Adorable Love

আরাধ্য প্রেম (Adorable Love) !! Part- 12

সেদিনের পর থেকে যে কি হলো আমানের…না চাইতেও ঈশিকার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতো। অফিসের হাজার ব্যস্ততা থেকে শুরু করে রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত শুধু ঈশিকার ওই হাসি মাখা মিষ্টি মুখখানা শুধু চক্ষুপটে ভেসে উঠতো। আর ওই বাচ্চাদের মতো কথাগুলো মনে পরতেই আনমনেই হেসে উঠতো। একদিন আমানের পি.এ. জাহিদ একটা প্রোজেক্ট নিয়ে ডিসকাসের সময় হঠাৎ ঈশিকার কথা মনে পরতেই আমান আনমনে শব্দ করে হেসে ওঠে। তাই দেখে জাহিদ ভ্রু কুচকে সন্দেহের দৃষ্টিতে হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে আমান থতমত খেয়ে “কিছুনা” বলে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু জাহিদের মনে খটকা লাগে। কারণ সে জানে আমান কাজের সময় খুবই দায়িত্বশীল ।তার এমন কাজের ক্ষেত্রে অন্যমনষ্কতা কখনই দেখেনি সে। তবে কিছুদিন যাবতই সে ব্যাপারটা খেয়াল করছিলো। এর মানে অন্যকিছু মনে হলে তাই সেদিন ভয়ে ভয়ে বলেই ফেলে,
—-” স্যার…মানে…আপনি কি প্রেমে পরেছেন?”
আমান কথাটা শুনে চমকে উঠে। কিছুক্ষন জাহিদের দিকে তাকিয়ে থেকে পরে ধমকের সুরে বলে,
—-” হোয়াট! এগুলো কি ধরনের কথাবার্তা? তোমাকে এসব ফালতু কথা বলতে রাখা হয়েছে নাকি অফিসের কাজে? ”
জাহিদ ধমক খেয়ে চুপ করে গেলেও তারপর থেকে আমান বিষয়টা গভীরভাবে ভাবে। তার মতো ব্যাক্তিত্বের একজন সামান্য একদিনের পরিচয়ের একটা মেয়ের প্রেমে কখনই পরবে না। এগুলো নিছকই অবান্তর চিন্তা। এরপর ঠিক করে আর কখনই ঈশিকাকে নিয়ে ভাববে না। এইসব ভাবনা থেকে মুক্তির জন্য দু তিন দিনের জন্য বেরিয়ে পরতো দূরে প্রকৃতির কাছে। কিন্তু ওইযে মন? ঘুরে ফিরে সেই এক রাস্তায় ই চলে যেতো৷ ক্ষনিকের একাকিত্বতা যেনো ঈশিকার চিন্তা তার মন ব্রেইন সর্বত্রতে যেনো আরো বেশি করে জেঁকে ধরছিলো।

তখন আমান রিয়েলাইজ হ্যাঁ সে সত্যি ঈশিকার প্রেমে পরে গেছে৷ খুব মারাত্মক ভাবে পরে গেছে৷ তারপর জাহিদকে ঈশিকার সব ইনফরমেশন জোগার করতে বলে। জাহিদ বিজ্ঞদের মতো বলে,
—-” স্যার আমি বলেছিলাম না আপনি প্রেমে পরেছেন। আমিতো প্রথমেই বুঝেছিলাম। আফটার অল এক্সপেরিএন্স এর একটা ব্যাপার আছে না? ”
আমান সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলে,
—-” রিয়েলি জাহিদ? কয় ডজন প্রেম করেছো তুমি? যে প্রেম বিষয়ে এতো অভিজ্ঞতা? ”
জাহিদ থতমত খেয়ে বলে,
—-” কি বলেন স্যার! আমার তো ওই একটাই বাবু থুক্কু একটাই প্রেমিকা ছিলো যেটা এখন বউ। আর সেই আগের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছিলাম।”
আমান হাসলো। তারপর জাহিদকে বললো,
—-” তো এখন কি করি বলতো? মানে তোমার অভিজ্ঞতা কি বলে? এখন আমার কি করা উচিৎ?”
জাহিদ ঝড়ের গতিতে বলে,
—-” কি করা উচিৎ মানে? অবশ্যই তাকে প্রোপজ করা উচিৎ। যদিও মেয়েরা প্রথমেই রাজি হয় না। একটু আধটু ভাউ খায় মানে আমারটা যেমন খেতো আরকি। সেটা একটু ভেজাল আছে। তবে হাল ছাড়লে চলবে না। প্রথমবার না হোক দ্বিতীয় বার না হোক তৃতীয় বার তো হবেই হবে। আর প্রোপোজ এর ক্ষেত্রে আমি বলবো “আই লাভ ইউ” না বলে ডিরেক্ট ” উইল ইউ ম্যারি মি” বলে দেবেন। আর আপনার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত! আপনাকে দেখলে ঈশিকা ম্যাডাম রাজি হবেই হবে।”

আমান জাহিদের সব কথা মন দিয়ে শুনে বলে,
—-” বাপরে! এতো বহু ঝামেলা! আর ডিরেক্ট বিয়ের কথা বলবো!?”
—-” হ্যাঁ… এতে মেয়েরা ইম্প্রেস হয় বেশি। তবে… যদি তার লাইফে অলরেডি অন্য কেউ থাকে তাহলে মুশকিল!”
আমান একথা শুনেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,
—-” সেই জন্যই আমার ওর সব ডিটেইল চাই৷ ফাস্ট!”

এরপর জাহিদ ঈশিকার সব ডিটেইল জোগাড় করে এনে আমানকে দেয়। এবং নিশ্চিত হয় আগে পিছে কেউ। তখনি ঠিক করে ঈশিকাকে তার চাই ই চাই। তাই সেদিন নিজে ঈশিকাকে ডিরেক্ট বিয়ের প্রোপোজাল ও দিয়ে ফেলে। তবে ওইযে? জাহিদের কথাই ঠিক হলো। মেয়েরা এসব বিষয়ে একটু ভাউ খায় বৈকি। তবে আমানও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না। আর সাথে যদি থাকে জাহিদের মতো প্রেম বিজ্ঞানী! তাহলে তো কথাই নেই। তার ডিরেকশন মতোই দ্বিতীয় বার চেষ্টা করতে গিয়ে ফলস্বরূপ ঈশিকা শোয়েবকে দিয়ে মিথ্যে প্রেমের নাটক করায়। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলোনা। সেই আমানের বুকেই আসতে হলো তাকে সারাজীবনের জন্য।

এসব মনে পরতেই ঈশিকাকে বুকে জড়িয়ে রেখে হেসে ওঠে আমান। মনে মনে বলে, ” আমি আমার অস্তিত্বের খোঁজ পেয়ে গেছি ঈশু! কখনই হারাতে দেবো না তোমায়।”

__________________________________________________
কিছুক্ষন পর আমানরা চলে আসে বাড়িতে। ততক্ষনে ঈশিকার জ্ঞান ও ফিরে এসেছে৷ ঈশিকা গাড়ি থেকে নামলেই আমান ঈশিকাকে কোলে তুলে নেয়৷ আমানের বন্ধু তাই দেখে মুখে সিটি দেয়। আর আরমান আহমেদ হেসে বলে,
—-” সাব্বাশ! এই না হলে বাপ কা ব্যাটা।”
আমান হেসে দেয়। ঈশিকাও লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসে। রাজিয়া বেগম গাড়ির আওয়াজ পেয়েই দরজায় এসে দাঁড়ায়। আমান ঈশিকাকে দরজার সামনে নামিয়ে দিলে তিনি বউ বরণ করে ঘরে তোলে। রাজিয়া বেগমের বেজায় খুশি! একমাত্র ছেলের বউ বলে কথা! তিনি মনে মনে যেমনটা চেয়েছিলেন ঠিক তেমনটাই। মুখের বাচ্চা আদল টা এখনো যায়নি। যেনো ছোটমোটো একটা পুতুল! ঈশিকার থুতনিতে হাত রেখে তিনি বললেন,
—-” মাশাল্লাহ! কি মিষ্টি মুখ গো! একদম আমার মনের মতো। ছেলের আমার পছন্দ আছে।”
ঈশিকা লজ্জা পেয়ে হাসলো।
রাজিয়া বেগম তো আদেশের সুরে বলেই দিলেন,
—-” আমাকে কিন্তু আপনি আজ্ঞে করা যাবে না বলে দিলাম। আর আমিও কিন্তু মাঝে মাঝে তুই করে বলতে পারি। কি আপত্তি আছে?”
ঈশিকা হেসে তার হাত ধরে আস্তে করে বললো,
—-” তুমি আমাকে তুই করেই ডেকো আম্মু।”
ছেলের বউয়ের কথায় ভারী সন্তুষ্ট হলেন রাজিয়া বেগম। সবকিছু দেখে আমানও স্বস্তি পেলো। সব ভালোয় ভালোয় মিটে গেছে! তারপর আরমান আহমেদ তাড়া দিয়ে সবাইকে ফ্রেস হতে বললেন।

সন্ধ্যায় জাহিদ এলো আমানদের বাড়ি। সারাদিন তার অসুস্থ মাকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করছে তাই তার প্রাণ প্রিয় আমান স্যারের বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারেনি। সেই নিয়ে তার আক্ষেপের শেষ নেই। তবে প্রথমবার বিয়ের সময় তো ছিলোই সেই ভেবেই মনকে সান্ত্বনা দিলো। এখন সুযোগ পেয়েই চলে এসেছে আমান স্যার কে অভিনন্দন জানাতে। স্যারের প্রেমের ঘটনা উদঘাটন থেকে শুরু করে সব রকমের প্রেমের বিষয়ে পরামর্শ সে দিয়েছে। তার অবদানও কি কম নাকি? আর এখন সেই স্যার দুই দুইবার বিয়ে করে বসে আছে! অথচ কেউ টের পেলো না!

রাজিয়া বেগম ছেলের বউয়ের জন্য বানিয়ে রাখা ভরি ভরি গয়না দিয়ে ঈশিকাকে দোয়া করলেন। সবশেষে তার শাশুড়ীর বংশ পরম্পরায় দেওয়া পদ্ম ফুলের নকশা করা স্বর্ণের চুলের কাঁটা দিতে গিয়ে দেখলো মেয়ের চুল তো ছোট। ঘাড় অবধি করে কাটা। এ চুলে তো খোপাই উঠবে না। কাঁটা গুজবে কোথায়! তবুও হাসি মুখে হাতে দিয়ে ঈশিকাকে বললেন,
—-” আর কিন্তু চুল কাটা যাবে না বলে দিলাম। বড় চুল মানেই লক্ষীমন্ত। ঘরের বউয়ের মাথায় একটু আধটু বড় চুল না থাকলে চলে?”

ঈশিকা হাসি মুখে রাজিয়া বেগমের কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। বড় চুল সামলাতে অনেক বেগ পেতে হয় এজন্যই চুল ছোট করে রাখা। এরপর রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে আমান তার বন্ধুকে জোর করেই নিজে বাড়ি পৌঁছে দিতে গেলো। তার গাড়িতে সমস্যা থাকায় আমানদের গাড়িতেই এসেছিলো সে। এর মধ্যে রাজিয়া বেগম ঈশিকাকে নিজ হাতে সাজিয়ে আমানের ঘরে পাঠালেন। ঈশিকা ঘরে গিয়ে পুরো অবাক! বিয়েটা সাদামাটা হলেও ঘরটা খুব সুন্দর ভাবেই সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে।

রাজিয়া বেগম ই এতোসব করেছে। ঘটা করে বিয়ে হয়নি তো কি হয়েছে? ছেলের কথাই সব নাকি? হোক লজ্জার ব্যাপার। তাও সে ছেলের বাসর নিজে ডিরেকশন দিয়ে সাজাবে। ফুল আনিয়ে সার্ভেন্ট দিয়ে গোটা ঘরটা সাজিয়েছে তিনি। সাথে জাহিদও মহানন্দে হাত লাগিয়েছে। হাজার হোক তার আমান স্যারের ফুলসজ্জার খাট বলে কথা!

কিছু সময় পর আমান ঘরে ঢুকলো। দেখলো ঘরের খাট ফুল দিয়ে সাজানো। বুঝলো এ তার মায়েরই কাজ। ঈশিকা বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে গাছে ফোঁটা মাতাল করা ঘ্রাণ ছরানো ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখছিলো। আমান ঈশিকাকে ঘরে না পেয়ে দেখলো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে৷ কাছে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ঈশিকা প্রথমে চমকে গেলেও চেনা পারফিউম এর গন্ধে ঠিকি চিনতে পারলো মানুষটাকে। আমান ফিসফিয়ে বললো,
—-” এখানে কি করছো? চলো ঘরে চলো।”
—-” ফুলগুলো দেখছিলাম। এগুলো কি আপনি লাগিয়েছেন?
—-” না…মা লাগিয়েছে। মা ই যত্ন করে। আমি এসব গাছের যত্ন নিতে পারিনা৷”
একটু থেমে আবার বললো,
—-” অবশ্য এখন তো গাছের মালকিন এসেই গেছে। আর চিন্তা কি? সেই ই করবে।”
আমানের কথায় ঈশিকা পেছন ঘুরে তাকালো। তারপর ভ্রু কুচকে বললো,
—-” মানে?”
—-” মানে তুমি এখন থেকে এগুলোর যত্ন নেবে।”
—-” এ্যাঁহ! নিজে কিছু করবে না আমাকে দিয়ে করাবে।”
আমান হাসলো। বললো,
—-” কে বললো কিছু করবো না? করবো তো…বাসর!” চোখ টিপে।
আমানের কথায় ঈশিকা পিটপিট করে তাকালো আমান ঈশিকাকে একবার আগাগোড়া দেখে আবার বললো,
—-” উফ! আবারো শাড়ি! শাড়িতে তোমাকে যা লাগে না? এখন লাগছে পুরোই নতুন গিন্নি!”
ঈশিকা করুন মুখ করে বললো,
—–” কিন্তু আমার অস্বস্তি লাগে। কেমন পেঁচিয়ে যায়। আচ্ছা এগুলো পালটে শুলে হবে?”
—-” পাল্টানোর আর দরকার নেই তো।”
—-” কেনো?”
আমান দুষ্টু হেসে বললো,
—-” কেনো মানে কি? আজকে তো এমনিও শাড়ি গায়ে থাকবে না। বাসর রাত না?”
ঈশিকা দুম করে আমানের বুকে কিল দিয়ে বললো,
—-” পঁচা লোক! খালি পঁচা পঁচা কথা। যান তো…”
বলেই সরে আসতে নিলে আমান পেছন থেকে হাত ধরে ফেলে। তারপর একটানে বুকের কাছে এনে মাথা নিচু করে ঈশিকার কানে মাতাল কন্ঠে বললো,
—-” পালিয়ে আজ যাবে কোথায় সুন্দরী? আজ আর কোনো কথাই শুনবো না। কোনো বাধাই মানবো না।”

ঈশিকার বুক দুরুদুরু করছে। নিশ্বাসে ঝড় বইছে দৃষ্টি নিচে রাখলেও চোখের পাতা কাঁপছে। আমানের গরম নিশ্বাস গালে গলায় পরায় শরীরের লোম কাঁটা দিয়ে উঠছে৷ আমান ঈশিকার লজ্জা পাওয়া দেখে হেসে গলায় আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ঈশিকা বিদ্যুৎ এর গতিতে কেঁপে উঠে। আমান মুচকি হেসে ঈশিকাকে হুট করেই পাজা কোলে তুলে নেয়। ঈশিকা লজ্জা পেয়ে আমানের বুকে মুখ লুকায়। আমান হেসে আমানের বুকে মুখ লুকায়। তারপর আমান ধিরে ধিরে ফুলে সজ্জিত বিছানার দিকে এগিয়ে যায়।
.
.
.
চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *