আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 06

অনু বাড়িতে এসে কোনোরকমে ভেতরে প্রবেশ করে অনেক কষ্টে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

অনুর মা :কি রে তুই হাতমুখ না ধুয়ে, নাস্তা পানি না খেয়ে এভাবে শুয়ে আছিস কেনো??

অনু :সব আমার কর্মের ফল,,,তোমার আবদার না পূরণের যে সংকল্প নিয়েছি তার জন্য
এ ভোগান্তি আমার।

অনুর মা :তোর কি মাথা ঠিক আছে??
এসব কি উল্টা পাল্ট কথা বলিস??

অনু :কিছু না,আমার হাত,পা, মাথা ব্যাথা করছে,,
একটা ব্যাথা কম হবার মেডিসিন দিয়ে যাও তো।

অনুর মা :তুই তো অফিসে কাজ করতে গিয়েছিলি 😒,,
কোনো মাঠে তো হাল চাষ করতে যাসনি তাহলে তোর হাত পা ব্যাথা হলো কীভাবে??

অনু :দেখো এতো কথা বলতেপারবো না,,
মেডিসিন দিলে দাও না দিলে যাও।
আজারে কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করো না তো।

অনুর মা :তোর যে মাঝে মাঝে কি হয় তা একমাত্র আল্লাহ জানে,থাম মেডিসিন দিয়ে যাচ্ছি।

অনুর মা মেডিসিন দিয়ে যায়।
মেডিসিন খেয়ে অনু চুপচাপ শুয়ে থেকে,
মনে মনে আরিয়ান কে মনের সুখে হাজার হাজার গালি দিতে থাকে।
শালার বস তোরে আমি তেলাপোকার জুস বানিয়ে খাওয়াবো কফির মাঝে মিশিয়ে,,,
আর না হয় টিকটিকির সাথে তোর বিয়ে দিবো,,,জঙ্গলি কুত্তা একটা ,,,
আমাকে দিয়ে এতো কাজ করাইছে আমি অসুস্থ হয়ে গেছি।।
আল্লাহ তোর ভালো কোনোদিন করবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায়।

সকালে,,,
সকালে অনু তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়।
নিজে কোন রকমভাবে তৈরি হয়ে,
নিচে এসে হালকা নাস্তা করে।
আজ নাস্তার টেবিলে অনু চুপচাপ ছিলো।তারপর আর কিছু না বলে অফিসে চলে যায়।

অনু অফিসে আরিয়ানের আগে আসে,,
আরিয়ানের কেবিনে ঢুকে টেবিলের সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে,চুপচাপ কেবিনের বাহিরে বসে দারোয়ানের মতো পাহারা দিচ্ছে।
কখন ঐ উগান্ডার বাসিন্দাদের জামাই আসে।

আরিয়ান অফিসে এসে দেখে অনু দারোয়ানের স্থানে বসে আছে চুপচাপ।
কিছু না বলে কেবিনে প্রবেশ করে দেখে সব কিছু পারফেক্ট ভাবে সাজিয়ে রাখা।

অনু :শালার বস কাল তো আমাকে দিয়ে খালি খালি হালের বলদ চরানোর মতো চরাইছে।
আজ খালি কিছু উল্টা পাল্টা করুক এক লাথি দিয়া উগান্ডার সাগরে ফালাই দিমু বজ্জাত বেডা😤😤

আরিয়ান একটু পর অনুকে সাথে করে অফিসের বাহিরে মিটিং এর জন্য যায়।
মিটিং শেষে সেখানে থেকে সবাই লাঞ্চ করতে রেস্টুরেন্টে যায়।
আরিয়ান অনুকে দিয়ে বেয়াড়ার কাজ করায়।

অনু সবাই কে খুশি মনে খাবার সার্ভ করে,,,
সুন্দর মতো সবার দেখা শোনা করে।
সবার খাবার শেষে আরিয়ান উঠে অনুর হাতে এক হাজার টাকার নোট দিয়ে বলে,,,
“এটা রাখো”

অনু টাকা হাতে নিয়ে জিজ্ঞাস করে স্যার কিসের জন্য টাকা দিচ্ছেন আমাকে ??

আরিয়ান :কেনো দিবো জানো না??
ওহ তুমি জানবেন কি করে?
এতো বড় হোটেলে কখনো আসছো?
কখনো যে আসো নাই তা জানি।
তুমি যে সবাই কে খাবার পরিবেশন করছো এটা তার জন্য সবার পক্ষ থেকে
তোমার টিপস্।

অনু :তা আমাকে আপনি বেয়ারার কাজের জন্য টিপস্ দিচ্ছেন?

অনু :আরিয়ান কে বলে wait a minute sir. নিজের ব্যাগ থেকে আরো এক হাজার টাকার নোট বাহির করে সেখানে থাকা সার্ভেন্টের হাতে দিয়ে বলে, এই দু হাজার টাকা আপনার টিপস্।
আমাকে সাহায্য করার জন্য।

আরিয়ান রেগে বলে,,আমাকে অপমান করা হচ্ছে এ ভাবে??

অনু :উঁহু স্যার,,,আগে জানতাম বড়লোকেরা কিপটে হয়,,
এখন দেখছি শুধু কিপটে নয় হার কিপটে হয়।নাহলে এতো কষ্ট করে সার্ভ করলাম তার বিনিময়ে শুধু মাএ এক হাজার টাকার নোট!! সত্যি বড় লোকদের নিয়ত ভালো না 😏😏

আরিয়ান :অনু Are you insult me??
ভুলে যাবে না আমি তোমার বস!
কি করতে পারি তোমার সাথে??

অনু :ছি ছি ছি স্যার আমি আর অপমান
তাও আপনাকে??
এটা করার কোনো অধিকার এই dirty girl এর নাই,,,
I think sir, I have just done my job.so,
I should leave now,bye.See you soon!😉😉
বলে অনু চলে যায়।

তারপর আরিয়ান সবাই কে বিদায় দিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
রাগে অপমানে আরিয়ানের পুরা শরীর জ্বালা করছে।😤😤
কী সাহস ঐ ফাজিল মেয়ের আমাকে অপমান করে।😡
এই আরিয়ান চৌধুরী কে?
এর ফল খুব যে ভালো হবে না ,
তা হয়তো মেয়েটা জানে না।
তারপর আরিয়ান রুমে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে লম্বা একটা শাওয়ার নেয়।

আরিয়ান গোছল কমপ্লিট করে রেডি হয়ে নিচে ড্রয়িংরুমে আসে,, পুরা পরিবারের সাথে বসে আড্ডা দিতে।

তখন ওর ফুপু আম্মা বলে,,আরিয়ান তোমার তো দেশে আসা অনেকদিন হয়ে গেছে??

আরিয়ান :জ্বি ফুপু আম্মা।

ফুপু আম্মা :আমি ভাবছি তুমি এবার সংসারী হও।তোমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করছি।

আরিয়ান :একটু চুপ থেকে বলে,,আচ্ছা আপনি যা ভালো মনে করেন,আমি তাই করবো।
সেখান থেকে উঠে নিজের রুমে চলে আসে।

আরিয়ান নিজের দু’হাত মুঠো করে নিজেকে বলে
কেনো দশ বছর আগে ঐ দূর্ঘটনা ঘটে??
আমার জীবন টা কেনো এইভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে।
কি দোষ ছিলো আমার??
আমি তো আমি নই!!
আমি আমার আগের আমি টাকে যে বড্ড বেশী মিস করি।😖

পেছন থেকে আয়াত এসে আরিয়ানের কাধে হাত রেখে বলে,,ভাইয়া আর কতো এভাবে কষ্ট নিজে পাবি?এবার তো থাম!

আরিয়ান জানি না,,,যতোদিন না আমি মরে যাচ্ছি ততোদিন তো এভাবে থাতে হবে।

আয়াত : ভাইয়া তুই মোটেই মরার কথা বলবি না প্লিজ,, তোকে হারাতে পারবো না,,
আবার এভাবে তিলে তিলে কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না,,

আরিয়ান আয়াত কে জড়িয়ে ধরে বলে,,”একটা ঘটনা আমার আমিটা কে আমার থেকে বহু দূরে নিয়ে গেছে”

আয়াতের অগোচরে আরিয়ানের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।😥
(কীসের এতো কষ্ট আরিয়ানে??
কী আছে ওর অতীতে যা আড়ালে লুকিয়ে আছে??)



এদিকে,,,
অনু বাড়িতে এসে রাগে গজগজ করতে করতে বলে,,আচ্ছা তুমি বলো তো খালা
“বড়লোকেরা এতো খারাপ হয় কেনো”??

রহিমা :আম্মা জান এগুলা কিতা কন আপনে?? আপনেরাও তো বড়লোক আর কতো ভালা মনের মানুষ।

অনু :কিসের ভালা কিসের খারাপ,, যাদের বেশি টাকা থাকে তাদের মনটা তার থেকে বেশী ছোট হয়।

রহিমা :আম্মাজান আপনারে কেউ কিছু কইছে না কি??

অনু :কেউ আমাকে কি না এক হাজার টাকা টিপস্ দেয় ভাবা যায়,,,
শালা দিবি যখন তখন পাঁচ দশ হাজার টাকা তো দিবি😤
না ফকিন্নির মতো এক টাকা দেয়।
ঐ বেডার কপালে জীবনে ভালো বৌ জুটবে না।

রহিমা :ওহ ভাবী জান দেখেন,আম্মাজানের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি আহেন গো ভাবী।

অনু :এই খালা আম্মারে কেন ডাকো,,যাও আমার রুম থেকে চলে যাও,,,
যতোসব কাউরে মনের কথা বলাও দেখি পাপ।
একমাত্র রিমা আছে যার কাছে সব কথা আমি বলতে পারি।😴

সে সময় রেডি হয়ে অনু রিমার বাড়িতে চলে যায়।

রিমা :আরে অনু মনু যে,, তা হঠাৎ এতোদিন পর বুঝি আমার কথা মনে পরেছে?

অনু :সারাবছর মনে পরে কিন্তু সময় কই,
মায়ের বিয়ের চক্কোর থেকে বাঁচতে গিয়ে আরেক চক্কোরে পরেছি রে।

রিমা :হুম তা তো বুঝলাম, তুই ব্যস্ত না হলে আমাকে ভুলবি না কখনো।

অনু :আমি না হয় ব্যস্ত তুই কেনো যোগাযোগ করিস না?

রিমা :আরে কি বলবো,,,রিমি আপুর বিয়ে নিয়ে বাড়িতে কথাবার্তা চলছে তাই ব্যস্ত।

অনু :তোর বোন আর বিয়ে?? যে ড্রেস চেঞ্জ করার মতো বয়ফ্রেন্ড বদলায়,,
সে করবে বিয়ে ভাবা যায়😂😂

রিমা : এই জন্য তো এবার বিয়ে দিয়ে আপুনি কে সংসারী করা হবে। যাতে এ স্বভাব বদলায়।

অনু :কয়লা ধুলে কিন্তু কয়লার ময়লা যায় না,,
তোর বোন ঠিক তেমন।
যার কপালে এ তোর বোন আছে।
সে পোলার কপালে মনে হয় ঠাডা পরা আছে। 😂

রিমা :অনু আপু, মোটেও এতো খারাপ নাহ।😏

অনু :শোন তোকে একটা কথা বলি আজ।যেদিন রিমি আপুর বিয়ে হবে তুই সাবধানে থাকবি বলা যায় না,,তোর বোন বিয়ের দিন পালিয়ে গেলে তোকে ধরে ওর বরের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে রে।

রিমা :হুহ,,কথায় আছে না,,শকুনের দোয়াতে গরু মরে না।
তোর কথা মতো আমার আপু পালাবে না।

অনু :ধুর বাদ দে,,তোর বোনের বিয়ের জন্য আমার আবার ছুটি নিতে হবে ভাবা যায়।(যে খচ্চর বস ছুটি দিবে কি না আল্লাহ মালুম।
মনে মনে)

রিমা : আচ্ছা তোর দিন কাল কেমন যাচ্ছে রে।

অনু :খারাপ রে খুব খারাপ,,,এমন এক বস কপালে জুটছে আমাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে।

রিমা :আহারে আমার মনু পাখি টা,, এর থেকে বিয়ে করে সংসার করলেই ভাল কাজ হতো।

অনু :তুই ও মায়ের সুরে কথা বলছিস।।
ধুর ভাল লাগে না।এই অনেক রাত হয়েছে বাড়ি যাই।অন্য আরেক দিন দেখা করতে আসবো।

রিমা ;আজ এখানে থেকে গেলেই তো পারতি??

অনু :অন্যদিন আসবো আজ তো যেতে হবে।
রিমার থেকে বিদায় নিয়ে,,
ওদের বাড়ির বাহিরে চলে আসে।
অনু ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে দেখে রাত দেড়টা বাজে।
আল্লাহ গো এখন বাড়ি যাবো কেমন করে??
বাড়ির গাড়িতো লগে আনি নাই আম্মা গো😭😭
এখন আমার কি হবে?

(দেখা যাবে কি হয়।আপনাদের কী মনে হয়??
কী হতে পারে অনুর সাথে?)



চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *