আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 18

বিথী এই কথাটা শুনে কিছুটা থমকে যায় কারণ বিধান এখন কল ধরবে কিনা। তাছাড়া বিধানের সাথে ওর সম্পর্ক আর পাঁচটা দম্পতির মতো স্বাভাবিক নয়।
বিথীঃ উনি কি আমার ফোন ধরবেন! যদি না ধরেন! (মনে মনে )
তিশাঃ কি হলো মিস পেতনি! কোথায় হারিয়ে গেলেন! ভয় পেলি বুঝি? শোন যদি তুই প্রমাণ করতে পারিস তুই মিসেস বিধান চৌধুরী আই প্রমিস আমি তোর পা ধরে ক্ষমা চাইবো। আর যদি না করতে পারিস তাহলে ভার্সিটির সবার সামনে আমার পায়ে ধরে মাথা নিচু করে ক্ষমা চাবি। ( শয়তানি হাসি দিয়ে )
বিথীঃ বিধান আজকে যদি আপনি কল না ধরেন আমি আপনাকে কোনো দিন ক্ষমা করবো না। ( মনে মনে )
তিশাঃ কি হলো ভয় পাচ্ছিস তাই না! আমি জানতাম তোর মতো মেয়ে কখনোই বিধানের বউ হতে পারে না। টাকার কথা না হয় বাদ দিলাম সৌন্দর্য বলতে তোর মধ্যে কিছু আছে? গায়ের রং শ্যামা, নাকটাও বোচা, চোখগুলোও তেমন বড় না। স্মার্টনেস তো নেই মডার্ন ড্রেস চিনিস? পড়ে তো থাকিস এসব লং ড্রেস আর হিজাব! আর তুই কিনা হবি বিধান চৌধুরীর বউ জাস্ট হাস্যকর! ( তাচ্ছিল্যের সুরে )
বিথী এসব কথা শুনে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না।
বিথীঃ জাস্ট সাট আপ! ( চিৎকার করে )
,
,
(বিঃদ্রঃ আমরা বাঙালিরা আসলে অন্যকে কিছু পেতে দেখলে তার কোথায় কি খুত আছে তা বের করি। কোনো বড় ব্যবসায়ী যদি আগে চা বিক্রি করত আমরা তার সাফল্য নিয়ে গর্বিত না হয়ে বরং এটা নিয়ে মজা করি। আর একটা শ্যামা মেয়ের যদি সুন্দর বা ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হয় তা মেনে নিতে সকলের বারোটা বেজে যায়। আশেপাশের আন্টি আপুর মুখে একই কথা ‘ কপাল আছে বলতে হয় নাহলে এমন রূপে এমন বর পাওয়ায় সত্যিই দুষ্ক্র ‘। কখনো ভেবে দেখে মেয়েটার জায়গায় আমি থাকলে আমার এসব শুনে কেমন লাগত।)

,
তিশাঃ কেন সত্য সহ্য হচ্ছে না!
বিথীঃ কি সত্য কথা? স্মার্ট হওয়ার নাম করে তোদের মতো মেয়েরা এসব চিপ উশৃঙ্খল ড্রেস পড়ে বেড়ায় বলেই আজ আমাদের সমাজে এই জেনারেশনের মেয়েদের এতো বদনাম! আই’ম ভেরি গ্ল্যাড আই’ম নট স্মার্ট লাইক ইউ!
( এসব বলার কারণ তিশা সবসময় হাটুর উপরে ড্রেস পড়ে )
তিশাঃ হাও ডেয়ার ইউ! ( বলে বিথীকে চর মারতে যায় )
বিথীঃ আমার ডেয়ার তোমার ধারণার বাইরে সো তা নিয়ে ভেবো না! ( তিশা হাত ধরে ফেলে তা ঝাড়া দিয়ে ফেলে বলে )
তিশাঃ অনেক হয়েছে! ফোন দিচ্ছো না কেনো নাকি আমার কথাটিই সত্য!
তিশার কথা শুনে বিথি সেখান থেকে একটু দূরে যেয়ে দাঁড়ায় এবং বিধানকে কল দেয় কিন্তু অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পরেও কল ধরছে না বিধান। তাই বিথী আবার কল দেয়। এমন করে তিনবার কল দেয় এবং তিনবারের বেলায় কল রিসিভ হয় অপর পাশ থেকে।
বিথীঃ হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম!
অচেনাঃ জী আমি বিধাম স্যারের পিএ স্যার মিটিংয়ে আছেন!
বিথীঃ ওহ একটু জরুরি দরকার ছিলো যদি ডেকে দিতেন ভালো হতো!
অচেনাঃ একচুয়ালি ম্যাম স্যার কাউকে ডিসটার্ব করতে মানা করেছন! মিটিংটা অনেক জরুরি তো এই কোম্পানির জন্য তাই!
বিথীঃ আচ্ছা! উনাকে বলবেন বিথী উনাকে যতো দ্রুত সম্ভব ভার্সিটি আসতে বলেছেন!
অচেনাঃ ওকেহ ম্যাম!
বিথীঃ বাই! ( বলে বিথী ফোন কেটে দিলো )
,
,
,
বিথীকে ফোন রাখতে দেখে তিশা বিথীর দিকে এগিয়ে গেলো। অন্যদিকে পিএ কল কাটার কিছুক্ষণ পরেই বিধান মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে ফিরলো। তাই পিএ বিধানের কাছে গেলো।
পিএঃ স্যার বিথী নামক একটা মেয়ে আপনার ফোনে কল করেছিলো।
বিধানঃ হোয়াট বিথী! তুমি আমাকে বললে না কেনো!
পিএঃ আপনিই তো ডিস……
বিধানঃ যাই হোক কি জন্য কল করেছিলো কিছু বলেছে? ( পিএকে আর বলতে না দিয়ে )
পিএঃ হ্যাঁ উনি বলেছেন উনার কলেজে যত দ্রুত সম্ভব যেতে! জরুরি দরকা……..
পিএ কে আর কিছু বলতে না দিয়ে বিধান দৌড়ে নিচে নেমে গেলো। গাড়ি নিয়ে রওনা হলো বিথীর উদ্দেশ্যে। গাড়ি এত জোরে টানছে যে সিগনাল টিগনাল কিছুই মানছে না।
বিধানঃ আমার জানপাখিটার কিছু হলো না তো! আল্লাহ্ তুমি ওকে সহিহ সালামাত রেখো! ( মনে মনে )
,
,
,
অন্যদিকে ভার্সিটিতে তিশা বিথীর সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। তিশার সাথে সাথে ভার্সিটির অন্যান্য ছেলে মেয়েরাও গেলো।
তিশাঃ কি হলো আসছে না তাই তো? তোর মিথ্যা ফাঁস হয়ে গেলো তো! ( শয়তানি হাসি দিয়ে )
বিথীঃ ও বিজি! মিটিংয়ে আছে!
তিশাঃ এতো কি বিজি বউয়ের জন্য সময় নেই!
আরিশাঃ আজিব বিজি থাকতেই পারে এতো প্যাঁচানোর কি আছে! ( রেগে )
( আরিশা ও বিথী দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড ছোটবেলা থেকেই কিন্তু আরিশা দিপ্তের মতো ধনী )
তিশাঃ তুই চুপ থাক তোর সাথে কথা বলছি না। সো বিথী শর্ত তো তুমি পূরণ করতে পারলে না। এখন শর্তমতে যা করার তা করো!
আরিশাঃ মানে কি…….
তিশাঃ জাস্ট শাট আপ! ডু দ্য টাস্ক বিথী! বিথী তোমাদের মতো মিডেল ক্লাস শ্যামা মেয়েরা কোনদিন বিধানের মতো ছেলের বউ হতে পারে না তা……….
কথাটা শেষ করতে পারলো না কারণ এরপর যা ঘটল তাতে ও কেন সবাই অবাক দর্শক হয়ে গেলো। তবে আরিশা খুশি তে হাত তালি দিচ্ছে।
,
,
,
বিধান কলেজের পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে তাড়াতাড়ি ছুটলো ক্যাম্পাসের দিকে। কিন্তু ক্লাসরুমে যাওয়া লাগলো না বিথীকে মাঠেই পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও তা বেশিক্ষণের জন্য না। কারণ আরেকটি বিষয় খেয়েল করলো বিথীকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। তাই ভয় পেয়ে দৌড়ে বিথীকে জড়িয়ে ধরে বিথীর সারা মুখে আলতো চুমুর বর্ষণ করতে লাগল। ঘটনার আকস্মিকতায় অন্যান্যদের মতো বিথীও অবাক হয়ে গেলো। ওর ধ্যান ভাঙলো বিধানের কপালে দেয়া গভীর চুমুতে।
বিধানঃ জান তুমি ঠিক আছো তো! তোমার কোথাও লেগেছে? একি তোমার চোখে পানি! কেউ কিছু বলেছে?
বিথীঃ নিশ্চুপ।
বিধানঃ কি হলো জান! রাগ করেছো তাই না? আই’ম সরি আসলে পিএ নতুন তো সে জানতো না তুমিই আমার ওয়াইফ। ডোন্ট ওয়ারি আই’ল ফায়ার হিম। ( মুচকি হেসে )
বিধান জানতো এই কথায় বিথীর মুখ খুলবে কারণ বিথী কারো ক্ষতি দেখতে পারে না। আর হলোও তাই।
বিথীঃ না না! তা কেন করবেন? উনি কি জানতো নাকি?
বলে মাথা উঠিয়ে বিধানের দিকে এবং আশেপাশে তাকায়। তাকাতেই দেখে সবাই ওদের দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। এতে ওর বিধার করা কান্ডগুলোর কথা মাথায় আসে আর তাতেই ও লজ্জায় লাল হয়ে যায়। বিধান বিষয়টি বুঝতে পেরে মিটিমিটি হাসছে।
,
,
,
বিধানঃ আচ্ছা ঠিকাছে উনাকে বের করবো না। এখন তুমি বলো কাঁদছিলে কেনো? কেউ কিছু বলেছে?
বিথী একবার তিশার দিকে চোখ নামিয়ে ফেলে কিন্তু কিছু বলে না।
বিধানঃ বিথী সোনা বলো!
বিথীঃ নিশ্চুপ।
বিধানঃ এবার কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি বিথী!
আরিশাঃ আরে জিজু ও কি বলবে আমি বলছি!
বিধানঃ হ্যাঁ শালীকা তুমিই বলো তোমার বোন তো…..
তারপর আরিশা বিধানকে প্রথম থেকে শুরু পর্যন্ত সব ঘটনা খুলে বলল। একটা দাড়ি কমাও বাদ রাখেনি। সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে রাগে বিধানের সাদা ফর্সা মুখটা ভয়ানক লাল হয়ে গিয়েছে। আর চোখ দুটোর কথা নাই বললাম। এক কথায় বিধানকে কোনো ভয়ানক প্রাণী থেকে কম লাগছে না। তিশা তো বিধানকে দেখে ভয়ে কি করবে বুঝতে পারছে না।

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *