আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 05
এদিকে বিথী বুঝতেই পারলো না কি হলো। হঠাৎ বিধানের অধিকার ফলানো, কষ্ট দেয়া, আবার কাছে টেনে ভালোবাসা যে বিথীর সব গুলিয়ে ফেলছে।
বিথীঃ কী চাই তোমার বিধান চৌধুরী। আমি বুঝতে পারছি না তোমায়……মনে হচ্ছে গোলক ধাঁধায় আটকে গিয়েছি! (মনে মনে)
ঠিক তখনই রূপ আসে। ( রূপের সাথে বিথীর ভালোই সখ্যতা গড়ে উঠেছে তবে তা বিয়ের পরে নয় বিয়ের আগেই। রূপ বাবু পছন্দ করে অনেক। তাই বিধানের আম্মুর সাথে যেদিন প্রথম রূপকে দেখে সেদিন থেকেই তাদের মধ্যে এই সখ্যতা গড়ে উঠে। ) রূপের আসার শব্দেই বিথী ভাবনা চিন্তার সমাপ্তি ঘটিয়ে ভাবনার দুনিয়া থেকে এই দুনিয়ায় ফিরে আসে।
,
,
রূপঃ বৌআপু! বৌআপু! কোথায় তুমি! ( চিৎকার করে ডেকে )
বিথীঃ এই যে আপুনি এখানে আমি। কি হয়েছে ডাকছিলে কেনো? ( কোলে তুলে জিজ্ঞাসা করলো )
রূপঃ দরকারেই তো ডেকেছি আমি আবার বিনা কারণে কাউকে বিরক্ত করি না। ( বড়দের মতো বলল )
বিথীঃ ইশ! পিচ্চি মানুষের আবার পাকা পাকা কথা! ( এই কথায় বিথী ও রূপ দুজনেই হু হা করে হেসে দিল )
রূপঃ ওহ যা বলতে এসেছি তা বলে নেই! তোমাকে মামনি দ্রুত তৈরি হয়ে নিচে আসতে বলেছে।
বিথীঃ ওহ, আচ্ছা!
রূপঃ তাহলে আমি যাই আমাকেও তো রেডি হতে হবে!
বিথীঃ ওরে পাকনি বুড়ি! যাও।
,
,
আজ বিথীর বৌভাত তবে বিথী পার্লারের লোকদের হাতে সাজবে না বলে ওর শাশুড়ি আর জোর করেনি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল অলরেডি সাতটা বাজে। যদিও শাড়ি পড়ে চুল গুছিয়ে ওরনা পড়ে নিয়েছিলো তাই চাপ একটু কম লাগছিল কিন্তু আয়নার দিকে তাকাতেই অতিরিক্ত চাপ অনুভব করলো সাজার কারণ বিধানে এতক্ষণের কার্যক্রমে ওরনা আর চুল উভয়ই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই বিথী আবার সব করলো তবে এবার সাজলো প্রথমে।
,
,
যেহেতু বিথী কালো জাম রংয়ের শাড়ি পড়েছে তাই গাড় বেগুনি বা ডার্ক পার্পেল রংয়ের লিপস্টিক পড়লো, চোখের উপরে লাইট ব্রাউন কালের শ্যাডো আর গাড় কালো কাজল লাগালো চোখের ওয়াটারলাইনে ও তার নিচে কাজল লাগিয়ে নেয়, পাপড়িতে মাশকারা এবং গালে হালকা ব্রঞ্জার ও টেরাকোটা ব্লাশ লাগানোর কারণে ফেসটা অনেক গ্লোয়ি এন্ড শার্প লাগছে। ফেস মেকআপ শেষ করে গোল্ডের কানের দুল, গলায় ভাড়ি কণ্ঠহার এক হাতে স্বর্ণের বালা অন্য হাতে শাড়ির রংয়ের চুড়ি পড়ে নেয়। তারপর ঘড়িতে দেখে অলরেডি আটটা বাজে তাই আর হাফ কার্ল চুলগুলো আচরিয়ে ছেড়ে দেয় আর মাথায় ওরনা দিয়ে নেয়। আর অপেক্ষা করতে থাকে মিসেস চৌধুরীর ডাক দেয়ার।
,
,
এদিকে বিধানকে কল করে মিসেস চৌধুরী বাড়ি আসার জন্য তাই বিধানও দ্রুত বাসায় ফিরে। বিধান বাসায় আসতেই মিসেস চৌধুরী বিধানকে রুমে পাঠায় দেয় কারণ এখনই মেহমান আসা শুরু করে দিয়েছে। বিধান এসে রুমের দরজা খুলা পেয়ে নক না করেই ঢুকে যায়। তবে ঢুকেই সে থমকে যায় কারণ তার মায়াবীনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে নিজেকে দেখছিল। ফলে তার প্রতিবিম্ব রুমের প্রতিটি আয়নায় পড়ায় বিথীকে আসলেই মায়াবনের মায়াবীনি লাগছিল। আসলে বিধানের রুমের একপাশের সম্পূর্ণ দেয়াল জুড়ে যে এটাচ আলমারির দরজার সামনের পাশ পুরটা আয়না সেখানেই বিথী নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখছিলো।
,
,
বিধান আবারও বিথীর ভালোবাসার নেশায় আসক্ত হয়ে ঘোরের মধ্যে এগিয়ে যায় বিথীর কাছে। কোমরে কারো আলতো স্পর্শ পেয়ে বিথী যদিও স্পর্শটা চিনে ফেলেছে। হয়তো একদিনেই বিধানের ভালোবাসা বাধ্য করেছে তাকে তা চেনাতে। বিথী কেপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলে বিধানকে আটকানোর ইচ্ছা থাকলেও কেনো জানি তা পারছে না হয়তো এটাই আল্লাহর পবিত্র বিয়ের বন্ধন যা একদিনেই কারো মনে তার স্বামীর প্রতি পবিত্র অনুভূতি আনতে সক্ষম। অন্যদিকে বিধান তার মায়াবীনিকে কাছে পেয়ে তার পিঠে ঘাড়ে চুমুর বর্ষণ করতে থাকে আর দুহাতে শাড়ির নিচে দিয়ে বিথীর পেট আকড়ে ধরে। এভাবে কতক্ষণ ছিলো তা হয়তো বিথী বা বিধান কারোর হিসাব নেই।
,
,
হঠাৎ দরজায় মিসেস চৌধুরীর ডাকার শব্দে বিধানের ঘোর ভাঙে ফলে আবার বিথীর উপর থাকা ক্ষোভ জেগে উঠে। তাই বিধান বিথীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় ফলে বিথী আলমারির সাথে লেগে হাতে অনেক ব্যথা পায়। হালকা কেটেও যায় তবে বিথীর ব্যথা লাগলেও দাঁত চেপে সহ্য করে ফেলে শুধু চোখের কোণে পানি এসে পড়ে। অন্যদিকে বিধান বিথী সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর দরজা খুলে দেয়।
মিসেস চৌধুরীঃ কিরে তোদের হলো! বিথী মামনি তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে পার্লারের সাজের চেয়েও স্নিগ্ধ হয়েছে তোর সাজ। ( বিথীর থুতনি ধরে উঁচু করে কপালে চুমু খেয়ে )
বিধানঃ আমার মায়াবী রাজকন্যা যে! বিধান তুই কি করছিস সামান্য একটা মেয়ের জন্য নিজের অপমান ভুলে যাচ্ছিস! ( মনে মনে )
বিথীঃ থ্যাংক ইউ আম্মু! ( লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে )
বিধানঃ আম্মু আমি ফ্রেশ হতে গেলাম। তোমরা তোমাদের ড্রামা কন্টিনিউ করো। ( বিরক্তিকরভাবে )
মিসেস চৌধুরীঃ যাহ ফাজিল!
বিধানের এরূপ আচারণে বিথী কষ্ট পেলেও মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে রাখলো।
বিথীঃ আপনি সত্যিই গোলক ধাঁধা! আমি যে মোটেও বুঝতে পারছি না আপনাকে! যদি অপছন্দই করেন তাহলে কেন কাছে টেনে নেন আর পছন্দ করলে কেন সরিয়ে দেন! (মনে মনে)
চলবে,,,