এলাকার বড় ভাই !! Part- 12
-কা-কাজী কেন??
-কারন আজ আমাদের বিয়ে!!
কি এই লোকটা পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি….??
-আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি??কি বলছেন এসব!!আমি তো বললাম.. আমি বাসায় যেয়ে বলব যে আমি রাজি!!
-তোমার উপর বিশ্বাস নেই!!
-কি যাকে বিয়ে করতে চান…. তার উপর কোন বিশ্বাস নেই??
-তুমি এর আগেও আমার কথা শুননি..যা বলি তার উল্টোটাই কর!!
-আমি আপনাকে বিয়ে করব না!!
তিনি আমার হাত আরো জোরে চেপে ধরলেন..
-কি বললা তুমি??
-আমি আপনাকে বিয়ে করব না!!
এই সাহস কোথা থেকে আসল আমি নিজেও জানি না।কিন্তু আজ আমাকে বলতেই হবে!
-আর তা কেন শুনি??
-ফাইন… আমি আপনাকে ভয় পাই সেই জন্য…..আপনার রাগকে ভয় লাগে আমার..আপনি যতই জোর করুন না কেন.. এই বিয়ে আমি করব না…!!
-তুমি আমাকে ভয় পাও ইরা….কিন্তু এতোটাও না.. যদি পেতে তাহলে আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস কোনদিনো হত না!!
আমি যেন চুপসে গেলাম….. আমি জানি.. এটাই কারন না তাকে না বলার.. কিন্তু আমার অতীত এর কথা আমি আবার মাটি খুঁড়ে আনতে চাই না… এতে শুধু কস্টই বাড়বে!!
– তুমি আমার সাথে আপাতত সই টা কর…বাকি টা আমি দেখছি!!
-আপনাকে একটা কথা বললে আপনার কানে যায় না…আমি আপনাকে বিয়ে করবা না.. আপনার যা ইচ্ছা আপনি তাই করেনন!!
-ভেবে নাও!!??
-নিয়েছি!!
-ঠিক আছে.. তুমি যদি আমাকে বিয়ে না কর…. তাহলে….
-তাহলে কি??
-এই রুম টা লক করতে আমি বাধ্য হব… আর রুম বন্ধ হওয়ার পর এই রুম এ কি হবে সেটা নিশ্চয়ই তোমাকে আমার বলতে হবে না???
-আপনি-নি কি বলছে-ছেন এসব??
-যা তুমি শুনেছ ইরা..এখন এই রুমের ভিতরে যা হবে তা যদি লোক জানাজানি হয়.. তাহলে তোমার সম্মান কি হবে?? তোমার বাবা মায়ের সম্মানের কি হবে??
.
এই কথা ভেবে আমার গা কাপতে শুরু করল..আমার চোখ ভরে আসছে!!
.
-ইরা..তারপর তো তোমার বাবা মায়ের কাছেও ওই একটাই পথ খোলা থাকবে… আমাকে বিয়ে তো তোমাকে যে কোন পরিস্থিতিতেই হোক করতেই হবে..হয় এভাবে.. আর নাহয়!!!
.
না….!!!!!!
.
-আমি বুঝে গেছি আমার কি করতে হবে.. যেমনটা তুমি বলেছিলে… যা ইচ্ছা কর!!
তিনি এটা বলেই দড়জা লক করতে গেলেন….না উনি রাগের বশে যে কোন কিছুই করে ফেলতে পারেন….উনি লক হাত দিতে যাবেন ঠিক তখনই!!
.
-ইব্রাহিম!!!!
আমি তাকে এই প্রথম বার নাম ধরে ডাক দিলাম!!
-আমি রাজী!!
তিনি কিছু না বলে দরজা খুললেন..আয়েশাকে ভিতরে ডাকলেন!!
-ভাবীর মেকাপ ঠিক করে দাও…. কান্না কাটির দাগ টাগ যেন না থাকে…. আর হ্যা… (একটা ব্যাগ দিয়ে) এই হালকা কিছু গহনা আছে.. পড়িয়ে দিও!!
এটা বলে তিনি বাইরে চলে গেলেন। তোর প্রমোশন হয়ে গেছে.. এখন আপু থেকে তুই ডাইরেক্ট ভাবী!!
আমি পা এ আর কোন শক্তি নেই.. পায়ের তলা থেকে মাটি সরলে যা হয় আরকি….ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলাম!!
-আপু….তুমি ঠিক আছ তো..বস এখানে!!
আয়েশা আমাকে সোফাতে বসাল…!!
**********কিছুক্ষন পর********
আয়েশা আমার মেকাপ ঠিক করে.. আমাকে গহনাগুলো পড়িয়ে দিল…. একটা ভাড়ি ওরনা মাথায় সেট করে দিল!
-আর কতক্ষন লাগবে আয়েশা??
উনি ভিতরে ঢুকে হঠাত আমাকে দেখে থেমে গেলেন!!
আমি তার দিকে তাকালাম… তিনি এক নিজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন!
-সাধারণ শাড়িতে দেখলে কাজী হয়ত সন্দেহ করত.. তাই এগুলো করতে হল..এস!!
আমি পা আগে বাড়াতে নিলে তিনি আমাকে থামিয়ে দিলেন!!
-শুন..কোন রকমের চালাকি করার চেস্টা করবে.. এই কাজী এই এলাকার না..আর এই রেজিস্টারি টাও বাইরের করানো হচ্ছে!! তাই তুমি উলটা পালটা কিছু ভাবার চেস্টাও করো না..ঠিক আছে??
-হুম!!
-good!!
তিনি আমার হাত ধরে বাইরে বসার ঘরে নিয়ে আসলেন!!
আমরা সোফাতে বসলাম.. আর কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন!!
**
-বল মা কবুল??
-ক-কবুল!!
-আলহামদুলিল্লাহ….. আসেন আমরা মোনাজাত করি আর এই নব দম্পতির ভবিষ্যৎ এর শুভকামনা করি!!
“আল্লাহ… আমি কি দোষ করেছিলাম…যে এমনটা আমার সাথে হল…তুমি জোরা লিখেছ.. তুমি যা কর ভালর জন্যই কর… তাহলে এ কেমন বিয়ে যেখানে আমার বাবা মা কেউই উপস্থিত নেই.. আমাকে ধৈর্য দাও আল্লাহ.. সঠিক পথ দেখাও!”
মোনাজাত শেষে আমদের সই নেয়া হল… আমার হাত কাপতেছে এখনো..হয় কলম পরছে.. নাহয় লেখা নস্ট হচ্ছে..আমি বারবার ঠিক করার চেস্টা করছি !!
-ইরা…আস্তে আস্তে লিখো…ইটস ওকে.. take your -ইরা…আস্তে আস্তে লিখো…ইটস ওকে.. take your time!!(উনি)
আমার রাগ কস্ট….কত রকমের মিশ্র অনুভূতি যে এখন কাজ কিরছে..আমি নিজেও বুঝতেসি না!!
কোনমতে সাইন টা করে আমি কলম রেখে দিলাম..তিনিও সই করলেন….!!
কাজী সাহেব বিদায় নিলাম.. আর শুরু হলে সবচেয়ে জঘন্যতম কাজ.. পিক তোলা!!
মামুন.. রাশেদ..শহীদ যা নয় তা শুরু করে দিসে!! অভদ্র মশাই কে নিয়ে সেল্ফি তুলছে!! আমি জাস্ট আর পারছি না..কলেজ অনুষ্ঠানের কাজেরও অনেক ক্লান্তি লাগছে.. পা খুব ব্যাথা করছে!
আমি চকে যেতে নিলে.. সে আমার হাত পেছন থেকে ধরে কাছে টান দিল। আমি পরে যেতাম তাই আমার কোমরে শক্ত করস ধরল.. আমার হাত অজান্তেই তার কাধে চকে গেল!!
-দোস্ত.. জোস পোস হইসে.. ভাবী একটু হাসেন তো!!
.
উনি আমাকে চোখ মারলেন…. অসভ্য একটা…. আমাকে হুমকি দিয়ে বিয়ে করে এখন আবার ফাজলামি করা হচ্ছে!!
.
ঘড়ির দিকে চোখ দিয়ে দেখি..৬টা বাজে.. হায় আল্লাহ..আম্মু আজ মেরেই ফেলবে!!
.
-চল দেরি হচ্ছে..বাসায় যেতে হবে!!
.
আমি রুমে এ যেয়ে বসে পরলাম..জানি না. আব্বু আম্মুকে যে কিভাবে ফেস করব… কি বলব?? পথ দেখাও আমাকে আল্লাহ!!
.
-গহনাগুলো আর.. ওড়না টা খুলে ফেল…!!
উনি রুমে এসে আমাজে বলল!!ক
কিছুই বুঝছি না… আবার কি কাহিনী করবে!!
তিনি আমার পাশে এসে বসলেন…!!
-আমি জানি যে এই বিয়ে কথা আমাদের আব্বু আম্মুকে জানানো উচিত.. কিন্তু আমি বা তুমি কেউই তো তাদের কস্ট দিতে চাইনা বল!!
-হুম!!
তিনি আমার হাত টা হাতে নিলেন… আর আবার আমার চুড়িগুলো নিয়ে খেলছেন….!!
আমাজে একটু একা থাকতে দিন প্লিজ!!
-কয়েকটা দিন যাক..তারপর তুমি তাদের বলো..যে তুমি রাজী!!
-তাহলে আপনি এখন এসব করলেন কেন??
-তোমাকে হারানোর ভয়ে.. আমি তোমাকে হারাতে চাইনা ইরা!!
আমি আর কিছুই বললাম না।
-যাও… এগুলো ঠিকঠাক কর… আমি বাইরে অপেক্ষা করছি!!
উনি উঠে বাইরে গেলেন..আয়েশা আমার ওড়না আর গহনা খুলতে হেল্প করল..আমি মাথায় কাপড় দিয়ে বের হলাম!!
আমি ওনার সাথে রিকশায় উঠলাম….আজ উনি বাইক নিয়ে আসেননি!!
সারা রাস্তায় আমরা চুপ ছিলাম…. কোন কথা হইনি….হঠাত চোখ দুটোয় অন্ধকার দেখতে লাগলাম… কখন ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসল.. টেরই পেলাম না!!
**
.ঘুম ভাঙল রিকশার ঝাকিতে.. চোখ খুলে দেখি আমি অভদ্রের কাধে মাথা রেখে.. ধরফর করে উঠে স্বাভাবিক হয়ে বসলাম. বাসার সামনে রিকশা আসতেই তিনি রিকশা থামিয়ে দিলেন!!
-ইরা.. আজকে কোন কথা মাথায় রেখো না..ভেবে নাও আজ কিছু হইনি!!
“খুব সহজেই বলে ফেলল কথাগুলা. কি ভুলব.. যেঁ আপনি আমাকে abduct (অপহরণ) করেছিলেন… আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন.. না এটা যে আপনি আমাকে হুমকি দিয়েছেন যে আপনি আমার”কথা টা নিজের মনেও ভাবতে পারছি না..গা শিউরে উঠছে!!
-ইরা…কি ভাবছ??
-কিছু না!!
-ইরা কিছু তো বল… সন্ধ্যা থেকে তুমি একটা কথাও বল নি!!
-দেরি হয়ে যাচ্ছে.. আসি!!
আমি নামলে তিনি বলেন
-যেয়ে আমাকে একটা টেক্সট দিও…!!
আমি বাস্য চলে আসি…. আর একঝার বকা শুনি!!
আসার কথা ৫টায় আসছি ৭টায়.. অবশ্যই পুজা করবে না!!
আমি রাতে খেয়ে ফোন এর চার্জ খুলি…. হঠাত মনে পড়ল ফোন তো অন করিনি!!
অন করলাম…
***৬৭টা মেসেজ&৪৪টা মিসকল****
২ট ম্যাসেজ সায়মার আর বাকি সব কল টেক্সট মি.অভদ্র”!
হঠাত আবার কল চলে আসে..!!
-হ্যালো…!!
-তোমাকে না বলছি…. বাসায় আসলে আমাকে টেক্সট করবা!!
-আমার ফোনে চার্জ ছিল না!!
-এত্ত irresponsible কেন তুমি…আন্টির ফোন দিয়ে দিতে পারনি??
আমি কিছু বললাম না….!!
-যাও রাত হইসে ঘুমিয়ে পর!!কাল কথা হবে!!আল্লাহ হাফিজ!!
-আল্লাহ হাফিজ!!
কি করব বুঝতেসি নি..মা কে বলব…মা কিবিশ্বাস করবে. না বাবাকে বলব??
ফোনটা আবার বেজে উঠল!!
টেক্সট এসেছে
“”এত কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়!! “”
আমি একটা লম্বা নিশ্বাস নিলাম
.মাথা টা ব্যাথা করছে .. তারপর ঘুমিয়ে পরলাম…!!
******পরদিন ******
ইব্রাহিম এর point of view :
.
আমি ইরাকে কাল কাদতে দেখেছি…. কাপতে.. রাগতে.. কিন্তু আমি কোন সাহায্য করতে পারিনি..কারন এর মূলেই আমি ছিলাম!!
.
ও খুব জেদি… আমি ওকে ওই হুমকি টা না দিলে ও কোনদিনো আমাকে বিয়ে করত না….আমাকে ক্ষমা করে দিও সোনা….!!
।
আমি চেয়েছিলাম আজ ওকে একটু সময় দেই।কিন্তু কাল রিকশায় ও যখন আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে তখন দেখলাম..শরীর টা গরম.
বুঝতে পারলাম..ওর জ্বর আসছে!
।
মন আর মানল না.. তাই আয়াত এর বেতন এর বাহানায় ওকে দেখে ওর বাড়ি চলে আসলাম!!
.
দোতলায় উঠে দেখি ওদের ফ্ল্যাটে তালা লাগানো!!
কোথায় গেছে সব… ও তো ফোনেও আমাকে কিছু জানালো না!!
-আরে.. ইব্রাহিম তুমি এখানে??
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি!!
জুই ভাবীর মা আমাকে দেখে সিঁড়ি দিয়ে নিচে আসলেন!!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা.ইরাদের বাসায় এসেছ?? ওরা তো বাড়িতে নেই!!
– ওই আয়াত এর বেতন টা দিতে আরকি..সবাই কোথায় গেছে??
-ইরার মাকে বলতে শুনলাম.. ওরা নাকি….ওদের নানী বাড়িতে যাচ্ছে.. নতুন ঢাকায়…..ইরাকে নাকি দেখতে আসবে সেখানে ছেলেপক্ষ!!!!!
(চলবে)