আমার ক্রাশ বর !! Part- 11
অনু, রিমাকে বলে”দোস্ত তোর কয়টা বিয়াই রে,,আমাকে ধারে দুই তিনটা দিলেই চলবে”।
রিমা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।
অনুর কথার কোনো উওর দিচ্ছে না।
অনু হঠাৎ খেয়াল করে যে আসে পাশে অন্য কিছু হচ্ছে।
অনু :রিমা বলতো ঐ সাইডে কি হচ্ছে রে?
রিমা বলে,”আমার বাপের সম্মানের চল্লিশা করছে সবাই “।
অনু বলে,”সত্যি করে বলতো কি হয়েছে,রিমি আপু কি পালিয়ে গেছেন”?
রিমা :আরে আপু যদি পালিয়ে যেতো তাহলে তো ভালো হতো।কিন্তু সে পালিয়ে যায়নি।
অনু :আজব কথা পালিয়ে না গেলে,
সমস্যা কোথায় বলবি কি আমাকে?
রিমা বলে, “আপুর আজ ছেলের ছোট ভাইকে দেখে পছন্দ হয়েছে,এখন সে যদি বিয়ে করে তো ছোট ভাইকে করবে না হলে করবে না”।
অনু বলে,”আমি তো আগে থেকেই জানতাম রিমি আপু নিজের বিয়েতে কোনো না কোনো ভেজাল করবেই”।
রিমা হঠাৎ করে অনুর হাত দুটা ধরে বলে,
“প্লিজ অনু তুই কিছু করে আমাদের সম্মান টা আজ বাঁচিয়ে দে “!
অনু বলে,”আমি কি করবো আজব তো,বিয়েতে ভেজাল তোর বোন করেছে,তোরা ঠেলা বোঝ, আমি তো যাচ্ছি মজা নিতে বাই বাই “।
রিমা বলে,”জানি অনু তুই ওখানে গিয়ে,
এখন কিছু না কিছু তো করবি।
যাতে আমাদের সম্মান নষ্ট না হয়,তোর উপর আমার পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস আছে “।
‘
‘
‘
যেখানে বর পক্ষ আছে,অনু সেখানে চলে আসে।
এসে দেখে এখানে ঝামেলা ভালোমতো শুরু হয়ে গেছে।
ছেলের বাবা :আপনারা আমাদের এভাবে অপমান করার জন্য এখানে ডেকে আনছেন?? আপনার মেয়ে কি শুরু করেছে আমাদের সম্মান নিয়ে?
সম্মান কি হাটে বাজারে কিনতে পাওয়া যায় যে আমরা আবার কিনে আনবো?
রিমার বাবা :দেখুন ভাই সাহেব আমি জানতাম না,আমার মেয়ে বিয়ের দিন এমন ভেজাল করবে।
যদি আগে থেকে জানতাম তাহলে কখনো আপনাদের আমার বাড়িতে এনে এভাবে অপমান করতাম না।
অনুর বাবা :আরিফ সাহেব, দেখুন মেয়ে তো বিয়ের পর এমন কিছু বলে নাই,
ওর মনের কথা বিয়ের আগে বলেছে।
তাহলে এ বিয়েটা না দেওয়াই উত্তম।
আপনারা আমাদের মাফ করে দিন।
ছেলের বাবা :আজ যদি আমরা এখান থেকে অপমানিত হয়ে ফিরে যাই,এর খুব খারাপ প্রভাব পড়বে আপনাদের জীবনে।
অনুর বাবা :মেয়ে যখন ভুল করেছে তখন তো আমাদের তার ফল ভোগ করতেই হবে। এছাড়া আর কিছু করার নাই আমাদের।
অনু ভাবছে,”এখানে তো সত্যি অবস্থা খারাপ আমি কোনো কিছু করেও সব ঠিকঠাক করতে পারবো না “।
অনু একটু পাশে তাকিয়ে দেখে,”অনুর মা, রিমার মা, আর রিমি আপুকে এক মহিলা খুব বাজে ভাবে কথা শোনাচ্ছে। ”
খচ্চর মহিলা :কেমন বেয়াদব মেয়ে জন্ম দিয়েছেন যে মেয়ে পরিবারের মান সম্মানের কথা চিন্তা করে না।
অনুর মা :দেখুন আপা কথার মাঝে একটু ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলুন।
খচ্চর মহিলা :আমাকে আসছেন ভদ্রতা শেখাতে,
নিজের মেয়েকে একটু যদি সঠিক শিক্ষা দিতেন, তাহলে মেয়ে নিজের বিয়ের আসরে বসে,হবু বরের ছোট ভাইকে দেখে বড় ভাইকে রিজেক্ট করে বলতো না আমি ছেলের ছোট ভাইকে বিয়ে করবো।
রিমার মা :দেখুন আপা আমার মেয়ে ছোট মানুষ ভুল করেছে।তার জন্য তো আর আমরা রিমি কে মেরে ফেলতে পারি না।ওর মনে যা আসছে তা সবাই কে জানিয়ে দিয়েছে। হা মেয়েদের মত প্রকাশ করাটা ভুল।তাও এমন পরিস্থিতিতে।
খচ্চর মহিলা :আহারে যে মেয়ের এখন বিয়ে দিলে কয়দিন পর দশ বাচ্চার মা হবে সেই মেয়ে না কি ছোট মানুষ। আপনাদের এসব ফালতু কথা শুনলে গা জ্বলে আমাদের।
রিমি আপু বলে,”দেখুন আন্টি ভুল আমি করেছি যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দিন।আমার পরিবার কে প্লিজ কথা শোনাবেন না “।
খচ্চর মহিলা :এই বেয়াদব মেয়ে,বড়দের কথার মাঝে কথা বলো,কথা বলার শিষ্টাচার বুঝি বাড়ির মানুষ শেখায়নি??
রিমি আপু বলে, “আমার পরিবার কথা বলার শিষ্টাচার শিখিয়েছে,তাই তো আমি আমার মনের কথা বিয়ের আসরে বলতে পারছি।এমন তো করি নাই, যে বড় ভাইকে বিয়ে করে ছোট ভাইয়ের সাথে তো পরকিয়া করছি।
খচ্চর মহিলা যখন রিমি আপুকে থাপ্পড় দিতে যাবে ঠিক সে সময় পেছন থেকে অনু তার হাত ধরে বলে,”ভুল করেও রিমি আপুকে থাপ্পড় দিবেন না,তাহলে এর পরিণাম ভালো হবে না “।
বলে সে তার সামনে আসে।
অনু সামনে এসে দেখে, “এতো সেই দিনের সেই খচ্চর মহিলা যার সাথে সেদিন অফিসে ধাক্কা খেয়েছিলাম”।
ফুপু :অনুকে দেখে বলে,,”ওহ আচ্ছা আমরা তাহলে ভুল বাড়িতে সম্পর্ক করতে আসছি, যে বাড়ির সব মেয়ে বেয়াদপ,কোনো শিষ্টাচার জ্ঞান এ বাড়ির মেয়েদের নাই “?
অনু :দেখুন আন্টি একটা ঘটনার উপর ভিত্তি করে আপনি সবাই কে অপমান করতে পারেন না।
ফুপু :এই বেয়াদব মেয়ে একদম চুপ থাকবে!!
অনু :যখন বড়রা ভুল করে তখন ছোটদের কথা বলতে হয়।কারণ এখানে আপনাদের পরিবারের সম্মানের সাথে আমাদের সম্মান জড়িত । আপনাদের যতোটা অপমান হবে আমাদের ও তোতোটা অপমান হবে।
ফুপু আম্মা :তোমার লেকচার শুনতে চাই না।
অনু :আমি লেকচার দিচ্ছি না,,যা সত্যি তাই আপনাকে বলছি।দেখুন আন্টি এতো ভেজালের কোনো দরকার নাই।আজ কোনো বিয়ে হবে না। সো মাফ চাই।
ফুপু আম্মা :আমাদের ডেকে এনে এভাবে অপমান এর ফল খুব খারাপ হবে কিন্তু। আজ এ বাড়ি থেকে বউ না নিয়ে আমি যাবো না।
অনু :দেখুন আন্টি এটা কোনো সিরিয়াল না,
যে এক বোন বিয়ে করবে না,
তাই তার ছোট বোন কে বিয়ে দিয়ে নিয়ে যাবেন।
এসব ফালতু চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে বর যাএি নিয়ে চলে যান।
ফুপু আম্মা :এই আপনার এই ফালতু মেয়েকে চুপ করতে বলেন।
অনুর মা : এই অনু বড়দের মাঝে কথা বলতে নাই,,তুমি চুপ করো প্লিজ অনু,,সব সময় প্রতিবাদি হতে হয় না
অনু :মা তার মানে এই না কি যে বিয়ের নামে এখানে পুতুল খেলা হবে।আমি আর যাই করি এসব মানতে পারবো না।
ফুপু আম্মা :এই মেয়ে এখানে তোমার সাথে কথা বলতে আসি নাই।তুমি একদম চুপ করো।নাহলে তোমাকে ঘাড় ধরে বাহিরে পাঠিয়ে দিবো।
আবির :আন্টি আপনার এতো সাহস আমার বোন কে ঘাড় ধরে বাহির করে দিবেন।
আমার বোন কোনো রাস্তাঘাটের মেয়ে নয় বুঝছেন।
ফুপু :আপনারা কিন্তু আমাদের অপমান করছেন।আমাদের বাড়িতে সবাই বউ বরণ করার জন্য অপেক্ষা করছে।আমরা এভাবে খালি বউ ছাড়া গেলে আমাদের পরিবারের সম্মান কোথায় যাবে একবার ও ভাবছেন?
অনু একটু মজা করে বলে,”সম্মান আর কোথায় যাবে বানের জলে ভেসে যাবে”।
ফুপু আম্মা এসে অনুকে থাপ্পড় দিতে যায়,
তখন আরিয়ান এসে বলে ফুপু এসব বস্তীর মেয়ের সাথে কথা বলবেন না।এসব বস্তীর মেয়েরা কি বুঝবে মানুষে সম্মানের কথা।
আবির বলে,, “excuse me, mister অনু কোনো বস্তীর মেয়ে নয়।
অারিয়ান :তাই বুঝি তাহলে সে কি কোনো দেশের রাজা মহারাজার মেয়ে??
আবির :আরিয়াত খান অনু,, খান গ্রুপ & কোম্পানির মালিকের মেয়ে।
আমার একমাত্র বোন।
অতিরিক্ত আদরে একটু বিগড়ে গেছে তার মানে এই না যে কেউ ওকে অপমান করতে পারে।
আরিয়ান যেনো আকাশ থেকে পড়ছে,,অনুর দিকে তাকিয়ে দেখে কোনো রাজ কন্যার থেকে কম সুন্দর লাগছে না।(পুরাপুরি পারফেক্ট ভাবে রেডি।বস্তীর মেয়ে যখন না।তখন তো বাড়ির বউ করে নিয়ে যাওয়া যায়।আমাদের তো সম্মান বেঁচে যাবে।মনে মনে)
অনু আরিয়ান কে দেখে ভাবে( আল্লাহ এই নিরামিষ বজ্জাত বেডা না কি রিমি আপুর কপালে ছিল, ভালো হয়েছে বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে।মনে মনে)
অনু আরিয়ান কে একটা চোখ টিপি দেয়।
আরিয়ান একটু বিষম খায়।
আয়াত এসে, আরিয়ানের কানে কানে বলে,”ভাই এ মেয়ে কে তুই চিনিস? ”
আরিয়ান :হুম আমার পিএ।
আয়াত :ভাই মেয়েটা কিন্তু সেই, সুন্দরি ,, এ মেয়ে অামাকে বলছিল,, আমার উপর ক্রাশ খাইছিল।
আরিয়ান :সে দিনের কথা ভুলে যা,,দেখ এখন কি করি।
আরিয়ান :ফুপু এরা তোমাকে অপমান করছে,,আর আমাদের সম্মান নষ্ট করেছে।এবাড়ি থেকে বউ না নিয়ে কি ভাবে যাবো
ফুপু : যে মেয়ের বড় বোন এমন তার ছোট বোন যে ভাল হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নাই।আর এমন কোনো মেয়ে আসে পাশে নাই যে আমাদের বাড়ির বউ হবে।
আরিয়ান বলে,”আছে ফুপু এমন মেয়ে আছে,আর সে আজ আমাদের বাড়ির বউ হয়ে যাবে”।
ফুপু বলে,”কে আরিয়ান “?
আরিয়ান :গিয়ে অনুর হাত ধরে বলে,,ফুপু আম্মা তোমাকে এ মেয়ে অপমান করেছে,,,আর আমাদের বাড়ির সম্মান বাঁচাতে অনু ছাড়া আর কোনো গতিপথ নাই।
ফুপু আম্মা :তাই বলে এই বেয়াদব মেয়ে হবে তোর বউ?
আরিয়ান :তাহলে চলো বউ ছাড়া বাড়ি গিয়ে বেঁচে থাকা বাকী সম্মান ও নষ্ট করি।
তারপর আরিয়ানের ফুপু কিছু একটা ভেবে অনুর বাড়ির সবার সাথে কথা বলতে শুরু করে।।
অনু :এই বজ্জাত বেডা,,আমার হাত ছাড় কইতাছি,,আমি কোনোদিন আপনাকে বিয়ে করবো না।।আজারে আমাকে বিয়ে করে আমার আর আপনার জীবন টা নষ্ট করবেন না।
আরিয়ান :আজ তুমি আমার পরিবারকে অনেক অপমান করেছ। তার ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে।
‘
‘।
সেখানে অনুর বাড়ির সবাই প্রথমে রাজী হয়না,
কারণ এখানে এক জনকে বিয়ে করতে এসে অন্য জনকে বিয়ে বেপারটা কেমন দেখায়।
অনেক কথা বলার পর আরিয়ানের বাবা অনুর বাবাকে অনেক রিকুয়েস্ট করার পর অনুর পরিবার রাজী হয় ওদের বিয়ের জন্য।
আচ্ছা আমাদের সমস্যা নাই,,
আমরা বিয়েতে রাজী,,
কিন্তু অনু তো রাজী হবে না।
রিমা বলে,” অনু কোনোদিন বিয়ের জন্য রাজী হবে না,,আজ জোড় করে ওর বিয়েটা দিয়ে দিন”।
তারপর সবাই এসে জোড় করে অনুর বিয়ে আরিয়ানের সাথে দিয়ে দেয়।
অনেক কষ্ট করতে হয়ছে।
এমনকি তারা শেষে অনুকে ইমোশনাল ভাবে চাপ দিয়ে বিয়েটা দেয়।
অনু আরিয়ানের বিয়েতে দু পরিবারের সবাই খুব খুশী।।
শুধুমাত্র অনু,ফুপু আর আরিয়ান খুশী না।
বিয়ের সব অনুষ্ঠান শেষে সবাই বউ নিয়ে বাড়ি যাবে তার জন্য সব ঠিকঠাক করতে ব্যস্ত।
।
সে সময় অনু বাড়ি থেকে বাহিরে পালিয়ে চলে যায় ।
অনু রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে আর ভাবছে, “জীবনে কারো উপকার করবো না,,উপকার করলে বাঁশ খেতে হয়,,
এখন আমার ক্রাশ বর রাজের কি হবে”।
আল্লাহ গো আমার ক্রাশ বর কি কপালে জুটবে না।
বজ্জাত বস কেমনে আমার বর হয়ে গেলো গো।
(কাল থেকে অনু আরিয়ানের নতুন জীবনের কাহিনী শুরু হবে,,জানি না অনু সেখানে আর কি কি উল্টা পাল্টা কাজ করবে।😐😐)
‘
‘
‘
চলবে…