আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 15

অনু নিজরের শাড়ীর আঁচল কোমরে পেঁচিয়ে গুঁজে নেয়।

আরিয়ান নিজের চেয়ারে বসা ছিল।অনুর এভাবে শাড়ী কোমরে গুঁজে রাখার কারণ খুঁজে পায় না।

তারপর অনু আরিয়ানের দেখানো চেয়ারে না বসে
টেবিলের উপর যা কিছু ছিল সব কিছু ফেলে দেয়।

আরিয়ান চেয়ার থেকে উঠে এসে অনুর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”What the hell? এসবের মানে কি অনু”?

অনু :মানেটা খুব সোজা,এখানে আমি কোন অধিকারে থাকবো বউ না কি পিএ?

আরিয়ান একটা শয়তানি হাসি দিয়ে অনুর কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,”বউ তো তুমি আমার,অন্য কারো না,বিয়ে তো একবার করে বারবার করে না “।

অনু বলে,”আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরার মানে কি”?

আরিয়ান বলে,”আমি তো আমার বউ কে জড়িয়ে ধরে আছি কোনো পিএ কে নাহ,বুঝছেন ম্যাডাম”।

অনু এবার আরিয়ানের পায়ের উপর পা দিয়ে জোড়ে করে ব্যাথা দেয়।তাতে অারিয়ান ব্যাথা পেয়ে অনুকে সাথে সাথে ছেড়ে দেয়।

অনু নিজকে আরিয়ানের থেকে দূরে এনে বলে,”ওরে আমার বর সাজতে আসছে,একটু আগে এক ঘর লোকের সামনে অপমান করার সময় মনে ছিলো না”।

অারিয়ান অবাক চোখে অনু কে দেখছে।

অনু এসে আরিয়ানের কোর্টের কলার ধরে বলে, “কাল জোর করে বিয়ে করে”।
আজ বলে,” কেনো
এতো সেজেগুজে কেনো আসছি”।
নিজের বিয়ে করার সময় মনে ছিলো না??
আরে ভাই বিয়ে যখন করবি তখন আবার সেই বউকে কেউ পরের দিন সকালে অফিসে আনে? তা আমার জানা ছিল না।
ওরে আমার পোড়া কপাল রে।
কি কপাল রে আমার।
না পেলাম রাজ কে না পেলাম বর কে।
হুহ বলে সে তার নিজের ডেস্কে চলে যায়।

এদিকে আরিয়ান নিজের এলোমেলো কেবিন দেখে হাসছে,,
অনুর পাগলামি গুলা বেশ ভালই লাগে।
কেমন বাচ্চাদের মতো করে নালিশ করে চলে গেলো ভাবা যায়।
অনুকে যে জড়িয়ে ধরেছে সেদিকে তার খেয়াল ছিলোনা না।
যদি ভাল করে খেয়াল রাখতো তাহলে এখানে আরো কতো কাহিনী হয়ে যেতো।

আরিয়ান অফিসের পিওন কে ডাক দেয়।তার কেবিন ঠিক ঠাক করে দিতে।

পিওন এসে বলে,”স্যার একটু আগেও তো সব ঠিকঠাক ছিলো একটু ভয়ে ভয়ে বলে “।

আরিয়ান বলে,”চাচা আর বলেন না ঘূর্ণিঝড় আসছিল,সে সব এলোমেলো করে দিয়েছে তাতে সমস্যা নাই”।

পিওন আরিয়ানের কথার আগা মাথা কিছুই বোঝে না।
সে কেবিন ঠিকঠাক করে দিয়ে চলে যায়।

সারাদিন অনু আর আরিয়ানের সামনে যায় না।
যা কাজ করার করে তাড়াতাড়ি অফিস শেষ করে নিজের বাড়িতে চলে যায়।

আরিয়ান এদিকে অফিস শেষে আর অনুকে খুজে পায় না।গেলো কোথায় মেয়েটা?



অনু বাবার বাড়িতে এসে চিৎকার করা শুরু করে।

অনুর বাড়ির সবাই নির্বাক দর্শকের মতো সব দেখছে আর শুনছে।

অনু বলে,”বাবা তোমার কিসের অভাব ছিল যে তার জন্য তাদের এক কথায় আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলে “।

আবির উঠে বলে,”কোনো তুই ঐ বাড়িতে ভাল নেই,কেউ কি তোকে কিছু বলেছে”?

অনু :নাহ কেউ কিছু বলে নাই।
কিন্তু একজনের বিয়ে ভেঙ্গে তার বরের সাথে আমার বিয়ে দেওয়া টা কি ঠিক হয়েছে তোমাদের?

সবাই চুপ হয়ে আছে কেউ কোনো কথা বলে না।

অনু বলে,”তার মানে কি আমি তোমাদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে গেছিলাম?
যে যার তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা শান্তিতে আছো।
এতো সমস্যা ছিলো আগে বলতে পারতে।তোমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতাম।
তাও এমন বিয়ে তো করতে হতো না।
আসলে তোমরা আমাকে কোনোদিন ভালবাসো নাই।যদি ভালবাসা এক বিন্দু থাকতো তাহলে এভাবে বিয়ে দিতে পারতে না।

আবির বলে,”অনেক বলেছিস আর না,,আমরা তোকে নিজের ইচ্ছায় এভাবে বিয়ে দিয়ে দেইনি। বাধ্য হয়ে তোর বিয়ে এভাবে দিয়েছি।

অনু :কেনো কিসের এতো সমস্যা ছিলো যে আমাকে বাধ্য হয়ে এভাবে বিয়ে দিতে হলো তোমাদের?

আবির :তুই জানিস কিছুদিন আগে আমাদের কোম্পানি একটা ডিল করেছে সেটা আর কোনো কোম্পানির সাথে না।
চৌধুরী গ্রুপের সাথে।
আর সেই ডিল যদি বাতিল হয়ে যায় তাহলে আমাদের কিছু না হলেও,
কোম্পানির হাজার হাজার কর্মচারীদের কে না খেয়ে থাকতে হতো।
তাদের সবার জন্য তোকে তাদের বাড়ির বউ করে পাঠিয়ে দিয়েছি।

অনু :বাহ কি ভালো,সবার চিন্তা করে আমাকে কুরবানি দিয়ে দিলে।।
থাক আজকের পর আর তোমরা আমার সাথে যোগাযোগ করবা না।
তোমরা তোমাদের কোম্পানি বাড়ি,
শ্রমিক দের নিয়ে ভাল থাকো।
তাই বলে অনু হনহন করে বাড়ির বাহিরে চলে যায়।



অনু রাস্তা দিয়ে হাটছে আর ভাবছে,,””ঠিক দশ বছর আগেও আমার জীবনটা এভাবে বদলে যায়।
সেদিন ও তাদের সাথে রাগারাগি করে খালামণির সাথে চলে যাই তার বাড়িতে।
কারণ বাবা মার আমার জন্য সময় হয় না।
তারা সব সময় ব্যস্ত।
কেনো আমি কি একটু তাদের সাথে সময় কাটাতে পারি না।
এসব ভেবে রেগে চলে আসি কিছুদিনের জন্য”।



খালামণির বাড়ি টা পাহাড়ি অঞ্চলে।
সেখানে যাবার পর আমি একদম চুপচাপ হয়ে যাই।
হঠাৎ একদিন কি মনে করে একা সেই ছোট অনু পাহাড় দেখতে বেড়িয়ে পড়ি।
পাহাড়ে ঘুরাঘুরি করার সময় সেখানে দেখি একদল ছেলেরা মজা করে।
তাদের দেখে কৌতূহল বশত তাদের থেকে একটু দূরে আড়ালে দাড়িয়ে দেখতে থাকি।
ওদের মধ্যে একটা ছেলে দেখি কোথায় থেকে একগাদা ফুল নিয়ে আসে।
উফ ছেলেটা দেখতে যা কিউট বলার মতো না।ওখানে সবাই সুন্দর কিন্তু ঐ ছেলেটা স্পেশাল।
সে গিটার নিয়ে গান গাইতে শুরু করে।
তারপর সবার সাথে কতো ফাইজলামি যে করে।তার করা প্রতিটা কাজ আমার ছোট মনে দাগ কেটে যায়।
আমি প্রতিদিন একা বিকালে সেই সময় ওখানে ঘুরতে যেতাম।
ঘুরতে তে নয় আমার ক্রাশ কে দেখতে যাই।
একদিন আর লুকিয়ে থাকি না।
তার নাম জানতে সামনে যাবো তখন একটা ভাইয়ার সাথে দেখা তাকে বলি,,
আচ্ছা ভাইয়া ঐ যে গিটার হাতে যে সিল্কি চুল অনেক সুন্দর গান করে তার নাম কি?
ছেলেটা একটু ওদিকে তাকিয়ে বলে,,
গিটার হাতে যে আছে তার নাম রাজ বলে সে চলে যায়।
বাড়িতে এসে খালাতো বোন রিদি কে বলি আচ্ছা আপু যদি কাউকে খুব বেশী ভাল লাগে, তাকে ছাড়া আর কাউকে যদি ভাল না লাগে তাহলে সেই ভালোলাগা কে কি বলে??

রিদি আপু :আরে পিচ্ছ অনু আমাদের যাকে প্রথম দেখাই ভাল লাগে তাকে ক্রাশ খাওয়া বলে।এমন ক্রাশ মানুষ হাজার জনের উপর খায়।
তাতে কি।তোমার এই ছোট মাথায় এই কথা কে ঢুকিয়ে দিয়েছে??

অনু :আপুনি কেউ না।কিন্তু ক্রাশ কে সবাই কি করে?

রিদি আপু : যাকে তুমি এই জনমে ভালবাসবে বা সংসার জীবনে পাবে না।
কিন্তু তাকে নিয়ে তুমি কল্পনা করবে।
তার মতো কাউকে বা তাকে পাওয়ার আশা করবে।
মোট কথায় যাকে প্রথম দেখায় ভালো লাগে,
কিন্তু তাকে পেতে হবে এমন না,
আমার বর টা ক্রাশের মতো হবে এটাই চাওয়া।আবার ক্রাশটা যদি বর হয় তাহলে তো কথায় নেই সোনায় সেহাগা।
প্রথম দেখায় ভালোলাগা কে ক্রাশ বলে।
আর নিজের ক্রাশ কে সবাই ভালবাসে।
তাদের কে নিজের জীবনসঙ্গী হিসাবে পেতে চায়।আর নয়তো সবাই চায় ক্রাশের মতো বর পেতে।
উঁহুম, আমার ক্রাশ টা যে কবে আমার বর হবে সেই আশায় আছি রে, অনু।

আমার সে-ই ছোট মনে,, সেদিন রিদি আপুর কথা গুলা একদম গেঁথে যায়।
সেদিন বিয়ে কি ক্রাশ কি বুঝি বা না বুঝি তাও রাজকে আমার চাই সেদিন এটা ঠিক বুঝে গেছি।
রাজ কে জানিনা চিনিনা কিন্তু তাকে আমার চায়।

এরপর আবার অনু সেই পাহাড়ে যায়।

রাজ সেদিন সবাইকে বলছিল,”আমার এমন মেয়ে পছন্দ যে মেয়ে গরিব কি বড়লোক তাকে দেখে বোঝা যাবে না।
সে থাকবে একদম সাধারণ মেয়ের মতো।
সে সব সময় চঞ্চল স্বভাবের হবে।
অন্যায়ের প্রতিবাদ সব সময় করবে।
তার জন্য তাকে সবাই যদি ভুল ও বুঝে সে কেয়ার করবে না।
সত্যির সাথে সব সময় থাকবে তাকে তো আমার চায়।

অনু সেদিন রাজের সে কথা গুলা মাথায় আর মনে সুই সুতা দিয়ে সেলাই করে নেয়।

অনু মনে মনে বলে,”আমিও আমার রাজের মনের মতো হবো “।

এভাবে অনুর বেশ কিছুদিন ভালই যাচ্ছিল হঠাৎ করে একদিন বিকালে পাহাড় থেকে এসে দেখে ওর বাবা মা নিতে চলে আসছে।
সকালে নিয়ে চলে যাবে।
তার খালার বাড়ি ঘুরাঘুরির দিন শেষ।
সেদিন সারারাত অনু ঘুমাতে পারে না।
আজকের পর আর কি সত্যি তাকে দেখতে পারবোনা?
তার গান,মিষ্টি কথা গুলা কি শুনতে পারবো না?

সব কিছুর অবসান হয়ে যায়।সকালে বাবা মার সাথে অনু ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
তারপর থেকে ঢাকা এসে অনু নিজেকে একদম বদলে ফেলে।
নতুন অনু হয়ে যায়।
বছর মাস দিন বদলে যেতে থাকে।
তার সাথে অনুর মনে রাজ নামটা যেনো খুব বেশী গেঁথে যাই।
অনু রাজ কে ছাড়া কোনোদিন কোনো ছেলেকে কল্পনা করে নাই।
হয়তো ছোট অবুঝ মনের একতরফা ভালবাসা। কিন্তু যে আছি কি না তাকে পাবার আশায়
মিথ্যে স্বপ্ন দেখা কি ঠিক।
অনু আজ এ প্রশ্নের উওর খুজে।
এরপরে ও কতো বার সে পাহাড়ে গেছে কিন্তু রাজকে কখনো পায়নি।
না তার কোনো খোঁজ পেয়েছে।
তবুও তার রাজ কে চায়।
অনু এসব ভাবতে ভাবেতে রাস্তার মাঝে চলে আসে।
সামনে একটা দ্রুত গতিতে গাড়ী আসছে।
সেই গাড়ীর হেড লাইটের আলো চোখে লাগতেই অনু দুচোখ ঢেকে নেয়।
আজ বুঝি আমি পটল তুলবো।

কিন্তু নাহ,,অনু গাড়ীর সাথে ধাক্কা খাওয়ার আগে আরিয়ান এসে অনুর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে চলে আসে।

আজ অনু মৃত্যুকে এতোটা কাছে থেকে দেখে ভয়ে সামনের মানুষ কে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে।

আরিয়ান ও কেনো জানি অনুকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

অনু নিজেকে শান্ত করে সামনের মানুষ কে ধন্যবাদ দিতে একটু শরে এসে দেখে তাহার বর।

আরিয়ান খুব রেগে আছে।কিছু না বলে অনুর হাত ধরে সোজা গাড়িতে এনে বসিয়ে বলে,”একদম চুপ কোনো কথা বলবে না,
যদি বলছো তোমাকে একদম খুন করে ফেলবো আর লাশ টা গুম করে দিবো কেউ কোনোদিন খুঁজে পাবে না।

অনু চুপচাপ আরিয়ানের কথা শুনছে,কারণ আরিয়ান খুব রেগে আছে।
ওকে দেখে অনুর খুব ভয় করছে।
আরিয়ানের চোখ দুটা পুরা লাল হয়ে আছে।
ফর্শা চেহারা পুরা টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে।
তাই অনু চুপচাপ আরিয়ানের কথা শুনছে।
না হলে কি অনু চুপ থাকার মেয়ে।
আরিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়িতে চলে আসে।পুরা রাস্তায় তাদের মাঝে নিরবতা ছিলো কেউ কোনো কথা বলে নাই।
গাড়ি থেকে নেমে সোজা আরিয়ান নিজের রুমে চলে যায়।
অনুও চুপচাপ আরিয়ানের পিছনে যেতে থাকে।

(আজ অনুর দিক থেকে রাজ কে তা ক্লিয়ার করে দিয়েছি। এখন বাকিটা গল্পের উপর নির্ভর করবে)



চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *