একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 14
১৪.
নিভ্র নিজের রুমে বসে আছে।মাথাটা ঝিঁম ধরে আছে।সে কি করছে না করছে সবই তার মাথার উপড় দিয়ে যাচ্ছে।নিভ্র বেড টেবিল থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিলো।নিচের টেলিফোনে কল দিলো।রহমত চাচা ফোন ধরতেই নিভ্র বলে……..
—–“চাচা এক কাপ হট কফি নিয়ে আসেন রুমে।”
বলেই ফোন কেটেঁ দেয়।নিভ্রর চিন্তা হচ্ছে সাফার হাতের।কিছুক্ষণ আগেই দেখা হয়েছে তবুও তার চিন্তা হচ্ছে। যেখানে সে অপারেশন করে এসেও রোগীকে তেমন দেখতে যায় না সেখানে সাফার সামান্য হাত কাটাঁ দেখে কেনো এত চিন্তিত সে এটা নিভ্র বুঝতে পারছে না।অত বড় বড় অপারেশন করেও সে রোগী সম্পর্কে ভালো খারাপ ধারনা দিতে পারে তাই তাদের খোঁজ খবর নেও ছাড়া সে তেমন কিছু করে না।কিন্তু এখন কেনো এত চিন্তিত সে।নিভ্র হাতের এ্যাফ্রোনটা বেডে রেখে ওয়াসরুমে চলে যায়।আয়নার সামনে দাড়িয়ে চোখে মুখে পানি ছিটায়।হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে।সাফার আঙ্গুলের রক্ত এগুলো।নিভ্র কিছুক্ষণ হাত ঘুরিয়ে দেখে।বাম হাত দিয়ে ডান হাতের রক্ত ছুঁয়ে দেখে।আবার আয়নায় তাকায়।নিজেকে কেমন যেনো অচেনা লাগছে তার কাছে।আগে এই আয়নার সামনে দাঁড়ালে রাগী জিদ্দি বদমেজাজি নিভ্রকে দেখত সে।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার মাঝে এক অদ্ভুত সত্তা কাজ করছে। সবুজ চোখে সে অন্য কিছু দেখছে।কিন্তু সেই অন্যটাই সে মানতে পারছে না।নিভ্র দাঁতে দাঁত চাপে।মাথার রগ গুলো দু পাশে ফুলে উঠে।নিভ্র ফঁসফঁস নিঃশ্বাস নিয়ে বলে………..
——“সব তোমার জন্য।তোমার থেকে দূরত্ব বজায় চলতে হবে।তা না হলে কিছুদিন পরে তো আমি নিজের নামের সাথেও অপরিচিত হয়ে যাবো।এটা কিছুতেই হতে পারে না।নিভ্রনীল একটা মেয়েতে সীমাবদ্ধ হতে পারে না।নেভার…..”
বলেই পানি দিয়ে হাত ধূয়ে ফেলে।দু হাত এক সাথে করে পানি নিয়ে মাথায় দেয়।আয়নায় কিছু পানি মারে।আয়নার বিন্দু বিন্দু পানিতে সে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পায়।নিজের চোখের সাথে চোখ রাখে।তারপর ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে আসে।তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে।জামাকাপড় চেঞ্জ করে।কালো টাউজার আর কালো গেঞ্জি পরে নেয়।তারপরে টেবিলের ডায়েরী নিয়ে সোফায় কাৎ হয়ে শুয়ে পরে।হাতের কলম দিয়ে লেখা শুরু করে।ডায়েরী লেখা নিভ্রের অভ্যাস।সে প্রায় ডায়েরী লেখে। রহমত রুমে ডুকার আগে খ্যাঁক করে কেশে নেয়।যে ছেলেটাকে সে বাঘের গল্প শুনিয়ে ছোট বেলায় ঘুম পারাতো আজ তাকেই সে বাঘের মত ভয় পায়।ছোট বেলায় নিভ্রকে বাঘের গল্প শুনানো উচিত ছিলো না। কথাট মনে মনে কয়েকবার উচ্চারন করে।তারপর আবার খ্যাঁক করে গলা পরিষ্কার করে বলে……
—–“নিভ্র বাবা আসমুনি??”
নিভ্র লেখতে লিখতেই জবাব দেয়……
—–“আসেন চাচা”
রহমত রুমে ডুকে কাপ রাখে টেবিলে।তারপর যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।নিভ্র মাথা উঁচিয়ে বলে…..
—-“চাচা এটা তোমার প্রথম ভুল তাই মাফ করে দিলাম।জীবনে যদি এই ভুল আর একবার করো তবে বাঘ কেমন হয় তুমি বাস্তবেই দেখবে।”
রহমত হতভম্ভ হয়ে তাকায়। নিভ্র এতটা রেগে তার সাথে কখনই কথা বলে না তবে আজ কেনো বললো।রহমতের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হয়।সে কাঁপা কন্ঠে বললো………..
—–“কেন বাবা আমি কি কিছু ভুল করছি??করলে কও শুধরাই নিমু নে”
নিভ্র ডায়েরীটা সোফার এক পাশে রেখে উঠে বসে।রহমতের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলে…..
—–“আর যাতে কখনো অনুমতি নিয়ে আমার রুমে আসতে না দেখি চাচা।”
রহমতের মুখে খুশির ঝঁলক দেখা দেয়।গলার গামছা দিয়ে কপাল মুছু বলে…..
—-বুঝতাম পারছি বাবা।এহন আসি??
—–আবার অনুমিতি নিচ্ছ??(চোখ রাঙ্গিয়ে বলে নিভ্র)
—-আচ্ছা বাবা সারি।এহন আমি যাই।
.
বলেই রহমত রুম ত্যাগ করে।সারি কথাটা শুনে নিভ্র হাসে।নিঃশব্দে সে হাসি আবার মুখে মিলিয়ে যায়।
.
.
রুমের দরজাটা ঠেলে ভিতরে ডুকে পরে রাফা।সাফা বিছানায় এখনো আগের মত চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।দরজার শব্দ পেয়ে হকচটিয়ে উঠে বসে।রাফাকে দেখে মিষ্টি করে হাসে।রাফা এগিয়ে এসে চিন্তিত ভঙিতে সাফার পাশে বসে।একদিনেই মেয়েটাকে সে খুব ভালোবেসে ফেলেছে।কেমন আদর আদর লাগে।এই গোল গোল গাল গুলো টেনে দিতে ইচ্ছে করে।রাফা নিজের ইচ্ছে দাবিয়ে না রেখে সাফার গাল টেনে দিয়ে বললো…….
——“তোমার নাকি হাত কেটেঁ গেছে??কিভাবে হলো বলতো??”
সাফা আবার হাসে।হেসে বলে……
—–“তেমন কিছু না।একটু করে কেটেঁছে।দেখেন ব্যান্ডেজও করা হয়েছে। এখন আপনি বলেন কোথায় ছিলেন??”
রাফা লজ্জিত ভঙিতে তাকালো।সাফা এর অর্থ বুঝলো না।আবার প্রশ্ন করে বসে।বলে…….
—-“কি হলো বলেন??”
——“নিশানের সাথে দেখা করতে গিয়েছি”
সাফা অবাক হয়ে বলে……
——“এই নিশান কে আপু???”
—-“কিছুদিন পরেই আসবে। তখন দেখে নিও কে??এখন এসব ছাড়। চল খেতে।রাত কয়টা বাজে যানো??”
—–“কি ভাবে খাবো আমার হাত”…..(নিজের হাত দেখিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলে সাফা)
—-“সেটা টেবিলে গেলেই দেখা যাবে।চলো এখন”
.
বলেই টেনে তুলে সাফাকে।হাত ধরে নিচে নিয়ে আসে।টেবিলে সবাই আগে থেকেই উপস্থিত আছে।মেইন দরজার সামনে বিশাল রুম জুড়ে সাদা সোফা আর টিটেবিল।সেদিক থেকে কিছুটা এগিয়ে এলেই একটু উঁচু জায়গা জুড়ে ডাইনিং টেবিল।তার বিপরীতে সিঁড়ি। টেবিলের সবার সামনের চেয়ারে বসেছে মাহবুব তার দু’পাশে দুই ছেলে আর ছেলেদের পাশে তাদের সহধর্মিণী। তার পাশের একটাতে অভ্র বসে আছে।সাফা চারদিকে চোখবুলিয়ে দেখে কিন্তু যাকে খুঁজছে সে নেই।সাফার নীলাভ চোখ নিভ্রকে খুঁজছে। কিন্তু সে তো যানে না নিভ্র সবার সাথে খুব একটা খাওয়া দাওয়া করে না।সাফা টেবিলের সামনে দাড়ায়।তাকে দেখে অভ্র আড়চোখে তার দিকে তাকায়।ইফতেখার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায়।মাহবুব বলে……
—–দাদুমনির নাকি আজ হাত কেটেঁছে??তুমি আর কখনো রান্নাঘরে যাবে না।আর ছোটবউমা ওকে খাইয়ে দেও।ডান হাত কেটেঁছে মনে হয়।বসো দাদুমনি।
.
সাফা অবাক হয় সবার এত সুন্দর মিষ্টি ব্যবহারে।তার জানা মতে বড় লোক মানুষের মন অনেক ছোট।কিন্তু এদের দেখে তার মনে হচ্ছে কাউকে না দেখে না যেনে আগেই তার সম্পর্কে মতামত দেওয়া একদম বোকামি।ইফতেখার প্লেটে ভাত, চিকেন নেয়।সাফার বাবা আগেই বলেছে সে গরুরগোশত খায় না সাথে কোন প্রজাতির মাছও।এটা শুনে সবাই একবেলা অবাক হয়েছে। ইফতেখার সাফার পাশে বসে।সাফার মন খুশিতে বাকবাকুম করে উঠে।মুখে প্রচণ্ড বেগে হাসি ছুটে বেড়ায়।সাফা দ্রুত চেয়ারে বসে পরে।ইফতেখার তাকে লোকমা তুলে মুখে দেয়।সাফা মুখে নিয়ে চিবাতে গিয়ে গলায় বাজে।খুক খুক করে কেশে উঠে।অভ্র পানি এগিয়ে দেয়।সবাই বেস্ত হয়ে পরে।সাফার পাশেই মোহনা ছিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সে।পানি খাইয়ে দেয়।সাফা হঠাৎ করে হু হু করে কেঁদে দেয়।সবাই একবেলা ভয় পেয়ে যায়।অভ্র নিজের চেয়ার ছেড়ে এই পাশে আসতে নেয়।তার আগেই সাফা ইফতেখারকে জড়িয়ে ধররে শব্দ করে কেঁদে দেয়।সবাই প্রচণ্ড ভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
.
.
নিভ্র পাইচারি করছে নিজের রুমে। তার একদমই ভালো লাগছে না রুমে।তার মন বলছে নিচে গিয়ে একবার সাফাকে দেখে আসতে।আর মস্তিষ্ক বলছে না কখনই যাওয়া উঁচিত না।নিভ্র দোটানায় আছে।নিভ্র এবার একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজে নিজেকে বলে……..
——“রোগী দেখা ডাক্তারের কর্তব্য। সাফা যেহেতু রোগী তাই তাকে দেখতে যাওয়া উঁচিত নিভ্র।এটা তোর কর্তব্য।
.
নিভ্র বোকার মত নিজের মস্তিষ্ককে একটা ভিত্তিহীন যুক্তি দিয়ে রাজি করাচ্ছে।যেখানে সে নিজেই যানে নিভ্রনীল অপারেশন করেও রোগীর ভালো অবস্থা দেখলে তাকে দ্বিতীয় বার দেখতে যায় না।সেখানে সামান্য হাত কাটাঁ দেখতে মাসহুর হার্ট সার্জেন্ট নিভ্রনীল এতটা হাঁসফাঁস করছে।নিভ্র হাটাঁ দেয়।সিঁড়ি দিয়ে নামতেই নিভ্র সাফার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়।সে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসে।ইফতেখারকে জড়িয়ে সাফাকে কাঁদতে দেখে নিভ্র থমকায়।মেয়েটার কি হয়েছে ভেবেই সে দ্রুত এগিয়ে এসে সাফার পাশে দাড়ায়।উত্তেজিত হয়ে বলে………
—-“আবার কি হলো??ব্যাথা পেয়েছ??কোথায় পেয়েছ??তুমি কি কখনোই শুধরাবে না??কবে সিরিয়েস হবে??হোয়াট হেপেন্ড??টেলমি সামথিং ডাফার??
.
নিভ্র কথাগুলো এমন ভাবে বলছে যেনো তার সামনে পাচঁ বছরের একটা বাচ্চা আছে।সাফাকে দেখে যতটানা অবাক মাহবুবের পরিবার তার চেয়ে বেশি নিভ্রর এখানে আসা আর নিভ্রর এমন আচরনে অবাক তারা।বাকরুদ্দ হয়ে সবাই নিভ্রর দিকে তাকায়।সাফা এবার কান্না থামিয়ে আহাম্মকের মত নিভ্রর দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে হা করে তাকায়।তার হাতগুলো এখনো ইফতেখারের কোমড় জড়িয়ে আছে।নিভ্রের সবার দিকে নজর নেই।সে সাফার কাটাঁ হাত এগিয়ে এনে দেখে।তারপর শীতল কন্ঠে বলে……..
——“মেডিসিন নিয়েছ??”
.
সাফার নিভ্রের কথা কানে যাচ্ছে না।সে নিভ্রকে দেখছে।তার মন বলছে তার কাটাঁ হাতের এত যত্ন কেনো নিভ্রর??হতে পারে ডাক্তার হিসেবে সে রোগীদের প্রতি একটু বেশিই আবেগি??ইশশশ্ এমন হলে সে তার হাত কেটেঁ কেটেঁ খন্ডে খন্ডে ভাগ করবে। তার ডাক্তার সাহেব তা এক এক করে লাগাতে ব্যস্ত থাকবে আর সে এভাবে দেখবে তাকে??
.
নিভ্র ঝাঁঝালো গলায় বলে……
—–তোমাকে আমি প্রশ্ন করছি সাফা আন্সার মি??
.
নিভ্রের কন্ঠ কানে আসতেই সাফার ভাবনার সুত ছিড়ে। সে হবার মত মাথা একবার হ্যাঁ এর মত ঝাঁকায় আবার নায়ের মত ঝাঁকায়। নিভ্র বিরক্ত হয়।মেয়েটা এমন কেনো??কোনো সিরিয়েসন্যাস নেই??নিভ্র চোয়াল শক্ত করে বলে……
—“ঠিক করে বলো??”
—-“মেয়েটাকে এভাবে নিজের ভিলেন রূপ না দেখালে হয় না দাদুভাই “(মাহবুব গলা উঁচু করে বলে উঠে)
.
নিভ্রর যেনো হুশ আসে।সে ডাইনিং টেবিলের দিকে তাকায়।সবাই তার দিকে প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।নিভ্রের এবার মনে হয় সে আবার বেশি বেশি করে ফেলছে।নিভ্র তবুও বলে……..
—-অসুস্থ ছিলো তো তাই মনে হয়েছে আবার ব্যাথা পেয়েছে তাই এভাবে বলেছি।ডাক্তার আমি না তুমি দাদাজান??(কথা এড়াতে বলে নিভ্র)
.
রাফা ফোড়ন কাটে……বলে…..
—–তাই নাকি ভাইয়া??তুমি রোগীদের ব্যাপারে এত সিরিয়েস কি আর বলবো।তবে সাফা আমার ভাইয়া কিন্তু সব দিক দিয়েই সিরিয়েস।তাই যেহেতু তুমি তার পেসেন্ট বর্তমানে তাই তোমাকেও সিরিয়েস থাকতে হবে কি বলো ভাইয়া তাই না??(রাফা বাঁকা হেঁসে বলে)
.
নিভ্র হাসির মানে বুঝতে পারে।তবুও বলে….
—-হুম।আর পানির বোতলটা দে।ওটা নিতে এসেছি।
.
রাফা পানির বোতল এগিয়ে দিলো।সবাই মনকে শান্তনা দিলো নিভ্র পানির বোতল নিতে এসেছে।এমনেতেও তারা নিভ্রকে প্রশ্ন করে রাগিয়ে দিতে চায় না।তারা এমনেই অবাক হয়ে আছে নিভ্রের এমন কার্যকলাপে।
যেখানে সে কথাই কম বলে সেখানে নিজের কাজের জন্য নিজেই কইফিয়ত দিচ্ছে। এটা ভেবেই সবার মাথা হ্যাক হয়ে আছে তাই তারা খাবারে মনযোগ দিলো।নিভ্র কিছুদূর গিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলে……
—-“খাবার খাওয়া শেষে মেডিসিন নিবে।”
.
বলেই ঠাসঠাস পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায়।সাফা অবাক হয়ে দেখে।তার মনে প্রশ্ন নিভ্র থাকে কোথায়??সব সময় ছাদের দিকে যায় কেনো??ইফতেখার সাফার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে…….
—-“তোমার কি অসুস্থ লাগছে???”
—–“না আন্টি আসলে অনেক দিন পরে আপনার হাতে খেয়ে আমার আম্মুর কথা মনে পরেছে।অনেক দিন হয়েগেলো তার সাথে দেখা নেই।যদি তার কাছে এক বার গিয়ে আম্মু বলে ডাকতে পাড়তাম। আফসোস এমনটা করা যায় না।
.
সাফার কথায় আর কান্নায় সবাই আহত হয়।সবার চোখেই পানি চলে আসে।একবার সাফার দিকে তাকায়।মেয়েটা অনেক ছোট বয়সে মা হারিয়েছে।তাই কষ্টও বেশি।মা ছাড়া মেয়েেদের পৃথিবীটাই অন্ধকার।রাজিব শান্তনার সুরে বলে……
—–এভাবে মন খারাপ করবে না।আমরা সবাই তোমার পরিবার এখন তাই মন খারাপের কিছু নেই।এক মায়ের বদলে দুই মা আছে এখানে।তাই নো মন খারাপ মিষ্টির দোকান।
.
সাফা রাজিবের কথায় হেসেঁ দেয়।মনে মনে নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে তার।কি সুন্দর পরিবার পেয়েছে।কিছুদিনের জন্য হলেও সে খুশি।সবাই সাফার হাসি দেখে হাসে।কিন্তু দুজন চোখ সরিয়ে নিলো না।এক অভ্র আর এক নিভ্র।অভ্র আড়চোখে সাফার হাসি দেখছে।আর নিভ্রের কথা ভাবছে।আর নিভ্র দোতালা থেকে দাড়িয়ে একদৃষ্টিতে সাফাকে দেখছে।এখানে আসা আর তার মস্তিষ্ককে ওভাবে বুঝানো সফল হয়েছে তার মনে হচ্ছে। সাফার একটু কান্না একটু হাসি দেখে নিভ্রও হালকা হাসে।ইফতেখার সাফাকে জড়িয়ে বলে……
—–“যদি বলি আমাকে আম্মু বলে ডাকতে তবে কি তুমি রাগ করবে??”
সাফা তাকালো মাথা তুলে।খুশিতে হেসেঁ বলে…..
——“কখনোই না আম্মু ”
—–“ইশশশ্ কতগুলো বছর পরে আম্মু ডাক শুনেছি”
.
সাফা অবাক হয়ে দেখে। কতবছর মানে নিভ্রকি তাহলে নিজের মাকে আম্মু ডাকে না।তবে মা বলে??না কি অন্যকিছু?? সাফার মনে এক পাহাড় প্রশ্ন জাগে।কিন্তু উত্তর কার কাছে চাইবে সে যানে না।নিভ্র উপড় থেকেই শুনতে পায় কথাটা।মনে তখন খুব কষ্ট হয় নিভ্রের।সে ও তো কতদিন আম্মুকে আম্মু বলে ডাকে না।কথাটা ভেবে নিভ্রের চোখ ঝাপ্সা হয়।সে অন্যদিকে মুখ ঘুড়ায়।মনে মনে সাফাকে বলে।মেয়েটার থেকে দূরে যেতে চেয়েও পারছেনা।সব সময় কেনো এর আশেপাশেই থাকতে ইচ্ছে করে?? ওওহহহ্। বলে নিভ্র শ্বাস নেয়।দূরেও থাকতে পারছে না।আবার কাছেও যেতে পাড়ছে না। কেনো এমন হচ্ছে নিভ্রর সাথে??এই প্রশ্নটাই মাথায় ঘুড়ছে।
.
.
সাফা ভার্সিটি যাবে আজ।তাই রেডি হচ্ছে। গায়ে তার নীল থ্রিপিজ।চুলগুলো আগের মতই কাঠি দিয়ে খোঁপা করা।হাতে ব্যাগ নিয়ে সে বেড়িয়ে পরেছে রুম থেকে।ইফতেখারকে আর মোহনাকে যাওয়ার সময় বলে বের হয়েছে।দরজার কাছে এসেই অভ্রকে চোখে পরে।অভ্র ঠোঁটে হাসি টেনে বলে……
—–“ভার্সিটি যাবে নাকি???”
—-“হুম স্যার।তবে আপনাকেও কিছু বলার আছে??”
অভ্র গাড়ির দরজা খুলতে গিয়েও খুললো না।উত্তরের আশায় বলে…….
—-“কি বলবে বলো।এটার জন্য পারমিশনের কি আছে।তবে হ্যাঁ মিষ্টির দোকান তুমি বাসায় আমাকে স্যার স্যার করবে না।”
সাফা মুচকি হাঁসে।অভ্র ওখানেই থমকায়।এই হাঁসিতে তার কেমন যেনো দম বন্ধ দম বন্ধ অবস্থা হয়।কারন সে চাইলেও এই হাসিতে ডুবতে পারবে না।নিভ্র নিজের গাড়ি বেড় করেই সাফাকে আর অভ্রকে কথা বলতে দেখেই গাড়ি থামায়।নিভ্রর কি হলো সে যানে না।সে গাড়ি থেকে নেমে পরে।সাফা অভ্রকে বলে…..
—-“থ্যাংকু স্যার। আপনার জন্য ক্লাস টেস্টের পরীক্ষাটা ভালো হয়েছে।অনেক গুলো থ্যাংকু হ্যাল্পের জন্য।
.
সাফার কাথার ভঙি দেখে অভ্র হেসেঁ দেয়।নিভ্র এগিয়ে এসে দাড়ায় তাদের সামনে।চোখে মুখে তার বিস্ময়।
.
.
#চলবে____________🍁