আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 28
আজ রিমি আর রিদির বিয়ে সকালে দুই জনের গায়ে সবাই একটু হলুদ লাগিয়েছে।
যেহেতু দুই জনের বিয়ে এক সাথে তাই তেমন কোনো সমস্যা নেই। তাই দুই বোনের বিয়ের সব দায়িত্ব অনু আবির রিমা তিন জনকে একসাথে দেখতে হচ্ছে।
বাড়ির বাহিরে দুইটা আলাদা প্যান্ডেল করা হয়েছে।সেখানে বর বউয়ের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা করেছে।পর্দা দিয়ে আড়াল করে রাখা আছে যাতে করে বর বউ কেউ কাউকে না দেখতে পারে।
এদিকে অনু মনে বার বার প্রশ্ন করছে।আরিয়ানের কাছে কি সত্যি আমার অনুভূতির কোনো মূল্য নেই?আমার ভালবাসা কি তাহলে মিথ্যা?অনু বলে,”আমার আরিয়ানের প্রতি এই পাঁচ বছরে কোনো অভিযোগ নেই।
কারণ সে আমার পৃথিবী নিজের পৃথিবীর উপর কারো কোনো রাগ অভিমান বেশি দিন থাকে না।যা থাকে তা সময়ের প্রয়োজনে একটু অভিমান হতেই পারে।তার মানে তো এই না যে ভালোবাসার কবর দিবো।”
একটু পর দৌড় দিয়ে এসে অনুকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি বলে,”ফুপি তোমাকে নতুন বউ দু জন ডাকছে!”
অনু বলে,”তারা আমাকে কেনো ডাকছে তুমি কি তা জানো? ”
মিষ্টি বলে,”তারা দু জন তো আজ নতুন বউ সাজবে তাই তোমাকে তাদের সাহায্য করতে ডাকছে!”
অনু বলে,”ওহ আচ্ছা তাহলে এই কথা।”
মিষ্টি বলে,”আচ্ছা ফুপি তুমি এদের মতো সুন্দর করে বউ সাজবে কবে? ”
অনু বলে,”আজকে সাজবো দেখো তুমি।
নতুন বউদের থেকেও বেশি সুন্দর লাগবে আমাকে।”
মিষ্টি বলে,”আচ্ছা দেখবো কাকে সব থেকে বেশি সুন্দর লাগে।”
অনু এরপর মিষ্টি কে কোলে করে রিদি আর রিমির রুমে যায়।
সেখানে গিয়ে তো দেখে ওদের দু জনের মেজাজ খুব খারাপ।
অনু বলে,”রিমি আপু তোমার কি হয়েছে গো? ”
রিমি আপু বলে,”এই তুই জানতিস না?
যে আমার লাল রঙে এলার্জি।লাল রং দেখলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।”
অনু বলে “এতে আমি কি করতে পারি বলবে আপি? তোমার হবু বর এতো শখ করে পছন্দ করেছে তোমার জন্য আমি আর রিজেক্ট করতে পারি নাই। after all তোমার হবু বরের প্রথম পছন্দ করা শাড়ি বলে কথা।”
রিমি বলে,”নিকুচি করেছি নতুন বরের পছন্দের।আমার এমন খ্যাত পছন্দ যে বরের তেমন বরের দরকার নেই।”
অনু বলে,”এখন আমি কি করবো বলবা আপু।”
রিমি বলে,”জানি না কি করবি তবে যা ইচ্ছা কর।আমি এই লাল শাড়ি পরবো না এটাই আমার শেষ সিদ্ধান্ত। ”
অনু বলে,”এবার রিদি আপু বলো তোমার কি সমস্যা? ”
রিদি বলে,”আমারো একই সমস্যা।
আমি এই বেগুনি শাড়ি পরবো না!”
অনু রিদিকে বলে,”কেনো স্টাইল করে আরো বলো,আমি আমার হবু বরের পছন্দমত সব কিছু পরবো।”
রিদি বলে,”জিদ করে ভুল করেছি আমার বইন।মাফ করে দে।এখন একটা সমাধান করে দে প্লিজ। ”
অনু বলে,”বাহ কি সুন্দর কথা বড় বোনেরা তার ছোট বোনের কাছে সমাধান চাইছে।
তাহলে আমি কার কাছে সাহায্য চাইতে যাবো বলবে একটু। ”
রিদি বলে,”এতো নাটক বাদ দিয়ে বল আমাদের এখন কি করা উচিৎ? ”
অনু দু জনের শাড়ি হাতে নিয়ে বসে ভাবতে থাকে কি করা যায়।
অনেক সময় ধরে চিন্তা ভাবনা করার পরে বলে,”আচ্ছা রিমি আপু তোমার বেগুনি শাড়ি পড়তে তো সমস্যা নেই তাই না? ”
রিমি বলে,”নাহ,লাল রং বাদে সব পরতে রাজি আছি।”
অনু এবার রিদি কে বলে,”আপু তোমার লাল শাড়ি পরতে সমস্যা আছে?”
রিদি বলে,”নাহ, কারণ আমার তো অনেক দিনের শখ নিজের বিয়েতে আমি লাল বেনারসি শাড়ি পরবো।”
অনু বলে,”তাহলে তো ঝামেলা মিটে গেলো।
রিদি আপু রিমি আপুর লাল শাড়িটা পরবে।
আর রিমি আপু রিদি আপু বেগুনি শাড়ি পরবে।”
দু জনে বলে,”হুম আমরা এতে রাজি আছি।”
অনু বলে,”তাহলে দেড়ি কিসের যাও তাড়াতাড়ি তোমরা রেডি হয়ে নাও।বর যাএী কিছু সময়ের মধ্যে চলে আসবে।”
রিদি বলে,”আচ্ছা অনু এ বিয়েতে একটা জাদু হতে পারে না? ”
অনু বলে,”বিয়ের দিন আবার কিসের জাদুর চিন্তা করছো তুমি? ”
রিদি বলে,”এই যে আমরা যে যাকে ভালোবাসি তাকে পেয়ে যাবো।”
রিমি উঠে বলে,”এই সবকিছু গল্পে সম্ভব বাস্তবতা অনেক কঠিন তা আমাদের মেনে নিতে হবে।”
এরপর রিদি আর রিমিকে বিউটি পার্লারের মানুষজন সাজাতে শুরু করে দেয়।
অনু রিমির গিফট করা সেই শাড়িটা পড়ে নেয়।তার সাথে মেচিং হালকা জুয়েলারি পরে।
সাথে হলকা সাজে নিজেকে সাজিয়ে তোলে।
মিষ্টি অনুকে দেখে বলে,”ফুপি মাশা আল্লাহ তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।”
অনু বলে,”তোমার থেকে তো বেশি সুন্দর লাগতে পারে না কাউকে। আমার আম্মাজান যে সবার থেকে বেশি সুন্দর। ”
মিষ্টি তো খুশিতে গদগদ হয়ে যায়।
এরপর অনু রিদি আর রিমির কাছে যায়।
মিষ্টি তিনজন কে এক সাথে দাঁড় করিয়ে তার মোবাইলে ছবি তোলে।
এরপর মিষ্টি বলে,”তোমাদের সবাইকে একদম পরীর মতো লাগছে তবে কাউকে আমার থেকে বেশি সুন্দর লাগছে না।”
তিন বোন মিষ্টির কথা শুনে হেসে কুটিকুটি হয়।
এমন সময় আবির এসে বলে,”আরে তোমরা সবাই দেখি রেডি।যাক আজ আমার বোন গুলোকে একদম রাজকন্যার মতো লাগছে।”
মিষ্টি বলে,”পাপ্পা আমার থেকেও তারা বেশি সুন্দর বুঝি? ”
আবির নিজের মেয়ের গাল টেনে বলে,”নাহ মামুনি তোমার থেকে বেশি সুন্দর কাউকে লাগতে পারে না।”
মিষ্টি বলে,”ধন্যবাদ পাপ্পা।”
এরপর আবির বলে,”অনু চল নিচে যাবি বাহিরে বর যাত্রী চলে আসছে তাদের আদর আপ্যায়ন করতে হবে তো নাকি? ”
অনুর এই কথা শুনে বুকের মাঝে ধুকধুক করতে শুরু করে দেয় খুব জোড়ে।মনে হচ্ছে সেই শব্দ বাহিরের সবাই হয়তো এখুনি শুনতে পারবে।
তারপর আর কিছু না বলে অনু আবির আর মিষ্টির সাথে বাহিরে বর আসনে এসে সবাই কে নাস্তা দিতে শুরু করে দেয়।
অনু প্রথমে আয়াতের কাছে এসে তাকে মিষ্টি মুখ করিয়ে দেয়।মিষ্টি শুধু সবার সাথে বসে সেলফি তুলতে থাকে
এরপর অনু আরিয়ানের কাছে আসে।
অনুর পা যেনো একদম বরফের মতো হয়ে গেছে।একটু নাড়াচাড়া করতে পারছে না।
তারপর ও নিজেকে শক্ত করে আরিয়ান কে মিষ্টি মুখ করিয়ে দেয়।
তখন সেই মোমেন্টের সব ছবি মিষ্টি তার মোবাইলে তুলতে থাকে।
অনু তাড়াতাড়ি সেখান থেকে যাবার সময় মিষ্টির হাত ধরে নিয়ে আসতে লাগে।
তখন আরিয়ান মিষ্টির হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে নেয়।
মিষ্টি আর অনুর সাথে আসবে না বলে দেয় তাই অনু মিষ্টি কে আরিয়ানের কাছে রেখে একা ফিরে চলে আসে।
আরিয়ান বসে বসে মিষ্টির সাথে অনেক গল্প করতে থাকে আর আরিয়ান মিষ্টি সাথে এই অল্প সময়ে বেশ খাতির জমিয়ে নেয়।
এদিকে একটু পর উকিল সাহেব সেখানে উপস্থিত হয়।
তারপর মেয়েদের বাহিরে তাদের আসনে এনে বসিয়ে দিতে বলে।
অনু আর রিমা দুজনে মিলে রিমি আর রিদিকে সাথে করে নিচে নিয়ে এসে ওদের আলাদা আসনে বসিয়ে দেয়।
এরপর উকিল সাহেব এসে রাজ,অনু, আরিয়ান, রিমি,রিদি,আয়াত,আবির রিমা সবার স্বাক্ষর নেয়।কারো বর বউ হিসাবে তো কারো স্বাক্ষী হিসাবে।
একটুপর কাজী সাহেব এসে বলে,”এদের তো বিয়ে হয়ে গেছে।এখন শুধু ইসলামিক শরিয়ত মোতাবেক মুখে কবুল বললেও চলবে না বললেও সমস্যা নেই।আমরা দোয়া করে নতুন বিবাহিত কাঁপল দের জন্য দোয়া করে সমাপ্তি করে দেয়।”
আবির বলে,”সমস্যা নেই কবুল বলতে হবে এমন তো না।কবুল বলার মাধ্যমে মুখে শিকার করা হয় যে তারা মন থেকে বিয়ে মেনে নিয়েছে।ঠিক তেমন ভাবে কাগজে স্বাক্ষর করেও মৌন ভাবে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা যায়।”
এরপর সবাই বর বউকে একে অপরের পাশে বসিয়ে দিতে নিয়ে আসে তখন বাধে আরেক ঝামেলা।
(কি ঝামেলা তা না হয় কাল জানতে পারবেন।
আমি ব্যস্ত আছি আশা করি সবাই আমার সমস্যা একটু হলেও বুঝবেন)
‘
‘
‘
চলবে…