আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 39

চৌধুরী বাড়ির সদর দরজার সামনে আরিয়ান তার বউ অনুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তবে বরণ হবার জন্য না নিজের মা কে বোঝানোর জন্য।
আরিয়ানের মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
আয়েশা বেগম বলে,”আমি ঐ মেয়েকে আমার বাড়ির বউ হিসাবে মানি না। ঐ ফাজিল বেয়াদব মেয়ে কোনো ভাবে এই চৌধুরী বাড়ির বউ হতে পারে না।”
আরিয়ান বলে,”কেনো কোথায় সমস্যা আমি বিয়ে করেছি তাও পাঁচ বছর আগে এখন তোমাকে মেনে নিতে হবে।”
আয়েশা বেগম বলে,”ঐ মেয়ে যদি এই বাড়িতে পা রাখে তাহলে আমি এই বাড়ি থেকে চলে যাবো সারাজীবন এর জন্য।”
আরিয়ান বলে,”মা তুমি এমন কেনো করছো? ”

আয়েশা বেগম বলে,”আমার দুই ছেলে তাদের বিয়ে নিয়ে আমার এক বুক আশা ছিলো।
তোরা দুই ভাই সেই আশার মুখে নোংরা পানি ঢেলে দিয়েছিস।আয়াত বিয়ে করেছে এমন এক মেয়েকে যে মেয়ে সারাদিন ডাক্তারি নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
তার সংসার করার সময় নেই।
এখন আরিয়ান এমন এক মেয়েকে বিয়ে করেছে যে কোনোদিক দিয়ে আমার বউমা হবার যোগ্য না।”
আয়াত বলে,”মা এসব একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না? ওদের তো বিয়ে হয়ে গেছে।
তোমার ইচ্ছা থাকলেও এটা অস্বীকার করতে পারবে না যে অনু আরিয়ানের বউ না।
তুমি কি চাইছো? অনুকে তারিয়ে দিবো চৌধুরী বাড়ির দরজার সামনে থেকে?
তাহলে এই বাড়ির সম্মানের কি হবে তা কি একবার ও ভেবে দেখেছো তুমি?
তা ছাড়া যখন মানুষ জানতে পারবে তুমি অনুকে বাড়িতে ঢুকতে দাও নি তারিয়ে দিয়েছ সদরদরজা থেকে তখন তোমাকেও মানুষ খারাপ কথা বলবে।আর আমাদের সামনে তোমাকে খারাপ কথা বলবে তার উওর দিতে পারবো না আমাদের মাথা সবার সামনে নিচু হয়ে যাবে।
এখন বলো তুমি কি চাও তোমার জেদের জন্য চৌধুরী বাড়ির সবার মাথা সকলের সামনে নিচু হয়ে যাক?”
আয়েশা বেগম অনেক সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে তারপর বলে,”আমি এই মেয়েকে বাড়িতে ঢুকতে দিতে রাজী আছি তবে আমার একটা শর্ত আছে।”
আরিয়ান বলে,”কী শর্ত আছে তোমার? ”

আয়েশা বেগম বলে,”তিন মাস ঐ মেয়ে এই বাড়ির মেহমান হয়ে থাকবে তোর বউ হয়ে না।
সেই তিন মাসে যদি ও প্রমাণ করতে পারে এই বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য তাহলে সেদিন আমি নিজে ওকে বরণ করে তোর সাথে এক ঘরে থাকতে দিবো।”
এমন শর্তের কথা শুনে রাজ,আয়াত,রিদি,রিমি রাজের মা সবাই একদম অবাক হয়ে যায়।
কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারে নাই আয়েশা বেগম এমন শর্ত দিবে।
আরিয়ান বলে,”এইটা কেমন ধরণের শর্ত তিনমাস পরে যদি মনে না হয় তখন কি অনুকে তাড়িয়ে দিবা? ”
আয়েশা বেগম বলে,'”তিনমাস পরের কথা তিন মাস পরে না হয় চিন্তা করা যাবে? ”
আরিয়ান বলে,”আমি কোনো ভাবে তোমার শর্তে রাজী না।”
অনু এবার সামনে এসে বলে,”আমি আপনার শর্তে রাজী শাশুড়ি মা।”
আয়েশা বেগম বলে,”আমাকে একদম মা বলে ডাকবে না।”
অনু বলে,”শুধু মা বলে তো ডাক দেয় নাই।
আমি তো শাশুড়ি মা বলে সম্বোধন করছি আপনার। তিনমাস তো কিছু বলে ডাকতে হবে।
শাশুড়ির নাম ধরে ডাকাটা কেমন শোনা যায় বলেন তো।তাই শাশুড়ি মা ডাকটা সব থেকে বেস্ট। ”
আরিয়ান বলে,”অনু তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে?মা কি সব বলছে তুমি তাতে কি করে রাজী আমি তাই বুঝতেছি না।”
অনু বলে,”শাশুড়ি মা যা চাইছে তা করলে বা সমস্যা কোথায়? যেখানে পাঁচ বছর আলাদা থেকেছি সেখানে তিন মাস তো চোখের পলকে পাড় হয়ে যাবে।”
আরিয়ান কিছু বলবে তার আগে রাজ আরিয়ান কে বলে “দোস্ত চিন্তা করিশ না অনু তোর বউ সে কথা ভুলে যাবি না।অনুর উপর বিশ্বাস রাখবি।”
এরপর সবাই একসাথে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
ভেতরে আসতেই অনু বলে,”শাশুড়ি মা আমি কোন রুমে থাকবো আমাকে সে রুমটা দেখিয়ে দিলে খুশি হবো।সারাদিন অনেক ব্যস্ত ছিলাম এখন রেস্ট না নিলে হয় বলেন। ”

আয়েশা বেগম তাদের বাড়ির কাজের মেয়ে কে বলে অনুকে তার রুম দেখিয়ে দিতে।
কাজের মেয়ে তো আর জানে না অনু আরিয়ানের রুমে থাকবে না।
কাজের মেয়ে অনুকে সাথে করে আরিয়ানের রুমে নিয়ে আসে।
অনু রুমে ঢুকে বুঝতে পারে এটা আরিয়ানের রুম তার কোনো ভাবে এই ঘরে থাকা হবে না।
তবে অনু মনু বলে কথা।
কাজের মেয়ে ফুলি নিচে আসলে আয়েশা বেগম বলে,”অনুকে কোন রুমে থাকতে বলেছো?”।
ফুলি বলে,”নতুন ভাবী কে আরিয়ান ভাইয়ের ঘরে রাখে আইছি।সেই রুমে ভাবী ফ্রেশ হচ্ছে।”
আরিয়ানের মা তাড়াতাড়ি করে উপরে আরিয়ানের রুমে চলে আসে।
আরিয়ান ও তার মায়ের পিছনে পিছনে নিজের রুমে চলে আসে।
অনু শাড়ি চেঞ্জড করে থ্রি-পিস পরে বাহিরে এসে দেখে তার বর আর শাশুড়ি মা দাঁড়িয়ে আছে।
অনু জানে কেনো তার শাশু মা এই ঘরে এসেছে।
অায়েশা বেগম বলে,”এই মেয়ে তুমি চলো গেস্ট রুমে থাকবে।”
অনু বলে,”সরি শাশু মা আমি গেস্ট রুমে থাকতে পারবো না।যে রুমে আছি সেই রুমে তিনমাস থাকবো।”
আয়েশা বেগম বলে,”তুমি এই রুমে থাকলে আমার ছেলে কোন রুমে থাকবে? ”
অনু বলে,”কেনো আপনার ছেলে গেস্ট রুমে থাকবে। যে রুমে অামার থাকার কথা ছিলো বুঝেছেন।”
আরিয়ান বলে,”আমার সব দরকারি কাগজপত্র এই রুমে থাকে।”
অনু বলে,”সোনা জামাই তোমার দরকারি সব কিছু তুমি সময় করে এসে নিয়ে যাবে।
বাড়ির বউ না হলেও আমি তোমার বউ।

এই কথা কিন্তু ভুলে যাবে না।
যেহেতু তোমার বউ সেহেতু তোমার সব কিছুর উপর আমার অধিকার আছে।
সেদিক বিবেচনা করে আজ থেকে আমি তোমার রুমে থাকবো।সমস্যা তোমার মায়ের আমার না।আমি কেনো নিজের অধিকার ছাড়তে যাবো।
নিজের ভালো পাগলেও বোঝে আমি কেনো বুঝবো না।”

আরিয়ান বলে,”আচ্ছা সমস্যা নেই তুমি থাকো আমি রুম চেঞ্জড করছি।”
আয়েশা বেগম বলে,”এই মেয়ে তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করছো।তোমার জন্য আমার ছেলে কেনো কষ্ট করতে যাবে?”
অনু বলে,”আপনার সমস্যা আমাকে নিয়ে আমার তো সমস্যা ষ আপনাকে নিয়ে না।
সমস্যা যেহেতু আপনার তাই আপনার ছেলে করবে কষ্ট তা নয়তো কি আমি কষ্ট করতে যাবো? ”
আয়েশা বেগম বলে,”দেখেছিস কি বেয়াদব মেয়ে এই মেয়ে না কি তোর বউ।”
অনু বলে,”শাশু মা একদিনের পরিচয়ে যদি কারো সম্পর্কে মানুষ জানতে পারতো তাহলে কেউ অনুকে বছর ধরে কাউকে জানতে বুঝতে পার করে দিতো না।”
আরিয়ান বলে,”থাক মা অনেক রাত হয়েছে তুমি অনুকে এই রুমে থাকতে দাও আমি গেস্ট রুমে যাচ্ছি। এই রাতের বেলা আর ঝামেলা ভালো লাগছে না।”
এরপর আরিয়ান সোজা গেস্ট রুমে চলে যায়।
এদিকে আয়েশা বেগম রাজের মায়ের সাথে গল্প করতে থাকে ড্রয়িং রুমে বসে।
রাজের মা বলে,”ভাবী তুমি ঐ মেয়েকে রাজের বউ হিসাবে মেনে নিবে তিন মাস পরে? ”
আয়েশা বেগম বলে,”আমাকে কি এতো বোকা ভেবেছো যে ঐ মেয়েকে বাড়ির বউ হিসাবে মেনে নিবো।”
রাজের মা বলে “তাহলে কি করবেন ভাবী? ”
আয়েশা বেগম বলে, “কাল সকাল হোক না কেনো দেখো ঐ মেয়েকে কি ভাবে হেনস্থা করি।প্রতিদিন এমন ব্যবহার করবো যাতে করে ঐ মেয়ে নিজে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।

তাতে এমন হবে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙ্গবে না।”
রাজের মা বলে, “কেনো ভাবী?”
আয়েশা বেগম বলে,”আরে ঐ মেয়ে নিজে নিজে এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে আমাকে তো কেউ কিছু বলবে না এটাই আমার উদ্দেশ্য।দেখো না কাল সকাল থেকে ঐ অনুর কি হাল বেহাল করি।”
রাজের মা বলে,”এই না হলে আমার এতো স্বাধের ভাবী আপনি। ”
এদের পুরো কথাটা কেউ একজন আড়াল থেকে পুরোটা শুনেছে।
সে বলে,”দেখা যাক না এইবার কে জিতবে শাশুড়ি মা না তার বউমা।”
পরেরদিন সকালে…
(সবার কাছে থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি)



চলবে…..