আলোছায়া

আলোছায়া !! Part- 19

জীবন নামক নদীটা বড় রহস্যময়। বারেবারে ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙন ধরলেও এটি তার নিজস্ব স্রোতধারায় বয়ে যায় যুগের পর যুগ। তেমন ক্ষুদ্র অভিযোগ বা অভিমানের ঢেউয়ে সম্পর্কে ভাঙন ধরলেও তা বহমান জীবন নামক নদীটার মতোই। তবে সেক্ষেত্রে জীবনসঙ্গি একাধিক হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। ভেবে বুকচিরে বেরিয়ে আসা গভীর এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন সিকান্দার মির্জা। নাতনিকে বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কাপে চা ঢালতে দেখে তাকালেন মেসবাহর দিকে।
“তোমরা দুজনেই আমার সাথে বেশ ফরমাল হচ্ছো। যার আদৌ কোনো দরকার নেই।”
সে প্রসঙ্গ ঘোরাতে মেসবাহ বললো,
“আমি বরং মৈত্রীকে ডেকে আনি। অনেকক্ষণ হলোই তো ও মুন্নি ভাবির কাছে আছে!”
“আগেই এনো না। আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।”
“জ্বি, ঠিকাছে।”
উল্লাসী চায়ের কাপ সিকান্দার মির্জার দিকে বাড়িয়ে দিতেই না হাতে নিলেন তিনি। গম্ভীরমুখে একবার উল্লাসীর দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললেন,
“দু’জনেই দু’জনের মনের কথাগুলো মনে চাপিয়ে না রেখে সবটা খুলে বলো। এটলিস্ট আই উইল ট্রাই টু সলভ ইউর প্রবলেম।”
নড়েচড়ে বসলেও কিছু বললো না মেসবাহ। উল্লাসীও নিজের খোলস ছেড়ে না বেরিয়ে যেনো তাচ্ছিল্যের হাসি ফোটালো তার ঠোঁটে।
“একটি সংসার দুটো মানুষকে দিয়ে হয়। মানুষ দুটোর যে একই ধাচের হতে হবে বা চিন্তাধারা একই রকমের হতে হবে তেমন নয়। সংসার বছরের পর বছর টিকিয়ে রাখতে যা প্রয়োজন তা হলো চারটি স্তম্ভের। আর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝের সেই স্তম্ভগুলো হলো বিশ্বাস, সম্মান, ভালোবাসা এবং একতা। তোমরা যদি একে অপরকে বিশ্বাস করো, একে অপরের প্রতি যদি তোমাদের সম্মানটুকু থাকে, একে অপরকে যদি তোমরা ভালোবাসো বা একে অপরের দুঃসময়ে এক্য থাকো তাহলে হাজারো প্রতিকূলতা এলেও সেই ঘরটি ভাঙবে না। বরং আরও মজবুত হবে।”
সিকান্দার মির্জার সাথে একমত পোষণ করে মাথা নাড়লো মেসবাহ।
“একমত.. বিশ্বাস জিনিসটি না থাকলে আর যাই হোক সংসার করা যায় না। তাছাড়া আমি কেমন তা কি এই পাঁচবছরে বুঝতে ব্যর্থ তুমি? পাঁচটা বছর কিন্তু একটি লোককে চেনার জন্য যথেষ্ট উল্লাসী।”
কপাল কোঁচকালেন সিকান্দার মির্জা।
“যথেষ্ট আবার যথেষ্ট নয়.. তুমি যেভাবে ভাবছো সেভাবে যে উল্লাসীকেও ভাবতে হবে তেমন কিন্তু নয়।”
“তা তো অবশ্যই। তবে আমি মনে করি একজন মানুষকে চেনার জন্য পাঁচ বছর যথেষ্ট সময় নানাজান।”
“যুক্তি ঠিক আছে.. তবে তুমি আমার কথার একটি সোজাসাপটা উত্তর দাও।”
“বলুন..”
“তুমি উল্লাসীর কাছ থেকে ম্যাচুরিটি আশা করো?”
একদন্ড ভাবলো মেসবাহ। তারপর রাশভারী কন্ঠে বললো,
“করি..”
“তাহলে এখানে তোমার ব্যর্থতা যে তুমি সেভাবে ওকে গড়ে নিতে পারোনি। তোমার স্মরণ আছে কিনা জানি না, তবে তোমার সাথে আমার যখন প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল তখন বলেছিলাম উল্লাসীর বয়সটাই সঠিক একটি বয়স। তুমি মারো কাটো যাই করো তবে নিজের হিসেব মতো গড়িয়ে নাও। এখন একজন উশৃংখল মেয়ের অভিভাবক যদি তার খারাপ কাজেও লাই দিয়ে মাথায় উঠিয়ে, যথেষ্ট ছাড় দিয়ে পেলেপুষে বড় করার পর ওই মেয়ের কাছ থেকে ভদ্রতা আশা করে তাহলে সেটা হবে তার বোকামি।”
“দোষ কি তবে মেয়েটির অভিভাবকের? সে তো আর যাইহোক মেয়েটির খারাপ চায়নি। মেয়েটিকে সুখী দেখতে চেয়েছে।”
লম্বা একটি দম ছাড়লেন সিকান্দার মির্জা। ঠান্ডা চায়ে আবারও চুমুক দিয়ে বললেন,
“প্রথমত সব ব্যাপারেই অতিরিক্ত ছাড় দিয়ে, ওর সমস্ত অপরাধ ঢেকে বাচ্চার মতো করে আগলে রেখে তুমি ওকে ওর দোষগুলো উপলব্ধি করার মতো সুযোগ দাওনি। দ্বিতীয়ত ওকে বাইরের জগতের সাথে পরিচয় করাতেও তুমি ব্যর্থ। উল্লাসীর এই বিশ বছরের জীবনে ও কখনোই সেভাবে আমাদের এই দুনিয়া, দুনিয়ার মানুষ সম্পর্কে ধারণা পায়নি। এই ফ্ল্যাট আর ওই ফ্ল্যাট করেই যার কাটে একেকটা দিন তার কাছ থেকে হঠাৎ তুমি আশপাশের জগৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে তা কি বোকামি নয়?”
সিকান্দার মির্জার কথায় ছলছলে নয়নে তার দিকে তাকালো উল্লাসী। আগামীকাল যেখানে বুকের ভেতরটা কষ্টে মুচড়ে উঠছিল নিজেকে এতিম ভেবে সেখানে আজ তার হাত শক্ত করে চেপে ধরেছেন নানাজান। সত্যিই জীবন বড়ই অদ্ভুত।
“তুমি যথেষ্ট ভালো একজন মানুষ, ভালো একজন জীবন সঙ্গী.. আর তাতে একবিন্দু সন্দেহও আমার নেই। তবে আমার মেয়েটা স্বাভাবিক আর দশটা মেয়ের মতো মানুষ হয়নি এটাও তোমাকে বুঝতে হবে মেসবাহ।”
“আমি এটা বুঝেই কি উল্লাসীকে সেই সমস্ত সুখ দেয়ার চেষ্টা করিনি যা ও পায়নি কখনোই?”
“হ্যাঁ.. তুমি চেষ্টা করেছো। তবে আজ সেটাই তোমার জন্য ভারী হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ধীরেধীরে তোমার বয়স বাড়ছে। মনমানসিকতা পরিবর্তন হচ্ছে। তুমি খুব করে চাইছো তোমার জীবনসঙ্গিনী তোমাকে বুঝুক, তোমার না বলা কথাগুলো এক ইশারাতেই বুঝে ফেলুক। প্রতিটি বিষয়েই ম্যাচুরিটি দেখাক৷”
কন্ঠে অস্থিরতা এনে মেসবাহ বললো,
“প্রতিটি বিষয়েই উল্লাসীর ম্যাচুরিটি আমি চাচ্ছি না.. যদি চাইতাম তাহলে অবশ্যই আমি ওর পড়াশোনায় যেন কোনো সমস্যা না হয় জন্য যতটা সম্ভব মৈত্রীকে সামলিয়ে রাখতাম না। সংসারের কাজ ওকে দিয়ে না করিয়ে করিম খালাকে আনতাম না। তারপরও ও আমায় বোঝে না। আমাকে নিয়ে শতশত অভিযোগ করে। আমি নাকি ওর উপর অনেক দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছি, স্বাধীন ভাবে চলতে দিচ্ছি না আরও অনেক.. অনেক।”
“আমি সেগুলো সম্পর্কে ওকে বলেছি.. আর আমি নিজেও জানি তুমি ওকে যতটা ছাড় দাও তা ও আর কোথাও পেত না। আমার কাছে থাকলে তো অবশ্যই নয়। কিন্তু তুমি..”
সিকান্দার মির্জাকে কথার মাঝেই থামিয়ে দিল মেসবাহ। অশান্ত গলায় আবারও বললো,
“মা হয়ে কেনো ও মৈত্রীর প্রতি এতটা উদাসীন? সুহার প্রতি তো ওর এই উদাসীনতা কাজ করেনা। তাহলে মৈত্রীর উপর কেনো করে? মৈত্রীকে মুন্নি ভাবিকে দিয়ে পালাচ্ছে কেনো? মৈত্রীকে নিয়ে ওর কী সমস্যা তা ওকে জিজ্ঞেস করুন।”
ছোট একটি নিঃশ্বাস ফেললেন সিকান্দার মির্জা। ঘাড় ঘুরিয়ে উল্লাসীর দিকে তাকাতেই তার নজরে এল উল্লাসীর অশ্রুসিক্ত মুখের ছবি।
“নানাজান আপনিও মনে করেন আমি আমার মেয়েকে ভালোবাসি না? আমি তো ওর সৎমা নই। তাহলে কেনো আমি ওকে ভালোবাসবো না? কেনো আমার ওকে নিয়ে সমস্যা হবে? হ্যাঁ, আমি মানলাম আমি বকাবকি আমি। তাই বলে কি আমি ওকে ভালোবাসি না? নাকি ভালোটা শুধুই ওর বাবাই বাসে ওকে?”
“কথা ঘোরাবে না উল্লাসী। তুমি সুহার মতো করে ওকে ভালোবাসো না। এন্ড ইউ হ্যাভ টু এক্সেপ্ট ইট।”
মেসবাহর কথাগুলো কানে এলেও অবিশ্বাসের চোখে উল্লাসী তাকালো মেসবাহর দিকে। গলার ভেতরটা কষ্টে ভারী হয়ে আসায় কয়েক মুহূর্তের নীরবতা কাটিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে।
“সুহা আমার বোন। ওর সাথে মৈত্রীর তুলনা কেনো আসছে? আমার মনে ছোট সেই সুহার জায়গা আলাদা আর মৈত্রীর আলাদা। আমি কখনোই মৈত্রীকে অবহেলার চোখে দেখিনি। হ্যাঁ, আমি এইচএসসি নিয়ে, মেডিকেল কোচিং নিয়ে পড়াশোনার চাপে হয়তো ওর দিকে খেয়াল রাখিনি। কারণ আমার মাথায় সবসময় একটা জিনিসই ঘুরেছে। আপনি চান আমি রেজাল্ট করি। আমি ভালো কিছু করলে আপনি খুশি হবেন।”
থেমে গেল উল্লাসী। মেসবাহর দিক থেকে নজর সরিয়ে ঝাপসা দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে থেমে থেমে বললো,
“সুহার পাশে সেসময় কেউ ছিল না.. ছিল না মুখে খাবার তুলে দেয়ার মতো কেউ, কাঁদলে বুকে আঁকড়ে নেয়ার মতো কেউ। আমি তখন ছোট ছিলাম.. তবে এটুকু বুঝতাম আমি ছাড়া সুহাকে দেখার কেউ নেই। আপনার মনে আছে কিনা জানি না আপনিই নিজেই মৈত্রীকে বেশিরভাগ সময় মুন্নি ভাবির কাছে রেখে আসতেন যেনো আমি কষ্ট না পাই। কারণ আমি তখন ছোট ছিলাম। পেট কাটার জ্বালাপোড়া নিয়ে আমি সবটা গুছিয়ে উঠতে পারতাম না। আর সেসময়টায়ও আমি এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম সুহার মতো আমার মেয়েটা কপালপোড়া না। ওকে দেখার মতো অনেকে আছে। তাই ভেবেই হয়তো ওকে রেখে নিশ্চিন্তমনে আমি যে কোনো কাজ করতে পারতাম। কিন্তু একেই যে আপনি মেয়ের প্রতি উদাসীনতার নাম দিয়ে বসবেন জানলে আমি কখনোই আমার মেয়েকে বগল ছাড়া করতাম না।”
ঢোক চেপে নিজেকে সামলে নিল মেসবাহ। মেয়ের বিষয়টি নিয়ে কথা উঠানো কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল ভাবতেই ওপাশ থেকে উল্লাসী আবারও বললো,
“আমি ওকে সময় দিতে পারছি না হয়তো মাস পাঁচেক হলো.. অথচ আপনি সেই পাঁচ মাস নিয়েই জাজ করে বসলেন। তার আগের বছরগুলো ওকে কে দেখেছে? সবসময় কি ও মুন্নি ভাবির কাছেই পড়ে থেকেছে? আমার পড়াশোনার চাপের কথা ভেবে ওকে স্কুলে এডমিশন নিতে বলায় যদি আমার ভুল থাকে তাহলে আমি দোষী। তবে এই নয় যে আমি ওকে ভালোবাসি না.. আমি ওর মা। ও আমার মেয়ে। আমি ওকে বাজে কাজে বকবো মারবো আবার ভালোওবাসবো।”
“অবশ্যই বাসবে.. আমার তো মনে হয় এটুকু শাষন করার মতো কেউ থাকলে আজ তুমিও অবুঝের মতো আচরণ করতে না। সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিটি শিশুরই অভিভাবকের শাষণ প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত নয়। তুমি কি বুঝতে চাইছো আমি তোমাকে কী বোঝানোর চেষ্টা করছি?”
গম্ভীরমুখে সিকান্দার মির্জা কথাটি বললেও তা কানে ঢুকলো না উল্লাসীর। মেসবাহর তাকে নিয়ে করা অভিযোগের আগুনে বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে তার। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অঝোর ধারায় অশ্রুধারা।
“হ্যাঁ, পাঁচ বছর একটি মানুষকে চিনতে জানতে যথেষ্ট। আর আমি আপনাকে চিনি.. জানিও। তবে ইভানা আপুকে নয়। আপনার মনে কিছু নেই, এখন উনার মনেও যে নেই তা কী করে মেনে নেবো আমি?”
সিকান্দার মির্জার সম্মুখে ইভানাকে নিয়ে কথা উঠায় অস্বস্তিতে পড়ে গেল মেসবাহ। হাতের মুঠ চেপে নিজেকে চুপ রাখার চেষ্টা করলেও তাতে ব্যর্থ হয়ে কঠিক গলায় সে বললো,
“তুমি আবারও বাজে কথা বলছো উল্লাসী। ইভানার সাথে আমার সম্পর্কের অর্ধেক যুগ পেরিয়েছে এটা তুমি ভুলে যাচ্ছো। আমাদের ফ্রেন্ডশিপ নিয়ে এসব আজেবাজে চিন্তা তোমার মাথায় আসে কী করে? মনমানসিকতা একটু বড় করতে শেখ.. তাছাড়া তুমি শুধু ম্যাসেজ ডিলিট করেই তো ক্ষান্ত যাওনি! ইভানাকে একটি অকওয়ার্ড সিচুয়েশনে ফেলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছো। ওর সামনে আমাকে ছোট করেছো। কাল রাতে যদি ওর বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেত তাহলে তার দায়ভার কে নিত? তুমি?”
পরিস্থিতি ক্রমশ বিগড়ে যাচ্ছে বুঝে মুখ খুললেন সিকান্দার মির্জা। চায়ের কাপ টেবিলে রেখে সে গম্ভীরতা মুখ থেকে ঝেড়ে ফেলে বললেন,
“এটা স্বাভাবিক। স্বামীর প্রতি স্ত্রী পজেসিভ থাকবেই। তবে শোনো একটা গল্প। আমার ভার্সিটির বান্ধবী ছিল সঞ্চিতা কর্মকার। মেয়েটা হিন্দু ছিল। পেশায় ছিল স্কুল শিক্ষক। আমার এলাকাতেই ওর স্কুল হওয়ায় প্রায় দিনই ও বাড়ি ফেরার পথে আমি বারান্দায় বসে থাকতে দেখলে এগিয়ে আসতো। আমাদের মাঝে তখন এই সেই নিয়ে কথা হতো অনেকটা সময়। আর এটিই মোটেই পছন্দ ছিল না উল্লাসীর নানীর। এক দুপুরের ঘটনা। সঞ্চিতা আমাকে বারান্দায় দেখে গ্রিলের দিকে এগিয়ে আসতেই সে চলে গেল ছাদে। উপর থেকে একগুচ্ছ থুতু সঞ্চিতার মাথায় ফেলে উল্লাসীর মাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো, কী করলি এটা? আন্টি দাঁড়িয়ে আছে না? দেখে থুতু ফেলবি না? তাহলে বোঝো কান্ড‌! যুগেযুগে অনেকে আসবে অনেকে যাবে। তবে স্বামীকে নিয়ে স্ত্রীর মাঝের আতংক কখনোই কাটবে না বাছা।”
বলেই মৃদু হেসে উঠলেন সিকান্দার মির্জা। তবে এবারও তার কথাগুলো কানে ঢুকলো না উল্লাসীর। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সে এগুলো শোবার ঘরের দিকে। সংসারের কাজ নিয়েও কথা শোনাতে বাদ দেয়নি মেসবাহ। অথচ তার মাথায় একবারও এল না করিম খালা এসেছে কয়দিন হলো? আর এর আগেই বা কে সব কাজ দেখতো? সে সংসার সামলায় না, মেয়ে সামলায় না অথচ সংসার, মেয়ে নিয়ে ভাবনাগুলো তো থেমে থাকেনা তার মনে। মাঝরাতে ঘুম ভাঙার পর কখনোবা কোচিংয়ে গিয়ে হঠাৎ করে তার কেনো মনে পড়ে যায় মেয়ের কথা, স্বামীর কথা, সংসারের কথা? বুকের ভেতরটা ভারী হয়ে আসায় বাতাসে কিছু নিঃশ্বাস ছাড়তে ঘর পেরিয়ে ব্যালকনিতে এল উল্লাসী। চারিদিকে ঢাকা ঘন আঁধারের মাঝে মৃদু আলো তার শরীরে এসে পড়তেই সে হাত দিল তার গালে। স্বামী, সংসার, মেয়ে.. সবটাই নিছক কল্পনা হলে মন্দ হত না। অন্তত খুব সহজেই বুক ভর্তি তীব্র যন্ত্রণার হাত থেকে পাওয়া যেত মুক্তি।
(চলবে)