আলোছায়া

আলোছায়া !! Part- 29

ল্যাবএইড থেকে ফিরে সারাদিনের ক্লান্তি কাটাতে গোসল সেরে নিল মেসবাহ। মাথার চুল আঁচড়ে মেয়েকে মনোযোগী বেসে পড়তে দেখে এগুলো ড্রয়িংরুমের দিকে। সারাটা দিন আজ সে ব্যস্ত সময় কাটালেও অস্থির মন বারেবারে ভাবিয়ে তুলেছে তাকে। পুষ্পর বাবা ডাঃ ওবায়দুল্লাহকে কী করে সত্যটা জানাবে সে? আর সবটা জানার পরই বা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন তিনি? বারবার এসব ভেবে ঘাম ঝড়েছে তার। বুকের ভেতরটা এসেছে চেপে। লোকটি তার কাছে যেমন প্রিয় তেমন সম্মানীয়ও। মেডিকেল কলেজ থেকে এঅব্দি আসা পর্যন্ত তার জীবনে বেশ বড় এক ভূমিকাও ছিল তার। অথচ আজ কিনা তাকেই অসম্মানিত করার রাস্তা খুঁজছে সে? বুকের মাঝে কুটকুট করে কিছু একটা কামড়ে ধরতেই চোখমুখ কুঁচকে টেলিভিশনের পর্দার দিকে তাকালো মেসবাহ। মনে চলা ভাবনা ঘোরাতে টেলিভিশনে মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত নিলেও বেজে উঠলো তার ফোনের রিংটোন।
চার্জ থেকে ফোন খুলে স্ক্রিনের দিকে নজর দিয়ে ঢোক গিললো মেসবাহ। কপালে কয়েকটি ভাজ ফেলে আবারও সোফায় এসে বসে ফোন রিসিভ করে ক্ষীণ স্বরে বললো,
“আসসালামু আলাইকুম স্যার। আপনাকে কল দেব দেব করে দেয়াই হচ্ছিলো না।”
“ওয়ালাইকুম ওয়ালাইকুম.. যাক! ভালোই হলো। তোমার শরীর এখন কেমন?”
“আছি আলহামদুলিল্লাহ৷ আপনার কী অবস্থা? শরীর ভালো?”
ফোনের অপর পাশ থেকে কন্ঠে হতাশা ফুটিয়ে ডাঃ ওবায়দুল্লাহ বললেন,
“আর ভালো! পুষ্প যা শুরু করেছে তাতে আর ভালো থাকা যাচ্ছে না।”
ভ্রু কোঁচকালো মেসবাহ।
“পুষ্প? কী শুরু করেছে?”
“কোন মুখে বলি বলো? মেয়ে আমার আজ সকালে হঠাৎ করে এসে বলছে ও এই বিয়েটা করতে চায় না। মুবিনের মনমানসিকতার সাথে তার চিন্তাভাবনা নাকি খাপ খাচ্ছেনা। আর এই অবস্থায় তারা একটা বন্ধনে জড়ালেও তার স্থায়িত্বতা খুব একটা বেশি হবে না।”
“পুষ্প বলেছে এ কথা?”
চোখেমুখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে মেসবাহ প্রশ্নখানা করলেও তা আমলে নিলেন না ডাঃ ওবায়দুল্লাহ। তিনি নিজের মতো করেই বলতে লাগলেন,
“মেয়েটা আমার মা মরা। বড়ও হয়েছে একলা। আমি নানান ব্যস্ততায় বাইরে সময় কাটিয়েছি। ওর খোঁজখবর রাখতে পারিনি। তবে যখন বুঝলাম ওর পাশে ওর সাথে সময় কাটানোর মতো একজন প্রয়োজন। যাকে আপন ভেবে সারাদিনে একবার হলেও কথা বলতে পারবে তখন ছেলেকে বিয়ে করিয়ে বউ আনলাম ঘরে। মেয়েটা আমার মিশেও গেল বৌমার সাথে। আগে যেভাবে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতো তা সময়ের সাথেসাথে কমে এল। পুষ্প প্রাণবন্ত হলো.. পুষ্পকে তো প্রানবন্ত হতেই হতো। নয়তো গাছ নেতিয়ে পড়তো না?”
“জ্বি..”
“আমার মেয়েটা খুব শান্তশিষ্ট ধীর স্বভাবের। ও কোনো কাজ করার আগে চিন্তাভাবনা করেনা। কারণ ওর মতে প্ল্যান করে লাইফে কিছু করলে কখনোই তাতে সফল হওয়া যায় না। আমিও একমত ছিলাম.. আসলে ওকে কোনো কাজে আমি বাঁধা দিয়েছি এমন কিছু আমার মনে পড়ছে না। আমি ওকে ওর মতো করে চলতে দিয়েছি। বলতে পারো ওর প্রতি আমার ছিল তীব্র এক বিশ্বাস।”
পুরো বিষয়টি মাথায় ঢোকায় খানিকক্ষণের নীরবতা পালন করলো মেসবাহ। পুষ্প মেয়েটি যেমন ধীরস্থির তেমনই বিচক্ষণ বলেই জানা ছিল। তবে আজ সে এমন একটি কাজ করে বসবে তা একদম ভাবনায় ছিল না তার।
“আমি আসলে তোমাদের কাছে কী করে ক্ষমা চাইবো জানি না। তবে আমার মেয়ের যেখানে মত নেই সেখানে আমি নিজের জোর খাটিয়ে আগাতে পারবো না। লোকমুখের আর কী? তাদের যা বলার বলবেই। তবে সেসব ভেবে আমি আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ টা তো নষ্ট করতে পারিনা.. তাই না?”
“জ্বি অবশ্যই।”
“ওর চিন্তাশক্তি খুব একটা প্রখর না হলেও আমি ওকে বিশ্বাস করি। ওর উপর আস্থা রাখি.. মেসবাহ, আমি কি তোমাদের খুব বেশি ঝামেলায় ফেলে দিলাম?”
“না স্যার। আপনি যা বলেছেন তাতে ভুল নেই। বরং অবশ্যই তা যুক্তিযুক্ত..”
একরাশ স্বস্তি নিয়ে কথাটি বললেও ডাঃ ওবায়দুল্লাহর সাথে কথা শেষ হবার পর মন অস্বাভাবিক খারাপ হয়ে এল মেসবাহর। পুষ্প মেয়েটির তো কোথাও দোষ নেই। তবে কেনো এভাবে কষ্ট পাবে সে? আর সে নিজেও কিনা স্বার্থপরের মতো সবটা লুকিয়ে গেল? পুষ্পর চাওয়া মতোই স্যারের কথায় হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে গেল? তাহলে তার আর মুবিনের মাঝে পার্থক্য থাকলো কোথায়? নিজের প্রতি অজস্র অসন্তোষ নিয়ে ডাইনিংয়ে এসে খাবার উদ্দেশ্যে চেয়ারে বসতেই পাশ থেকে উল্লাসী বললো,
“পুষ্পর বাবার সাথে কথা বললেন?”
“হু..”
“কী বললেন উনি? খুব বেশি রিয়াক্ট করলো নাকি?”
উল্লাসীর সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে থালায় ভাত উঠিয়ে তরকারির বাটির দিকে হাত বাড়ালো মেসবাহ।
একদন্ড অপেক্ষা করে উল্লাসী বললো,
“সন্ধ্যায় পিংকি ভাবিরা এসেছে৷ এখনো আছেই। রাতের খাবার খেয়ে যাবে।”
“অহ..”
“ওরা পাপিয়া আর শীতল ভাইয়ের বিয়ের বিষয়টি মেনে নিয়েছে। হাসান ভাইকে আমি আমার মতো করে বুঝিয়ে দিয়েছি। উনি আপাতত মুখ খুলবেন না। তবে পাপিয়া আপু আর শীতল ভাই এতে দ্বিমত। তাদের মতে এতবড় মিথ্যা বলার দরকার ছিল না। কিন্তু মিথ্যা না বললে কি পিংকি ভাবি আজ মানতো বলুন?”
মেসবাহর থালায় মাংসের ঝোল তুলে দিয়ে সামান্য অপেক্ষা করলো উল্লাসী। তবে তার দিক থেকে কোনো রকমের সাঁড়া না পেয়ে আবারও বললো,
“তবে পিংকি ভাবির খুশি দেখে পাপিয়া আপু আর শীতল ভাই ঠিক করেছে সময় নেবেন তারা। তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পিংকি ভাবিকে আস্তেধীরে বুঝিয়ে সবটা জানাবেন। আমি বলি দরকার কী জানানোর? উনি কি জমিজমার কাগজপত্র দেখতে চেয়েছেন?”
“তুমি জানো তুমি কতটা ইমম্যাচুউর?”
গম্ভীরমুখে মেসবাহ কথাটি বলতেই আকাশ থেকে পড়লো উল্লাসী। গলায় একরাশ বিস্ময় ফুটিয়ে বললো,
“আমি আবার কী করলাম?”
“এভাবে মিথ্যার উপর কদিন সংসার চলে? তুমি না মিথ্যা বলেছিলে? পাড় পেয়েছো? কেনো যাচ্ছো না ইদানীং কোচিংয়ে?”
হাতের মাখানো ভাত থালায় নামিয়ে রেখে কাঁপা স্বরে উল্লাসী বললো,
“কোচিং বন্ধ বলে..”
“মিথ্যা বলবে না.. একদম মিথ্যা বলবে না। সবসময় মাথায় রাখবে সত্যের উপরে কিছু নেই। সত্য তীব্র কষ্টদায়ক হলেও সত্য। তবে মিথ্যার মতো এটি মানুষকে পথভ্রষ্ট করেনা.. ধীরেধীরে ধ্বংস করে দেয় না।”
একদমে কথাগুলো বলে লম্বা একটি দম ছাড়লো মেসবাহ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মাথা নীচু করে বসে থাকা উল্লাসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“জাভেদের বিষয়টিও আমাকে তুমি বলোনি। তোমার কী মনে হয় আমি তোমাকে অবিশ্বাস করতাম? তোমার মতো বিষয়টিকে নিয়ে সিনক্রিয়েট করতাম? না.. বরং তুমি আমার কাছ থেকে সবটা লুকিয়ে যেভাবে একের পর এক মিথ্যা বলেছো তাতে আমি আর তোমার প্রতি আস্থা খুঁজে পাচ্ছি না।”
মাথা উঠিয়ে ছলছলে চোখে মেসবাহর দিকে তাকালো উল্লাসী। অস্পষ্ট সুরে বললো,
“এসব আপনাকে কে জানিয়েছে? ইভানা আপু?”
“দ্যাটস নান অফ ইউর বিজনেস। আমাকে একটা কথা বলো। তুমি কী চাও? নিজেকে আর কত নীচে নামাতে চাও?”
“আমি বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনাকে মুবিন ভাইয়ের ব্যাপারে স্ট্রেস থাকতে দেখে বলার সাহস হয়নি।”
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো উল্লাসী।
মেসবাহ সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে দৃঢ় গলায় বললো,
“হ্যাঁ.. এই মুবিনের ব্যাপারও! এ নিয়েও তুমি আমার সাথে তর্ক করেছো। তোমার কী মনে হয় উল্লাসী? জীবনটা খুব সহজ? তুমি যেভাবে যেমনটা ভাববে সব সেভাবেই হবে? দশবছর আগে তুমি যা ছিলে এখনো কি তুমি সেটাই আছো? কোনো পরিবর্তন আসেনি তোমার মাঝে?”
ঘাড় নেড়ে চোখের পানি মুছে নিল উল্লাসী।
“এসেছে..”
“কেনো এসেছে? কারণ সময় তোমাকে বদলে দিয়েছে। তুমি বদলাতে না চাইলেও বাধ্য করেছে.. আর তুমিও পরিবর্তন হয়েছো। তোমার চিন্তাভাবনাও পরিবর্তন হয়েছে। কী? হয়নি?”
“হয়েছে..”
“পুষ্প মেয়েটা কতটুকু কষ্ট থেকে কাজটা করেছে ধারণা আছে তোমার? অথচ সে একবারও মুবিনকে ছোট হতে দেয়নি তার বাবার সামনে। যেখানে দোষ কিন্তু মুবিনের। তবে তা নিয়ে সামান্যও টু শব্দ করেনি সে। খুব ভালোবাসা ভালোবাসা করো না তুমি? মুবিনের প্রতি যে আজ পুষ্প সম্মান দেখিয়েছে এটাই ভালোবাসা উল্লাসী। ভালোবাসা মানেই তৃপ্ততা নয়, পরিপূর্ণতা নয়, প্রাপ্তি নয়। কিছুক্ষেত্রে ত্যাগের অপর নামও ভালোবাসা।”
নাক টেনে গাল বেয়ে ঝরে পড়া চোখের জল আবারও মুছে নিল উল্লাসী। নিজের ভুল স্বীকার করার চেষ্টায় সে অশ্রুসিক্ত চোখে মেসবাহর দিকে চেয়ে বললো,
“শীতল ভাই আর পাপিয়া আপু তো বলেছে পরে সব পিংকি ভাবিকে খুলে বলে দেবে। তবে আপনি যদি বলেন তাহলে আমি এখনই পিংকি ভাবিকে সব সত্যি জানিয়ে দেবো।”
“কোনো দরকার নেই.. আবারও ঝামেলা বাঁধানোর কোনো দরকার নেই। ওদের নিজেদের মতো করে বিষয়টি হ্যান্ডেল করতে দাও। তবুও তুমি আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু করো না। দিনকে দিন তোমার এই অবুঝ পনা আমার বুঝের সীমা অতিক্রম করছে। আমি সত্যিই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি..”
অস্থির চিত্তে ডাইনিং টেবিল ছেড়ে উঠে হাত ধুয়ে সদর দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এল মেসবাহ। একবার ছাদে গিয়ে খানিকটা সময় কাটানোর চিন্তা করলেও তা পরিবর্তন করে ইভানার বাসায় যাবার সিদ্ধান্ত নিল সে।
“মুবিনকে নিয়ে এখন এই অবস্থা.. সারাদিন আমার একটা স্ট্রেসের মাঝে কাটে। এর মাঝে যদি উল্লাসীও এমন করে তাহলে কীভাবে চলবে?”
মেসবাহর প্রশ্নে মাথা নেড়ে তার দিকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিল ইভানা। দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে মেসবাহর জীর্ণশীর্ণ মুখের দিকে তাকাতেই সে স্বাভাবিক সুরে আবারও বললো,
“আংকেল আন্টি কোথায়?”
“ভেতরে আছে.. ডাকবো?”
“না, থাক। যাবার আগে দেখা করে যাবো।”
“ঠিকাছে।”
“জানিস ও আমাকে জাভেদের ব্যাপারটিও নিজে থেকে বলেনি?”
বুকচিরে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে ইভানা বললো,
“রিল্যাক্স.. খেয়েছিস?”
“খেতেই বসেছিলাম। কিন্তু মাঝে কী হলো! মনমেজাজ অসম্ভব খারাপ হয়ে গেল। আসলে..”
ব্যর্থ কণ্ঠে মেসবাহ কিছু বলার চেষ্টা করতেই তাকে থামিয়ে দিল ইভানা। চোখমুখে সামান্য বিরক্তভাব ফুটিয়ে বললো,
“এতটা রাগ দেখালে চলবে? তোর বুঝতে হবে ও ছোট।”
“ছোট ছোট করেই তো এতদিন ছাড় দিয়ে আসলাম। আর কত?”
“দিতেই হবে। ও ছোট, ও ইমম্যাচুয়র। ওর মানসিক বিকাশটা কীভাবে হয়েছে তা আমার বা তোর কারোই অজানা নয়। তাহলে দিনশেষে তোকে তো সেভাবেই ভাবতে হবে.. তাই না?”
সেপ্রশ্নের জবাব দিল না মেসবাহ। হালকা মাথা নেড়ে সে অস্থিরতা নিয়ে বললো,
“ওকে এবার ম্যাচুউর হতে হবে। ওর আমাকে বুঝতে হবে। ওকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার মতো মনোবল রাখতে হবে। সারাজীবন তো আমি ওর পাশে নাও থাকতে পারি। সেসময় ওর পাশে কে দাঁড়াবে? ওকে তো নিজের মতো করেই বাঁচতে হবে।”
“তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস? আরেকটা বিয়ে করার চিন্তাভাবনা করছিস নাকি?”
মৃদু হেসে জঠলো ইভানা।
মেসবাহ জবাবে কপাল কুঁচকে বললো,
“ইয়ার্কি রাখ.. আমি সত্যিই ফেডআপ। ও বিবেক দিয়ে ভাবেনা। ভাবে আবেগ দিয়ে। তবে আমাদের সমাজটা যে কতটা জঘন্য তা সম্পর্কে ওর সামান্য ধারণাও নেই।”
“তুই ধারণা দিবি।”
“দেই না বলে তোর মনে হয়? আমি ওকে যতটা সম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু ও বোঝার চেষ্টাই করেনা। কখনো কখনো তা বুঝলেও আমলে নেয় না। আসলে ও বাস্তবতা বুঝতে চায় না। চাইলে আজ এই বয়সে এসে ও অন্তত এতটা অবুঝের মতো আচরণ করতো না।”
“বাপরে! এত অভিযোগ?”
পূর্ব স্বরেই কথাটি বলে স্থান পরিবর্তন করে মেসবাহর পাশে এসে বসলো ইভানা। কন্ঠে হালকা গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে বললো,
“নিজের মনমতোই যদি মানুষ সব পায় তাহলে আর কীসের জীবন? কীসের পরিশ্রম? কীসের সার্থকতা? দুঃখ না থাকলে কি আমরা সুখের মর্মটা বুঝতে পারতাম? পারতাম না। তেমন সংসারে খুটিনাটি অশান্তি না হলেও আমরা শান্তির অনূভুতিটা কোথায় তা খুঁজে পেতাম না। দেখতি একটা একঘেয়েমি এসে যেত.. আর ঠিক একারণেই আমরা আমাদের থেকে বিপরীত স্বভাবের মানুষের প্রতি বেশি আকর্ষিত হই। আমরা জানি বিপরীত মানেই একবুক কষ্ট। তারপরও আমরা সেখানে যাই কেবল সুখ খোঁজার আসায়। কেননা আমরা ভালোবাসার বিরহ একদম নিতে পারিনা। তাছাড়া ম্যাচিউর মেয়ে চাইলে তো আমিই ছিলাম। কই? তুই তো আমার দিকে ফিরেও তাকাসনি! তখন কেনো তোর আমাকে ভালোলাগেনি? আর আজই বা ম্যাচিউর ম্যাচিউর করে মেয়েটার মাথা খাচ্ছিস কেনো?”
প্রশ্নটি করে মেসবাহর জবাবের জন্য একদন্ড অপেক্ষা করলো ইভানা। তবে মেসবাহকে ভাবুক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে থাকতে দেখে ম্লান হেসে বললো,
“উল্লাসী মেয়েটার সাথে উল্লাস, অবুঝ পনা ছাড়া কেমন যেন পানসে পানসে লাগে। পাঁচবছর পর উল্লাসী আমার সামনে এল অথচ তার মাঝে বাচ্চা উল্লাসীর সেই অবুঝ পনা নেই ভাবলেই আমার তো গলা শুকিয়ে আসে। উল্লাসী আর গম্ভীর? উহু.. একদম যায়না। তুইও দেখবি উল্লাসী যখন বুঝদারের মতো আচরণ করবে, তখন আজকের উল্লাসীকে তুই-ই মিস করবি। বলবি এই উল্লাসী, আবারও আগের মতো হয়ে যাও না!”
মাঝেমাঝে উল্লাসী যখন প্রচুর রাগ দেখিয়ে নিজেকে পরিপক্ক প্রমাণের চেষ্টায় গাম্ভীর্যের সঙ্গে চলাফেরা করে বা কথাবার্তা বলে তখন তার সেই আচরণ তীরের মতো সরাসরি বুকে এসে লাগে তার। তবে কি ইভানাই ঠিক? পরিপক্ক গম্ভীর উল্লাসীকে একদম পছন্দ নয় তার?
“এত কী ভাবিস? উঠ.. আর বাড়ি যা। তোর জন্য এমনিতেই আমার বেশ দেরি হয়ে গেছে।”
ইভানার কথায় ভাবনার গতিপথ সেখানেই থামিয়ে দিল মেসবাহ। ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কোথাও যেতি তুই?”
“হ্যাঁ.. ডাঃ আরফান মাহবুবের সাথে ডিনার প্ল্যান করেছি।”
“তুই ওনাকে নিয়ে সিরিয়াস?”
“সিরিয়াস হবারই তো চেষ্টা করছি.. নে এবার উঠ। উঠ না!”
মেসবাহকে ঠেলে সোফা ছেড়ে উঠিয়ে দিতেই ইভানার গাল আলতো হাতে চেপে ধরলো মেসবাহ। তারপর বেশ উচ্ছাসিত গলায় বললো,
“দিলাম দোঅা করিয়া, খাবি তুই ভিক্ষা করিয়া। এটা অবশ্য আমার কথা নয়.. লিমনের কথা। আমি শুধু উগরে দিলাম।”
“না? আমিও তোকে দিলাম দোঅা করিয়া, তুই বাসায় গিয়ে বউয়ের হাতে মাইর খাবি পাছায় ছালা বান্ধিয়া। যাহ!”
(চলবে)