আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 19

এদিকে অফিস শেষ করে অনু বাড়িতে এসে সোজা নিজের রুমে না গিয়ে ছাদে চলে যায়।
রিমা অনুর মন খারাপের বেপারটা লক্ষ করে।
তাই নিজের হাতের সব কাজ করে মিষ্টি কে শাশুড়ি মার কাছে রেখে ছাদে চলে আসে
অনু ছাদের এক কোনায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে অন্ধকারের গভীরতা অনুভব করতে থাকে।
রিমা এসে অনুর কাধে হাত রেখে বলে,”তুই নিরব তার মানে তোর মনের মাঝে কোনো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আজ তো বান্ধবী ভেবে বলবি তোর মনের ভেতরে লুকিয়ে রাখা কষ্টের কথা।”

অনু পেছন ফিরে রিমাকে জড়িয়ে ধরে তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,”সে আবোরো আমার জীবনের ক্রাশ হয়ে ফিরে এসেছে।”
রিমা বলে,”কে তোর জীবনে ফিরে এসেছে? ”
অনু একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে, “আরিয়ান রাজ ওদের সাথে আমার আবারো দেখা হয়েছে।”
রিমা বলে,”তাতে তোর কি?তুই যদি আরিয়ান কে সত্যি ভালোবেসে থাকিস!
তোর এই মনে যদি এখনো ওর জন্য অনুভূতি কাজ করে তাহলে আশা করবো তুই এবার অন্ততপক্ষে আরিয়ান কে নিজের মনের কথাটা বলবি।”
অনু বলে,”পাঁচ বছর অাগে তো গল্পটা শেষ হয়ে গেছে! ”
রিমা বলে,”ভাগ্য যখন তোর ক্রাশ কে পাঁচ বছর পর তোর সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তখন অবশ্যই তোর চেষ্টা করা উচিৎ বাকিটা না হয় আল্লাহ ভরসা।”
অনু বলে,”সবার ভাগ্যে তার ক্রাশ পাওয়া লেখা থাকে না।”
রিমা বলে,”যে এখন সামনে আছে তাকে নিজের করে নিতে চেষ্টা করার মাঝে দোষের কিছু নেই।এখন তুই তোর মন কে প্রশ্ন করে দেখ তোর মন কি বলে।আমি তোর মন কে তো জোড় করতে পারি না।মন তোর সিদ্ধান্ত তোর।”
রিমা চলে গেছে অনু ভাবছে সত্যি এখন তার কি করা উচিৎ?চেষ্টা না কি হাল ছেড়ে দিয়ে সবটা ভগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া।

এদিকে পরের দিন সকালে অফিস এসে অনু রাজ অারিয়ানের সাথে মিটিং এ উপস্থিত থাকে।
আরিয়ান সেই কোম্পানির কাছে নিজেদের প্রেজেন্টেশন খুব ভালো ভাবে উপস্থাপন করতে পারাতে তারা খুব খুশি হয়ে ডিল ফাইনাল করে।
ডিল ফাইনাল হবার খুশিতে তাদের সবাইকে সাথে করে, রাজ,আরিয়ান, অনু তিন জন এক সাথে একটা বড় রেস্টুরেন্টে যায়।
সেখানে আগে থেকে রাজ বুকিং করে রাখছিল। কারণ ওদের বিশ্বাস ছিলো আজ অবশ্যই ডিলটা ফাইনাল হবে।
এদিকে সবাই টেবিলে বসে গল্প করছে।এদিকে একজন অনুকে দেখে আরিয়ান কে বলে,”বাহ মিস্টার অনেক সুন্দরি তো আপনার পিএটা।”
আরেকজন বলে,”ঘরের বউ এতো সুন্দরি হয় না যতোটা না পারসোনাল সেক্রেটারি হয়।
আমাদের কপাল খারাপ আমরা আপনার মতো এতো সুন্দরি পিএ রাখতে পারি না বউয়ের জ্বালাতনে।”
আগের জন উঠে বলে,”একদম ঠিক বলছেন। বোঝেন না বিয়ের আগে এমন ইনজয় করার ভাগ্য কয় জনের হয়? আরিয়ান সাহেবের হয়েছে সেই ভাগ্য।”
আরিয়ান বুঝতে পারে বেপারটা বাজে দিকে যাচ্ছে কিন্তু কি বলে এদের মুখ বন্ধ করবে তা বুঝতে পারছিল না।আরিয়ান চাচ্ছিল কোনো বাজে ব্যবহার না করে এদের উচিৎ শিক্ষা দিতে।

এমন সময় রাজ অনুর হাত ধরে বলে,’আসলে অনু ভাইয়ের পিএ হতে পারে।বাট ওর সাথে আজ পাঁচ বছর আমার সম্পর্ক।
সম্পর্ক মানে তো বোঝেন?
আসলে একথাটা বাড়ির কেউ জানে না আজ আপনাদের জানিয়ে দিলাম।”
অনু হা হয়ে রাজের কথা শুনছে।মনে মনে বলে,”এই শালার মাথার বুঝি তার ছিঁড়ে গেছে।দাড়া না আগের এদের জব্দ করি তারপর না হয় রাজ কে জব্দ করবো।”
এরপর অনু রাজের কথায় সম্মিত দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে,”আসলে আমাদেের দেশের বেশির ভাগ পুরুষের চিন্তাভাবনা এক।
এইযে সুন্দরি মেয়ে জব করে তার মানে সে খারাপ।তার সাথে তার বসের খারাপ সম্পর্ক আছে।এই সম্পর্কের জন্য সে শুধু জবটা পেয়েছে। আসলে সুন্দর অসুন্দর বলে কোনো কথা নেই যে চাকুরীর যোগ্য হবে সেই পাবে।
আমি এখানে নিজের সৌন্দর্যের জোরে জব করি না।আমি আমার যোগ্যতার জোড়ে জব করি।এখন আপনাদের চিন্তা ভাবনা খারাপ হলে আমার কিছু বলার নেই।”
অনুর এসব কথা শুনে তারা বুঝতে পারে তারা ভুল কথা বলেছে।তবে সাধারণ এক জন পিএর কাছে তারা অপমানিত হবে কেনো তাকে সরি বলে।
আরিয়ান এবার বলে,”আসলে মিস অনুর সাথে যে আমার ভাইয়ের পাঁচ বছরের সম্পর্ক তা আমি জানতাম না।যাক সে আজ সত্যি বলেছে তার জন্য তাকে ধন্যবাদ।আর হ্যাঁ একটা কথা অনু সুন্দরি স্মার্ট তার মানে এটা নয় যে তার ড্রেসিং সেন্স দেখার পরে কেউ তাকে খারাপ মেয়ে বলবে। ”
রাজ বলে,”অনু স্মার্ট স্টাইলিশ হতে পারে।

কিন্তু ওর ড্রেসিং সেন্সে দেখে কেউ ওর দিকে খারাপ দৃষ্টি তে তাকাবে না এটা অনুকে দেখে বোঝা যায়।”
এবার অনু বলে অনেক কথা হলো সবার খাবারে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। আমি খাবারের দিকটা দেখে আসছি আপনারা কথা বলেন।
এদিকে অনু এসে ঐ তিন জন বজ্জাত লোকের জন্য কাচা মরিচ আর আম দিয়ে ব্লেন্ডার করে শরবত বানাতে বলে।
এরপর তাদের কে অনু নিজের হাতে মরিচ দেওয়া শরবত দিয়ে বলে এটা স্পেশালি আপনাদের জন্য।একটু টক ঝাল মিষ্টি প্লিজ সবাই খাওয়া শুরু করেন।
তারার শরবত খাওয়ার পর ঝালে অস্থির হয়ে যায়।
রাজ,আরিয়ান বেপারটা বুঝতে পারে না।
অনু বলে,”স্যার আপনাদের বুঝি ঝাল খাওয়ার অভ্যাস নাই তা আগে বললেই পারতেন আমি শরবত টা চেঞ্জ করে দিতাম। ”
তারা বলে, “না সমস্যা নেই ঠিক আছে একটু ঝাল বাট মজার ছিল। ”
অনু মনে মনে বলে,” সালা খচ্চরের দলে এতো ঝাল দিয়ে শরবত খাওয়ালাম তার পরেও বলে মজার ছিল। ”
এরপর অনু আর খাবারে কোনো ভেজাল করে না।কারণ তার চিন্তা-ভাবনা এমন যে মানুষ দোষ করেছে বলে তো আর তাকে খারাপ খাবার খাওয়াতে পারি না ।
(আমার গল্প সবার আগে পারার জন্য নীল ক্যাফের ডায়েরী পেজে এড থাকুন)
এতে খাবারের অপমান হয় মানুষ হয় না।
তাই মানুষকে তার ভুল বোঝানোর জন্য যুক্তি সহ কথা বলাটাই শ্রেয় এর থেকে বেশি কিছু না বলাই ভালো ।
অযথা কারো সাথে তর্ক করাটা খারাপ দেখায় এসব মনে মনে ভাবে অনু।
এরপর সবাই খাওয়া-দাওয়া কমপ্লিট করে

তারপর আর একটু কথা বলার পর তাদের কে এগিয়ে দিতে সবাই গাড়ি পার্কিং এ চলে আসে।
ওনারা সবাই গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
এবার রাস্তার সাইডে তিনজন দাঁড়িয়ে আছে নিজেদের গাড়ির পাশে।
অনু এবার রাজের সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে খুব রাগী দৃষ্টি তে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এমন ভাবে অনুর তাকিয়ে থাকা দেখে রাজ বলে,”এই তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? ”
অনু সোজা রাজের কলার ধরে বলে,”বেয়াদব পোলা তোর সাথে আমার 5 বছরের রিলেশন তাইনা? তাই বলে রাজের পেটে কয়েকটা কিল ঘুষি দেয়।”
তারপর আবার বলে,”তোরে তো মন চাইতেছে ল্যাটিন আমেরিকার পাঠিয়ে দেই।
কোথায় জানেন উগান্ডা উগান্ডা বিয়াদ্দপ।

আমি আপনাকে 5 বছর ধরে দেখলাম না শুনলাম না। একগাদা মানুষের মাঝখানে বলে দিলের আমি আপনাে সাথে প্রেম করি?
বলে রাজের চুল মুঠি করে ধরে মনের যতো রাগ আছে সব মিটিয়ে নিচ্ছে। ”
আরিয়ান পাশে দাঁড়িয়ে রাজের ধোলাই খাওয়া দেখছে আর মজা নিচ্ছে।
রাজ বলে,”ঐ তুই মজা না নিয়ে আমাকে এই দজ্জালের হাত থেকে বাঁচা।”
আরিয়ান বলে,”তোদের পাঁচ বছরের সম্পর্ক আমি তার মাঝে কি করে বাহিরের মানুষ হয়ে আসি বলতো? ”
রাজ বলে,”শালা মজা নেওয়া হচ্ছে তাই না।তখন মুখ বন্ধ ছিলো কেনো যখন অনুকে ওরা বাজে কথা বলছিলো?”
আরিয়ান বলে,”তারা খারাপ কথা বলছিল আমি শুনছিলাম প্রতিবাদ করার জন্য সময় আসে মুখে মুখে তর্ক করলে প্রতিবাদ হয়ে যায় না। ”
অনু বলে,”আমি কি আপনাদের দুই ভাইয়ের কাউকে বলেছি আমার জন্য প্রতিবাদ করুন?”
রাজ বলে,”যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর।”
অনু বলে,”চুপ একদম চুপ! আমি চুরি করতে বলছি? আমি ওদের শরবতের মনের মতো ঝাল মিশিয়ে খাওয়াই মনের ঝাল মিটিয়ে দিয়েছি। ”
আরিয়ান বলে,”দেখ কি বিপদ জনক মেয়ে।আর তুই গিয়েছিস এর সাহায্য করতে ভালো করে মজা বোঝ এবার।”
অনু রাজ কে ধাক্কা দিয়ে সোজা বাড়ি যাবার জন্য হাটা শুরু করে দেয়।
এদিকে আরিয়ানের ফোনে ওর মা কল দিয়ে তাড়াতাড়ি ওদের বাড়িতে আসতে বলে দরকার তাই।


চলবে….