আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 48

অনু খুব স্টাইল করে সেজে গুঁজে বাড়ির বাহিরে এসে দেখে আরিয়ান আগে থেকে গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে বসে আছে।
অনু তাই দেখে নিজের দুষ্টু বুদ্ধি কাজে লাগাই!
আরিয়ানের সাথে গাড়ির সামনের সিটে না বসে সোজা গিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে বসে।
আরিয়ান তা দেখে পেছনে ফিরে বলে,”এই যে ম্যাডাম আপনার কি আমাকে দেখে ড্রাইভার মনে হয়? ”
অনু একটু ভাব নিয়ে বলে,”ড্রাইভার এতো স্মার্ট সুন্দর হলে মন্দ হয় না।তার সাথে ভালোই রোমান্স করা যাবে।কিন্তু আফসোস আমি বিবাহিত। ”
আরিয়ান বলে,”দেখো অনু একদম ফাইজালামি করবা না।সোজা ভাবে সামনে এসে আমার পাশের সিটে বসে পড়ো।
আমার কিন্তু অফিসে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”
অনু বলে,”অফিসে কি সুন্দরি কেউ আছে না কি?
যে অফিসে যাবার জন্য এতো তাড়াতাড়ি তোমার? ব্যাপার কি বলবে একটু?”
অারিয়ান বলে,”এই তো মহিলা মানুষদের একটা সমস্যা সোজা ভাবে কথা বুঝতেও চায়না আবার সোজা ভাবে কথা বলতেও চাইনা।”
অনু বলে,”এখানে অনেক মহিলা নেই।
আমি একমাত্র তোমার বউ উপস্থিত আছি।
তাই মহিলা জাতি কে ডেকে না আনলে খুশি হবো।”
অারিয়ান বলে,”মাফ চাইছি ম্যাডাম আমার ভুল হয়েছে।আমাকে মাফ করে দিন।
এবার কষ্ট করে আপনার স্বামীর পাশে এসে বসলে খুশি হই।”
অনু আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে সোজা সামনে এসে আরিয়ানের পাশে বসে বলে,”এই যে বর এই দিকে আসেন আপনার কপালে নোংরা লেগে আছে।”
আরিয়ান গাড়ির ভেতরের কাচে নিজের চেহারা দেখতে যায়।অনু আরিয়ান কে একটা হেঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে এসে বলে,”আমার কথায় তোমার একটু বিশ্বাস হয় না ? এই তোমার ভালবাসার নমুনা? ”

আরিয়ান বলে,”আজব সমস্যা তো তোমার কথা অবিশ্বাস হবার মতো কোনো কিছু তো নেই।
নোংরা লেগে আছে তা পরিষ্কার করতে আয়নার সামনে দেখতে যাচ্ছিলাম।”
অনু বলে,”তোমার পাশে এতো সুন্দর বউ বসে আছে যার দুইটা সুন্দর চোখ আছে।
নোংরা মুছে দেওয়ার জন্য দুইটা হাত আছে।”
আরিয়ান অনুর মুখে হাত দিয়ে চেঁপে ধরে বলে,”থাক বউ তোমাকে আর গরুর মতো বউয়ের রচনা লিখতে হবে না।”
অনু একগাল হেসে আরিয়ান নিজের কাছে টেনে এনে ওর কপালে একটা চুমা দিয়ে বলে, “যাও তোমার কপালে নোংরা পরিষ্কার করা হয়ে গেছে।”
আরিয়ান বলে,,”দিবা তো একটা চুমা তার জন্য এতো কথা ঘুরানোর কি আছে।সোজা চুমা দিলেই পারতে।”
অনু বলে,”আপনাকে তো আর স্বাধে নিরামিষ বলি না।আরে এর মাঝে যে রোমান্টিক ভাব আছে তা আপনার বোঝার কর্ম না।
আমার যা মন চাইবে, যেভাবে ইচ্ছা তাই

করবো তাতে বাধা দিতে আসবে না বলে দিলাম।”
আরিয়ান বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে তোমার যা ইচ্ছা তাই করো! কিন্তু অফিসে গিয়ে কোনো উল্টাপাল্টা কাজ করবে না এই বলে দিলাম নয়তো তোমাকে একদম পাহাড়ের উপর নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো এই বলে দিলাম।”
অনু বলে,”ধাক্কা দিয়ে যেখানে ইচ্ছা হয় পাঠাবে সমস্যা নেই।আমিও আমার সাথে করে তোমাকে নিয়ে যাবো নো চিন্তা ডু ফুর্তি। ”
আরিয়ান হাসতে হাসতে গাড়ি ড্রাইভিং করতে শুরু করে দেয়।
এদিকে অফিসে এসে আরিয়ান অনুকে আগে নামিয়ে দিয়ে পরে গাড়ি পার্কিং করে আসে।
অনেক দিন পর অনুকে সবাই অফিসে দেখে অবাক।
তার থেকে বেশি অবাক অনু নিজে।কারণ তাদের অফিসের সব পুরাতন কর্মচারীগণ কেউ নেই সবাই নতুন এখানে।তাই সবার সাথে অনুর আবার নতুন করে পরিচয় পর্ব শুরু হয়।
সব থেকে বেশি সারপ্রাইজ হয় অনু এখানে নতুন ম্যানেজার আর নতুন পিএ কে দেখে।
ম্যানেজার হচ্ছে রুবির বর আর রুবি অারিয়ানের পিএ।
এতো বছর পর রুবির সাথে দেখা হবে এটা কোনোদিন ও অনু ভাবতে পারে নাই।
অনু রুবি কে দেখে বলে,”তুমি এখানে কি ভাবে আসলে? তোমাকে এখানে ঢুকতে দিয়েছে কে?”
রুবি বলে,”আমি এই অফিসের বসের পিএ।নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেখান থেকে চাকুরী পেয়েছি। তুমি এখানে কি ভাবে আসলে?”
অনু রাগে গজগজ করতে করতে বলে,”তুমি যে বসের আন্ডারে কাজ করো আমি সেই বসের পি এ ছিলাম।”
রুবি বলে,”আহারে বেচারি! সেদিন যে না মরে বেঁচে ছিলে তাই অনেক।তারপর ও যে এতো বড় অফিসে চাকুরী পেয়েছ তোমার মতো মেয়ে এটাই তো অনেক বড় ব্যাপার।

তবে আফসোস এই চাকুরীটা আর রইলো না তোমার।”
অনু রুবির সাথে আর কথা না বাড়িয়ে সোজা আরিয়ানের কেবিনের দিকে যেতে শুরু করে দেয়।
তা দেখে রুবি অনুর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলে,”স্যারের কেবিনে তার বিনা অনুমিত তে প্রবেশ নিষেধ। ”
অনু এক ঝটকানি দিয়ে রুবির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”নিকুচি করি তোমার বসের অনুমতির।তাই বলে রুবিকে ধাক্কা দিয়ে সোজা আরিয়ানের কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করে দরজা ভেতর থেকে লক করে দেয়।”
অনুকে এমন রাগি লুকে দেখে আরিয়ানের বুঝতে বাকী থাকে না অনুর মনের মাঝে এখন হাজার হাজার প্রশ্ন এতো প্রশ্নেন উওর তাকে দিতে হবে।নয়তো এই দজ্জাল বউ আমার জান ত্যানা ত্যানা করে ছাড়বে।
অনু সোজা আরিয়ানের কাছে গিয়ে ওর বুকের মাঝে এলোপাথাড়ি কিল ঘুশি দিতে শুরু করে দেয়।
আরিয়ান অনুর দুই হাত ধরে নিজের বুকের মাঝে অনুকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার মিষ্টি বউটা এতো রেগে আছে কেনো?
তাকে যে রাগ করলে মানাই না সে কি এই কথাটা জানে?
উহুঁ মনে হয় সে এই বিষয়ে কিছুই জানে না।”
অনু হালকা কান্নার সুরে বলে,”এই রুবি এখানে কি ভাবে আসলো? আর আগের সব মানুষ গুলো কোথায় গিয়েছে? ”
আরিয়ান বলে,”তুমি তো অনেকদিন যাবত অফিসে আসো না তাই অনেক খবর জানো না।
আমাদের নতুন আরেকটা অফিস শুরু করা হয়েছে সেই অফিসের দায়িত্বে রাজ আছে।
নতুন আফিস পরিচালনা করতে আমরা পুরাতন কর্মচারীদের পাঠিয়ে দিয়েছি।
ওখানে সবটা রানিং শুরু হয়ে গেলে তারা এখানে ফিরে আসবে।”
অনু বলে,”নতুন দের কাহিনী বুঝলাম কিন্তু এই রুবির কাহিনী বুঝতে পারছি না।”
আরিয়ান বলে,”কিছুদিন আগে আমি অফিসের সবার উপর দায়িত্ব দেই তারা যেনো নতুন ম্যানেজার আর পিএ নেই।
তারা রুবি আর ওর স্বামী কে সিলেক্ট করে।

কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এই বিষয়ে কিছুই জানতাম না।আমি কয়েকদিন আগে জানতে পেরেছি বিষয় টা। তাই তোমাকে জানাতে ভুলে গেছি।প্রচুর কাজের চাপ তার উপর বাড়ির পরিবেশ নিয়ে একটু চিন্তা হয়।
তাই তোমাকে আর টেনশন দিতে চাই নি।”
অনু নাক টেনে বলে,”আমাকে টেনশন দিতে চাও নি? না কি তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ড ফিরে এসেছে তাকে পেয়ে আমাকে ভুলে যাবার প্লানিং এ আছো।”
আরিয়ান বলে,”অনু এই সব কোন ধরণের কথা?রুবি আগের থেকে অনেক বদলে গেছে।
ওর স্বামীর সাথে অনেক সুখে আছে।
আমাকে সেই নজরে দেখে না।

তুমি এবার তোমার চিন্তা ভাবনা গুলো একটু চেঞ্জড করলে ভালো হয়।”
অনু বলে,”দেখো বহু বছর আগে যে মেয়ে আমার সাথে এতো খারাপ কাজ করেছে তাকে তার মুখের কথায় তুমি বিশ্বাস করে নিলে কাজটা কি ঠিক হলো? ”
আরিয়ান বলে “মানুষ মাত্র ভুল করে তাই বলে যে তারা সারাজীবন ভুল করবে এমনটা কিন্তু একদম ঠিক না।তাদের কে তাদের ভুল সংশোধন করে পরিবর্তন হবার চান্স দেওয়া উচিৎ নয়তো তারা নিজেদের ঠিক করার সুযোগ কখনো পাবে না।”
অনু বুঝতে পারছে আরিয়ান কে আর কোনো কথা বলে বোঝানো যাবে না, তাই শুধু একটা কথা বলে,”দেখো শেষ পর্যন্ত তুমি দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষো না।”
আরিয়ান বলে,”আরে না সময়ের সাথে রুবিও বদলে গেছে।ওকে একবার মাফ করে দেখো না।মানুষ কে মাফ করে দেওয়া কিন্তু মহৎ কাজ।”
অনু বলে,”হুম ঠিক আছে।এখন অফিসে আমার কি কাজ জানতে পারি? ”
আরিয়ান বলে,”ম্যানেজার এর কাছে যাও সে তোমাকে তোমার কাজ বুঝিয়ে দিবে।
আর হ্যাঁ একটা কথা তুমি আমার বউ বলে কিন্তু কাজে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা একদম করবে না।এটা বাড়ি না অফিস, এখানে আমাদের কাঁধে হাজার মানুষের দায়িত্ব এটা মাথায় রাখবে সব সময়।”
অনু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে কেবিনের বাহিরে চলে আসে।
আর ভাবতে থাকে,সত্যি কি সময়ের সাথে মানুষ বদলে যায় না কি মুখোশের আড়ালে থেকে যায়
রুবির কাহিনী সময় বলবে যাই হোক এতো অবিশ্বাস নিয়ে এক সাথে কাজ করা যাবে না।তারপর ও রুবিকে আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে পারবো না।
(সবার কাছে থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো)




চলবে…..