আমার ক্রাশ বর !! Part- 16
আরিয়ান রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিবে তখন দেখে দরজার সামনে অনু দাঁড়িয়ে আছে।
আরিয়ান আর কিছু না বলে সোজা বাথরুমে চলে যায়।
অনু বেচারি ভাবছে ফাজিল বর টার আবার কি হলো।
এতো রেগে আছে পারলে আমাকে গিলে খাবে।না এ চুপচাপ থাকলে আমি কথা বলবো কার সাথে।
কথা না বলে তো আমি বেশী সময় থাকতেও পারবো না,কি করি এখন।
একটু পর আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে দেখে অনু বিছানারচাদর ধরে টানাটানি করছে।
আরিয়ান বলে,”বিছানার চাদর তোমার কি ক্ষতি করছে যে এভাবে টানাটানি করছো চাদরটার সাথে “?
অনু পিছনে ঘুরে বলে,,”আর বলেন না,,সারাদিন অফিস করে আসছি। এখন ফ্রেশ হয়ে আমি কি পড়বো? তাই ভেবেছি কেঁচি দিয়ে চাদর কেটে শাড়ি বানিয়ে পরবো।বুদ্ধি টা দারুণ না বলুন “?
আরিয়ান বলে,”একদম ফালতু বুদ্ধি, আপনি যে মিস্টার খানের মেয়ে তা ভাবতে সন্দেহ হয়।বড় লোক বাবার মেয়ের মাথায় যে এমন উদ্ভট বুদ্ধি থাকতে পাড়ে ভাবা যায় না”।
অনু :দেখুন বড় লোক বাবার মেয়ে বলে যে গর্ব বা অহংকার করতে হবে এমন কথা কোথাও বলা আছে বলেন?
আরিয়ান বলে,”আপনার সাথে ঝগড়া বা তর্ক করার মতো ইচ্ছা বা শক্তি কোনো টাই এখন নাই”।
অনু :আচ্ছা ঠিক অাছে এখন আমি কি করবো তাহলে?
আরিয়ান বলে,,”ভুলে যাবেন না আপনি এখন আরিয়ান চৌধুরীর বউ।আরিয়ান চৌধুরী এতোটা গরীব না যে তার বউ কে বিছানারচাদর পড়তে হবে”।
অনু বলে,”তাহলে আপনার ড্রেস পড়বো বুঝি”?
অারিয়ান কিছু না বলে একটু বাহিরে যায়।পাঁচ মিনিট পর হাতে একগাদা ব্যাগ এনে অনুর সামনে রেখে বলে,”এখানে যা আছে তা তে মনে হয় আপনার হয়ে যাবে আশা করি।আরো কিছু লাগলে বলবেন “।
অনুর সামনে মনে হয় একটা ড্রেসের পাহাড় বানিয়ে দিয়েছে। একবার আরিয়ান কে দেখে একবার ড্রেস গুলা দেখছে।
আরিয়ান বলে,”এভাবে না দেখে যা ইচ্ছা পড়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসেন।সবাই নিচে অপেক্ষা করছে। বলে সে নিচে চলে আসে”।
অনু ড্রেস গুলার মাঝে খুজে একটা সুতি থ্রী পিস পাই।তা নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে।
এখানে এসে দেখে ড্রয়িংরুম তো পুরা বাড়ির মানুষে ভরা।
আমার আর এখানে কোনো কাজ নাই।
সবার মাঝে আমি কি করবো।
তাই বলে অনু আবার চলে যেতে সিঁড়িতে পা বাড়ায়।
ঠিক সে সময় আয়াত অনুর সামনে এসে দাড়ায়।
আয়াত :আরে ভাবী আপনি আবার কোথায় যাচ্ছেন,চলেন আমাদের সাথে বসে আড্ডা দিবেন।
অনু :না,মানে,আপনাদের পরিবারে আমার কি কাজ।আপনার গল্প করেন না।আমি বরং নিজের রুমে যায়।
আয়াত :আজব তো ভাবি আপনি??
অনু :কেনো আমি আবার কি করেছি যে আজব হয়ে গেছি?
আয়াত :নিজের পরিবার কে বলছেন,অন্যরে পরিবার!
আপনি এ বাড়ির বউ,সে কথা বুঝি ভুলে গেছেন।আর এ বাড়িটা যেমন আমাদের ঠিক তার থেকে বেশি এখন আপনার ।
তাই বলে আয়াত অনুর হাত ধরে ড্রয়িংরুমে এনে আরিয়ানের পাশে বসিয়ে দেয়।
আরিয়ান অনুকে দেখে আর কিছু বলে না,
চুপচাপ সবার কথা শুনছে।
আরিয়ানের বাবা বলে,”তা বউমা কাল তোমার বউ ভাতের অনুষ্ঠান, তা তুমি কি খাবে,তোমার জন্য খারাব মেনুতে কি রাখবো “?
অনু তো খুশি মনে বলে, “আঙ্কলে আমার জন্য শুধু চকলেট রাখলেই হবে”।
বাড়ির সব সদস্যরা হেসে ওঠে অনুর কথা শুনে।
ফুপু আম্মা বলে,”শ্বশুরবাড়ি সবার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় তা বুঝি বাবার বাড়ি থেকে শিখে আসো নাই”?
অনু :কি করবো বলেন ফুপু,”শহরে তো কোনো কোচিং সেন্টার ছিলো না,যেখানে ভর্তি হয়ে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে লেখাপড়া করে শিষ্টাচার শিখে আসবো”।
ফুপু আম্মা :এই মেয়ে আমাকে এভাবে অপমান করছো কেনো।
আরিয়ানের বাবা বলে,”দেখ আপা তুই বা কি? নতুন বউ কে এমন প্রশ্ন কেউ করে? আর বউমা ভুল বা কি বলেছে বল তো দেখি??
ফুপু আম্মা :কোন কথাটা ঠিক বলেছে তোমার বউমা।
আরিয়ানের বাবা :মেয়েটা ভুল কি বলেছে, শ্বশুরবাড়ি আসলে কোনো কিছু না পারলে বাবার বাড়ির কথা কেনো শোনাতে যাস, সে ভুল করলে তাকে বোঝায় বলবি এভাবে হেয় করে বলার কি আছে।
ফুপু : বাহ কি দারুণ!! মেয়েটা আসার পর থেকে সবাই আমাকে কথা শোনাতে শুরু করছিস।
অনু উঠে গিয়ে ফুপু আম্মা কে জড়িয়ে ধরে বলে,”আরে ফুপি এতো টেনশন নিতে নাই,,
মেয়েরা বাবার বাড়ি মেহমান হয়ে থাকে,,
আর মেহমান দের বেশি কথা বলতে নাই।
আর মেহমান প্রতিদিন বাবার বাড়ি থাকলে আদর কমে যায়”।
আয়াত বলে,”বাহ ভাবী তুমি তো সেই রকমে,, একদম look like a বনের বাঘিনী “।
অনু বলে,”ধন্যবাদ দেবর জ্বি “।
আরিয়ান শুধু দেখছে আর ভাবছে কেউ তার চঞ্চলতা দিয়ে কি ভাবে পুরা বাড়ির মানুষ কে নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে।অনুকে আমি যতো দেখছি ততোটা মুগ্ধতা কাজ করছে ওর প্রতি জানিনা এটা হয়তো পবিত্র সম্পর্কের টান।
‘
‘
এরপর সবাই রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে ঘুমাতে চলে যায়।
‘
‘
আরিয়ানের মা বলছে,অনু মেয়েটা হয়তো পারবে আপার অন্যায় থেকে আমাদের আরিয়ান কে বাঁচাতে।
আরিয়ানের জীবনে অনু মনে হয় সুখের সাগর হয়ে এসেছে।
আরিয়ানের বাবা বলে,”আমরা যদি সেদিন প্রতিবাদ করতাম বা ছেলেটাকে সাপোর্ট করতাম তাহলে আজ ওর জীবনটা এমন হতো না।কতো সুন্দর সাজানো গোছানো ফুলের বাগানের মতো থাকতো।
আরিয়ানের মা :থাক সে সব কথা,, এখন এই দোয়া করি,অনু আপার অন্যায় গুলার প্রতিবাদ করুক আর আরিয়ান কে তার ছায়া থেকে দূরে রাখুক।
আরিয়ানের বাবা :হুম,,আমিও তাই চায়।মেয়েটা তার চঞ্চলতা দিয়ে আমার ছেলের জীবনটা সাজিয়ে দিক।
‘
‘
‘
এদিকে আরিয়ান অনুর সাথে কোনো কথা না বলে,বিছানা থেকে সোজা বালিশ নিয়ে,সোফাসেটে শুয়ে পরে।
অনু অনেক চেষ্টা করে আরিয়ানের সাথে কথা বলতে কিন্তু পারে না।
কিছু আর না করতে পারাতে অনুও ঘুমিয়ে যায়।
‘
‘
সকালে,,,,,
সকাল থেকে বাড়িতে মেহমান আর আত্মীয়স্বজনে বাড়ি টা ভরতে শুরু করেছে।
সকালে অনু আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে আছে।
সে সময় অনুকে সাজাতে পার্লার থেকে লোকজন চলে আছে।
তখন ফুপি আম্মা এসে একজোড়া লাল শাড়ি দিয়ে যায়।বলে আজ অনুষ্ঠানে এই টা পরবে।সাথে মেচিং সব জুয়েলারি।
ফুপু চলে যাবার পর অনু বলে,,আমি এতো পাতলা শাড়ি পরতে পারবো না,অন্য কিছু থাকলে দিন না হলে থাক।
আরিয়ান ও শাড়ী টা দেখে পছন্দ হয় না কারণ সত্যি শাড়ী টা খুবই পাতলা।
আরিয়ান এবার আলমারি খুলো একটা সবুজ রংয়ের লেহেঙ্গা দেয় যার উপর গোল্ডেন কালার সুতি কাজ করা আছে।
অনুর লেহেঙ্গা টা দেখে খুব ভাল লাগে।খুশির ঠেলাতে সে আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলে,,”এতো সুন্দর লেহেঙ্গা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, তাই বলে আরিয়ান কে একটা উম্মাহ দিয়ে দেয়”।
আরিয়ান হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,মেয়েটা খুশির ঠেলাতে চুমা দিয়ে দিছে তাও বুঝতে পারলো না।
আরিয়ানের মাঝে কিন্তু চুম্মার জন্য একটা অন্য রকম ফিলিং কাজ করছে।
তারপর আরিয়ান দ্রুত রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। আর এদিকে অনু সাজুগুজু করতে থাকে।
আরিয়ান নিচে সবার সাথে কথা বলছে।অনুর বাবা আর ভাই ও আসছে তাদের সাথে কথা বলছিল।
সে সময় হঠাৎ করে সিঁড়িতে চোখ যায় আরিয়ানের।
সিঁড়ি দিয়ে অনু নেমে আসছে,,
অনুকে দেখে অারিয়ানের চোখ আটকে গেছে।
কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।
সবুজ রংটা যেনো ওর জন্য।সবকিছু মেচিং করে পড়া।
অনুকে দেখে আরিয়ানের মনে হচ্ছে সবাই কে তারিয়ে দিয়ে শুধু সে একা দেখবে।
আয়াত এসে আরিয়ান কে ধাক্কা দিয়ে বলে,”ভাই বৌ টা তোমারি,, এভাবে দেখার কি আছে,,নতুন বউ তা আমরা বুঝি, কিন্তু বর এইভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে আত্মীয় স্বজন কি বলবে।
আরিয়ান বলে,”আমি তো শুধু অনুকে সিঁড়ি দিয়ে নামা দেখছি”।
অায়াত :শুধু দেখলে হবে,,যাও ভাবীর হাত ধরো স্টেজে নিয়ে আসো বল,ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দেয়।
আরিয়ান গিয়ে অনুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়,অনু হাসি মুখে আরিয়ানের হাত ধরে চলে আসে।
অনু নিচে এসে আরিয়ানের কানের কাছে এসে বলে,”ধন্যবাদ আমাকে এভাবে নামতে সাহায্য করার জন্য,আর ধন্যবাদ আমাকে এতো সুন্দর ড্রেস গিফট করার জন্য”।
সব মেয়েরা অনুকে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দেয়।
আরিয়ান ভাবছে, অনু আমাকে এতো ধন্যবাদ দিছে,,আমার তো নিষেধ করা দরকার ছিলো কিন্তু ওকে সামনে দেখে কেনো জানি মুখ দিয়ে কথা বাহির হচ্ছিল না।কি যে হচ্ছে আমার সাথে বুঝতেছি নাহ।
অনু আবির কে দেখে জড়িয়ে ধরে বলে,”ভাইয়া কাল ওভাবে রাগ করে তোমার সাথে কথা বলার জন্য মাফ করে দাও”!!
আবির :ধুর বোকা মেয়ে তোর কথায় আমারা কেউ রাগ করি নাই। তোর রিয়েক্ট করাটা স্বাভাবিক ছিলো।
অনুর বাবা বলে,”দু ভাই বোন আমাকে ভুলে গেছে “!
অনু আবির তাদের বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
অনু কান্না করে আবির বলে,”আরে এতো টাকার মেকআপ কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে,প্লিজ টাকা গুলা নষ্ট করিস না “।।
অনু বলে,”ভাইয়া তুমি কোনোদিন ভাল হবে না,
তারপর আবির কে মারতে থাকে”।
তারপর সবাই এসে অনু আরিয়ানের সাথে অনেক ছবি তুলছে,,আরিয়ান আর অনুর ও অনেক কাঁপল ছবি তোলা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে অনুর বাবা অনু আর আরিয়ান কে তাদের সাথে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু ফুপু সোজা বলে এখন অনু আরিয়ান যেতে পারবে না।
পরে ওদের সময় সুযোগ হলে তখন যাবে।
অনুর কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগে এমন কি আরিয়ান ও কিছু বলে নাই।তারপর নিজের কষ্ট আড়াল করে।
অনু তার বাবা আর ভাইকে বলে,,”আজ তোমার জামাই গেলেও আমি যাবো না,,রাগ করে আছি,,আগে কিছুদিন আমার রাগ ভাঙ্গাবে তারপর যাবো বাড়িতে।হুম””
আবির :আচ্ছা ঠিক আছে আমার অনু মনু।
অনু :ভাইয়া এখন বিয়ে হয়ে গেছে প্লিজ আর অনু মনু বলিও না।
আবির :তুই বুড়ি হয়ে গেলেও আমি তোকে অনু মনু বলে ডাকবো।
তারপর বাবা আর আবির অনুর থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।
অনু ফুপুর কানের কাছে গিয়ে বলে,”আমাকে এখানে রেখে ভাল করেন নাই,,তার ফল সবাইকে ভোগ করতে হবে”।
আয়াত এসে বলে,”ভাবী তোমাকে কিন্তু আজ সত্যি সেই সুন্দরি লাগছে”।
অনু, আয়াত কে ধন্যবাদ দিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবে,”শয়তান বর,,একবার ও বলে নায় আমাকে কেমন লাগছে “।
অনুর শাশুড়ি মা বলে,”যাও বউমা তুমি উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো”।
অনু মার কথা মতো উপরে যেতে সিঁড়িতে পা দিতে পিছনে কারো কথা শুনে থেমে যায়…
(আচ্ছা নতুন কেউ আসছে না কি বাড়ির কারো কথা শুনে থেমে গেছে অনু।কি জানি আবার কি উল্টা পাল্টা হবে।গল্পটা কেমন লাগছে সবার জানাবেন প্লিজ) (প্লিজ আজ গল্পের মাঝে ভুল এুটি থাকলে কষ্ট করে পরবেন একটু😢😢)
‘
‘
‘
চলবে…