আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 03
বিধান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কিন্তু বিধানের মামা এমন কিছু বলল যা শুনে বিধান রাগে ফেটে পড়ছে।
ইফতেখারঃ আরে থার্ড ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে এনেছো বুবু এমন হবে না! এসব থার্ড ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ের না থাকে টাইম সেন্স না থাকে স্মার্টনেস। (ব্রেড বাটার খেতে খেতে)
বিধানঃ আমার বউ থার্ড ক্লাস ফ্যামিলি থেকে আনি আর রাস্তা থেকেই আনি ইউ আর নোওয়ান টু টক এবাউট দিস। সামনে থেকে আমার ফ্যামিলির কারো উপর কমেন্ট করার পূর্বে ১০ বার ভাববেন আপনি মেহমান চৌধুরী পরিবারের সদস্য না।
ইফতেখারঃ দেখছিস বুবু আমাকে কি কি বলল তোর ছেলে! তোদের যদি আমাকে এতোই অপছন্দ হয়ে থাকে তাহলে আসতে বললি কেন?
ঠিক তখনই রূপ এসে পড়লো। রূপ বিধানের বন্ধুর বোন।
(বিধানের বন্ধু মারা যাওয়ার পর রূপকে এ বাড়িতে নিয়ে আসে নিজের বোনের পরিচয় দিয়ে কারণ মেয়েটার পুরো পরিবারই এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল। রূপের বয়স মাত্র ৬ বছর। বিধান ওকে আপন বোনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। আর মিসেস চৌধুরী তো রূপকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। এজন্য বাসার কেউ রূপকে কিছু বলার সাহস পায় না কখনোই।)
রূপঃ কোথায় মামনি আপনাকে দাওয়াত দিয়েছিল আমি তো দেখিনি আপনিই তো বিনা দাওয়াতে এসে পড়ছেন! এখন আমার মামনির দোষ দিচ্ছেন। আমার মামনিকে শুধু শুধু দোষারোপ করছেন। তাই না মামনি? (মিসেস চৌধুরীর গলে জড়িয়ে ধরে)
মিসেস চৌধুরীঃ হ্যা সোনা। (রূপকে আদর করে) খাওয়ার টেবিলে এতো কথা আমার মোটেই পছন্দ না। আর বিথীর বিষয়ে কিছু বলার আগে ভেবে নিস সে এই বাড়ির বউ। (গম্ভীর কণ্ঠে)
ইফতেখারঃ আমি তো………
মিসেস চৌধুরীঃ ব্রেকফাস্ট টেবিলে কোনো কথা নয়! আর বিধান বিথী মামনি কোথায় বললি না?
বিধানঃ আসলে…. আসলে…….
মিসেস চৌধুরীঃ কি আসলে আসলে করছস বলবি তো?
বিধানঃ আসলে সকাল ফজরের ওয়াক্তে উঠে দেখি বিথীর প্রচন্ড জ্বর এসেছে।
মিসেস চৌধুরীঃ কিহ! বিধান তুই আমাকে এটা এখন বললি? ডাক্তার ডাক দে তাড়াতাড়ি!
বিধানঃ ডোন্ট ওয়ারি আম্মু আমি মিমকে এনেছিলাম এন্ড খাবার খায়িয়ে মেডিসিন খায়িয়ে দিয়েছি।
,
,
,
সবাই চুপচাপ নাস্তা করে চলে যায়।
বিধান বেডরুমে গিয়ে দেখলো বিথী ছোট্ট বাবুদের মতো ঘুমিয়ে আছে। বিধানের কাছে বিথীকে ঘুমন্ত রাজকন্যা থেকে কম লাগছে না। চুলগুলো সব মুখে এসে পড়েছিল। আর শাড়ির কথা নাই বা বললাম। বিধান যেনো কোনো এক ঘোরে চলে গেছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বিছানার দিকে।
বিধানঃ সত্যিই কি তুমি কি এতোই মায়াবী। আমি যে হারিয়ে যাচ্ছি এই মায়ায়। (বিথীর কপালের চুলগুলো সরিয়ে ঠোঁটের আলতো স্পর্শ দিয়ে।)
বিধান বিথীর মুখের মন্ত্রমুগ্ধ ভাবে তাকিয়ে আছা। যেনো কোনো তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি অনেকদিন পর পানির দেখা পাচ্ছে। বিধানের নজর বিথীর ঘুমন্ত মুখের হাসিতে ঠোঁটের কোণে পড়া টোলে। এগিয়ে যায় বিথীর মিষ্টির ঠোঁটের দিকে। কিন্তু ঠোঁটের স্পর্শ দেওয়ার আগ মুহূর্তে চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়ে যায় বিথীর রিজেকশন। আবার জেগে উঠে ক্ষোভ তাই নিজের ব্লেজার নিয়ে চলে যায় অফিসে।
,
,
,
বিধান বিকালে বাসায় এসে দেখে বিথী রুমে নেই। প্রথমে ভাবে ওয়াসরুমে গিয়েছে কিন্তু ওয়াসরুমের দরজা খোলা থাকায় ভাবলো হয়তো নিচে গিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলো এখনও আসেনি
বিধানঃ কি হলো মেয়েটা এখনো আসছে না। নতুন ও বাড়িতে রুমের বাহিরে তো বের হওয়ার কথা না। (চিন্তিত হয়ে রুমে পায়চারি করতে করতে)
বিধান আর থাকতে না পেরে মিসেস চৌধুরীর ঘরে চলে গেলো। যেয়ে দেখে তার আম্মু কুরআন তেলাওয়াত করছে আর তার আদরের পুচকি ড্রইং করছে।
,
,
বিধানঃ কিরে পুচকি কি আকিস? আমাকে?
রূপঃ তোমাকে কেন আঁকবো তুমি তো পচা! (ভেঙচি কেটে)
বিধানঃ কেন রে আমি কি করেছি?
রূপঃ তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো আর ভালোবাসা না আমাকে, তাই না? (মন খারাপ করে)
বিধানঃ তোর এমন কেন মনে হলো আমি তো আমার পুচকোকে অন্নেক ভালোবাসি! (রূপকে কোলে তুলে)
রূপঃ তাহলে গতকাল থেকে আমার কাছে একবার ও আসোনি কেনো?
বিধানঃ আরে সোনা আমি গতকাল তো ব্যস্ত আর ক্লান্ত ছিলাম তাই আসিনি।
রূপঃ ওহ তাই। তাহলে সরি।
,
,
বিধানের মা এতক্ষণ ভাই-বোনের এই ভালোবাসা অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখছিল। মিসেস চৌধুরীর বিধানের পর আরেকটি মেয়ে হয়েছিল কিন্তু পাঁচ বছর বয়সে মেয়েটি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
,
,
মিসেস চৌধুরীঃ যাক বোনের রাগ মান ভেঙেছে।
বিধানঃ হুম আম্মু! আচ্ছা আম্মু বিথী কোথায় দেখলাম না ওকে?
মিসেস চৌধুরীঃ বিথী তো বলল ওর কি একটা কাজ পড়ে গেছে তাই বাহিরে গেলো। বললো বিকালের আগে এসে পড়বে।
বিধানঃ ওহ!
,
,
তারপর বিধান নিজের বেডরুমে চলে গেলো। বেডরুমে যেয়ে দেখে বিথী হিজাব খুলছে কিন্তু বিথীকে দেখে ও ততটা অবাক যতটা তার নিয়ে আসা বস্তুটাকে।
চলবে,,,