হয়!
অনেক ভাবনাচিন্তার পর সিদ্ধান্ত নিলো গত ঈদে ছোটমামা একটা ক্রিম কালারের কটনের থ্রিপিস দিয়েছিল যার সাথে বেশ গর্জিয়াস একটা ওড়না আছে । পোশাক টা বেশ পছন্দের;ওটা পরে গেলে মন্দ হয়না!
পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈরি হয়ে নিলো মিথিলা, ওর হিজাব পরার অভ্যেস নেই তাই চুল স্টেইট করে কাঁটা দিয়ে আটকে পরিপাটি হয়ে বেরুলো ।
রৌদ্রউত্তপ্ত দুপুর , বাইরে চড়া রোদ । দরকার ছাড়া এত গরমে কেউই বের হয়না ।
তানভীর গাড়ি নিয়ে গেছে বলে রিকশা করে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো কিন্তু পুরো রাস্তা ফাঁকা । রিকশার নাম-নিশানা নেই । হঠাৎ মনে হলো উবারে কল করলেই তো হয়ে যাচ্ছে সার্ভিসও ভালো লেইটও হবে না । শেষে উবার বুক করে নিলো একটা । লোকেশন সেন্ড করে গেইটের কাছে ছায়ায় গিয়ে দাঁড়ালো ।
আজ বেশ জ্যাম । নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছুতে পারলো না উবার । দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে উঠতে লাগলো মিথি । ঘামে ভিজে সাজগোজ নষ্ট হবার যোগাড় । এমন পরিস্থিতি তে সমস্ত রাগ উঠে গেলো শব্দ’র ওপর । মাথামোটা লোক এই কাঠফাটা গরমে লাঞ্চের জন্য ইনভাইট করে! হিট স্ট্রোক করানোর পরিকল্পনা আছে বোধহয় ।
তাম্রাভ অগ্নিবর্ষী আকাশের দিকে এক পলক তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো “ইয়া মাবুদ রক্ষা করো এই নিরীহ জীব কে । গরম আর রাগে মাথার নিউরন না ফেটে যায় আমার!”
আল্লাহ সত্যিই তাকে রক্ষা করলো ঐ মুহুর্তে । উবার এসে গেলো , সেটাতে উঠে লাখো শুকরিয়া আদায় করে নিলো মিথি তবে রাগ কমলো না ।
জুনিয়র অফিসার অন্তরের সাথে রেস্টুরেন্টে বসে আছে শব্দ । দেড় ঘন্টা থেকে বসেই আছে দু’জন । এত অপেক্ষা লাইফে করতে হয়নি শব্দ’র । বিরক্তিতে দাঁত কিড়মিড় করছে ওর ।
অন্তর মাথায় হাত দিয়ে শব্দর দিকে তাকিয়ে আছে । শব্দর অস্থিরতা দেখে বোঝা যাচ্ছে ও প্রচন্ড বিরক্ত ।
— আচ্ছা অন্তর তোমার কি মনে হয় আমার সারাদিনে কোনো কাজ কর্ম নেই আমি স্রেফ বসে বসে খাই?”
বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করলো শব্দ ।
— তা কেনো হবে স্যার? আমাদের ইউনিটে আপনিই সবচাইতে ইন্ট্যালিজেন্ট এবং কর্মঠ ।
— আমার বাবা একজন মেজর ছিলেন , আমার বড় ভাই একজন মেজর ছিলেন আমিও ফোর্সের একজন অফিসার । ছোটবেলা থেকেই টাইম মেইনটেইন করা আমার স্বভাব । তোমার ম্যামের কি মনে হয় আমি গরুর ঘাস কেটে বেড়াই! আমার সময়ের কোনো মূল্য নেই?
— স্যার রাগ হয়ে লাভ আছে? নতুন নতুন মেয়েরা একটু নাকে দড়ি পরিয়ে ঘোরাতে পছন্দ করে । একবার বিয়েটা হয়ে গেলে সব আন্ডার কন্ট্রোল!
— তোমার বুঝি এক্সপেরিয়েন্স আছে?
থতমত খেয়ে গেল অন্তর ।
— না মানে স্যার এক্সপেরিয়েন্স তো নেই তবে আমার ধারণা এটা । আপনি তো জানেন আমি একটা প্রেম করি । আমি স্যার প্রথম স্টেজে আছি , নাকে দড়ি পরা স্টেজে । একদিন ঠিক দড়িওয়ালি কে বাগে আনতে পারবো স্যার ।
— সেটা তোমার দ্বারা হবে না । মেয়ে জাতিকে বাগে আনা কখনোই সম্ভব না এটার প্রমাণ আমি বেশ কয়েকবার পেয়েছি ।
— বেশ কয়েকবার মানে! স্যার আপনি কতবার প্রেম করেছেন?
— শাটআপ । প্রেম করলেই কি শুধু এটা বোঝা যায়? অন্য উপায় নেই?
— কি উপায় স্যার?
— উপায় টা হলো ..
অন্তরের পেছনে মিথিলা কে দেখে থেমে গেলো শব্দ ।
— কি উপায় স্যার?
আবার প্রশ্ন করলো অন্তর ।
— পরে বলবো । এখন একটু ওঠো তো ।
— কেনো স্যার?
— উঠতে বলেছি ওঠো আর আমার এদিকে এসো ।
— জ্বী স্যার জ্বী স্যার ।
অন্তর উঠে শব্দর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ।
একটা ক্রিম কালারের ড্রেস পরা মেয়ে শব্দের সামনে এসে বললো_
— হ্যালো আহমাদ সাহেব? বড্ড দেরি করে ফেললাম তাই না?
— নাহ্ নাহ্ ইটস ওকে অপেক্ষা করার অভ্যেস আছে আমার । বসো না?
— হ্যাঁ। আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? আর উনি কে; আপনার বন্ধু?
— না না ম্যাম আমি তো স্যারের আন্ডারে জব করি । স্যারের জুনিয়র অন্তর এহসান আমার নাম ।
— ওহ্ আচ্ছা এহসান সাহেব আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? বসুন না?
অন্তর বললো_
— নাহ্ নাহ্ ম্যাম আপনারা কথা বলুন আমি একটু আসছি ।
— বেশি জরুরী কাজ না থাকলে বসতে পারেন কিন্তু ।
অন্তরের বসার পরিকল্পনা ছিলো ও শব্দ’র দিকে তাকালো । শব্দ’র চোখ পাকানো দেখেই বুঝতে পারলো বসলে ঝামেলা আছে ।
তাই বললো_
— একটু জরুরী কাজ আছে ম্যাম আপনারা প্লিজ কথা বলুন আমি আসছি ।
— ওকে ।
ওদের থেকে বিদায় নিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো অন্তর ।
— তো আহমাদ সাহেব সোজা অফিস থেকেই এসেছেন বুঝি? এখনো ইউনিফর্ম গায়ে ।
— হ্যাঁ ব্রেইক নিয়েই এসেছি ।
— আরো কাজ আছে নাকি?
— হ্যাঁ বিকেলের দিকে মিটিং আছে একটা ।
— ওহ্ হো আমি তা’হলে লেইট করে এসে বড্ড ভুল করলাম , আপনার ক্ষতি হয়ে যাবে কাজের । বজ উঠি তা’হলে?
— নাহ্ নাহ্ ইটস ওকে সময় আছে তো ।
— আপনি শিওর সমস্যা হবে না? আপনাদের তো আবার অনেক রুলস মেইনটেইন করে চলতে হয় ।
— ভয়ের কিছু নেই সমস্যা হবে না ।
— ওকে দেন কি যেন বলবেন বলছিলেন?
— আগে কিছু অর্ডার দেই? তুমি তো না খেয়ে এসেছো ।
— হ্যাঁ আপনি দিন ।
খাবার অর্ডার দিয়ে একটু নড়েচড়ে বসলো তারা ।
পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো শব্দ । মিথির দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললো_
— ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস ।
— থ্যাংক ইউ সো মাচ ।
— মাই প্লেজার । আচ্ছা মিথি এত জলদি জলদি সব হয়ে গেলো তোমাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি তুমি কি এই বিয়েতে খুশি? আমায় মেনে নিতে পেরেছো?
— হ্যাঁ পারবো না কেনো! আপনি আমার পরিবারের পূর্ব পরিচিত , ভালো জব করছেন দেখতে সুদর্শন ।
— আর?
— আপনার মন মানসিকতা ভালো । একজন হাজবেন্ড হওয়ার সব গুণই তো আছে আপনার মধ্যে ।
— আর ভালোবাসা? আমার মধ্যে ভালোবাসা দেখতে পাও না?
মিথি এবার শব্দের চোখের দিকে তাকালো । হুট করে ফয়সালের কথা মনে পড়ে গেলো ।
ভালোবাসা! জীবনে একজন কেই ভালোবেসেছে সবটা দিয়ে তাকে ভুলে নতুন কাউকে মেনে নেয়া কি আদৌও সম্ভব?
— আপনার মনের খবর কি আমার সাথে কখনো শেয়ার করেছেন? বুঝবো কি করে ভালোবাসেন কি না!
— আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো তো কি দেখতে পাও?
— চোখ দেখে কি মনের ভেতরটা বোঝা যায়?
শব্দ হালকা হাসলো ।
— আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি মিথি ।
আমি জানিনা তুমি আমায় মেনে নিতে পেরেছো কি না তবে আজ একটা প্রমিস করছি তুমি যদি সম্পর্কটা মন থেকে মেনে নাও তা’হলে তোমার মনে একদিন ঠিক জায়গা করে নেবো আমি । তোমার অতীত জানতে চাইবো না আদৌও কোনো অতীত আছে কি না তাও জানতে চাইবো না । তুমি যেদিন নিজে থেকে আমায় মেনে নেবে সেদিন ঠিক নিজে এসেই আমায় বলবে । আমি সেই দিন টার অপেক্ষা করবো মিথি ।
শব্দের কথা শুনে মনের মধ্যে অজানা এক অনুভূতি হলো মিথির এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো বাবা মনে হয় তার জন্য ঠিক মানুষটাকেই নির্ধারণ করে গেছেন ।
শব্দ একটা র্যাপিং করা বক্স মিথির দিকে বাড়িয়ে দিলো । ও প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালে ইশারায় খুলতে বললো বক্সটা ।
বক্স খুলে দেখা গেলো চমৎকার একটা লকেট ।
মুগ্ধ নয়নে কতক্ষণ দেখলো লকেট টা । তারপর আবার বক্সে রেখে শব্দ’র দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো_
— যেদিন আমার সবটা জুড়ে আপনি থাকবেন সেদিন অধিকার নিয়ে নিজ হাতে আমায় পরিয়ে দেবেন এটা ।
— অপেক্ষায় থাকলাম ।
একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বক্সটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো শব্দ ।
দেখতে দেখতে খাবার এসে গেলো । খাওয়ার ফাঁকে অনেক গল্প করে নিলো দু’জনে । অন্তর কে মেসেজ করে দিলো সে যাতে লাঞ্চ করে নেয় ।
রুফটপ রেস্টুরেন্ট টা বেশ জাঁকজমক করে সাজানো । বাইরের ভিউ টা সবচাইতে নজরকাড়া ।
শব্দের খুব ইচ্ছে হলো মিথির সাথে ওর ছবি থাকবে । সংকোচ নিয়েই প্রস্তাব রাখলো । প্রথমে নিষেধ করতে চাইলেও কি ভেবে না বললো না মিথি । এই সুন্দর মুহুর্ত টা ফটাফট ক্যাপচার করে নিলো শব্দ ।
আজকের দুপুরটা ওর জীবনের বেস্ট দুপুর মনে হলো ।
___
নিউইয়র্কে মাত্র সূর্য আকাশ ফুঁড়ে বেরিয়েছে । হোটেল রুমে বসে রাইদ ল্যাপটপে কাজ করছে ।
গতরাতে একদমই ঘুমোয়নি । বস ঘুমায়নি বলে রফিকও নিজের রুমে আর যায় নি । সোফায় আধশোয়া হয়ে ক্লান্তভাবে চেয়ে আছে রাইদের দিকে ।
টুং করে একটা নোটিফিকেশন আসার শব্দ পেলো দু’জনেই । ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিয়ে ফোন বেড সাইড ডেস্ক টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা হাতে নিলো রাইদ । হোয়াটস আ্যাপে শব্দ’র মেসেজ এসেছে, বেশ কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছে ।
ভ্রু কুঁচকে ওপেন করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওর কুঁচকে থাকা ভ্রু সোজা হয়ে গেলো ।
মুখ দিয়ে আপনা আপনি বেরিয়ে আসলো “ইমপ্রেসিভ”
রফিক প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে । ওর দিকে ফোন টা ঢিল মেরে রাইদ বললো “রফিক আমার এই মেয়েকে চাই বাই হুক অর বাই ক্রুক ।” তোমার কাছে একমাস সময় , দেশে গিয়েই আমার ওকে চাই ।
সোফায় রফিকের পাশেই ফোনটা পড়েছিল । ও হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই চোখ বড় বড় করে ফেললো ।
— স্যার এ তো ..
— মিস শেখ কে আমার চাই রফিক ।
ল্যাপটপ সরিয়ে টান টান হয়ে শুয়ে পড়লো রাইদ ।
রফিক বিড়বিড় করে প্রশ্ন করলো_
— স্যার শব্দ স্যার আপনার বন্ধু হয় তার থেকে তারই হবু বউ কে কি করে..
রাইদ এর উত্তরে ভীষণ হিংস্রভাবে বললো_
— রাইদের কোনো বন্ধু নেই থাকতে পারে না । ওর জন্মই হয়েছে শত্রু বানানোর জন্য ।
রাইদের এমন হুংকারে কেঁপে উঠলো রফিক ।
আপন মনেই বললো ” আপনাকে আর হিরো মনে হচ্ছে না স্যার । আসল ভিলেইন তো আপনিই”
__
বিকেল হয়ে গেছে । বিদায় নেবার পালা । শব্দ আর মিথিলা নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে , অন্তর গাড়ি আনতে গেছে ।
টুকটাক গল্প করছে ওরা । এর মাঝেই ফোন বেঁজে উঠলো মিথির ।
ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলো তানভীরের বন্ধু আলভী ফোন করেছে । অজানা আশংকায় মন কেমন করে উঠলো । রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন আলভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসলো_
— আপু তুমি কোথায়?
— আমি ক্যান্টনমেন্টের দিকে আছি । কেনো?
— আপু তুমি প্লিজ জলদি হোটেল স্যাভেন ডেইজ এর সামনে যাও ওখানে রেড পড়েছে ।
— রেড পড়েছে তা’হলে আমি যাবো কেনো?
— আসলে … আসলে আপু ওখানে তানভীর আর ওর গার্লফ্রেন্ড..
পুলিশ তানভীর কে আ্যারেস্ট করেছে আপু আর ও ঝামেলা করছে খুব । ড্রিংকসও করা আছে হয়তো ।
— হোয়াট!
— হ্যাঁ আপু জলদি যাও ।
— তুমি কোথায়?
— আমি আশেপাশেই আছি কিন্তু ভয়ে যেতে পারছি না ।
— তুমি না ওর বন্ধু! ও বিপদে আছে আর তুমি আমায় বলছো ভয়ে যেতে পারছো না? তোমাকে তো পরে দেখছি দাঁড়াও..
ফোন রেখে চোখের পানিটা মুছে নিলো মিথি । ওর হতভম্ব চেহারা দেখে শব্দ জানতে চাইলো_
— কি হয়েছে?
— আমাকে হোটেল স্যাভেন ডেইজে নিয়ে যাবেন?
— ওখানে কেনো?
— রেড পড়েছে আর আমার ভাই… প্লিজ চলুন আমি একা যেতে পারবো না ।
— ওকে ওকে তুমি কেঁদো না প্লিজ আমি যাবো তোমার সাথে ।
অন্তর গাড়ি নিয়ে আসার পর ওকে ফেরত যেতে বলে শব্দ আর মিথি গাড়িতে উঠলো ।
পুরো রাস্তায় নিঃশব্দে কেঁদে গেলো মিথি । শব্দ’র কাছে ওকে স্বান্তনা দেবার ভাষা নেই । মেজর নাদিম শেখ একজন আদর্শ মানুষ ছিলেন । তার মত সাহসী এবং ভদ্র নম্র মানুষটার ছেলে যে খারাপ লাইনে চলে যাবে তা বিশ্বাস করতে সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছে ।
কি যে হচ্ছে এই জেনারেশনের! নিজ হাতে ভবিষ্যত ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে একেকজন ।
বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো শব্দ’র । মিথির হাতে হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বললো,”কেঁদো না সব ঠিক হয়ে যাবে। এই ঝামেলা মেটার পর তোমার ভাই কে আমার কাছে এনে রাখবো । ওকে ভালো করার দায়িত্ব আজ থেকে আমার”
মিথি অসহায় ভাবে শব্দর দিকে তাকালো শুধু , কিছু বলতে পারলো না ।
চলবে,