আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 30
কন্যা বিদায়ের সময় আরিয়ান বলে,”আচ্ছা এখানে আমিও কিন্তু বিয়ে করতে আসছিলাম।”
আবির বলে,”হ্যাঁ নিজে বিয়ে করতে এসে ঘটকালি করে নিজের ভাইদের বিয়ে দিয়েছেন। এখন আপনি বউ ছাড়া বাড়ি যাবেন। ”
আরিয়ান বলে,”আমার ভাইয়েরা যখন বউ নিয়ে যাচ্ছে তখন আমি কেনো নিজের বউ কে রেখে চলে যাবো? ”
আবির বলে,”বিয়ে হয়েছে দুই জোড়া কাঁপলের। এখানে তোমার বউ আসলো কোথায় থেকে? ”
আরিয়ান রিমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
রিমার দিকে আরিয়ান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সবাই রিমার দিকে তাকাই থাকে।
সবার এভাবে তাকানো দেখে রিমা বলে,”আরিয়ান ভাইয়া আপনি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো? ”
আরিয়ান বলে,”আপনি জানেন না আমার বউ কে? ”
রিমা বলে,”আজব আপনার বউ কে তা আমি কি ভাবে জানবো? ”
আরিয়ান বলে,”আপনি আমার বউকে খুব ভালো করে চেনেন।আপনি যদি অস্বীকার করেন তাহলে কি হবে বলেন ভাবি? ভাবী পাঁচ বছর আগের কথা একটু ভাবেন তো।”
রিমা বলে,”দেখেন ভাইয়া অনেক কাহিনী হয়েছে আমি আপনার বউ কে চিনি না তাই আমাকে কোনো কিছু বলে লাভ নেই।”
আরিয়ান বলে,”Really! ”
রিমা বলে,”জ্বি হ্যাঁ! ”
অারিয়ান বলে,”আচ্ছা পাঁচ বছর আগে যেদিন আপনি ট্রেনে অনুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তখন হঠাৎ করে অনু সেখানে উপস্থিত হয় তাই না?”
রিমা ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে বলে,”জ্বি হ্যাঁ ভাইয়া।”
আবির আরিয়ান আর রিমার কোনো কথা বুঝতে পারছে না।অনু কে নিয়ে কিসের এতো কাহিনী।
আরিয়ান বলে,”আচ্ছা অনু তো পরিক্ষা দিতে কলেজের ড্রেস পরে গিয়েছিলো।
কিন্তু সে রেলস্টেশনে কি পড়ে এসেছিল তা কি আপনার মনে আছে? ”
রিমা ভয়ে ভয়ে বলে,”হ্যা সেদিন অনু পাহাড়ি মেয়েদের মতো করে শাড়ি পরে হাতে গলায় মাথায় কোমরে ফুলের সাজে সাজা ছিলো।”
আরিয়ান বলে,”অনু কি বলেছিলো সে এমন করে সেজে কেনো এসেছে? কোথায় কার সাথে সে ছিলো? ”
রিমা বলে,”না সেদিন অনু কোনো প্রশ্নের উওর দেয়নি।”
আবির এবার জোড়ে চিৎকার করে বলে,”অনু এইসব কি হচ্ছে আরিয়ান আর রিমার কোনো কথা আমরা কেউ কিন্তু বুঝতে পারছি না।”
আবিরের চিৎকার শুনে রিমা আর অনু ভয়ে কাছুমাছু হয়ে যায়।ওরা সবার থেকে যে অতীত আড়ালে রেখেছিল পাঁচ বছর ধরে সেই অতীত যে আরিয়ান এইভাবে বিয়ে বাড়িতে সবার সামনে আনবে তা ওদের কল্পনার অতীত ছিলো।
অনু আর রিমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
তা দেখে আবির বলে,”পাঁচ বছর আগে না তোমরা চিটাগাং ছিলে সেখানে কি অকাজ করে আসছো যার জন্য আজ কে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তোমাদের? ”
রিদি এসে বলে,”ভাইয়া অনু হারিয়ে গিয়েছিল পাঁচ বছর আগে। সে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল তা কেউ জানতো না।এমন কি পুলিশ ও আমাদের সাহায্য করে নাই অনু কে খুঁজতে।সরি ভাইয়া এই কথা আপনাদের থেকে আমরা লুকিয়ে রেখেছিলাম।”
আবির রিদিকে এক থাপ্পড় দিয়ে বলে,”আমার বোন যদি পাঁচ বছর আগে আর ফিরে না আসতো তাহলে কি হতো?
আমার বোন হারিয়ে গিয়েছিলো সেই কথা তোমরা আমাদের জানাবার প্রয়োজন বোধ করো নাই কেনো?
আমার কলিজার যদি সেদিন কিছু হয়ে যেতো আমি তো জানতে পারতাম না।”
রাজ এসে রিদির কাধে হাত রাখে।
তা দেখে রিদি রাজ কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
আবির এগিয়ে গিয়ে অনুর গালে হাত দিয়ে বলে,”অনু মনু তুই খুব স্টং আমি জানি।
তবে তুই হারিয়ে গিয়েছিলি সেই কথা আজ আমাকে অন্যের মুখ থেকে শুনতে হচ্ছে।
যদি বোনের বিপদে ভাই পাশে না থাকে তাহলে আমি কেমন ভাই হলাম? ”
অনু ওর ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে বলে,”না ভাইয়া আমি তো ভালো তোমার সামনে আছি সমস্যা নেই তো।”
আরিয়ান বলে,”আপনার বোন কে জিজ্ঞাস করেন সে কিভাবে সেদিন ছাড়া পেয়েছিলো?”
আবির অনুর দিকে তাকালে অনু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
আরিয়ান বলে,”আমি বলছি আপনার বোন সেদিন কিভাবে ফিরে এসেছিলো!”
রাজ আরিয়ান কে বলে,”তুই কি ভাবে জানবি অনু কি ভাবে ফিরে এসেছিল সে কথা? ”
আরিয়ান বলে,”এখানে তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে ভাই! ”
রাজ বলে,”মানে কি? ”
আরিয়ান বলতে শুরু করে,,,
‘
‘
অনু যেদিন পরিক্ষা দিয়ে কলেজ থেকে বাড়িতে আসার জন্য রিক্সাতে ওঠে।রিক্সা কিছু দূরে এসে থেমে যায়।
অনু বলে,”হঠাৎ করে আপনি রিক্সা এভাবে থামিয়ে রাখছেন কেনো? ”
বলতেই রিক্সা ওয়ালা অনুর মুখে কিছু স্প্রে করে দেয় যাতে অনু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
তারপর পেছন থেকে মামুন গুণ্ডা আর দলবল এসে অনুকে নিয়ে চলে যায়।
এদিকে রিদি আর তার পরিবার অনুকে আর খুঁজে পায় না।
অনু কোথায় ছিলো তা কেউ জানতো না।
তবে আমি জানতাম,,,
রিদি রাগ করে রাজ কে বলে,”অনু শুক্রবার চলে যাবে পারলে যেনো কিছু করে।”
সেদিন রিদির বলা কথাটা রাজ রুবি কে বলে,”রুবি তোমাকে আর তোমার ভাই কে যে অনু এতো অপমান করেছে সে শুক্রবার চলে যাবে। পারলে কিছু করো।”
রুবি বলে,”ঐ অনু এখান থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে পারবে না।ওর জন্য আমি আমার আরিয়ান কে হারিয়েছে।”
রাজ বলে,”হুম দেখো কি করবা তা তোমার বেপার আমার না।”
রুবি রাজকে বলে,”রাজ অামার একটা উপকার করতে পারবে? ”
রাজ বলে,”কি উপকার করতে হবে? ”
রুবি বলে,”আরিয়ান কে চিটাগাং শহর থেকে দূরে নিয়ে চলে যাও।আরিয়ান তো অনুর ছায়া হয়ে থাকে।অনুর কোনো বিপদ সে হতে দিবে না।”
রাজ বলে,”আচ্ছা আজকেই আমি আরিয়ান কে নিয়ে চলে যাবো।”
এদিকে আমাদের বাড়ি থেকে খবর আসে ফুপার শরীর হঠাৎ করে খুব খারাপ হয়ে গেছে তার কারণে তাকে দেখতে যেতে হবে।
আমরা দুজনে সেদিন রাতে রওনা দেই।
কিন্তু সেদিন রাজ একা ঢাকা যায়।
মাঝ রাস্তায় আবার আমাকে বাবা ফোন দিয়ে ব্যবসার কিছু কাজের জন্য চিটাগাং ফিরে যেতে বলে।
তাই আমিও কোনো কিছু না বলে চুপচাপ চিটাগাং ফিরে আসি।
তবে রাজকে বলা হয়নি আমি চিটাগাং থাকবো। রাজ জানতো আমি ঢাকাতে আছি অন্য শহরে।
বাবাকে ফোন করে বলি সে যেনো বাড়ির সবাই কে বলে আমি ঢাকার অন্য শহরে আছি।
তাই রাজের কোনো ভাবে জানার অপশন ছিলো না আমি কোথায়।
এদিকে রাজ আর রুবির সব প্লানিং এর খবর সিয়াম আমাকে বলে,”আমি ব্যবসার পাশাপাশি অনুকে চোখে চোখে রাখতে শুরু করে দেয়।”
অনুর যেদিন অপহরণ করে ওরা আমি তাও আড়াল থেকে দেখেছি।
এটা জানতে যে রুবি আর মামুন ভাইয়েরা কতোটা খারাপ?
কথায় আছে জলে বাস করে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করতে নেই।
অনু সে কথাটা ভুলে গেছিলো।
সে ভিন্ন শহরের মেয়ে হবার পর ও রুবি আর মামুনের মতো খারাপ মানুষের সাথে ঝগড়াবিবাদ সৃষ্টি করে।
আমি আড়ালে ছিলাম অনুকে এটা বোঝাতে যে সব সময় সব স্থানে প্রতিবাদ করতে নেই।
কিছু সময় আড়ালে থেকেও প্রতিবাদ করা যায়।
শহর থেকে অনেক দূরে একটা আদিবাসী এলাকাতে ওরা অনুকে নিয়ে চলে আসে।
আমিও ওদের সবাই কে ফলো করতে করতে সেখানে পৌঁছে যায়।
এরপর ওরা একটা অন্ধকার ঘরে অনুকে হাত পা বেঁধে ফেলে রেখে দেয়।
আমিও সেই ঘরে ঢুকে আড়ালে লুকিয়ে থাকি।
হঠাৎ করে কি ভাবে মাথায় বাড়ি খেয়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন দেখি অনুর অবস্থা খুব খারাপ সে হাত পা বাধা অবস্থায় সেন্সলেন্স হয়ে বার বার আবির ভাইয়া আবির ভাইয়া বলে ডাকছিলো।
অনু বার বার বলছিলো ভাইয়া তুমি কোথায় তোমার অনু মনু বুড়িকে নিয়ে যাও আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
অনুর এমন অবস্থা দেখে আমি তাড়াতাড়ি ওকে সেখান থেকে বাহিরে নিয়ে আসতে লাগলে কিছু পাহাড়ি মানুষ আমাদের ধরে ফেলে।
তারা ভাবে আমি অনুর সাথে খারাপ কিছু করেছি হয়তো অনুকে মেরে গুম করে দিতে যাচ্ছি।
অনুর এমন খারাপ অবস্থা যে সে আমার হয়ে সাফাই ও দিতে পারবেনা।
তখন তারা আমাদের তাদের এলাকা তে নিয়ে যায়।
তারাই পাহাড়ি লতাপাতা দিয়ে অনুর চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলে।
আর তারা আমাকে সেখানে বেঁধে রাখে আসামি বানিয়ে।
অনুর জ্ঞান ফেরার পরে অনুকে তারা জোড় করে সাজিয়ে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।
আমি অনুকে বিয়ে করতে চাইনি।
না অনু বিয়ে করতে চেয়েছিল।
বিয়ের দেওয়ার পরে তারা আমাদের ছেড়ে দেয়।
তখন আমি অনুকে অনেক অপমান করি তাকে।
সেদিন আমিও অনুকে নিজের বউ বলে,’স্বীকার করে নেই নি।অনেক অপমান করে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম আর বলেছিলাম প্লিজ যদি কোনোদিন এক মিনিটের জন্য আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে এই বিয়ের কথা ভুলে আমাকে মুক্তি দিয়ে দিও।”
অনু সেদিন শুধু বলে, “যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে অনু কোনো সম্পর্কের বোঝা রাখবে না।দিলাম আপনাকে মুক্ত করে।সেই কথা বলে অনু সেদিন চলে যায় আমার জীবন থেকে।”
(কাহিনী আরো আছে,, তবে আবির সবটা জানার পর কি করবে এই সম্পর্কের?আপনাদের প্রশ্ন থাকলে বলবেন আমিও জানতে চাই😒)
‘
‘
‘
‘
চলবে…..