অঙ্ক টিচার

গল্প ¦ অঙ্ক টিচার— পর্বঃ-২

শার‌মিন আক্তার
—তনয়াঃ হ্যা‌লো স্যার!
আয়াতঃ হ্যা ব‌লো? (খুব রে‌গে)
তনয়াঃ (বেটা হট টেম্পা‌রেচার) ম‌নে ম‌নে। স্য‌রি স্যার।
আয়াতঃ স্য‌রি বল‌লে কাজ হ‌বে না। আমি তোমা‌কে আর পড়া‌বো না!
তনয়াঃ স্যার আমি আর কখ‌নো এমন কথা বল‌বো না। প্লিজ বাবা‌কে কিছু বল‌বেন না।
আয়াতঃ কিছুটা ভে‌বে ঠিক আছে।
তনয়াঃ তাহ‌লে কাল থে‌কে পড়া‌তে আসছেন?
আয়াতঃ নাহ। তোমার বাবা‌কে বল‌বো না, তাই ব‌লে যে তোমা‌কে পড়া‌বো তা কিন্তু না?
তনয়াঃ প্লিজ স্যার সাম‌নের মা‌সে আমার পরীক্ষা।‌ এখন নতুন টিচার কোথায় পা‌বো? আর বাবা‌কেই বা কি বল‌বো?
আয়াতঃ সেটা মাথার ম‌ধ্যে প্রেম পোকা ডোকার আগে ম‌নে ছি‌লো না?
তনয়াঃ স্য‌রি বললাম‌ তো! আর আপ‌নিই‌ তো বল‌লেন যে এ বয়‌সে ভুল হয়। তাহ‌লে আপনার কি উচিৎ না আমা‌র ভুলটা শুধ‌রে দেয়া?
আয়াতঃ এই মে‌য়ে তু‌মি‌তো দেখ‌ছি আমার কথায় আমা‌কেই ফা‌সি‌য়ে দিলা। ঠিক আছে কাল থে‌কে পড়া‌তে আস‌বো। ত‌বে একটা শ‌র্তে?
তনয়াঃ কি শর্ত স্যার?
আয়াতঃ এ ধর‌নের কোন দুষ্ট‌মি বা ফাইজলা‌মি আর কখ‌নো কর‌বে না! ঠিক আছে?
তনয়াঃ ঠিক আছে স্যার।
‌বেটা তো‌রে একবার বা‌গে পাই। তখন দেখ‌বি। (ম‌নে ম‌নে)
প‌রের দিন থে‌কে আয়াত আবার নিয়‌মিত পড়া‌তে আস‌তো। তনয়া এখন অনেক শ‌ান্ত হ‌য়ে গে‌ছে। সেই আগের মত দুষ্ট‌মি ক‌রে না। আয়াত প্রথম প্রথম তা‌তে খুব খু‌শি হ‌য়ে‌ছি‌লো। কিন্তু ধী‌রে ধী‌রে আয়াতও তনয়ার সেই দুষ্ট‌মি গু‌লো‌কে খুব মিস কর‌তো।
‌কিন্তু সব বুঝ‌তে পে‌রেও আয়াত তনয়া‌কে কিছু বল‌তো না। ভাব‌তো সাম‌নে ওর পরীক্ষা। এই মূহু‌র্তে কিছু বলা মা‌নে ওর ঘাঁ টা‌কে উস‌কে দেয়া।‌ তাই চুপচাপ রই‌লো। তারপর তনয়ার পরীক্ষা শেষ হ‌লো। খুব ভা‌লোভা‌বেই পরীক্ষা গুলো হ‌য়ে গে‌লো।
পরীক্ষার পর তনয়া আবার আ‌গের মত দুষ্ট‌মি করা শুরু কর‌লো। কিন্তু আয়াত‌কে এখন খুব কম জ্বালায়।
এক‌দিন তনয়া ওর কিছু বান্ধ‌বি‌দের সা‌থে ঘুর‌তে পা‌র্কে গে‌লো। সেখা‌নে গি‌য়ে দে‌খে আয়াত এক‌টি মে‌য়ের সা‌থে ব‌সে ব‌সে কথা বল‌ছে, খুব হাসাহা‌সি কর‌ছে। তনয়া সেটা দে‌খে রা‌গে ফুল‌ছিল। ওর বান্ধ‌বীদের‌কে বল‌লো তোরা সাম‌নে যা আমি আস‌তে‌ছি।
তারপর সোজা গি‌য়ে আয়া‌তের সাম‌নে দাড়া‌লো। রা‌গি চো‌খে আয়া‌তের দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। আয়াত তনয়া‌কে দে‌খে বল‌লো—-
আয়াতঃ আরে তনয়া তু‌মি এখা‌নে?
তনয়াঃ উনি কে?
আয়াতঃ আমার বন্ধু লিমা।
তনয়াঃ বন্ধু না‌কি অন্য কিছু?
আয়াতঃ তা দিয়ে তোমার কি দরকার?
তনয়া কোন কথা না ব‌লেই আয়া‌তের গা‌লে একটা কিস ক‌রে বল‌লো কারন আই স্টিল লাভ উই।
উপ‌স্তিত ঘটনায় আয়াত আর লিমা হতভম্ব হ‌য়ে গে‌লো। আয়া‌তেরও ভিষন রাগ উঠে গে‌লো। তারপর একটা শব্দ হ‌লো
ঠাস____
আর তনয়া নি‌জের গা‌লে হাত দি‌য়ে আছে।
আয়াতঃ এই মে‌য়ে তোমা‌কে কথা বল‌লে বোঝ না না‌কি? তোমা‌কে এত বুঝা‌নোর পরও বু‌ঝো না। আর শোন তোমা‌কে আমি ভা‌লোবা‌সি না। কারন আমি লিমা‌কে ভা‌লোবা‌সি। আর হ্যা ও আমার বন্ধু না গার্ল ফ্রেন্ড। আর কখ‌নো তোমা‌কে পড়া‌বো না। যাও বা‌ড়ি যাও। ধমক দিয়ে পা‌ঠি‌য়ে দি‌লো।
তনয়া আয়া‌তের কথা গু‌লো শু‌নে কান্না ক‌রে দি‌লো। টপ টপ ক‌রে ওর চোখ থে‌কে জল ঝড়‌ছে। তারপর গাল চে‌পে ফু‌পিয়ে ফু‌পি‌য়ে বল‌লো,——-
তনয়াঃ ভা‌লোবা‌সেন না ঠিক আছে তাই ব‌লে চড় মার‌লেন কেন? আমার গালটা যে লাল হ‌য়ে গে‌লো। খুব ব্যাথাও কর‌ছে।
তনয়ার কথা শু‌নে আয়া‌তের খুব হা‌সি পা‌চ্ছে। কিন্তু এখন হে‌সে দি‌লে সব উল্টা হ‌য়ে যা‌বে। তাই অনেক ক‌ষ্টে আয়াত হা‌সিটা আটকা‌লো।।
তনয়া কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে চ‌লে গে‌লো। আর আয়াত ওর যাবার পা‌নে কতক্ষন তা‌কি‌য়ে থে‌কে বা‌ড়ি চ‌লে গে‌লো।
তনয়ার ফর্সা গা‌ল চ‌ড়ের দরু‌নে লাল হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছে।
তনয়ার মাঃ কি‌রে তোর গাল এত লাল কেন?
তনয়াঃ আর ব‌লো না মা রিপা আছে না আমার বন্ধবী ও দুষ্ট‌মি ক‌রে মশা মার‌তে গি‌য়ে গা‌লে চড় মে‌রে দি‌লো তাই। তনয়া যে‌নো শাক দি‌য়ে কই মাছ ঢাকছে।
তনয়ার মাঃ তাই ব‌লে এত জো‌ড়ে যে গা‌লে দাগ প‌রে যায়।
তনয়াঃ ওকে আমি ব‌কে দি‌য়ে‌ছি মা।
রা‌তের বেলা তনয়া ওর বাবার সা‌থে ব‌সে টি‌ভি দেখ‌ছি‌লো তখনই ওর বাবার ফো‌নে ফোন আস‌লো।
ওর বাবা যখন বল‌লো আয়াত ফোন ক‌রে‌ছে ভ‌য়ে তনয়া হাত পা ঠান্ডা হ‌য়ে যাবার উপক্রম। না জা‌নি কি না কি ব‌লে বাবা‌কে?
তনয়ার বাবা ফোনে কথা শেষ হ‌লে বল‌লেন—-
তনয়ার বাবাঃ আয়াত না‌কি আর তনয়া‌কে পড়া‌তে পার‌বে না!
তনয়ার মাঃ কেন?
তনয়ার বাবাঃ আয়া‌তের না‌কি কিছু দিন পর পরীক্ষা। প্রাই‌ভেট পড়া‌লে না‌কি ওর নি‌জের পড়ায় অসু‌বিধা হয় তাই।
তনয়ার মাঃ তাহ‌লে তনয়া‌কে কে পড়া‌বে?
আয়া‌তের বাবাঃ আয়াত নতুন টিচার ঠিক ক‌রে দি‌য়ে‌ছে। ক‌লে‌জের টিচার। বয়স্ক একজন টিচার।
তনয়া ম‌নে ম‌নে ভাব‌ছে বেটা বজ্জাত আমা‌কে এখন বয়স্ক টিচা‌রের হা‌তে দেয়া হ‌চ্ছে। তো‌কে আমি দে‌খে নি‌বো। ক‌বে তা নি‌শ্চিত বল‌তে পা‌রি না! হ‌তে পা‌রে পাঁচ দশ বছর পর! কিন্তু দে‌খে অবশ্যই নি‌বো!
তারপর আর আয়া‌তের সা‌থে তনয়ার দেখা হয়‌নি। তারপর তনয়া আর কা‌রো সা‌থে রি‌লেশন‌তো দূ‌রে থাক কেউ প্র‌পোজ কর‌লেও তা‌কে ধ‌রে পিটা‌তো। তনয়া এস এস‌ সি পরীক্ষায় জি‌পিএ ফাইব পে‌লো। তারপর কিছু‌দিন আগে এই ক‌লে‌জে ভ‌র্তি হ‌লে‌া। কিন্তু কপাল দুঃ‌খে ব‌লেন আর সু‌খে ব‌লেন প্রায় দু বছর পর তনয়া আর আয়া‌তের আবার দেখা হ‌লো।
ও হ্যা‌লো বন্ধুগন কল্পনা শেষ। এবার বর্তমা‌নে ফি‌রে আসেন।
প‌রের দিন তনয়া আবার ক‌লে‌জে গে‌লো। আজ‌কে আয়াতের ক্লাস টাই‌মে তনয়া গি‌য়ে ক্লা‌সের পিছ‌নের দিকটায় বস‌লো। আর এমন ভা‌বে বস‌লো যা‌তে আয়াতকে বার বার দেখ‌তে না হয়। মা‌নে ওর সাম‌নের বেঞ্চ‌ে লম্বা একটা ছে‌লে ছি‌লো।
আয়াত এসে বার বার ক্লা‌সের এদিক ওদিক চোখ বুলা‌চ্ছিল। তারপর দেখ‌লো তনয়া ক্লা‌সের পিছ‌নের দিকে নি‌চের দি‌কে তা‌কি‌য়ে চুপচাপ ব‌সে খাতায় আঁকিবু‌কি কর‌ছে।
আয়াত তনয়ার বে‌ঞ্চের পা‌শে গি‌য়ে একটা কা‌শি দি‌লো।
আয়াত থে‌কে তনয়া তাড়াহু‌রো ক‌রে দাড়া‌লো আর হাতটা সোজা বাম গা‌লে রাখ‌লো।
তনয়ার এ অবস্থা দে‌খে আয়া‌তের খুব হা‌সি পেলো কিন্তু হা‌সিটা চে‌পে রে‌খে বল‌লো——
আয়াতঃ কি ব্যাপার তনয়া আমি ওখা‌নে পড়া‌চ্ছি আর তু‌মি এখা‌নে খাতায় কি আঁক‌ছো।
খাতাট‌া হা‌তে নি‌য়ে দে‌খে তনয়া পেট‌ মোটা একটা কার্টুন এঁকে‌ছে।
আয়াতঃ ‌হোয়াট ইস দিস তনয়া?
তনয়াঃ ছ‌বি স্যার।
আয়াতঃ সেটাপ। আমি বল‌ছি ক্লাস টাই‌মে পড়ায় ম‌নো‌যোগ না দি‌য়ে তু‌মি এসব কি আঁক‌ছো?
তনয়াঃ মাথা নিচু ক‌রে স্য‌রি স্যার।
আয়াতঃ ইট’স ওকে । বাট নট এগেইন।
তনয়াঃ আই রি‌মেম্বার স্যার।
আয়াতঃ হুমম দ্যাট’স গুড।
তারপর আয়াত আবার পড়া‌নো শুরু কর‌লো। আর তনয়া ম‌নে ম‌নে আয়াত‌কে এক গাদা গা‌লি বর্ষন কর‌লো!
প‌রের দিন ক‌লে‌জের ব্রেক টাই‌মে ক‌য়েকজন স্টু‌ডেন্ট মি‌লে ঠিক কর‌লো অঙ্ক প্রাইভেট পড়‌বে। আর সবাই আয়াত স্যা‌রের কা‌ছে পড়‌বে ব‌লে ঠিক করে‌ছে। কিন্তু তনয়া বল‌লো তার কা‌ছে না প‌ড়ে অন্য কোন টিচার দেখ না?
‌কিন্তু সবাই মন‌স্থির ক‌রে‌ছে আয়াত স্যা‌রের কা‌ছেই পড়‌বে। তাই সবাই মি‌লে আয়া‌তের কা‌ছে গে‌লো কথা বল‌তে। কিন্তু তনয়া গে‌লো না। সবাই আয়াত‌কে পড়া‌নোর জন্য অনেক অনু‌রোধ করার পর আয়াত রা‌জি হ‌লো। কিন্তু আয়া‌তের বাসায় গি‌য়ে পড়া‌তে হ‌বে। সবাই তা‌তে রা‌জি হ‌য়ে গে‌লো। আয়াত তখন তনয়া‌কে খুজ‌তে ছি‌লো। তারপর ভাব‌লো হয়‌তো তনয়া ওর কা‌ছে পড়‌বে না?
তনয়া ভাব‌ছে পড়‌তে যা‌বে কি যা‌বেনা? তারপর ভাব‌লো সব বন্ধুরা পড়‌তে পার‌লে আমি কেন পার‌বো না? আর আয়াত স্যা‌রের প্র‌তি এখন আমার কোন ফি‌লিংস নাই। আবার নি‌জেই নি‌জে‌কে প্রশ্ন কর‌লো স‌ত্যিই কি তার প্র‌তি কোন ফি‌লিংস নেই?
আচ্ছা একটা পরীক্ষা ক‌রে দে‌খি আয়াত স্যার‌কে আমি আজও ——–বা‌সি কিনা?
‌চোখ বন্ধ ক‌রে কতক্ষন থাক‌বো য‌দি আয়াত স্যা‌রের চেহারা দে‌খি তাহ‌লে—–বা‌সি। আর না আস‌লে তো নাই।
আ‌মি চোখ বন্ধ করলাম কিন্তু।
কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করার পর তনয়া কেঁপে উঠ‌লো। আরে আমি‌তো আয়াত স্যার‌কে ভু‌লে গে‌ছিলাম! তাহ‌লে চোখ বন্ধ কর‌লেই শুধু তা‌কে কেন দেখ‌তে‌ছি? আজব‌ তো!
ক‌য়েক দিন পর থে‌কে সবাই আয়া‌তের বাসায় পড়‌তে গে‌লো। সবাই আয়া‌তের বাসায় ডু‌কে পর‌লো কিন্তু তনয়া ভিত‌রে যা‌বে কি যা‌বে না না তা নি‌য়ে চিন্তা কর‌ছে। এর ম‌ধ্যে আয়াত দড়জার সাম‌নে এসে বল‌লো ভিত‌রে এলে তোমা‌কে খে‌য়ে ফেলবে‌া না! আয়াত‌কে দেখ‌লেই বাম গা‌লে হাত দেয়া তনয়া অভ্যা‌সে প‌রিনত হ‌য়ে‌ছে।
‌ভিত‌রে ডুকে তনয়া দেখ‌লো আয়া‌ত দের বা‌ড়িটা বেশ সুন্দর ক‌রে সাজা‌নো।
একজন বল‌লো স্যার আপ‌নি কি এখা‌নে একা থ‌াকেন?
আয়াতঃ আরে নাহ! বাবা মা মাস খা‌নের জন্য গ্রা‌মে গে‌ছে। কিছু‌দিন পরই চ‌লে আস‌বে?
———ওহ।
আয়াতঃ তোমরা পা‌শের রু‌মে যাও সেখা‌নেই সবাই‌কে পড়াই।
সবাই আয়া‌তের বাসায় আসে তারপর ব‌সে পড়ে যে যার মত গল্প করে। কিন্তু তনয়া চুপচাপ ব‌সে বই‌য়ের দি‌কে তা‌কি‌য়ে থা‌কে।
ইদা‌নিং আয়াত খেয়াল কর‌ছে তনয়া সেই আগের তনয়া নাই। আগের সেই দুষ্ট‌মি চাঞ্চল্য তার মা‌ঝে আর নেই। একদম শান্ত প্রকৃ‌তির। আয়াত তনয়ার এ রুপটা একদমই পছন্দ ক‌রে না।
প্রায় চার মাস হ‌য়ে গে‌ছে আয়াত এখ‌নো তনয়া‌কে দুষ্ট‌মি কর‌তে দে‌খে না। কেমন যে‌নো হ‌য়ে গে‌ছে। ঠিক যেমন পা‌নির অভা‌বে এক‌টি ফুল নে‌তি‌য়ে যায় তনয়াও ঠিক তেম‌নি নে‌তি‌য়ে গে‌ছে। আয়া‌তের ম‌নে হ‌চ্ছে কোথাও না কোথাও এর জন্য ওই দায়ী।
তাই আয়াত ঠিক কর‌লো তনয়ার সা‌থে সরাস‌রি কথা বল‌বে।
আয়াতঃ তনয়া শোন?———
চল‌বে——–