এলাকার বড় ভাই

এলাকার বড় ভাই !! Part- 13

-ইরার মাকে বলতে শুনলাম.. ওরা নাকি….ওদের নানী বাড়িতে যাচ্ছে.. নতুন ঢাকায়….ইরাকে নাকি দেখতে আসবে সেখানে ছেলেপক্ষ!!!!!
কি??!!
-আন্টি আপনাদের কাছে….ওদের নানা বাড়িরর ঠিকানা আছে??
-না বাবা.. তুমি ফোন করে জেনে নাও!!
.
ফোনই তো লাগছে না!!
.
-আচ্ছা আন্টি আমি আসি!!
.
আমি বের হয়ে গেলাম..ইরাকে ফোন দিলাম… নাহ লাগছে …. ওর মায়ের নাম্বারও নেই.. ইরা যদি এ কথা সত্যি হয়.. আমি যে কি করব আমি নিজেও জানি না…. তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবা না তখন….তুমি আমার…and I’m not gonna let anyone to claim you damn it !!
***
সায়মাকে ফোন দিলাম…..কিন্তু না ওর কাছেও ঠিকানা নেই….. ইরার ফোনো বন্ধ… come one damn it.. pick up the phone for once… এই মেয়ে তো পাগল করে দিবে আমাকে!!
.
বিকেল ৪ টা বাজে আমার ফোন বেজে উঠল!!
-হ্যা রাশেদ বল!!
-কি মাম্মা.. কাল বিয়া কইরা তো দোস্তগোরে ভুইলাই গেসো!!
-এই অফ যা তো…কেন ফোন দিছিস সেটা বল!!?
-কি হইসে তোর…ভাবী কি বেশি রেগে আছে নাকি??
– কিছু হইনি.. কেন ফোন করছস??
-ওই নতুন একটা অর্ডার না তুলতে হইব… আজকে মাল আনতে হইব উত্তরা থেকা.. যাবি না??
-ও হ্যা.. মনে পরসে…আমি বাইক নিয়ে আসছি.. তুই গলির মোড়ে আয়.. রাখি!!
**
আমরা উত্তরায় এসে পরেছি.. দোকানের সাথে আসতে আসতেই একটা গাড়ির সাথে আমাদের বাইকের ধাক্কা লাগে… খুব জোরে না.. তবে ব্যালেন্স রাখতে না পেরে রাশেদ পরে যায়.. ওর হাতে হাল্কা চোট পায়….আমি ওকে পাশে এক হাসপাতালে নিয়ে আসি…!!
.
-আরে আমি ঠিক আসি ছাগল…আমার ব্যান্ডেজ করা লাগবে না!! (রাশেদ)
-চুপ… বেশি বুঝবি না..আর তোর ইনজেকশন ভয় লাগে তাই বলতেসোস.. সেপ্টিক হলে কি করবি???
-দোস্ত বাদ দে না!!
.
আমি ওকে জোর করে রুমে নিয়ে যাই!!
-আপনি যেয়ে বাইরে বসেন প্লিজ!! (নার্স)
– দোস্ত আমারে ছেড়ে যাস না প্লিজ!!(রাশেদ)
-আপনার তো অপারেশন হচ্ছে না…বাচ্চাদের মত ব্যবহার করছেন কেন??বসুন এখানে!!(নার্স)
আমি রুম থেকে বের হয়ে আসলাম….!!
-তাড়াতাড়ি নিয়ে চলুন!!
আওয়াজ টা চেনা লাগল…ডানে তাকিয়ে দেখলাম ইরার মা….স্ট্রেচারে একটা মেয়ে সোয়া….ডাক্টার তাকে চেকাপ করছে.. মুখ অন্যদিকে ঘোরানো… কিন্তু বুঝতে বাকি রইল না..মেয়েটা কে!!
.
আমি দৌড়ে গেলাম সেখানে…..
-আন্টি কি হয়েছে ইরার??
-ইব্রাহিম… বাবা…ওর রাত থেকে শরীর টা খুব অসুস্থ… হালকা জ্বর ছিল…আবার মাইগ্রেন এর ব্যাথাও ছিল খুব…সকালের আসার সময় ভালই আসল…কিন্তু দুপুরে খেয়ে ঘুমাতে গেল.আর উঠতেসে না!!
.
১ দিনে চেহারাটা কেমন হয়ে গেছে….অধিকার থাকার পরও আমি পারছি ওকে ধরে দেখতে!!
.
-তোমার আংকেলও অফিসের কাজে বাইরে গেসে।তাই ভাবলাম কয়েকটা দিন এখানে আসি…কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না!!
-আপনি চিন্তা করবেন না আন্টি….আমি দেখছি!! ডাক্টার…কি অবস্থা… সব ঠিক আছে??
-আপনি তাড়াতাড়ি এই মেডিসিনগুলো নিয়ে আসুন!!
.
উনি প্রেসক্রিপশন দিলে.. আমি দৌড়ে মেডিসিন আনতে যাই!!
ইরাকে ২টা ইনজেকশন দেয়া হয়.. আর একটা স্যালাইন লাগানো হয়..না.. যা একবার হয়েছে সেটা আমি আর হতে দিব না.. তোমার কিচ্ছু হবে না!!
.
-সব ঠিক আছে তো ডাক্টার??(আন্টি)
-হ্যা…. বেশি টেনশন এর কারনে ওনার প্রেসার ফল করে…..জ্বর আর মাথা ব্যাথা এর উপরে দুশ্চিন্তা এত চাপ ওনার জন্য ঠিক না…আমি মেডিসিন লিখে দিচ্ছি….গ্যান ফিরলেই উনি বাসায় যেতে পারবেন!!
.
হাফ ছাড়লাম.. যাক সিরিয়াস কিছু হইনি.. এই মেয়ে আসলেই আমার কোন কথা শুনে না… আজে বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে বলেছিলাম..আর ও!!
ইরার মামা মামি আসলে আন্টি আমাকে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন.রাশেদ এর ব্যান্ডেজ ও হয়ে গেছে!! ‘
.
কিছুক্ষন পরে ইরার হুশ আসে…আন্টি ওর কাছে যেয়ে বসে!!
-আম্মু..আমি একটু বসব!! (খুব দুবল হয়ে গেছে!!
আন্টি আর মামি ওকে ধরে বসায়….ইরা আন্টির কাধে মাথা রাখে আন্টি ওকে পানি দেয়!!
একটু হলেও খারাপ লাগছে ভিতরটা…আজ আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা সবাই জানলে…. আমি তোমার খেয়াল রাখতাম..যেমনটা এখন তোমার মা রাখছে!!
.
ইরা মাথা তুলে আমার দিকে তাকায়.. কিন্তু কিছু বলে না.. হয়ত একটু অবাক হয়েছে এটুকুই!!
.
তারপর আমরা ইরার নানা বাড়ি চলে আসি… বাড়িতে ইরার মামা মামি…নানী…আর এক মামাতো বোন আছে পায়েল.. ওই অনার্স ১ ম বর্ষে পড়ে!!
.
-ফুপু.. আপনার যাওয়া উচিত…আরে রিফাত ভাইয়া আপনার কথা খালি জিগ্যেস করে !! (পায়েল)
ইরার এক আত্নীয়র মেয়ে হয়েছে। তাই ওর মামা মামী সেখানে যাচ্ছে।
– ইরার শরীর টা যে খারাপ…. ওকে একা রেখে যাই কিভাবে??
-আপু একা কই.. আমি আসি..নানী আসে আপনি নীরকে নিয়ে আব্বু আম্মুর যান… আমি সব সামলে নিব!!
-আচ্ছা ঠিক আসে.. ইব্রাহিম…তুমি কখন বের হবা বাবা..তোমার না অর্ডার আছে??
-হ্যা আন্টি…. আসলে ওইটা আসতে দেরি হবে.. গাড়ি ১১-১২টায় আসবে..
.
মাল এসেও পরেছে.. আর রাশেদ তা নিয়ে চলেও গেসে!!
.
-বাবা তাহলে তুমি ততক্ষন এখানে থাকতে পারবা..কখন কি লাগে বা কোন সিরিয়াস কিছু হলে… তুমি পিয়াল (পায়েলের ভাই) ওর রুমে বস!!
-ঠিক আসে!!
.
সবাই বেরিয়ে পরে বাসায় শুধু আমি…পায়েল..নানী.. আর ইরা…!!
.
-কি দুলাভাই..কেমন দিলাম বলেন??(পায়েল)
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম..এই মেয়ে কি বলে?
-কে দুলাভাই। আমার তো এখনো বিয়েই হইনি!!
-আর নাটক করতে হবে না দুলাভাই… ইরা আপু আমাকে ছোট্ট থেকেই সবকিছু বলে
আমি জানি যে আপনারা কাল বিয়ে করসেন!!
.
ইরা ওকে কি কি বলেছে আল্লাহই জানে!!
.
-ইরা আর কি বলেছে..??
-এটাই যে আপনারা দুজন দুজন কে পছন্দ করতেন তাই আপনারা কাল বিয়ে করে ফেলেছেন….
.
ইরা মিথ্যা কেন বলল…. আর বলতেই হলে সত্যি টা বলল না কেন??
.
-সেজন্যই তো আমি ওই ছেলেপক্ষকে কোনমতে আসার জন্য আটকালাম!!
****ইরার point of view*****
আমার ঘুম ভাঙল..রাত ১২ টায়…..আল্লাহ ই জানে কি মেডিসিন দিসে.. খালি ঘুম আসে….!!
আমি উঠে বসতে চাই কিন্তু জোর পাই না…. হঠাত রুমের দরজা খুলে পায়েল আর অভদ্র ভিতরে আসল!!
পায়েলের হাতে কেক ছিল!!
Happy birthday to you..
Happy birthday to you…
.
পায়েল কেক টা রেখে আমাকে বসতে সাহায্য করল… পরে আমি কেক কাটলাম!!
-এই আপু..আমাকে তো খাওয়ালি .. দুলাভাইকে খাওয়াবি না??
পায়েল ওনার হাত ধরে টেনে আমার পাশে এনে বসায়….
আমি তার দিকে তাকালাম.. ছোট এক টুকরা খাইয়ে দিলাম তাকে খাইয়ে দিলাম
-একটু পাশাপাশি বস!!
ও ফোন নিয়ে ছবি তুলতে চাইল.
-দুলাভাই আপনারই তো বউ..একটু কাধে হাতটা রাখেন!!
“এই মেয়েটা কি..আমি যে আমাদের বিয়ের কথা ওকে বলেছি..তা ওনাকে বলার কি দরকার ছিল..পাগল হয়ে যাব ”
সে আমার কাধে হাত রাখে অনেকটা জড়িয়ে ধরার মত.পায়েল পিক তুলে সেল্ফি তুলে!!
-আপু ভেবে নে.. by any chance তুই দুলাভাইকে পছন্দ না করলে আমাকে বলতে পারিস… আমার তো অনেক পছন্দ হয়েছে!!
-আমারো তোমাকে পছন্দ.. আগে তো তোমাকে দেখিনি… দেখলে তো তোমাকেই বিয়ে করতাম!!
আমার রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে.. অসভ্য লোক একটা।
আমি রাগী চোখে তাকালাম!!
-মনে হচ্ছে.. মেরেই ফেলবে এবার!! (ফিসফিস করে)
-কি বললেন??
-এই যা ফুপু ফোন করেছে…আপু তোর রাগ থামা .. আমি আসছি!!
ও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল
-Carry on love birds!!
এটা বলে ও দৌড়ে পালিয়ে গেল!!
-তুমি পায়েল কে মিথ্যা কেন বলেছ?? যে আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করি.. তাই বলে আমরা কাল বিয়ে করেছি??
.
কি বলব??
.
-হুম…আসলে. ছেলেপক্ষরা আসতে নিয়েছিল.. ভেবে উঠতে পারিনি যে কি করে আটকাবো.. তাই ওকে বলতে হয়েছে!!
-তুমি আমাকে একথা বলোনি কেন??সকাল থেকে ফোনও অফ…?
-আমি নিজেই জানতাম না… এদিকে কালকের ঘটনা তার উপরে. তারপর দেখতে আসবে.. এসব শুনে… মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল.. কখন যে গ্যান হারিয়েছি নিজেও…
.
আমি তার রাগ দেখে থেমে গেলাম…. কিছু বললাম না আর!!

-আমার কথার তো কোন দাম নেই তাইনা… এমনি করো সবসময়!!
.
তার চেহারা তে রাগের বেশি আমি অনুশোচনা দেখছি..আমি এমন আছই বলে তাই!??
-সরি!!
জানি সরিতে কিছুই হবে না… কিন্তু তারপরও!!
তিনি কিছু না বলে…. আমার চুলগুলোকে কানের পিঠে সরিয়ে দিলেন….!!
পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে আমার হাতে দিলেন!
-খুল!!
আমি খুলে দেখি একটা আংটি..খুব সিম্পল.. এক পাথরের … খুব দামি লাগছে..মনে হচ্ছে ডায়মন্ড !!
-এখন দামি ভেবে এটাকে ফিরিয়ে দিও না.. তোমার জন্য savings টাও না দিতে পারলে… কি করব savings করে.. হাতটা দাও!!
.
তিনি আমার বাম হাত নিয়ে আংটিটা পরিয়ে দিলেন!!
কিন্তু হাতটা ছাড়লেন না….আরো শক্ত করে ধরলেন!!
-I love you!!
(চলবে)