আমার ক্রাশ বর !! Part- 14
অনু সকালে ঘুম থেকে উঠে আরিয়ান কে জালাতন করতে শুরু করে।
আরিয়ান মনের সুখে ঘুমিয়েছিল, তখন অনু উঠে গিয়ে আরিয়ান কে জোড়ে জোড়ে ডাকতে থাকে।
আরিয়ান আড়মোড়া ভেঙ্গে বলে,”কি হয়েছে এতো সকালে এভাবে ডিস্টার্ব করার কি আছে বুঝি না তো “।
অনু বলে,”আজব কাল জোড় করে বিয়ে করে সকালে বউয়ের কথা ভুলে গেলেন মশাই “!
আরিয়ান এবার উঠে বসে বলে,”বলো তোমার কি দরকার “?
অনু : সেই কাল থেকে এই এক ড্রেস পড়ে বসে আছি,,আর কতো সময় এক ড্রেসে থাকবো?অাপনার বাড়িতে তো আমার কোনো ড্রেস নাই যে তা পড়বো।
আরিয়ান কিছু না বলে,”আলমারি খুলে একটা প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে ঐ যে বাথরুম এখন আসতে পারেন “।
অনু বলে,”এমন ভাবে বলছেন যেনো পারলে বাড়ি থেকে বাহির করে দিবেন “।
আরিয়ান বলে,”ইচ্ছা থাকলেও আমার তা করার উপায় নাই “।
অনু আর কথা না বাড়িয়ে প্যাকেট হাতে সোজা বাথরুমে চলে যায়।
গোসল করে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করার সময় দেখে প্যাকেটের মাঝে একটা শাড়ী তাও আবার গোলাপি রং এর।
অনু বলে,,”বেডা ফাজিল কি ভাবছে,
আমি শাড়ী পরতে পাড়বোনা,,
তা কাছে গিয়ে শাড়ি পড়বো আর সে আমাকে টাস্ করতে পারবে, তার সে চিন্তা ভাবনা তে আমি পানি ঢেলে দিবো।
কারণ এখন মোবাইল থাকতে অন্য কারো সাহায্য লাগে না।
অনু রুমে এসে মোবাইলে ইউটিউবে শাড়ি পড়ে দেখে কোনো রকম শাড়ি পরে রেডি হয়ে রুম থেকে বাহিরে চলে যায়।
আরিয়ান উঠে এবার ফ্রেশ হতে বাথরুমে যায়।
‘
‘
‘
অনু নিচে নেমে আসে এসে দেখে বাড়ির সব মহিলারা সকালের নাস্তা রেডি করতে ব্যস্ত।
অনু কে নিচে দেখে আরিয়ানের মা তাড়াতাড়ি অনুকে তাদের কাছে ডেকে আনে।
আরিয়ানের মা বলে,,”ও বউমা তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? আমাদের সাথে এখানে এসে বসো “।
অনু : আন্টি আমি কি আপনাদের সাহায্য করতে পারি?
আরিয়ানের মা :নতুন মানুষ তুমি,তোমাকে কিছু করতে হবে না,,আমরা করবো তুমি শুধু দেখবা।
ফুপু আম্মা :ও মেয়ে কি কোনো কাজ পারে না কি যে করবে?? খালি তো পাড়ে অন্যের সাথে পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া করতে।
অনু তখন মিষ্টি হাসি দিয়ে ফুপুর কাছে গিয়ে বলে,”জানেন ফুপু আমি না খুব ভাল করলার জুস বানাতে পারি “।
ফুপু আম্মা :করলার জুস দিয়ে কি হবে শুনি?
অনু :আসলে আমি তো একটা কথা খুব মানি,
“যেমন বিষে বিষক্ষয় হয়,তেমনি যাদের মুখে তিতা কথা তাদের করলার জুস খাওয়ালে মুখ দিয়ে মিষ্টি কথা বাহির হয়”।
অনুর মুখে এমন সুন্দর কথা শুনে আরিয়ানের মা তো সেই খুশি হয়।
যাক মেয়েটা উচিৎ জবাব দিতে জানে।
এ মেয়ে আর যাই হোক খারাপ মনের মেয়ে না।
ফুপু আম্মা :বাড়ির বউ হয়ে আসতে না আসতেই আমার সাথে লাগতে এসো না।
এর ফল খুব খারাপ হবে কিন্তু।
অনু :আমি কি পারি বা না পাড়ি সে সম্পর্কে না জেনে কোনো মন্তব্য করলে আমিও তাকে ছেড়ে কথা বলবো না।
আপনি যেমন ফুপু শাশুড়ি তেমন হয়ে থাকবেন। আমিও নম্র ভদ্র বাড়ির বউ হয়ে থাকবো।
আপনি আমাকে একটু ভালবাসা দিবেন তার বদলে আমি এক বুক ভালবাসা দিবো।
কিন্তু ভেজাল ভালবাসা দিবেন না।
তাহলে আমিও ভেজালে ভরা রিপ্লাই দিবো।
এসব বলে রান্নাঘর থেকে বাহিরে আসার সময় অনু শাড়ীর সাথে পায়ে পেঁচিয়ে শাড়ীটা খুলে যায়।
অনু তাড়াতাড়ি নিজের শাড়ী টা গুছিয়ে ধরে রাখে।
তা দেখে ফুপু আম্মা বলে,”এতো বেশী কাজে পারদর্শী যে নিজের শাড়ী ঠিক রাখতে পারে না,
সে এসেছে আমাকে দিতে বড় বড় লেকচার হুহ “।
অনু শাড়ী হাতে বলে, “দেখুন ফুপু শাশুড়ি এটা শাড়ি নিজের শরীরে সাথে পরার জন্য,,
কোনো দড়ির সাথে গিঁটযুক্ত করা নাই যে খুলে যাবে না।
আর শাড়ি পড়ে এতো চলার অভ্যাস আমার নাই।আপনি মনে হয় বিয়ের আগে থেকে শাড়ি পড়ার প্রশিক্ষন নিয়ে রাখছিলেন?
যে আমার বিয়ে হলে তো শাড়ী পরতেই হবে।
তাই আপনি পারদর্শী ছিলেন আমি না।
আমি শাড়ী পরাতে পারদর্শী নাহ।
বাড়ির সব আত্মীয়-স্বজন অনুর কথা শুনে হা হয়েগেছে।
কি বউরে বাবা এতো কথা এক সাথে শুনিয়ে দিতে পারছে তাও বিয়ের পরের দিন সকালে।
না চিনলো আত্মীয় -স্বজন।
থাক বাবা এ বউ থেকে দূরে থাকা ভাল।
আরিয়ানের মা এসব দেখে পরিস্থিতি ঠিক করতে এসে অনুর হাত ধরে নিচে তাদের রুমে নিয়ে যায়
তার রুমে নিয়ে গিয়ে অনুকে তিনি খুব
সুন্দর করে শাড়ী পড়িয়ে দেয়।
অনু তার শাশুড়ি মা কে ধন্যবাদ দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
আরিয়ানের মা বলে,”পাগলি মেয়ে আমার নিজের মাকে কি এভাবে ধন্যবাদ দিতে আছে? আর কখনো কোনো কাজ না পারলে আমাকে ডাক দিবা,আমি সাহায্য করবো।
অনু বলে,”জ্বি আন্টি অবশ্যই আপনাকে বলবো”।
আরিয়ানের মা :আরে বোকা মেয়ে নিজের মা কে কি কেউ আন্টি বলে,,
আমাকে তুমি আন্টি না মা বলে ডাকবে।
জানো আমার একটা ঠিক তোমার মতো চঞ্চল মেয়ের শখ ছিলো।
কিন্তু আমার তো দুই ছেলে তাই মেয়ের শখ অপূর্ণ ছিলো।তা আজ তোমাকে পেয়ে পুরা হয়েগেছে।
অনু বলে,”যাক কাল বিয়ে করে তো একটা ভাল মা পাইছি,, আমার মা তো খালি বিয়ে বিয়ে করে কান শেষ করে দিতো, আপনি তো আর করবেন না “।
আরিয়ানের মা :মেয়ে এখন আমার ছেলের বউ, আর ছেলের বউকে কি কেউ বিয়ে দেয়।পাগলী মেয়ে আমার।
অনু :আচ্ছা আপনি এতো ভালো,আপনার ঐ ননদ এতো খারাপ কেনো?
অারিয়ানের মা :জানো তো পরিস্থিতি মানুষ কে বদলে দেয়।তার সাথে এমন কিছু হয়েছে যে সে নিজেকে কঠোর করে নিয়েছে।
অনু :আচ্ছা ফুপু কি এখানে থাকে,,শ্বশুরবাড়ি যায় না।
আরিয়ানের মা :হুম যায় তো,,মাঝেমধ্যে।
ওদের বাড়িতে কেউ নেই তো তাই এখানে বেশী থাকে।
অনু :তা মা ফুপুর কয় ছেলে মেয়ে? তারা সবাই কোথায় থাকে।
আরিয়ানের মা বলে,,”আমার মনে হয় এখন আমাদের বাহিরে যাওয়া উচিত,
সবাই নাস্তা করে অফিসে যাবে,আর তোমারো তো রাতে খাওয়া হয়নি, চলো খাবে তুমি।
‘
‘
‘
নাস্তার টেবিলে সবাই বসে আছে। অপেক্ষা শুধু আরিয়ান আর অনুর।
আরিয়ান রেড়ি হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছে আর অনু রুম থেকে এসে দুজন দুজনার সামনাসামনি পড়ে।
অনু হা করে অারিয়ান কে দেখছে! (আল্লাহ গো এ পোলা তো সত্যি সেই রকম সুন্দর।
আমি তো ক্রাশ খাইছি।।
এই তো দেখি আমার ক্রাশ বর মনে হয়।
এতো সুন্দর এই লোকটা আগে তো দেখি নাই।এর যদি প্রেমে পরে যাই তখন আমার রাজের কি হবে।না অনু না,,অারিয়ান কে আর দেখবি না।।তাহলে তোর এতো বছরের ক্রাশ রাজের কি হবে।সেসব ভাবছে অনু।)
(আরিয়ান ও অনুকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,,কারণ অনু গোলাপি শাড়ি পরে আছে।সাথে মেচিং সিম্পুল জুয়েলারি। আর চুল গুলা খোলা।লম্বা চুল হবার কারণ কোমর ছাড়িয়ে গেছে চুল গুলা।এ মেয়ে একদম আমার মনের মতো।কিন্তু আমি ওর মনের মতো না।ওর মনের মাঝে অন্য কেউ আছে।মনে মনে)
তারপর আরিয়ানের মা দুজন কে ডাক দেয় খাবার জন্য তখন ওদের নিজেদের ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসে।
নাস্তার করতে এক সাথে টেবিলে বসে দু জন।
আরিয়ান খাবার শেষে অনুকে বলে,,”তাড়াতাড়ি অফিসে চলে আসবে অনেক কাজ আছে।শুধু আজ বলে তোমার দেড়ি করে যাওয়া টা এক্সেপ্ট করবো।প্রতিদিন না “।
অনু তো অবাক,”আল্লাহ এ পোলা কি বলে নতুন বউ যাবে অফিসে তাও সবার সামনে বলছে “।
অারিয়ানের বাবা :মানছি ও তোর পিএ তার মানে কি এই না যে বিয়ের পরেরদিন সকালে আমাদের বাড়ির বউ অফিসে গিয়ে বসে থাকবে।
আরিয়ান :দেখো বাবা আমার বউ বলে,,
“আজ দেড়ি তে যাবার অনুমিত দিয়েছি।
কাল বউভাতের অনুষ্ঠান আছে।
যদি আজ না যায় অফিসে তাহলে কাল বউভাতের অনুষ্ঠানে বউ অফিসে থাকবে আর আমি বাড়িতে”।
আরিয়ানের বাবা :বেপার টা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না।
আরিয়ান :দেখো বাবা, আমি আমার কাজের সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ করতে পারবো না।
আরিয়ানের বাবা : জানি তো,, তুমি কাজ ছাড়া কোনো কিছু চোখে দেখো না।
আল্লাহ জানে কাজের বাহিরে যে একটা পৃথিবী আছে তা কোনোদিন তুমি জানবে কি না।
আরিয়ান আর কোনো কথা না বলে সোজা অফিসের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
অনু কি করবে বুঝতেছে না।
শুধু সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বেপার টা বোঝার চেষ্টা করছে।
আরিয়ানের বাবা অনুকে বলে,”কি আর করার বউমা তোমার বর যখন বলেগেছে তখন তোমাকে তো অফিসে যেতেই হবে।
আমাদের আর কিছু বলার নাই”।
অনুর তো এবাড়িতে কোনো ড্রেস নেই যে তা পড়ে অফিসে যাবে ।
তাই অনুকে বাধ্য হয়ে বাড়িতে যেভাবে ছিল সেই ভাবে সবার থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
‘
‘
‘
অফিসের সবাই অনুকে এই রুপে দেখে তো হা করে তাকিয়ে আছে।
অনু সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমি মানুষ ভাই ও বোনেরা,
আমাকে এই ভাবে দেখার কোনো কারণ নাই,
নিজেদের নিজস্ব কাজে মন দিন সবাই “।
অনু নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে ভাবছে, “আল্লাহ এমন মানুষ কেমন করে হয়,,
নিজের বিয়ে করা বউ কে অফিসে আসতে বলে তাও বিয়ের পরেরদিন,
বাবাগো বাবা ভাবা যায় না এমন কাহিনী ”
এমন সময় আরিয়ান অনুকে কল করে নিজের কেবিনে আসতে বলে।
অনু আরিয়ানের কেবিনে প্রবেশ করে দেখে অফিসের অনেকে সেখানে উপস্থিত।
অনু আরিয়ান কে বলে,”স্যার আমাকে ডেকেছেন কেনো “?
আরিয়ান :এনাদের সবার আপনাকে নিয়ে সমস্যা আছে,আপনি এতো সেজে-গুঁজে অফিসে আসছেন কেনো?
অনু : কি করবো স্যার শ্বশুর বাড়ি থেকে সোজা অফিসে আসছি তো তাই এভাবে নতুন বউ সেজে আসছি।
আরিয়ান :এটা কি ফাইজলামি করার জায়গা মনে হচ্ছে আপনার??একটু রেগে বলে।
অনু :স্যার কাল বান্ধবীর বিয়ে ছিলো।
আমি বান্ধবীর শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম।সেখানে থেকে সোজা অফিসে আসার জন্য ড্রেস চেঞ্জ করার সময় পাই নি।
কিন্তু অফিসের মানুষের যে সমস্যা হবে তা জানলে চেঞ্জ করে আসতাম।
আরিয়ান সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনাদের সবার উত্তর আশা করি পেয়ে গেছেন,এখন তাহলে সবাই আসতে পারেন”।
সবাই চলে যায়।
অনু যাবে তখন আরিয়ান অনুকে তার কেবিনে থাকতে বলে।
অনু :কি দরকার স্যার বিচার তো করা হয়েগেছে এবার তাহলে আমিও আসি।
আরিয়ান :আপনাকে যেতে না করছি না।
অনু :আমি থাকলে আপনার বিপদ অাছে,,তা ছাড়া আর কিছু নাই।
আরিয়ান :নিজের সামনের চেয়ার দেখিয়ে অনুকে বসতে বলে।
(এদের রোমাঞ্চ এ জীবনে হবে না,,
রাজ মাঝে না থেকেও টপকে পড়বে বার বার,,,,বাকিটা কাল জানবেন😊)
‘
‘
‘
চলবে….