এলাকার বড় ভাই !! Part- 10
ইরা: তুমি না বললে আমি যাব না। কেন এসেছে ওনারা!!
-তোকে দেখতে!! (আম্মু)
কি আমি কি ভুল শুনলাম নাকি কিছু??
-আম্মু আয়াত এর আম্মু আব্বু আমাকে দেখতে এসেছে… কার জন্য??
-তার ছেলের জন্য!!
-কি?? ইব্রাহিম ভাইয়ার জন্য!!
-আস্তে বল ওনারা বাইরে বসে আছে!!
-তোমারাও রাজি হয়ে গেলে!!
-আরে না…. তারা হুট করে চলে এসেছে…. তুই এখন কিছু বলিস না মা..একটু পরে তোর বাবা কথা বলবে এটা নিয়ে … এখন চল আপাতত!!
ওই মি.অভদ্র আর আমি..হুহ.কোনদিনও না… কিন্তু বাবা মায়ের সম্মান রক্ষা করতে তো যেতেই হবে…আল্লাহ…please help me !!
ইরা.. এখন তুই নিরুপায়!!
-হুম!!
আমি ঘোমটা টেনে বসার রুমে গেলাম আম্মুর সাথে। আব্বু সোফায় বসে আংকেল আন্টির সাথে কথা বলছে!!
আন্টি আমার হাত ধরে তার পাশে বসালেন…আম্মু পাশের চেয়ার এ বসালেন!!
-পরিবর্তন তো অবশ্যই আছে….. ইব্রাহিম এখন আগের থেকে অনেকটাই বদলেছে… আর আপনি যা বলছেন.. তেমন খারাপ কোন ব্যবহার তো আমি ওর দেখিনি!! (আব্বু)
আব্বু কি বলছ এগুলা….Don’t tell me.. তুমি এই সম্বন্ধে রাজী??
-আমার পোলায় আমারে সেই সম্মান টা ফেরত দিছে। আমার আর কি চাই কন!! (আংকেল)
আব্বু আংকেল এর সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলল…..আংকেল আন্টি সত্যি খুব ভাল…এমন শশুর শাশুড়ি পেলে যে কোন মেয়েই খুশি হবে…কিন্তু ওনার সাথে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না….যাকে দেখে আমি সবসময় ভয়ই পাই!!
– আপনেরা রাজী থাকলে আমরা বালা জোরা ইরা মা রে পরায়া দেই!! (আন্টি)
কি???
-মোজ্জামেল সাহেব….কিছু মনে করবেন না…আমাদের কিছু সময় লাগবে।আমার একমাত্র মেয়ে ইরা…. ইব্রাহিম খুব ভাল ছেলে এতে কোন সন্দেহ নেই…ও যে কাউকেই খুব সুখী রাখবে.. কিন্তু আমার ভাবতে -মোজ্জামেল সাহেব….কিছু মনে করবেন না…আমাদের কিছু সময় লাগবে।আমার একমাত্র মেয়ে ইরা…. ইব্রাহিম খুব ভাল ছেলে এতে কোন সন্দেহ নেই…ও যে কাউকেই খুব সুখী রাখবে.. কিন্তু আমার ভাবতে সময় দিন!!
– আমরাও এক মাইয়ার মা বাপ….আমরাও বুঝি… আচ্ছা ঠিক আছে!!
কিছুক্ষন পরে আংকেল আন্টি বাসায় চলে গেলেন!!
-আব্বু এটা সম্ভব না…. আমি ইব্রাহিম ভাইয়া কে বিয়ে করতে পারব না… এটা সম্ভব না!!
-তুই কি ওকে ভাইয়ের মত দেখিস?? (আম্মু)
এ্যা…আম্মু কি বলছ কি তুমি??
-ভাই???আম্মু আমি তাকে কিছুই দেখি না। সে আমার student এর ভাই এর বেশি কিছুই না!!
– কিন্তু তারা বলল ইব্রাহিম তোমাকে খুব পছন্দ করে!!
-আম্মু কি চাও তুমি….তোমার কি ওরে পছন্দ??
-আমি কবে বললাম?? আমি তো এটাই বলছি.. ওদের ফ্যামিলি খুব ভাল…. এটুকুই!!
-আহা!! সেটা তো ঠিক আছে… কিন্তু আমাদের মেয়ের তো ওকে পছন্দ না.. তাছাড়া ওর মাত্রই ২য় বর্ষে!!
-আব্বু পড়া ছাড়া এখন কোন কিছুই মাথায় নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না…. প্লিজ তুমি না বলে দাও!!
-কিন্তু ইরা একবার ভেবে দেখ। (আম্মু)
কি ভেবে দেখার আছে আর… রাগে মাথা খারাপ হয়ে গেল…!!
-আমি এমন একজন এর সাথে কিভাবে থাকব… যাকে আমি ভয় পাই…. যার সাথে স্বাভাবিক কথা বললেও আমার মনে হয়… এখনি কোন অঘটন ঘটবে.. আমার গা কাপ্তে শুরু করে…. আর এগুলো কেন হয় তা তোমারাও খুব ভালভাবেই জানো!! তোমাদেরও ঠিক একই অবস্থা হয়েছিল প্রথম দিন… কিন্তু সময়ের সাথে তোমরা সবটা মেনে নিতে পেরেছ.. আমি পারিনি!!
.
আমার গলা ভারি হয়ে আসছে… আমার দু চোখে ঘোলা দেখছি…. হ্যা.. আমি কান্না করছি “!
আব্বু উঠে এসে আমাকে জরিয়ে ধরল.. আমি আব্বু কে ধরে রেখেছি শক্ত করে… পৃথিবীতে একমাত্র পুরুষ যাকে আমি বিশ্বাস করে কোনদিন ঠকিনি..কেননা তিনি আমাকে জন্ম দিয়েছেন!!
-থাক মা আর কাদে না… লক্ষী মা আমার….. শুনো (আম্মুকে) এবার আর কোন কথা হবে না….এই বিয়ে হবে না ব্যাস। আগে ওর পড়া শেষ হবে.. তারপর বিয়ে….!!
আম্মু আর কিছু বলল না….আমি আম্মুর মনের কথাও বুঝি.. একটা মেয়ে বড় হলে সবারই একটু চিন্তা থাকে… কি করে বুঝাবো তোমাদের..এই জীবনে আর কাউকে বিশ্বাস করা আমার পক্ষে সম্ভব না!
ভালবাসা বলে এই পৃথিবীতে কিছুই নেই… একমাত্র বাবা মায়ের ভালবাসায় সত্যি… এই ভালবাসায় নেই কোন স্বার্থ… নেই কোন প্রতিদানের আশা!!
সব কিছুই অভিনয়…. এর ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটবে… আবেগ ছাড়া আর কিছুই না… যখন আবেগ কেটে যাবে…. ভালবাসাও চলে যাবে!!
রাতে জোর করে আম্মু আব্বু আমাকে খাওয়ালেন…আমি রুমে গেলাম..একটা বই নিয়ে বসলাম..!!
রাত ১.০০ বাজে.. সবাই ঘুমিয়ে পরেছে…কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই…. থাকবেই বা কি করে….. অতীত যখন আবার হাতছানি দেয়…. ভুলে গেলেও সেই স্মৃতিগুলোই খুড়ে খুড়ে খায়!!
ফোনটা হঠাত বেজে উঠল!!
“”””””””””””Gunda calling “””””””‘”””
এত রাতে…??
ধরব?? না ধরলে কাল যদি বাইরে ধরে….সবাই তো ঘুম…নাহ ধরি!!
চোখ দুটো মুছে.. কল রিসিভ করলাম
-হ্যালো…. আসসালামু আলাইকুম!?
-ওয়ালাইকুম আসসালাম…কেমন আছ??
আজ তার ভয়েস টা একটু অন্যরকম লাগছে…. খুব আস্তে কথা বলছে.. ভাব ভংগি ও অন্যরকম.. অনেকটা caring!!
-জি… ভাল!!
-তোমার আওয়ার এমন লাগছে কেন??তুমি কি কান্না করতেস??
ইসস ইরা…. তোর আওয়াজ এত্ত ভারি লাগছে… যে কেউ বুঝে নিবে!!
-না.. ঘুম হইনি তাই মনেহয়।
-মিথ্যা বলবা না.. কি হয়েছে.. সত্যি করে বল!!
-কিছু হইনি.. সত্যি!!
-হুম..ঘুমাও নি এখনো??
-যাব..আপনি জানলেন কি কিরে যে আমি জেগে??
– একটু আগেই কাজ থেকে ফিরলাম… তোমার রুম এর লাইট জালানো…. তাই ভাবলাম .. কল করি!!
-ওহ!!
– আব্বু আম্মু এসেছিল??
-হ্যা….!!
এর পর আমরা দুজনই থেমে গেলাম!!
– তুমি চাইলে… এটা আমরা পরেও করতে পারি..আপাতত এংগেজমেন্ট টা হোক.. তোমার এক্সাম এর পর.. বা যখন তুমি রেডি হও… it’s totally up to you…তুমি যেটা চাও সেটাই হবে “!
আমি চাই.. আপনি আমার লাইফ থেকে চলে যান…. আমাকে একা ছেড়ে দিন!!
-দেখুন..
আমি কিছু বলার আগেই কিছু একটা আওয়াজ পেলাম..
-আমি পরে কথা বলছি.. আল্লাহ হাফিজ!!
সাথে সাথে ফোন টা রেখে দেই… আম্মু আমার রুম এ আসল!!
-কিরে কত রাত হল..ঘুমাবি না….!!
-হ্যা.. একটু বাকি আছে.. হয়ে গেলেই ঘুমাব “!
-দেখ মা….. তুই কিছু চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে!!
-তোমারা মানা করে দিয়েছ??
– না রে মা…তোর বাবা বলল… ফোন করে না বলার চেয়ে দেখা করে বুঝিয়ে বললে ভাল…..তারা কত আশা নিয়ে এসছিল বল!!
তাও ঠিক!!
-তুমি যাও ঘুমাও!!
-হ্যা…তুই আর রাত জাগিস না। ঘুমিয়ে পড়!!
আম্মু এই বল্রে চলে গেল….কিছুক্ষন পড় আমারো ঘুম চলে আসল…..আর সেদিনই ছিল…আমার লাইফের শান্তির শেষ ঘুম!!
*********পরদিন********
আমি কলেজে এ যেতে বাসা থেকে বের হই..
আমার পা দুটো থেমে যায়…. উনি আমার দিকে আসছে কেন…..জেনে গিয়েছে নাকি…আমি মানা করে দিয়েছি?
-কলেজে যাচ্ছ?? (উনি)
-জি ভাইয়া!!
আমি তাকিয়ে দেখলাম….উনি অনেক কস্টে হাসি আটকে রেখেছে!!
-ইরা…এখনো কি আমাকে ভাই ই বলবা??
-তাহলে কি বলব??
আমি কি উলটা পালটা বলছি এসব…ইরা চুপ থাক!!
-কিছু না…চল আমি তোমাকেদিয়ে আসি…
-না…আ-আমি যেতে পা-পারব…..!!
-আমি তো তোমাকে জিগ্যেস করিনি… আমি বলেছি দিয়ে আসব তো দিয়ে আসব….!!
আমি এখন কি করব…ওনার সাথে কেউ আমাকে বাইকে দেখলে শুধু শুধু কথা হবে……আমি মানা ও তো করতে পারছি না!!
উনি বাইক নিয়ে আসলেন…একটা প্যাকেট বের করলেন…নিকোটিন চুইংগাম এর….
-সিগারেট ছাড়ার চেস্টা করছি আরকি…উঠ .!!
.আমি কিছু না বলে উঠলাম…..
—
তিনি আমাকে কলেজ এর সামনে নামিয়ে দিলেন….আমি নেমে চলে যেতে চাইলে.. তিনি আমার হাত ধরে থামালেন..আমি ঘুরে ওনার দিকে তাকালাম!!
– এত্ত তাড়াহুড়া করছ কেন…করছ… ক্লাস শুরু হতে টাইম আছে!!
আশেপাশের মেয়েরা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে… আর মুচকি মুচকি হাসছে!
-হাত ছাড়ুন…. সবাই দেখছে!!
-দেখুক… আমি কি পরের বউ এর হাত ধরেছি নাকি??
-কি???
-না মানে হবু বউ!!
অনেক হয়েছে…. নাহ এবার তো ওনাকে বলেই ছাড়ব….. এই আমি ওনাকে বিয়ে করব না…হ্যা বলে দে ইরা!!
-ইরা!!!!!!!! (সায়মা)
-যাও তোমার বান্ধবী ডাকছে…. আর শুন… কোচিং শেষে সোজা বাসায়… বুঝলা??
-হুম
-পিচ্চি!!!
এটা বলে উনি চলে গেল… wait.. what???…. পিচ্চি.. আমি পিচ্চি…..?? তাইলে উনি কি বুইড়া নাকি!!
আমি সায়মার কাছে গেলাম…..
-আমাকে সত্যি করে বল….একটু আগে কি হচ্ছিল… নাহলে তোর দাত আমি একটা ও রাখব না!!
ওকে রানা ভাইয়ার বিয়ের দিন থেকে সব খুলে বললাম…!!
– তুই রাগবি এটা শুনে … কিন্ত আমার মনে হয়… ভাইয়া তোকে খুব ভালবাসে রে!!
-কিন্তু আমার মধ্যে সেই ভালবাসা আর কারো জন্যই নেই……!!
-কেন??
সায়মাকে পরে সব খুলে বললাম…আমার অতীত জীবনের কথা!!
****ইব্রাহিম র point of view***
ইরা কে কলেজ দিয়ে এসে আমি দোকানে চলে আসলাম…. সব কিছু ভালই যাচ্ছে….!!
আমি তিনমাস আগে বাবাকে দেয়া কথার মান রাখতে পেরেছি….. আলহামদুলিল্লাহ…. বাবা এখন খুব খুশি!!
আমাকে নিয়ে সেই আগের গর্বটা আবার সে করতে পারে…. আমি সমর্পুন কাজে মন দিয়ে দিয়েছিলাম..ইরার সাথেও কথা কমিয়ে ফেলেছি!!
কয়েকদিন আগে আয়াত আমার কাছে এসে বলল….ইরা নাকি আমার কথা জিগ্যেস করেছে…. ও নাকি খুব খুশি যে আমি এখন কাজ করি!!
আব্বু আম্মু এরপর প্রস্তাব নিয়ে ইরার বাড়ি যায়… ইরার আব্বু আম্মুও নাকি আমার কথা বলেছে.. তবে তারা একটু সময় চায়!!
তারা যদি আমাকে পছন্দই করে তবে সময় কেন লাগবে??
থাক… ধৈর্জ হারা হব না…..সবঠিকই হবে.. আজ সন্ধ্যায়ই তো তারা সব জানাবে!!
***
আমি রাত ১০ টা বাসায় ফিরলাম….. দেখি আম্মু আব্বু সোফায় বসে কথা বলছে…..!!
– ভাইয়া ইরা আপুর আব্বু এসছিল…!!
-ইবু বাবা আয়….. বস এইখানে!! (আম্মু)
এরপর আব্বু আমাকে যা বলল… তারপর আমার রাগ সহ্যের বাইরে চলে গেল…. “!
তারা এই বিয়ের জন্য মানা করে দিয়েছেন……আমি যে কিভাবে আমার রাগ টা ধরে বসে আছি তা একমাত্র আল্লাহই জানে!!
আমার বাবা অনেক দিন পর আমাকে নিয়ে খুশি.. আমি তাকে আমার আগের আসল রূপ দেখিয়ে কস্ট দিতে চাইনা…ভয় ও দেখাতে চাই !!
-আমি না বুঝলাম…তারা দুজনই তো বলল ইব্রাহিম রে তাগো পছন্দ হইছে…. তাইলে কি হইল??(আম্মু)
– ইরা এখন সুদু পড়ার দিকে ধ্যান দিবার নাকি চায়…!!
ওহ… তার মানে… তুমি মানা করেছ….very bad move ইরা… তুমি নিজেও জানো না তুমি কি করেছ!!
– পড়াশুনা কি এখানে থেকা করবারপারব না…. এমনেও তো ওই আয়াত রে পড়ায়.. দুজন একসাথে পড়ত…..আমরা কি ওরে দিয়া কাজ করাইতামম..আমাদের বাড়িতে ২টা কাজের লোক থাকতে ..!!(আম্মু)
-আমি তো সব বললাম…..তারপরও উনি রাজি হলেন না!! (আব্বু)
আমি নিজের রাগকে শান্ত করলাম…যাতে আব্বু আম্মু না বুঝে…. স্বাভাবিক ভাবে বললাম
-আব্বু…. এখন এসব ভেবে লাভ নেই.. যা হবার হয়েই গেছে….কেউ রাজী না হলে আমরা তো আর জোর করতে পারব না…. হাত মুখ ধুয়ে আসি আমি..সবাই একসাথে খাবো!!
আমি রুম এ গেলাম…. আমার রাগে ইচ্ছে করছে রুমের সব কিছু ভেঙে ফেলি.. কিন্তু না…এখন কিছু করে বসলে… যা ভেবেছি সব মাটি হয়ে যাবে!!
হাত মুখ ধুয়ে আমি মাথা পানি নিলাম…. বের হয়ে মামুন কে ফোন দিলাম
-বুঝেছিস.. কি করতে হবে….??
-জি ভাইয়া….. হয়ে যাবে!!
-আর হ্যা.. ওর গায়ে যেন কেঊ হাত না দেয়.. তাহলে আমি তোদের আস্ত রাখব না…. যত কস্টই হোক…. গায়ে হাত যেন না লাগে!!
-আপনি চিন্তা করবেন না… আমি আর শহীদ ভাইয়া..স্লব সামলে নেব!!
ফোন কেটে দিলাম….. “কালকের দিনের জন্য…. তুমি আমাকে কোনদিন ও ক্ষমা করবা না জানি… I’m sorry ইরা!!”
(চলবে)