Adorable Love

আরাধ্য প্রেম (Adorable Love) !! Part- 11

মেয়ের চোখ মুখ দেখে আফসানা চৌধুরী অবাক ই হলেন। দেখে বোঝাই যাচ্ছিলো হয়তো কেঁদেছে। তিনি কিছু জিজ্ঞেস করতেই ঈশিকা কোনোরকমে কাটিয়ে ঘরে গেল। শাওয়ার নিয়ে বের হলে আফসানা চৌধুরী ঈশিকার ঘরে এসে বললো,
—-” কিরে..রাতে খাবিনা?”
—-” না খেয়েই তো এসেছি। বাবা এসেছে?” চুল মুছতে মুছতে বললো ঈশিকা।
—-” হ্যাঁ ফিরেছে। খেতে বসেই আমাকে তোকে ডাকতে পাঠালো। আর তোর কি হয়েছে বল তো? ”
ঈশিকা আফসানা চৌধুরীর কথার উত্তর না দিয়ে ঈশিকা বললো,
—-” মা…এই বিয়েতে আমি রাজি। তুমি বাবাকে বলে দিও।”
আফসানা চৌধুরী মেয়ের কথা ঠাহর করতে না পেরে ঈশিকার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। তারপর চোখ মুখ উজ্জ্বল করে বললো,
—-” সত্যি? তুই ভেবে বলছিস তো?”
—-” হ্যাঁ।”
আফসানা চৌধুরী খুশিতে ডগমগ হয়ে বললো,
—-” যাক! এতোদিনে সুবুদ্ধি হলো মেয়ের। দাঁড়া…এক্ষুনি তোর বাবাকে বলছি।” বলেই আফসানা চৌধুরী চলে গেলেন। ঈশিকা শব্দ করে একটা শ্বাস ফেললো। তারপর চোখ গেলো বিছানায় ফোনের দিকে। কেও কল করছে। সাইলেন্ট থাকায় এতক্ষন খেয়াল করেনি। এগিয়ে গিয়ে হাতে নিতেই নিতেই কেটে গেলো৷ দেখলো আগে রিমি কয়েকবার ফোন করেছে। এখন নোভা করেছিলো। তখনি আবারো নোভা কল করলো। ঈশিকা কল রিসিভড করতেই নোভা অস্থির গলায় বললো,
—-” এই তুই কিরে? না বলে চলে গেলি কেনো? কত খুজেছি তোকে জানিস? পরে শোয়েব বললো তুই নাকি আমান ভাইয়ার সাথে চলে গেছিস। আমাকে একবার বলে গেলে….”
ঈশিকা নোভার কথার তোয়াক্কা না করে ওর কথার মাঝেই পালটা প্রশ্ন করলো,
—-” শোয়েব যে আমাকে পছন্দ করে…এটা তোরা বা তুই আগে কোনোদিন বুঝেছিলি?”
নোভা ঈশিকার কথায় চুপ করে গেল। তারপর বললো,
—-” কি হয়েছে বলতো?”
—-” হয়েছে অনেক কিছুই। আপাতত যা বললাম তার উত্তর দে।”
নোভা এরপর ইতস্তত হয়ে বললো,
—-” আসলে… যেদিন তোকে বলেছিলাম শোয়েব কে দিয়ে আমান ভাইয়ার সামনে ওই বয়ফ্রেন্ডের নাটক করতে। সেদিনই ওর তোকে বলা কথাগুলো শুনে আমার কাছে কিছুটা সন্দেহ হয়েছিলো। যে শোয়েব মেইবি তোকে পছন্দ করে। কিন্তু আজকে তোর প্রশ্ন শুনে পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম।”
তারপর কিছুক্ষন থেমে নোভা আবার বললো,
—-” বাই এনি চান্স! এটা কি ভাইয়া বুঝতে পেরেছে? আর সেটা নিয়েই কোনো ঝামেলা হয়েছে তোদের মধ্যে? শোয়েব কেও দেখলাম তোর কথা জিজ্ঞেস করায় কোনোমতে কাটিয়ে চলে গেল।”
ঈশিকা বললো,
—-” আমান না বললে হয়তো ব্যাপারটা আমি বুঝতাম ই না কোনোদিন। আচ্ছা রাখছি রে। ভীষণ টায়ার্ড লাগছে।”

নোভাও আর কিছু বললো না। ঈশিকা ফোন রাখতেই ইফতেখার চৌধুরী ঈশিকার ঘরে এলেন।
—-” এখনো ঘুমাসনি মা?”
—-” না বাবা। এখনি ঘুমাবো। তুমি দাঁড়িয়ে কেনো বসো না।
ইফতেখার চৌধুরী মেয়ের পাশে বসলেন। তারপর বললেন,
—-” তুই কি বিয়ের সিদ্ধান্তটা ভেবে চিন্তেই নিয়েছিস? দেখ আমি কিন্তু তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আজ অবধি কোনো কিছু চাপিয়ে দেই নি। তবে আমান ছেলেটা সত্যি ভালো। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি। তারপরও তোর মা বা অন্য কারো কথা ভেবে যদি তুই রাজি হয়ে থাকিস তাহলে বল আমাকে। তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই হবে না। আমি আছি তোর পাশে।”
ঈশিকা বাবার হাত ধরে আশ্বস্ত করে বললো,
—-” না বাবা…আমি সব কিছু ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ আর তাছাড়াও তোমারা তো আমার কখনও খারাপ চাইবে না। আর আজ না হয় কাল তো বিয়ে করতেই হত। সবমিলিয়ে আমি ভেবেই রাজি হয়েছি।
ইফতেখার চৌধুরী প্রফুল্ল হাসলেন। তারপর বললেন,
—-” তাহলে আমি কালই কথা বলবো ওদের সাথে।”
ঈশিকা আর কিছু বললো না।
.
.
__________________________________________________
পরদিন ডিনার এর সময় আরমান আহমেদকে রাজিয়া বেগমকে জানালেন যে মেয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছে। আমান সব শুনছিলো কিন্তু কিছু বলছিলো না। চুপচাপ খাচ্ছিলো। রাজিয়া বেগম একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে আরমান আহমেদকে এভাবে হঠাৎ রাজি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন,
—–” পড়াশোনার দিক চিন্তা করে প্রথমে না করেছিলো। তাছাড়াও মেয়ের বয়স অল্প। এইসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তার পক্ষে কিছুটা কঠিন বৈকি।”

রাজিয়া বেগম একথা শুনে সন্তুষ্ট হলেন কিছুটা। তাছাড়াও মেয়েতো দেখতে শুনতে খারাপ না। যদিও ছবি দেখেছে তিনি। তবে চুলটা বেশ ছোট। তাই এবার আর কিছু বললেন না তিনি। ভেবেছিলো এই চক্করে হয়তো তার ছেলে চিরকুমারই রয়ে যাবে। কিন্তু সেই ভয় আর নেই। আরমান আহমেদ ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন,
—–” সব তো ঠিক এখন। তাহলে কবে বিয়েটা করতে চাচ্ছো?
আমান স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—-” আমি বেশি দেরি করতে চাচ্ছিনা। ২/৩ দিনের মধ্যেই সব সেরে ফেলতে চাই।”
—-” এতো অল্প সময় এতো আয়োজন! ঠিকাছে হয়ে যাবে। এখন তুমি যেটা ভালো মনে করো।”
—-” এতো আয়োজন মানে? বাবা…আমি গ্র্যান্ডভাবে কোনো কিছু করতে চাচ্ছিনা। জাস্ট দুই পরিবারের উপস্থিতিতে সিম্পলভাবে বিয়েটা করতে চাই। এর বেশি কিছু না।”
রাজিয়া বেগম অবাক হয়ে বললেন,
—-” মানে? আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে তা কিনা হবে ঘরোয়াভাবে? এটা কেমন কথা!”
—-” মা প্লিজ! আমি এই মুহুর্তে এতো কিছু করতে চাচ্ছিনা। দরকার হলে পরে রিসেপশন করা যাবে। তাই প্লিজ জোর করোনা। আই এম ডান।” বলেই উঠে চলে গেল আমান।
রাজিয়া বেগম আরমান আহমেদকে কিছু বলতে নিলে তিনি বললেন,
—-” ছেলে বড় হয়েছে। এসব বিষয়ে ওকেই সিদ্ধান্ত নিতে দাও। আর তাছাড়াও বিয়ে তো হচ্ছেই। হয় পরে একসময় অনুষ্ঠান করা যাবে। আপত্তি কোথায়? ”

রাজিয়া বেগম মনে মনে ভাবলেন, ” এটা কোনো কথা হলো? কোথায় একমাত্র ছেলের বিয়েতে আত্বীয় স্বজন, লোকজন সবাইকে ঘটা করে জানাবেন, খাওয়াবেন তা না!
ছেলের এরুপ পাগলামো সিদ্ধান্তে এবার চরম বিরক্ত হলেন তিনি।
.
.
______________________________________________
ওদিকে আফসানা চৌধুরীও সব শুনে বেশ অসন্তুষ্ট হলেন। একটামাত্র মেয়ের বিয়েতে। তার কত শখ আহ্লাদ ছিলো তার কিছুই হবে না। ইফতেখার চৌধুরীও মনে মনে কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও প্রকাশ করলেন না। উলটে আরো স্ত্রীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করলেন। ঈশিকাও এই সিদ্ধান্তে আর বাধ সাধলো না। কিই বা আর বলবে? এখানে নিজের বিয়ের কথা নিজে এভাবে বললে শশুর বাড়ির লোক কি না কি ভাব্বে। আর আমান যেহেতু বলেছে তাহলে ভেবে চিন্তেই ঠিক করেছে সব।
.
.
বিয়ে দিন ঠিক হলো দু’দিন পর। ঈশিকাদের বাড়িতে ঘরোয়াভাবেই বিয়ের আয়োজন করা হলো। ঈশিকা শুধু নোভাকে বলেছিলো তাছাড়া আর কাউকে জানায়নি। সবাই জানলে নিশ্চয়ই শোয়েবও জানতো। আর এতো কিছু জানার পর শোয়েবকে বিয়ের কথাটা জানানো তার কাছে ঠিক মনে হয়নি। কে জানে আবার যদি কোনো ঝামেলা করে। আমান যদিও বলেছিলো তারপরও ঈশিকা জানায়নি।

লাল জামদানী শাড়ি হালকা কিছু গয়না পরিয়ে সাজিয়ে ঈশিকাকে বসার ঘরে নিয়ে এলো নোভা। শুধু আরমান আহমেদ, আমান আর তার এক বন্ধু উপস্থিত আছে বিয়েতে। ঈশিকাকে দেখে আমানের তো প্রায় মাথা ঘুরে যাবার উপক্রম! লাল শাড়িতে কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। পুরো নতুন বউ। ঈশিকাও আড়চোখে আমানকে দেখলো। ফর্সা শরীরে মেরুন পাঞ্জাবিতে অসাধারণ লাগছে দেখতে তাকে। এই ছেলে যা পরে তাই ক্রাশ! ঈশিকার আমানের দিকে চোখে চোখ পরতেই আমান দুই আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দারুণ লাগছে বোঝালো। ঈশিকা লজ্জা পেয়ে হাসলো।

বিয়ের কার্য সম্পুর্ন হয়ে গেলে খাওয়া দাওয়ার পালা শেষে এবার বিদায় এর পালা।
ইফতেখার চৌধুরী ছলছল চোখে আরমান আহমেদ এর হাত ধরে বললেন,
—–” ভাই…মেয়েটা আমার বড় আদরের। ছোট থেকেই তুলোয় মুড়ে রাখার মতো করে রেখেছি। কখনও একটা ফুলের টোকাও দেইনি। এখন মেয়েটাকে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। ওকে নিজের মেয়ের মতো করেই দেখবেন।”
আরমান আহমেদ তার হাতের ওপর হাত রেখে আস্বস্ত করে বললেন,
—–” আপনার মেয়ে এখন আমার বাড়ির বউ না বরং আমারও মেয়ে। আপনি চিন্তা করবেন না। আমাদের কাছে সুখেই থাকবে সে।”

আফসানা চৌধুরীও মেয়েকে ধরে সমানে কেঁদেই যাচ্ছে। আগে যতই মুখে বিয়ে বিয়ে করুক। এখন বুঝতে পারছে নিজের মেয়েকে পরের ঘরে পাঠানোর কষ্টটা৷ ওদিকে ইয়ানও কাঁদছে। তার একটা মাত্র বোন। কত খুনসুটি, দুষ্টুমি মাখা সময় কাটিয়েছে তার সাথে। ইয়ান আর মাকে ধরে ঈশিকাও কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে একেবারে হেচকি উঠে গেছে। বুকটা ভীষন পুড়ছে আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে যেতে।

ইফতেখার চৌধুরী আমানের কাছে গিয়ে ধরা গলায় বললেন,
—-” আমার মেয়েটাকে কখনও কষ্ট দিও না বাবা।” বলেই হুহু করে দিলেন। আমান ইফতেখার চৌধুরীকে কোনোমতে শান্ত করলেন। এবার ঈশিকা বাবাকে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।

এরপর আমানরা বিদায় নিয়ে ঈশিকাকে একপ্রকার ধরাধরি করে আমান কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসালো। এরমধ্যেই ঈশিকা কান্নার তোড়ে কখন যে অজ্ঞান হয়ে গেছে নিজেও জানে না।
.
.
.
চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *