আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 29

পরেরদিন সকাল থেকে বাড়িতে অনুকে নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু হয়ে গেছে।

আরিয়ান সকালে অনুকে ফ্রেশ করে নিচে কোলে করে নামিয়ে রেখে যায়।

বেচারি পায়ের জন্য হাটতে পারছে না।
তাই যে যার যখন যা ইচ্ছা অনুকে একটু পর পর খাওয়া তে আসে।

অনুর শাশুড়ি বলে,”বউমা এ সময় বেশি বেশি খেতে হয়,,আর কোনো উল্টা পাল্টা কিছু চিন্তা করবা না।”

একটু পর মৌ এসে বলে,”ভাবী তোমার জন্য আমি ফল কেটে আনছি এখন তোমাকে খেতে হবে। ”

তারপর আসে ফুপু আম্মা এসে অনুর পাশে বসে কোরআন, হাদিস পড়ে শোনাতে থাকে।

বিকালে তাড়াতাড়ি আয়াত বাড়িতে অনুর জন্য অনেক চকলেট এনে চুরি করে দেয়।

রাতে আরিয়ান এসে অনুকে খাবার খাওয়ায় রুমে নিয়ে যায়।

অনু আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার এমন ভাবে আর ভালো লাগছে না।
সারাদিন সবাই খাবার জোড় করে খাওয়ায় তো আমাকে মোটা হাতি বানিয়ে দিবে গো।
সারাদিন এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগে না। ”

আরিয়ান অনুকে জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে বলে,”যাক এমন সময় তোমার পায়ে সমস্যা হয়ে ভালো হয়েছে,,চুপচাপ বসে থাকবে আর সবার আদর খাবে। ”

অনু বলে,ধুর রাখ তোর আদর, আমার বাচ্চা হবে সেই খুশি তে আমি সারা শহর ঘুরে বেড়াবো।
এই ফুসকা খাবো,এই জায়গা ঐ জায়গা তে ঘুরতে যাবে,মনের সুখে চকলেট খাবো।
তা না হয়ে ঘরে বসে আছি।
আমি এমনটা কখনো কল্পনা করি নাই।

আরিয়ান বলে,”আমার সোনা বউ কান্দেনা ময়নাপাখি,কিছুদিন পর পা ভালো হয়ে গেলে তুমি আবার আগের মতো ঘুরাঘুরি করবে কিন্তু বাবু কোলে নিয়ে। ”

অনু বলে,”না আমি বাবু পেটে নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে চাই।বাবু ওর আম্মুর সাথে পেটে থাকতে ইনজয় করবে। ”

আরিয়ান :তাহলে হয়েছে,সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক একদম তোমার গুণে পরিপূর্ণ হবে।

অনু বলে,”কেনো আমি কি ভালো না?”

আরিয়ান বলে,”আরে তুমি খারাপ সে কথা কি আমি একবার ও বলেছি জান।অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও তুমি।”

অনু :না আমি ঘুমাবো না,সারারাত তোমার সাথে গল্প করবো।

আরিয়ান : না সোনা বউ,আমার সকালে মিটিং আছে আর এই অবস্থায় রাত জাগা ঠিক না।

অনু রাগ করে আরিয়ান কে ছেড়ে দিয়ে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে যায়।

আরিয়ান অনুকে দেখে বলে, “পাগলি বউ আমার,আল্লাহ জানে পিচ্চি হলে তাকে কি ভাবে সামলাবে।”

তারপর আরিয়ান অনুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়।



এভাবে দেখতে দেখে এক মাস পার হয়ে যায়।

অনুর পা এখন ভালো হয়ে গেছে।

এতোদিন অনু হাটা হাটি করতে পারতো না তাই সবার চোখের সামানে সারাদিন শুয়ে বসে নিচে থাকতো।
সবার চোখের সামনে থাকার জন্য রাজ কখনো অনুকে কিছু বলার সাহস পায়নি।

এখন অনু সারাদিন পুড়ো বাড়িতে ছোটাছুটি করে।

আর একটু পর পর ছোট বাচ্চাদের মতো খাবার জন্য বায়না করে।

একদিন আয়াত বাড়িতে এসে দেখে অনু দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে।

আয়াত :ভাবী এভাবে জোড়ে সিঁড়ি দিয়ে আর নিচে নেমে আসবে না।

অনু বলে,”আমি হাজার বার এভাবে রুম থেকে নিচে আসবো তাতে কেউ কিছু বলবে না। ”

আয়াত বলে,”আচ্ছা কিছু বলবো না।”

পরেরদিন সকালে আয়াত আরিয়ান কে সব কথা বলে দেয়।
তাই আরিয়ান সকালে নিচে তাদের রুম শিফট করে।
যতোদিন না বাড়িতে নতুন মেহমান আসছে ততোদিন নিচে থাকবে।

অনু বলে,”এটা একদম ঠিক না,আমি উপরে থাকবো নিচে থাকবো না।”

আয়াত :ভাবী বেশি লাফালাফি করলে এখন তো রুম নিচে শিফট করা হয়েছে কিছুদিন পর পায়ে শেকল পড়িয়ে রাখবো প্রয়োজনে।

অনু তখন পেটে হাত দিয়ে বলে,”দেখো পিচ্চি তেমার বাবা চাচা ভালো না,তোমার মা কে কেউ ভালো বাসে না।”

আরিয়ান বলে,”পিচ্চি ও জানে আমারা কাকে কতোটা ভালো বাসি। ”

রাজ এসে বলে,”ওদের ভালো বাসা পছন্দ না হলে আমার ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারো অনু।”

অনু :ওরে আমার শকুন কই থেকে চলে আসছে ভালবাসা দান করতে।
তোর মতো পোলার ভালবাসা অনুর দরকার নাই।
রাখ তোর ভালবাসা তোর কাছে।

রাজ :এতো অপমান ভালোনা,ফল কিন্তু ভালো হবে না।

অনু :এই অনু কোনোকিছুর পরোয়া করে না।

এভাবে ঝগড়া আর সবার ভালো বাসায় অনুর দিন কেটে যাচ্ছে।


এরপর একদিন আবির অনুকে তাদের বাড়িতে কিছুদিন থাকার জন্য নিতে আসে।
সে কথা শুনে তো মৌ সেই কি কান্নাকাটি।

আরিয়ান বলে,”এতো কান্নাকাটির কি আছে কিছুদিন পর তো অনু চলে আসবে। ”

মৌ :তবুও আমি ভাবী কে ছাড়া থাকতে পারবো না।

আয়াত বলে,”ওরে আমার নেকামি করা কথা। কয়দিন পর বিয়ে দিয়ে দিলে তখন আর ভাবীর কথা মনে থাকবে না। ”

মৌ :আমার বিয়ে নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।নিজের চিন্তা নিজে করো।

আরিয়ান :উফ তোরা থামবি,ছোটদের মতো এতো ঝগড়া করবি না একদম।

অনুর শাশুড়ি মা :আবির বাবা বউ মাকে নিয়ে যাবে ভালো কথা তাড়াতাড়ি আবার রেখে যাবে।

ফুপু বলে,”এ সময় নিয়ে যাবে ঠিক আছে।কিন্তু বাচ্চার যদি কিছু হয় তাহলে অনুকে আর কোনোদিন এ বাড়িতে ঢুকতে দিবো না মনে রেখো।”

অনু :আপনার মুখে কোনো ভাল কথা নেই নাকি??
যখনি কথা বলেন মানুষ কে কষ্ট দেওয়ার কথা বলেন।
নিজে একজন মেয়ে হয়ে অন্য মেয়েকে এমন সময় এধরণের কথা বলতে মুখে বাধে না আপনার?

আরিয়ান :ফুপু, সব কিছু আল্লাহর দান।
তাই কার সাথে কি হবে এসব নিয়ে খারাপ চিন্তা বাদ দিয়ে ভালো চিন্তা করেন।
আর দোয়া করেন অনু আর বাচ্চা যেনো ভালো থাকে।

আরিয়ানের বাবা বলে,”আরে বাদ দাও তোমরা ওর কথা নিন্দুক (গল্পের লেখিকা Angel Frozen Nishi)কোনোদিন কারো নিন্দা করা ছাড়ে না,তোমার ফুপু কোনোদিন ভালো কথা বলবে না।।”

আবির বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই,আমরা অনুর খেয়াল রাখতে চেষ্টা করবো ভালোভাবে।”

তারপর অনু নিজের সব কিছু ঘুছিয়ে আবিরের সাথে যাবার সময় মৌ এর কান্না দেখে কে।

অনু মৌ কে কান্না করতে দেখে বলে,”আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে মৌ আমার সাথে করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো?”

অনুর শাশুড়ি মা বলে,”মৌ যখন তোমাকে একা ছাড়তে চাইছে না তখন তোমার সাথে নিয়ে যাও আমাদের কোনো সমস্যা নেই।”

মৌ তো সেই খুশী হয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে অনুর পাশে এসে দাড়ায়।

আয়াত মৌ কে বলে,”শোন ফকিন্নি ভাবীর সাথে যাচ্ছিস ভালো কথা,ভাবীর ভালো করে খেয়াল রাখবি, আর প্রতি মিনিটের আপডেট আমাদের ফোন করে বলবি।”

মৌ বলে,”এই আমি ভাবীর একমাত্র ননদ তার সাথে ঘুরতে যাচ্ছি। কোনো সাংবাদিকতা করতে যাচ্ছি না। যে প্রতি মিনিটের আপডেট তোমাদের দিতে হবে। ”

আয়াত বলে,”দেখ মৌ, যা বলছি তাই করবি, না হলে তোর ঘাড় মটকাই দিবো।”

আরিয়ান বলে,”উফ আর পারি না,তোরা কবে বড় হবি আমাকে বলবি।
কিছুদিন পর পিচ্চির সাথে তোদের বাচ্চামী গুলাও সহ্য করতে হবে।”

মৌ বলে,”সব দোষ আয়াত ভাইয়ের আমি কিছু করি না। ”

আয়াত বলে,”ওরে আমার কদুর পাতা রে,, কিচ্ছু জানে না। ”

তারপর অনু মৌয়ের হাত ধরে বাহিরে আসে
সবার থেকে বিদায় নিয়ে অনু বাবার বাড়ি চলে আসে।


এদিকে এতোদির পর বাবার বাড়িতে অনু কে দেখে সবাই তো সেই খুশি আর ইমোশনাল হয়ে যায়।
(গল্প নিয়ে কিছু বলার নেই,,আপনার বলেন)



চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *