আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 08
হঠাৎ একদিন অনু একা কলেজ যাচ্ছিলো
রিমা একটু অসুস্থ বলে আজ কলেজে আসে নাই।
রিদি আপু তো এখন রাজেদের ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে।
আমাদের অনু মনু এখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
চোখের পলকে দেখতে দেখতে কি ভাবে এক বছর পাড় হয়ে গেছে বুঝতেই পাড়লাম না।সময় সত্যি কারো কাছে বাধা থাকে না।
এসব চিন্তা করতে করতে অনু রিক্সা করে যাবার সময় হঠাৎ রাস্তার মাঝে দেখে কয়েকজন মানুষ মিলে একজন গরীব বৃদ্ধ ফল বিক্রেতাকে মারধোর করছিলো।
আশেপাশে অনেক মানুষ আছে কিন্তু কেউ তাদের বাধা দিচ্ছে না।
অনু তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলেকে জিজ্ঞাস করে,”বৃদ্ধা লোকটাকে ধরে ওইভাবে মারছে আর আপনারা কেউ কিছু বলছেন না কেনো?”
ছেলেটা বলে,”এই সব গুণ্ডা মামুন ভাইয়ের সাঙ্গু_ পাঙ্গু এদের সাথে কেউ কথা বলা তো দূরে থাক কেউ এদের সাথে লাগতে যাবে না।”
অনু সবার এমন নিরবতা দেখে খুব কষ্ট পায়।গুণ্ডা মাএ তিন জন আর এরা এতো মানুষ।
সবাই মিলে প্রতিবাদ করলে গুণ্ডা গুলো এতো সাহস পেতো না।
তবে যাই হোক অনু তো আর অন্যায় দেখে চুপচাপ থাকতে পারে না।
গুণ্ডার মধ্যে একজন হকি স্টিক দিয়ে গরিব মানুষ টার মাথায় আঘাত করবে এমন সময় অনু পেছন থেকে হকি স্কিট টা খুব শক্ত করে ধরে রাখে।
গুণ্ডা গুলো অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,”আমাদের কাজে বাধা দিলে এর ফল ভালো হবে না।”
অনু বলে,”আগে নিজের প্রাণের চিন্তা কর শয়তানের দল পরে না হয় ফলের চিন্তা করবি।”
গুণ্ডা গুলো বলে,”বেয়াদব মেয়ে এখান থেকে চলে যা। না হলে তোর সাথে খারাপ হবে বলে দিচ্ছি। ”
অনু বলে,”আমার সাথে খারাপ করবি আর আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখবো এটা কখনো হতে পারে না বুঝলি শয়তান গুলো।”
একটা গুণ্ডা এসে অনুর ওড়না তে হাত দেয়।
অনু আরেকজন গুণ্ডার হাত থেকে এক টানে ছোঁ মেড়ে হকি স্টিক নিয়ে তিন টা গুণ্ডা কে মনের সুখে পিটাতে শুরু করে দেয়।
আর বলতে থাকে,”তোরা যখন ঐ গরিব মানুষটা কে মার ধর করেছিস তখন তার এতোটা কষ্ট হয়েছে।না জানি তোরা কতো মানুষের সাথে অন্যায় করেছিস। তোদের তো আগে কখনো অনুর সাথে দেখা হয়নি আজ বুঝতে পারবি অনু কি জিনিষ। ”
এমন সময় সেখানে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে অনুর এমন গুণ্ডা ধোলাই করা দেখছিলো যা সবার চোখের আড়ালে থেকে যায়।
এরপর গুণ্ডা গুলো পালিয়ে যাবার সময় অনুকে বলে,”মেয়ে তুই আমাদের সাথে টক্কর নিয়ে ভুল করেছিস তোর এ ভুলের মাসুল দিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। ”
অনু বলে,”আজকের মারের কথা যদি ভুলে যাস তাহলে আবার দেখা করতে আসবি আমার সাথে তার জন্য অগ্রিম দাওয়াত রইলো।”
ভিড়ের ভেতর থেকে দাঁড়িয়ে কেউ একজন এইসব ভিডিও করে রাখে।
গুণ্ডা গুলো চলে যাবার পর অনু হকি স্টিক নিয়ে সাধারণ জনগণেন দিকে তেড়ে এসে বলে, “ফ্রি তে তামাশা দেখা শেষ এখন আপনারা আসতে পারেন।”
জনগণ অনুর তেড়ে আসা দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
এরপর অনু ঐ গরিব মানুষ টাকে সাথে করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তার ট্রিটমেন্ট করিয়ে কিছু মেডিসিন কিনে দিয়ে বলে,”আচ্ছা ওরা আপনাকে মারধোর করছিলো কেনো বলবেন একটু? ”
লোকটা বলে,”মা গো আর কি বলবো,
আমি এক গরিব ফল বিক্রেতা ওরা আমার দোকান থেকে ফল নিতে আসে।
আমি খুশী মনে সব প্যাকিং করে দেওয়ার পর ওরা সবাই চলে যেতে লাগে আমি ওদের কাছে থেকে টাকা চাই এটাই আমার দোষ হয়ে যায়।কেনো তাদের থেকে টাকা চেয়েছি।
আমার এই ফল বিক্রয়ের টাকা দিয়ে সংসার চলে। তাদের থেকে টাকা না চওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না।তারপর ওরা আমাকে মারতে শুরু করে দেয়।মা গো কেউ প্রতিবাদ করে নাই তুমি করেছো তার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।”
অনু সবটা শুনে বলে,”ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নাই।দোয়া করবেন আমার জন্য তাহলে হবে।”
লোকটা বলে,”মা গো আল্লাহ সব সময় তোমার ভালো করুক। তুমি সব সময় সুখে থাকো সে দোয়া করি।কিন্তু মা তুমি সাবধানে থাকবে যাদের পিটিয়েছো তারা কিন্তু খুব খারাপ মানুষ।”
অনু বলে,”আমি ঐ সব রাস্তার কুকুর দেখে ভয় করি না আপনি চিন্তা করবেন না।
ভালো থাকবেন দোয়া করবেন বলে কলেজে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।”
অনু খুশী মনে আবার ভাবতে ভাবতে যাচ্ছে তাকে আরিয়ান ভালো না বাসলেও চলবে।
সারাজীবন আমি না হয় আরিয়ান কে ভালোবেসে যাবো।আমার স্বপ্নের রঙ্গিন দুনিয়া জুড়ে শুধু আরিয়ান ময়।
রাজ আরিয়ানের সাথে দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়াঝাঁটির মধ্যে দিয়ে চার বছর পার হয়ে যায়।আর অনুর ইন্টারের এক বছর।
এদিকে আরিয়ান রাজ ওরা সবাই মাস্টার্স এ ভর্তি হয়।
আরিয়ান রাজ কে বলে,”যাক আল্লাহ বাঁচাই দিবে এইবার। তোর মতো শয়তানের সাথে বনবাসের শেষ বছর এটা।এরপরে আমি আমার রাজ্যে ফিরে যেতে পারবো? ”
রাজ বলে,”তুই তো দেখছি পুরো আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিচ্ছিস? কেনো রে শালা আমি তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি? ”
অারিয়ান বলে,”তুই আমার পাকে ধানে মই দিস নাই।মই দিয়েছিস আমার জীবনে।”
রাজ :আরিয়ান আজারে ফালতু কথা বলবি না।
আরিয়ান :এই তুই অনার্সের চার বছরে আটটা গার্ল ফ্রেন্ড বদলাস নাই?
রাজ :আরে ওরা সবাই আমাকে পছন্দ করে তাই সবাই কে একটু করে সুযোগ দিয়েছি এইতো।
আরিয়ান :চার বছরে আটটা মেয়ের মন ভেঙ্গেছিস তুই।এইবার রিদি মেয়েটার ও কি মন ভাঙ্গতে চাইছিস?
রাজ বলে,”নাহ ভাবছি রিদিকে নিয়ে মাস্টার্স চালিয়ে দিবো।যখন নিজের নিড়ে ভিড়ে যাবো তখন একাই ওর মন ভেঙ্গে যাবে।আমার কষ্ট করে রিদির মনটা ভেঙ্গে দিতে হবে না।”
আরিয়ান বল,”রিদি মেয়েটা কিন্তু অনেক ভালো, প্লিজ অন্তত্য পক্ষে ওর মনটা ভাঙ্গিস না।”
রাজ বলে,”প্রেম করেছি বলে যে তাকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে হবে এমন কথা রাজের ডিকশনারি তে নাই।যার মন নিয়ে এই রাজ একবার খেলা করেছে তাকে দ্বিতীয় বার নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনবো না।”
আরিয়ান বলে,”তাহলে তুই তাদের সাথে রিলেশন কেনো করিস যখন বিয়ে করবি না?”
রাজ বলে,”প্রেম করার বিষয়টা এমন
ধর তুই কোনো টিস্যু ব্যবহার করেছিস তা ফেলে দেওয়ার পর কি আর তুলে ব্যবহার করবি? প্রেম করে ছেড়ে দেওয়া মেয়েদের নিয়ে আমার ভাবনাও ঠিক এমন।”
আরিয়ান বলে,”ছিঃ ছিঃ ছিঃ রাজ তোর মেয়েদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা এতোটা নিচু মানুষিকতার তা আগে জানা ছিলো না।”
রাজ :তোকে এতো জানতে হবে না নিজের চর্কায় নিজে তেল দে।
আরিয়ান বলে, “তুই আসলে প্লে বয়।মেয়েরা যে কি দেখে তোর মতো খারাপ ছেলেকে তাদের সুন্দর মনটা দিয়ে কালো করে আল্লাহ জানে।”
রাজ :আল্লাহ জানলে চলবে তোকে এতো বেশী জানতে হবে না।
আরিয়ান বলে,”তোকে জানতে আমার বয়ে গেছে।আমি শুধু আমার স্টাডি কমপ্লিট হবার আশায় বসে আছি তারপর তুই তোর রাস্তায় আমি আমার রাস্তায়।”
এমন সময় আরিয়ানের সামনে হাঁপাতে হাঁপাতে সিয়াম এসে বলে,”দোস্ত তুই জানিস আজ তোর অনু কি করেছে? ”
আরিয়ান বলে,”আমার অনু মানে কি সিয়াম? ”
সিয়াম বলে,”সরি দোস্ত আমাদের অনু হবে।”
আরিয়ান বলে,”তা কি করেছে সেই ঝাঁঝ লবঙ্গলতা এবার তো বলবি? ”
সিয়াম এবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ডিটেলে অনু কি কি করেছে সবটা বলে।
আরিয়ান তো সবটা শুনে অনুর উপর রেগে আগুন হয়ে যায়।
সিয়াম বলে,”এবার কি হবে দোস্ত অনু তো সাপের লেজে পা দিয়েছে। ”
আরিয়ান বলে,”যদি কেউ নিজের পায়ে কুড়াল মারে তাকে তো আর আমরা বাঁচাতে পারি না।”
সিয়াম বলে, “দোস্ত তুই এমন কথা বলছিস? ”
অারিয়ান কোনো কথা না বলে ক্লাস করতে চলে যায়।
সিয়াম আরিয়ানের এমন ব্যবহারে খুব হতাশ হয়ে পড়ে নিজে নিজে বলে,”আরিয়ান সবটা জানার পর ও অনুকে নিয়ে এতোটা উদাসীন থাকে কি করে?
(আচ্ছা অনু কি সত্যি আরিয়ানের মনে স্থান করে নিতে পারে নাই?
আচ্ছা অনুর এমন কাজের ফল কি হতে পারে?
আপনাদের থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করি প্লিজ নেক্সট নাইস বলবেন না।
আপনাদের থেকে কি গল্প সম্পর্কে কিছু সুন্দর মন্তব্য আশা করতে পারি না?)
‘
‘
‘
‘
চলবে….