অন্তরালে ভালোবাসা

অন্তরালে ভালোবাসা !! Part- 04

“উনি আমাকে ঝাকিয়ে বলে,”
—ইশানি; মা আমাদেরকে ডাকছে ওঠো?
আমি ঘুম ঘুম চোখে বলি,
—ধূর আপনাদের জ্বালায় একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারি না।
“উনি নিচু হয়ে আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দেয়। আর বলে,”
—ঠিক আছে তুমি ঘুমাও আমি যাচ্ছি।
“আমি উনার হাতটা টেনে ধরে বলি,”
—এমন কেন আপনার মা? আমাদের কি নিজস্ব কোনো টাইম থাকতে পারে না?
উনি এগিয়ে এসে আমার নাকে উনার নাক ছুঁইয়ে দিয়ে বলে,
—এতোক্ষণ ধরে এতো আদর দিলাম তারপরও এমন বলছো?
“আমি লজ্জায় উনাকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসি। তারপর ব্লাউজের হুকগুলো লাগাতে লাগাতে বলি,”
—ঠিক আছে! আপনি থাকুন আমি গিয়ে দেখছি!
“আমি নিচে নেমে শাড়িটা পরে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।
আর দরজা খুলতেই আমাকে দেখে শ্বাশুড়ি আম্মা বলতে শুরু করল,”
—এই ফকিন্নির বেটি!!! এভাবে নবাবজাদির মতোন ঘড়ের নতুন বউ সেজে বসে থাকলে চলবে? বাড়িতে কাজের লোক যে কটাকে ছাড়িয়ে দিয়েছি তাদের কাজগুলো কে করবে?

“কথাটা শুনার পর আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই শ্বাশুড়ি আম্মা আমার হাত ধরে টেনে কিচেনে নিয়ে যায়। তারপর আমার সামনে ঠাসসস! ঠাসসস! করে শব্দ করে কালকের সব এঁটো বাসনগুলো ছুড়ে মারে।”
—এগুলো সব চকচক করে পরিষ্কার করে নতুন বানিয়ে দিবি।তারপর রান্না করে এসে আমার পা টিপবি।বুঝেছিস?

“আমি শ্বাশুড়ি আম্মার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছি।আমার কিছু বলার ভাষা হারিয়ে গেছে।মনে মনে ভাবছি, পৃথিবীতে এমন শ্বাশুড়িও হয়?”

“এর মধ্যে আমার কোনো উত্তর না পেয়ে শ্বাশুড়ি আম্মা আমার চুলের মুষ্টি টেনে ধরে।আর বলে,”
—আমার কথার জবাব দিস না কেন? বল হ্যাঁ মা করবো? বল…
“বলেই একটা ঝাড়ি দিয়ে আমার চুল ছেড়ে দিয়ে গালে একটা চর মারতে যায়।আচমকা এভাবে চর মারতে যাওয়াই আমি আমার চোখদুটো বন্ধ করে নিই।কিছুক্ষণ পর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে চোখটা খুলে দেখি উনি শ্বাশুড়ি আম্মার হাতটা ধরে রেখেছে।আর আমার শ্বাশুড়ি আম্মা বড় বড় চোখ নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছেন।”

“আমি উনার কাঁধে হাত রাখতেই শ্বাশুড়ি আম্মার হাতটা ছেড়ে দিয়ে উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে।আর শ্বাশুড়ি আম্মার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,”
—আমার ইশানিকে কি তোমার কাজের মেয়ে মনে হয় মা? ইশানি এবাড়ির বউ। এইটুকু সম্মাণ কি ওকে দেওয়া যায় না?
—ওলে লে দরদ উতলে পরছে দেখি বেচারার! এমন ভাবে বলছে যেন বাড়িতে বাড়ির বউ কখনো কাজ করে না!
—কাজ করে না সেটা বলি নি মা।আমি শুধু বলেছি এভাবে কেন বলছো? বাড়িতে তো তিনটা কাজের লোক আছে তাহলে ইশানি কেন কাজ করবে?
—কোনো কাজের লোক টোক নেই!
—মানে?
—সবকটাকে ছাড়িয়ে দিয়েছি।
—কেন?
—আমি ভাবলাম বাড়িতে বউ থাকতে টাকা দিয়ে কাজের লোক কেন পুষতে হবে? তাছাড়াও তোর বউকে যেমন ফকিন্নির ঘড় থেকে আনছিস অমন ঘড়ের মেয়েরাই এ বাড়িতে কাজ করে।তোর বউ তো এসব কাজে অভ্যাস্ত হবে তাহলে ও ই করুক সব কাজ।
—নাহ মা আমার ইশানি কোনো কাজ করবে না।
—তাহলে তুই কর।ভুলে যাস না এবাড়িটা এখন আর তোর নেই।এবাড়িতে থাকতে হলে এখন থেকে তোদেরকে কাজ করে খেতে হবে।আর আমি যা হুকুম দেবো অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে।

“শ্বাশুড়ি আম্মার কথা শুনে উনি যেন বড় একটা শকট খায়। উনার ঝাপসা চোখের দিকে তাকিয়ে আমি স্পষ্ট মনের কথাগুলো পড়তে পারছি।উনি হয়তো ভাবছে সবকিছু মায়ের কথায় ভাই বোনের নামে লিখে দিলে মা এমন আচারণ করবে সেটা আগে বুঝতে পারে নি।এতো বিশ্বাস করে মানুষটা এদেরকে।আর এরাই কস্ট দেয়।”
“উনি নিজের চোখের পানি গড়িয়ে পরার আগেই দু হাত দিয়ে চোখ দুটো মুছে নেয়।তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে শ্বাশুড়ি আম্মার হাতদুটো ধরে বলে,”
—মা! তুমি না আমাকে কতোটা ভালোবাসো! তাহলে আজ কি হয়েছে তোমার?
“শ্বাশুড়ি আম্মা একটা গা ঝাড়া দিয়ে উনাকে দূরে সরিয়ে দেয়।”
—কিসের মা? আমি তোর মা নই।আমি শুধুই নিশি আর তপুর মা।ভুলে যাস না তুই আমার সতিনের ছেলে।
—এটা তুমি কি বলছো মা? তুমি কখনো আমাকে বুঝতে দাও নি তুমি আমার মা নও।
—হ্যাঁ।তার কারণ এই সম্পত্তি।জীবনে কখনো তোকে দেখলে আমার মাতৃত্ববোধ জাগে নি।এতোগুলা দিন যেই জন্য অভিনয় করা তোর সাথে সেটা এই সম্পত্তি। যা আজ আমার পাওয়া হয়ে গেছে।তুই চাইলে এখন এবাড়ি থেকে চলে যেতে পারিস।আর যদি থাকতে চাস তাহলে তোর বউকে বাড়ির সব কাজ করতে হবে আর তোকেও।এখন তুই ভেবে দেখ কি করবি!

“আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না।উনার এই কস্ট আমি সহ্য করতে পারছি না।আমি শ্বাশুড়ি আম্মার মুখোমুখি হয়ে দাড়ালাম।আর তার চোখে চোখ রেখে তাকালাম।”
—ওলে লে দেখ কিভাবে তাকিয়েছে! মনে তো হচ্ছে খপ করে আমায় গিলে খাবে।
—হ্যাঁ খাবো। আপনি আমাকে রান্না করতে বলেছিলেন না? ইচ্ছা করছে আপনাকে কুচিকুচি করে কেটে কড়াইয়ে গরম তেলে চুবিয়ে সিদ্ধ করি।
“দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলি।”
—কি বললি তুই? তোর এতো বড় সাহস তুই আমাকে রান্না করবি? তোকে তো আমি…
“শ্বাশুড়ি আম্মা আমাকে রেগে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর আমাকে মারতে যাবে তখন উনি শ্বাশুড়ি আম্মার কাছে হাত জোড় করে বলে,”
—ওকে মেরো না মা।ওর ভুল হয়ে গেছে।
“আমি উঠে উনাকে বলি,”
—এসব আপনি কি বলছেন? আমি কোনো ভুল করি নি।
“শ্বাশুড়ি আম্মা হেসে বলে,”
—ঠিক আছে তোর বউকে বল আমার পা ধরে ক্ষমা চাইতে।
“উনি আমাকে বলে,”
—মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও ইশানি।
—কখনো না!
—তুমি যদি আমাকে একটুও ভালোবেসে থাকো, সেই ভালোবাসার দোহাই প্লিজ ক্ষমা চাও ইশানি।
—আপনি..
—ইশানি আমার জন্য।
“উনার কথায় আমি শ্বাশুড়ি আম্মার কাছে ক্ষমা চায়।তারপর উনি বলে,”
—আমি আর ইশানি এই মুহূর্তে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি মা।আমি চাই না আমার জন্য ইশানি এবাড়িতে থেকে আর অপমানিত হোক।আর আমি এটাও চাই না তোমার মনে ওকে নিয়ে কোনো ক্ষোভ থাকুন।এজন্য ওকে দিয়ে ক্ষমা চাইয়ে নিলাম।তুমি তোমার ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে ভালো থেকে।চলো ইশানি..

“উনি আমার হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসে। তারপর উনার আর আমার সব কাপড়চোপড় প্যাক করতে থাকে।আমি উনাকে বলি আরেকবার ভেবে দেখতে, কস্ট হলে যাওয়ার দরকার নেই কিন্তু উনিই বলে যা করছে আমার ভালোর জন্যই করছে।”

“উনি আমাকে নিয়ে শ্বাশুড়ি আম্মার কাছে আসে।যাওয়ার সময় শ্বাশুড়ি আম্মার পায়ে সালাম করতে যায় কিন্তু শ্বাশুড়ি আম্মা পা টেনে অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়। বিছানায় বসে আঙুল ফল খাচ্ছে তিনি আর নিশির সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।আমাদের দিকে ঘুরেও তাকালেন না।”

চলবে,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *