The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 114

আশফিনার অপারেশনের সময় ও ঘনিয়ে এসেছে।কাল আশফিনাকে ভর্তি করানো হবে হাসপাতালে।একমাস ঔষধ নেয়ার পর অবস্থার বেশ উন্নতি হয়ে এসেছে।ডাক্তাররা বেশ কিছু চেকআপ করে তার রিপোর্ট অনুযায়ী এসময়টাকে অপারেশনের জন্য উপযুক্ত মনে করেছেন।রামীন সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অানার জন্য।আশফিনা লাঞ্চ রেডি করছে দুজনের জন্য।কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে বুকের ভেতরটায়।কালকের জন্য ভয় হচ্ছে তবে অন্যরকম এক উত্তেজনা কাজ করছে।রামীন ও ঠিক ততোটাই উত্তেজিত তবে ভয়টাই অনেক বেশি কাজ করছে।সব ঠিক হবে তো?আশফিনা সুস্থ হয়ে ফিরবে তো?এমনি বিচিত্র চিন্তা ভাবনা মাথায় খেলে গেলো দুজনের মনে।দুপুর দুটোয় ফিরে আসে রামীন।আশফিনা কাপড় নিচ্ছিলো গোসলের জন্য।রামীন আশফিনাকে এসময়ে গোসলে যেতে দেখে অবাক হয়ে যায়।টেবিলের ওপর সব রেখে রুমে এসে বলল,
”এসময়ে গোসল করছো কেন?”
হাতের কাপড় গুলোকে ঠিক মতো গুছাচ্ছিলো আশফিনা।রামীনকে রুমে আসতে দেখে একটু হাসলো।
”রান্না শেষ করলাম কেবল।”
”ওহ আচ্ছা।তাহলে যাও ফ্রেশ হও একসাথে খাবো। ”
”ঠিক আছে।আপনি ও তো ফ্রেশ হবেন।”
”ঠিক তো। তাহলে চলো দুজনে মিলে ফ্রেশ হয়ে নেই।”
”তাহলে আগে আপনিই ফ্রেশ হয়ে নিন।আমি পরেই যাচ্ছি।”
রামীন দ্রুত পদে স্ত্রীর কাছে হেঁটে এসে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
”যেটা বলেছি সেটাই হবে।আজ দুজনে একসাথে ফ্রেশ হবো।চলো!!!
আশফিনা হাত পা ঝাঁপটাতে থাকে।কিন্তু সেদিকে তোয়াক্কা করেনা রামীন। দুজনে ফ্রেশ হতে চলে যায়।প্রায় একমাস হতে চলল রুহী কথাই বলেনি তেমন।জীবনটা একদমই থমকে গেছে।এক ছাদের নিচে থেকে ও দুজনে আলাদা।না পারছে রুহীকে কাছে টানতে না পারছে দূরে থাকতে।রুহীকে ভেবেই সময় গুলো কেঁটে যায় রোয়েনের।
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় রোয়েনের মেয়ের কান্নায়।চোখ খুলে দেখলো রুহী দ্রিধা কে কোলে নিয়ে বসে আছে।বাবু কেঁদে যাচ্ছে এক নাগাড়ে।রোয়েন উঠে বসে রুহীর দিকে তাকায়।রুহী মেয়েকে বুকে নিয়ে রোয়েনের দিকে তাকিয়ে বলল,
”গিয়ে ফ্রেশ হও।আমি তোমার নাস্তা রেডি করছি।”
রোয়েন চমকে যায়। রুহী হঠাৎ কথা বলছে ওর সাথে।রোয়েন কিছু বলতে পারেনা। ঠিক শুনছে তো ও?রুহী কথা বলল ওর সাথে।রোয়েন কে অবাক করে দিয়ে রুহী আবার ও বলল,
”কি হলো?নাস্তা ঠান্ডা হচ্ছে।তোমার ভাল লাগবে না তো।”
রোয়েন কোন মতে সামলে বলল,
”যাচ্ছি। ও কাঁদছে কেন?”
”জানিনা সকাল থেকেই কাঁদছে।তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।”
রোয়েন চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে যায়।রুহী বাবুকে ঘুম পাড়িয়ে রোয়েনের কাপড় চোপড় বের করে নিচে চলে আসে।নাস্তা রেডি করে নেয় দুজনের। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে মেয়েকে দেখে নেয় রোয়েন।ঘুমিয়ে আছে ছোট্ট হাত পা গুলো ছড়িয়ে।
রোয়েন উপুড় হয়ে মেয়েকে চুমু খায়।তারপর কাপড় পাল্টে নিচে চলে আসে।রুহী নাস্তা নিয়ে বসে আছে।রোয়েন ওর পাশে এসে বসে পড়ে।রুহী রোয়েনের সামনে নাস্তা এগিয়ে দেয়।রোয়েন আচমকা রুহীর হাত নিজের হাতের মুঠে ধরে বলল,
”রুহী তুমি জানো যা হয়েছিলো সেটা ইচ্ছে করে করিনি।আমাকে তুমি জানো বুঝো।”
”,বাদ দাও ওসব কথা।খেয়ে নাও।”
”বাদ দিতে পারছিনা।গত পঁচিশদিন তুমি কথা বলোনি আমার সাথে।বুঝতে পারছো কেমন ছিলাম আমি?কখনো নিজের কথা ঠিক রাখতে পারিনি। শেষবারের মতো মাফ করে দাও।”
”যা হওয়ার হয়ে গেছে।সেটা চলে গেছে।অতীত কে নিয়ে বসে থেকে তো কাজ নেই আমাদের তাইনা?”
”হুম।রুহী!!!”
”বলো।”
”তুমি এখনো রেগে নেই তো?”
রুহী কিছু বলেনি জবাবে।শুধু একটু হেসে খাওয়ায় মন দিলো।রোয়েন কিছু বলেনি আর। খেয়ে উঠে যায় ও।রুহী প্লেট গুলো ঠিক করে রেখে রুমে এসে দেখলো রোয়েন শুয়ে ফোন চালাচ্ছে।রুহী বলল,
”কাজে যাবে না?”
”ইচ্ছে হচ্ছেনা। তোমাদের সাথে থাকতে চাই আজকের পুরো দিনটা।”
”ঠিক আছে।”
রুহী চুপ হয়ে যায়।বাবু এর মাঝে প্রশ্রাব করে দিয়েছে।রুহী ওর প্যান্ট পাল্টে নতুন একটা প্যান্ট পরিয়ে দেয়।প্রশ্রাব করেই কাঁদতে শুরু করেছিলো মেয়েটা।এখন অবশ্য শান্ত হয়েছে।রোয়েন মা মেয়েকে দেখছে। রুহী মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে দুষ্টুমি করছে।রোয়েন হঠাৎ শোয়া থেকে উঠে বসে মেয়েকে রুহীর কোল থেকে সরিয়ে নিয়ে রুহীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়। রুহী অর্থহীন চোখে রোয়েনকে দেখছে।রোয়েন রুহীর মুখের ওপরের চুল গুলো সরিয়ে ওর ওষ্ঠে গাঢ় চুম্বন এঁকে দিতে শুরু করে তবে এবার ও ব্যার্থ কারন রুহীর পক্ষ থেকে কোন প্রকার জবাব পায়নি যেটায় বুঝতে পারবে রুহী সন্তুষ্ট কিনা?রোয়েন কষ্ট পাচ্ছে তবে সেটা প্রকাশ করতে চাইছেনা।রুহীকে ছেড়ে দিয়ে ওকে বুকে শক্ত করে জাপটে ধরে।
সেদিনটা রুহী আর মেয়েকে নিয়ে কাঁটায় রোয়েন আর বুকে তীব্র যন্ত্রনা তো আছে তবে সেটা না প্রকাশ করাই উত্তম।
ফাহমিন আর সামায়রার সময় গুলো বেশ যাচ্ছে।কলেজের পর দেখা করা ঘুরতে যাওয়া,ফুচকা খাওয়া রাস্তার পাশ থেকে।ছোট ছোট উপহার আদান প্রদান আর রাত হলে মিমির পরিবার কে দেখার ছলে সামায়রাকে দেখে নেয়া।
এরই মাঝে আরমান হামিদের কাছে তার এক কলিগ এসে কথা বলতে শুরু করে। প্রস্তাব এনেছে সে বিয়ের প্রস্তাব তার আর্কিটেক্ট পুত্র দিরহানের সাথে সামায়রার।দিরহান দেখতে বেশ।লম্বা এবং প্রচুর ভদ্র।লোকটা এসেই বলল,
”দিরহান ফিরেছে জাপান থেকে।”
আরমান হামিদ একটু হেসে বলেন,
”এখন কি এখানেই থাকবে?”
”নাহ।বিয়ে করবে বলল।বৌকে নিয়ে আবার যাবে ওখানে।”
”ওহ।তা কয়দিনের জন্য এলো?”
”চার মাস।”
”ওহ।মেয়ে ঠিক হয়েছে?”
”নাহ।তবে ও দেশে যেদিন ফিরেছিলো আপনার মেয়েকে দেখেছে।ওর খুব পছন্দ হয়েছে শুনলাম।আমাদের হাতে সময় খুব কম।আপত্তি না থাকলে ইমিডিয়েটলি বিয়েটা করিয়ে দিতে পারি।তাহলে একে অপরকে ভালো মত জানতে ও পারবে আর সামায়রার পাসপোর্ট ঠিক থাকলে ভিসা আর টিকিট ও কাঁটা হয়ে যাবে।”
লোকটা গড়গড় করে সব বলে আরমান হামিদের দিকে তাকায়।আরমান হামিদ বুঝতে পারেননা কি বলবেন?লোকটা আবার বলল,
”দেখুন মেয়েতো বড় হয়েছে।আমার ছেলে পড়াবে ওকে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।এখন কথা হলো আপনার আর আপনার পরিবারের মতামত।”
”দেখুন ভেবে জানাবো।আমার একমাত্র মেয়ে ও। তাই সময় লাগবে আমার।”
”আচ্ছা ঠিক আছে।”
লোকটা আরমান হামিদের সামনের থেকে উঠে বেরিয়ে যায়।আরমান হামিদ চিন্তায় পড়ে যান।কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে ঘরে ফিরে নীরা হামিদের কাছে চলে আসেন খাবার সেড়ে।নীরা হামিদের পাশে শুয়ে স্ত্রীর হাত বুকে টেনে নিয়ে বলেন,
”রহমান সাহেবকে মনে আছে?”
”হুম কেন? ”
”ওনার ছেলে দিরহান ফিরে এসেছে জাপান থেকে।ছেলে আর্কিটেক্ট।”
”ওহ।ভালো তো।”
”দিরহান আমাদের সামায়রা কে কই যেন দেখেছে।এবং সামায়রা কে পছন্দ ও করেছে।বিয়ে করে বাহিরে নিয়ে যাবে।পড়াশুনা ও করাবে।”
”আরমান তুমি জানো মেয়েটা কেমন?তোমার কি মনে হয় ও এত বড় দায়িত্ব নিতে পারবে।তাও আবার একমাত্র ছেলে দিরহান।”
”কাঁধে পড়লে সব পারবে।”
”আমার আপত্তি নেই। পরিবার ভালো ছেলে ভালো সমস্যা কি?”
”তারপর ও সামায়রার সাথে একবার কথা বলা উচিৎ আমাদের।”
”ওকে।তুমি কথা বলো।এখন বিশ্রাম নিতে দাও আমাকে।”
রুহীর চুলে আলতো করে হাত ছোঁয়ায় রোয়েন। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে।মেয়েটাও ঘুমুচ্ছে।জানালার পর্দা ভেদ করে শীতল বাতাস ঘরে প্রবেশ করছে।বুকের ভেতর তীব্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে রোয়েনের।রুহী রোয়েনের দিকে পিঠ দিয়ে চুল আঁচড়ে নিচ্ছে।রোয়েন শুয়ে রুহীর পিঠের ওপরের পড়ে থাকা চুল গুলোয় আলতো করে হাত বোলায়। রুহী কিছু বলছেনা।চুল আঁচড়ানো শেষে সেগুলো খোপায় আটকাতে গেলে রোয়েন থামিয়ে দেয় রুহীকে তারপর ওকে টেনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর গলায় মুখ ডুবাতে নিলে রুহী রোয়েনকে থামিয়ে বলল,
”ঘুম পাচ্ছে। ঘুমুতে চাই আমি।”
রোয়েন থেমে যায়।ব্যাথিত চোখে রুহীর দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে রুহীকে বুকে টেনে শুয়ে পড়ে ও।রুহী আর কিছুই বলেনি।এদিকে পরদিন রামীনের কলে ঘুম ভাঙ্গে রোয়েনের। রামীনদের ওখানে এখন রাত।রোয়েন উঠে দেখলো রুহী ওর দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে আছে।রোয়েন রুহীর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে কল রিসিভ করলো।
”কেমন আছিস রোয়েন?”
”আলহামদুলিল্লাহ। তোরা কেমন আছিস?”
”ভালো।রুহী আর দ্রিধা কেমন আছে?”
”এইতো ভালো।”
”আচ্ছা শোন কাল সকালে আশুর অপারেশন।কাল জানাতে পারতামনা হয়ত তাই আজ কল দিয়ে জানালাম।”
”ওহ।চিন্তা করবিনা একদম।আশফিনার দিকে খেয়াল রাখবি।”
”হুম।দোয়া করিস রোয়েন।যেন একটা ভালো খবর নিয়ে ফিরতে পারি।”
”এটা আবার বলতে হয়?আচ্ছা শোন পরে কল দিচ্ছি তোকে।দ্রিধা উঠে গেছে।”
”আচ্ছা।মেয়েকে দেখ তুই।পরে কল দিচ্ছি।”
রোয়েন কল কেঁটে কান্নারত দ্রিধার দিকে এগোয়। মেয়েকে কোলে তুলে কান্না থামাতে চেষ্টা করে।কিন্তু কোনভাবেই কান্না থামছেনা।এমনটা কখনোই হয়না।মেয়েটা ওর কলে আসা মাত্রই হেসে উঠে।আর এখন কাঁদছে।এরই মাঝে রুহী উঠে বসে মেয়ের কান্নার শব্দে।রোয়েন বলল,
”খিদে পেয়েছে মনে হয়।”
”খিদেই পেয়েছে।কাল রাতে বেশি খায়নি।আমার কোলে দাও।”
রোয়েন মেয়েকে রুহীর কোলে দিয়ে বলল,
”বালিশে শুয়েছিলে কেন?”
”আমার পেটে ব্যাথা পাচ্ছিলাম ওভাবে শোয়ার কারনে তাই রাতে সরে এসেছিলাম।”
”ওহ।”
রোয়েন কিছু বলে না আর।ফ্রেশ হতে চলে যায়।
চলবে