আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 27

পরেরদিন অনু রেডি হয়ে অফিসে এসে আরিয়ানের হাতে একটা ফুলেরতোড়া দিয়ে বলে,”স্যার এই ফুল গুলো নিয়ে আপনি ডেটিং এ যেতে পারেন। ”
আরিয়ান ফুল গুলো দেখে বলে,”ইমপ্রেশনস ভালোই জমবে এই ফুলগুলো দিয়ে তাই না।”
অনু বলে,”স্যার এবার আপনি প্রেম করতে যেতে পারেন কোনো সমস্যা নেই!”
আরিয়ান সোজা অনুর হাত ধরে হাটতে শুরু করো দেয়।অনু তো অবাক এমন কান্ড দেখে।আরিয়ান নিজের গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে অনুকে ড্রাইভিং ছিটের পাশে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং ছিটে গিয়ে বসে পড়ে।
তারপর অনুর মুখে কস্টেপ দিয়ে আটকিয়ে দিয়ে বলে,”চুপচাপ আমার সাথে যাবে যেখানে যাচ্ছি সেখানে যাবে পারসোনাল মানে পারসোনাল বুঝেছেো। ”
অনু চুপচাপ মুখ গোমরা করে বসে থাকে।

অনেক সময় পর তাদের গাড়ি একটা সুন্দর সাজানো গোছানো পার্কের সামনে এসে থেমে যায়।
অারিয়ান এক হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে অন্য হাত দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে অনুকে বাহির করে ওর মুখ থেকে টেপ সরিয়ে বলে,”এবার আমার পিছনে পিছনে আসবে কোনো বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করবে না।”
অনু আরিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”এতো পারসোনাল পারসোনাল করেন কেনো?
নিজের বাসরঘরেও কি আমাকে পাহারা দিতে রাখবেন? ”
আরিয়ান গাড়ি থেকে তার সানগ্লাস নিয়ে স্টাইল করে চোখে পরে বলে,”দরকার হলে বাসরঘরেও তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো! Don’t worry angry girl! ”
অনু কিছু না বলে সোজা হাটতে শুরু করে দেয়।
আরিয়ান অনুর হাত ধরে এক টানে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে বলে,”তোমার পা খুব লম্বা হয়ে গেছে তাই না?পা কেটে একদম ছোট করে রেখে দিবো।”
অনু নিজেকে অারিয়ানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে বলে,”সব সময় এইভাবে হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের মাঝে রাখবেন না।
কোনদিন যদি ওখানে আটকে যায় তখন কি করবেন? ”
আরিয়ান বলে,”অপারেশন করে ঠিক করে দিবো সমস্যা নেই।”
অনু বলে,”নিরামিষ একটা,রোমান্স এর ‘র’ টাও জানে না সে আসছে ডেটিং করতে। ”
আরিয়ান বলে,”আচ্ছা চলো তো দেখি রোমান্সের ‘র ‘ টা জানি কি না।বলে সানগ্লাস খুলে এক চোখ টিপি দিয়ে আবারো সানগ্লাসটা পড়ে সামনের দিকে চলে যায়।”
অনু পিছনে দাঁড়িয়ে নিজের হৃদয়ের উপর দু হাত দিয়ে চেঁপে ধরে বলে,”হায় আল্লাহ এই ছেলেটা এতো কিউটের ডিব্বা কেনো? আমি যে তার এই সব attitude এর উপর বার বার ক্রাশ খাচ্ছি তা কি সে বোঝে না?আবুল একটা হুহ!”
আরিয়ান পার্কের ভেতরে গিয়ে দেখে রিমি সেখানে আগে থেকে একটা টেবিলের পাশে বসে আছে।
আরিয়ান কে দেখে রিমি একটু সামনে এগিয়ে আসে।
রিমির সামনে আরিয়ান এক হাটু গেড়ে বসে ফুলের তোড়া সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”মিস কুইন এই ফুল গুলো আপনার জন্য।”
অনু দূরে আড়ালে থেকে মনে মনে বলে,”তাড়াতাড়ি নিয়ে নাও ফুল গুলো তারপর না হয় ডেটিং করতে পারলে করবে,হুহ।”
রিমি খুব খুশি হয়ে ফুল গুলো সাদরে গ্রহণ কে ঘ্রাণ নিতে নিজের নাকের কাছে নেয়।
ফুলের ঘ্রাণ নেওয়ার সাথে সাথে রিমি হাঁচি দিতে শুরু করে দেয়।

আরিয়ান বলে,”আপনি ঠিক আছেন তো মিস? ”
রিমি বলে,”আসলে এই ফুলে আমার এলার্জি আছে তো তাই সমস্যা হয়েছে।প্লিজ কিছু মনে করবেন না।আমাকে এখুনি বাসায় যেতে হবে।মেডিসিন নিতে হবে নয়তো অনেক সমস্যা হবে আমার।”
অনু পেছন থেকে এসে বলে,”আপুনি এভাবে কেউ ডেটিং রিজেক্ট করে বলো তো? তোমার সাথে ডেটিং করবে বলে সে আজ তার সব মিটিং স্থগিত করে রাখছে।আর তুমি এভাবে অসুস্থতার বাহানা দিয়ে বাড়ি চলে যাবে? এটা মোটেই ঠিক না।তোমার সাথে ডেটিং করার শখটা যে তার পূরণ হবে না তার কি হবে? ”
রিমির হাঁচি দিতে দিতে অবস্থা খারাপ।
তারপর ও অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমি অসুস্থ তা কি আরিয়ান দেখতে পাচ্ছে না?
আমি আশা করি সে আমার সমস্যা বুঝতে পারবে।”
আরিয়ান বলে,”হুঁ, সমস্যা নেই আপনি বাড়িতে চলে যান। আমি আমার দিনটার সাথে ঠিক মতো ডিল করে নিতে জানি।”
রিমি ধন্যবাদ বলে সেখান থেকে চলে যায়।
রিমি যাবার পর অনু আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে সবগুলো দাঁত বাহির করে একটা স্মাইল দিয়ে বলে,”স্যার আপনার ডেটিং তো বাতিল হয়ে গেছে।তাহলে এবার আমি এখান থেকে আসি কি বলেন?”
আরিয়ান অনুর হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,”তোমার তো আমার রোমান্স দেখার খুব শখ ছিলো।
না আমার সাথে রোমান্স করার শখ আছে? ”
অনু আরিয়ানের বুকে কান পেতে তার হৃদয়ের ধিকধিক আওয়াজ শুনতে থাকে।

আরিয়ানের বুকে মাথা রাখার শখ তো সে নিজে কাছে নিয়ে পূরণ করে দিয়েছে।
তারপর অনু মাথা উঠিয়ে বলে,”আমার কোনোদিন ও আপনার সাথে রোমান্স করার শখ নেই না আছে রোমান্স দেখার।”
আরিয়ান বলে,’oh really? ”
অনু বলে,”any doubt? ”
আরিয়ান বলে,”তুমি নিজে একটা সন্দেহের বক্স।তা না হলে তোমার বোনের যে ফুলে এলার্জি সেই ফুলো এতো যত্নে আমার হাতে তুলে দিতে পারতে না।তুমি জানতে এই ফুল হাতে নিয়ে রিমি ঘ্রাণ নিতে যাবে আর সমস্যা হবে ওর।
আর সে অসুস্থ হয়ে যাবে।
আমার ডেটিং এর প্লানিং এর উপর পানি পরবে তাই না! ”
অনু বলে,”আপনার মুখের কথায় কি সবটা সত্যি হয়ে যাবে না কি? আমি ইচ্ছা করে কিছু করি নাই।আপনার দেওয়া লিস্ট অনুযায়ী সবটা করেছি। ”
আরিয়ান বলে,”লিস্ট যখন দেখেছো তখন তো জানতে এই ফুল দিয়ে সমস্যা হতে পারে তা আমাকে কেনো বলো নাই? ”
অনু বলে,”আমি কি আপনার পিয়োন যে সবার হাঁড়ির খবর দিয়ে বেড়াবো না আপনার ঘরের বউ? ”
পেছন থেকে এক জোড়া কাঁপল যাবার সময় অনু আরিয়ান কে দেখে বলে,”দেখো তো ওরা কতো হ্যাপি কাঁপল। সবার সামনে একজন আরেক জন কে কি সুন্দর করে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।”

অনু সে কথা শুনে নতুন বউ এর মতো লজ্জা পেয়ে বলে,”আসলে আমাদের আজ দুই চার দিন মাএ বিয়ে হয়েছে তো।বাড়িতে প্রচুর মানুষ তাদের জন্য রোমান্স করতে পারি না। তাই বর আমাকে সাথে করে ডেটিং এ নিয়ে আসছে।”
এ কথা শুনে আরিয়ান অনুকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”দেখুন ওর কথা একদম বিশ্বাস করবেন না।অনু পুরোটা মিথ্যা বলছে।
এই তুমি দিব্বি গলগল করে মিথ্যা বলে দিলে কি করে? ”
ঐ লোক গুলো বলে,”থাক আমরা বুঝেছি আপনাকে আর লজ্জা পেতে হবে না।
বিয়ের পর নতুন বউয়ের সাথে সবাই time spend করতে চায়। বলে তারা চলে যায়।”
আরিয়ান বলে,”অনু রে তোমার আজ খবর আছে আমাকে এতো মানুষের মাঝে এই ভাবে লুচু প্রমাণ করার সাহসের কিছু বলি।”
অনু আরিয়ান কে ধাক্কা দিয়ে বলে,”স্যার মাফ করবেন আপনার ডেটিং হতে দেয়নি আর বাসরঘর ও করতে দিবো না।আমার ক্রাশ
যদি আমার না হয়।তাহলে সে অন্য কারো হবে না বলে এক দৌড়ে সেখানে থেকে পালিয়ে আসে।”
আরিয়ান বলে,”ফাজিল মেয়ে তোমাকে যেদিন হাতের কাছে পাবো সেদিন উচিৎ শিক্ষা দিবো নয়তো আমিও আরিয়ান নাহহহ।”

এইভাবে বেশ কিছুদিন পার হয়ে যায়।
এদিকে ওদের বিয়ের ডেট ফিক্সড হয় এক সপ্তাহ পরে।
তাই সবাই কে এক সাথে করে বিয়ের কেনা_কাটি করতে যেতে হয়।
আরিয়ান অনু আয়াত রিদি রাজ এক সাথে আসে রিমি আসতে পারে না তার হসপিটালে ডিউটি থাকার জন্য।
রিমির বদলে অনুকে পাঠিয়ে দেয় বাড়ির সবাই।
এদিকে শপিং মলে সবাই এক সাথে এসেছে বিয়ের কেনাকাটা করতে।
এদিকে আয়াত রিদির জন্য একটা বেগুনি কালারের বিয়ের শাড়ি পছন্দ করে।
তা দেখে রাজ বলে,”রিদির বেগুনি কালারের কোনো কিছু পছন্দ না।তুমি রিদির জন্য লাল রং এর বিয়ের শাড়ি পছন্দ করো।”
রিদি উঠে বলে,”আমি কি বলেছি বেগুনি কালারের কিছু আমার পছন্দ না?
মিস্টার আয়াত আপনার ফুফাতো ভাই দেখছি সব কিছুতে নাক গলাতে বেশি পছন্দ করে।”
আয়াত বলে,”রাজ রিদি তো আমার সাথে আছে।সে তো শাড়িটা অপছন্দ করছে না তাহলে তুই কেনো বেশি বাড়াবাড়ি করছিস? ”
রাজ বলে,”আমার মনে হলো হয়তো তার এই রংটা পছন্দ না তাই।আচ্ছা সমস্যা নেই তার যখন এতে কোনো আপত্তি নেই তখন আমি বেশি কথা বলার কেউ হয় না।”
এদিকে আরিয়ান রিমির জন্য একটা লাল রং এর খুব স্টাইলিশ বিয়ের ড্রেস পছন্দ করে।
অনু বলে,”বাহ কি ভালো পছন্দ আপনার। আপনার পছন্দের প্রশংসা না করে পারছি না।”
আরিয়ান বলে,”ধন্যবাদ এতো প্রশংসা করার জন্য।”
এদিকে রিদি অনুকে এক সাইডে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলে,”কি রে অনু লাল রং তো রিমি আপু দুই চোখে সহ্য করতে পারে না।
সেই রং এর ড্রেস কেনো তুই অারিয়ান কে নিতে দিয়েছিস? ”
অনু বলে,”তুমি বেগুনি রং পছন্দ করো না তারপর ও তো নিয়েছো তাহলে রিমি আপু কেনো লাল রং পরবে না শুনি? ”
রিদি বলে,”আচ্ছা তোর যা খুশি তাই কর তুই।”
এদিকে রাজ অনুর জন্য একটা সবুজ রং এর শাড়ি পছন্দ করে বলে,”অনু এই শাড়িতে তোমাকে খুব সুন্দর লাগবে! ”
অনু মনে মনে বলে,”শালা খচ্চর সবুজ রং এ আমাকে জঙ্গল জঙ্গল লাগবে।
তারপর ও কিছু বলবো না।”

পাশে আরিয়ান কে দেখে অনু দাঁত কেলিয়ে বলে,”আরে বিয়াই পছন্দ করে সাদা রং এর শাড়ি দিলেও তা বিয়ের বেনারসি মনে করে পরবো বলে শাড়িটা নিয়ে নেয়।”
এদিকে আয়াত আরিয়ান কে বলে,”দেখ এই গোলাপি শাড়িটা তে অনুকে একদম পুতুলের মতো লাগবে এটা অনুকে গিফট করলে কেমন হয়? ”
আরিয়ান বলে,”আরে ভাই কি যে বলো না তুমি অনু এই সব ফালতু পিংক কালার পরে না।
তাই ওর জন্য কোনো কিছু কিনতে হবে না।”
অনু আড়ালে থেকে কথাটা শুনতে পায় তা তারা কেউ জানে না।
এরপর সবাই যে যার বাড়িতে চলে যায়।

যেহেতু দুই ভাইয়ের এক সাথে এক দিনে বিয়ে তাই ছেলের বাড়িতে তো সেই রকমের আয়োজন চলছে ।
এদিকে দুই মেয়ের মধ্যে যেহেতু আত্মীয়তা আছে।তাই তারা দুই পরিবার এক বাড়ি থেকে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তাই তারা বিয়ের জন্য একটা আলাদা বাড়ি ভাড়া করে।যে বাড়িতে সব আত্মীয় স্বজন আসবে।
আর সেই সাথে দুই পরিবারের বিয়েতে অনুর পরিবার উপস্থিত থাকতে পারে।
বিয়ের সব অনুষ্ঠান এই বাড়ি থেকে আয়োজন করা হবে।
এদিকে রিমি,অনু,রিদি সবার বাড়ির মানুষ সেই বিয়ের জন্য ঠিক করা বাড়িতে চলে আসে।
এই বাড়িতে তাদের অনেক কাজ আছে তো তাই।
(গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন সবাই 😊😊)




চলবে…..