অচেনা আমি ! পর্বঃ- ৬
লেখাঃ শারমিন আক্তার
আয়াতঃ আসলে তনয়া বিকাল থেকে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর থেকেই মনটা ভিষন খারাপ লাগছিলো। তারপর তোমাকে স্যরি বলতে নিবো তখনই তুমি বমি দিলে, তোমার প্রেগনেন্সির কথা জানলাম তারপর আরো কেমন যেনো দ্বিধায় পরে গিয়েছিলাম, তাতে তোমার সাথে আরো বেশি বাঁজে ব্যবহার করে ফেললাম।
তুমি রুম থেকে চলে গেলে! আমি বেলকুনিতে দাড়িয়ে ভাবছিলাম ঠিক কি কি করেছি আমি? তখন ভেবে দেখলাম তুমিই ঠিক ছিলে আর আমি ভুল। তখনই ডাঃ ইমন এর ফোন আসে সে খুব খুশি ছিলো কারন আজ দশ বছর পর তার স্ত্রী মা হতে চলছে। সে খবর নাকি গতকাল পেয়েছে তাই আমাদের বাড়ি থেকে দূরে যে একটা এতিম খানা আছে না সেখানে নাকি কাল সকালে বাচ্চাদের নতুন কাপড় দিবে, সেখান থেকেই দুপুরে আমাদের বাসায় আসবে। ডাঃ ইমন এর কথায় যেনো আমার হুস ফিরলো, কারন গত প্রায় পাঁচ বছর যাবত ডাঃ ইমনকে চিনি, তিনি আমা অনেক সিনিয়ার। একটা বেবির জন্য সে কি না করেছে? উন্নত চিকিৎসা করিয়েছেন, যখন তাতেও কাজ হয়নি তখন ওঝা, ফকির, হুজুর কারো কাছে যেতে বাদ রাখেনি। একজন ডাক্তার হয়েও সে ওসব বিশ্বাস করেছে। আর আমি আমার মানুসিক প্রস্তুতি নেই বলে বাচ্চা চাইছিনা, তখন নিজের উপরই নিজের রাগ হচ্ছিলো। তারপর রুম থেকে বের হয়ে সোজা ছাঁদে আসলাম জানি তুমি মন খারাপ হলে ছাঁদে আসো। এসে দেখলাম তুমি ছাঁদের এক কোনে বসে কান্না করছো তখন ভাবলাম কিছুক্ষন কাঁদলে তোমার মন ভালো হবে, যখন তুমি নিচে নামবে তখন তোর সাথে কথা বলবো। কিন্তু তোমার কান্না দেখে আমার খুব কান্না পাচ্ছিলো। তারপর তোমার ফোনে ফোন আসলো আর তুমি রাগ করে কাকে যেনো কত কথা বললে। কিন্তু দোষ আমার একার না তোমারও ভুল আছে!
তনয়াঃ আমার কি ভুল?
আয়াতঃ আমি চলে যেতে বললাম ওমনি তুমি রাগ দেখিয়ে চলে গেলে একবারও ভাবলে না হ্যাজবেন্ডটা আমার, তার উপর আমার পূর্ন অধিকার আছে, সে যদি ভুল করে তাকে বকা দেয়ার অধিকারও আমার আছে। বাঙালি ধার্মিক নারী নিজের বরের উপর অধিকার খাটাও। নয়তো তোমার বর হাতের বাইরে চলে যাবে।
তনয়াঃ আচ্ছা কিভাবে অধিকার খাটাবো?
আয়াতঃ আদর করে।
তনয়াঃ আচ্ছা ! আমি তো চুল টেনেও অধিকার খাটাতে পারি, খাটাবো?
আয়াতঃ নাহ থাক! আচ্ছা তনয়া তখন কে ফোন করেছিলো? তুমি অত রাগ করে কথা বলছিলে? ঐ ছেলেটা নাকি?
তনয়াঃ হুমমম। আয়াত তোমাকে বিকাল থেকে একটা বিষয় বলবো বলবো কিন্তু বলাই হচ্ছে না!
আয়াতঃ কিহ বিষয়?
তনয়াঃ যে ছেলেটা ফোন দেয় আমার মনে হয় ছেলেটার গলার আওয়াজ আমি কোথায় যেনো শুনেছি। গলার আওয়াজটা পরিচিতো কিন্তু কেন যেনো মনে করতে পারছি না ঠিক কোথায় শুনেছি বা কার গলা?
আয়াতঃ তাহলে চিন্তা করো, ভেবে দেখো কে? আমাদের পরিচিতো কেউ কি না? তাহলে বেটাকে উচিৎ শিক্ষা দিবো, শালার পিছনে রকেট বেঁধে মহাশূণ্যে পাঠিয়ে দিবো। আমাদের ভিতর ঝগরা বাধাতে চেয়েছে। শালা বাদর, ইতোর, গাঁধা, মরা উল্লুক।
তনয়াঃ আয়াত মুখের ভাষা ঠিক করো।
আয়াতঃ ওপস, স্যরি।
তনয়াঃ আচ্ছা আয়াত একটা আইডিয়া আছে, আমাকে হেপনোটাইস করে তারপর খুঁজে বের করো লোকটা কে? মানে আমাদের মস্তিষ্কে তো অনেক জিনিস জমে থাকে কিন্তু সময় মতো আমরা সেটা মনে করতে পারি না কিন্তু হেপনোটাইস এর মাধ্যমে এসব বিষয় জানা সম্ভব! তোমার তো এরকম পরিচিতো ডাক্তারও আছে! আইডিয়াটা খুব ভালো না।
আয়াতঃ এর থেকে খারাপ আইডিটা পৃথিবীতে নাই।
তনয়াঃ (মুখ গোমরা করে) কেনো?
আয়াতঃ ম্যাডাম ভুলে গেলেন আপনি প্রেগনেন্ট। এ অবস্থায় এমন কিছু করার মানে জানো? পড়ছো তো হিসাব বিজ্ঞান নিয়া, চিকিৎসা বিজ্ঞানের কি বোঝ?
তনয়াঃ খবরদার আয়াত আমার হিসাববিজ্ঞন নিয়া কোন কথা বলবা না।
আয়াতঃ চুপ করো । আর শোন কাল বিকালে জলদি তৈরী থেকো, তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাবো, ঘরে বসে তো আমি কেবল প্রাথমিক চিকিৎসার ভিত্তিতে বলছি তুমি প্রেগনেন্ট কিন্তু কাল হসপিটালে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে জানতে হবে তোমার শরীর কি রকম বেবির কি পজিসন, তোমাকে কি কি মেডিসিন নিতে হবে আরো অনেক কিছু।
তনয়াঃ তোমার ডাক্তার গিরি ছাড়ো তো ! ঘুম পেয়েছে ঠিক মত শোও আমি ঘুমাবো।
আয়াতঃ ভালো কথা বললেই ওনার ঘুম পায়।
খুব সকালে উঠে তনয়া নামাজ পড়ে নাস্তা বানিয়ে খেতে বসবে তখন আস্ফি, আয়াতের বাবা এলেন। আস্ফি এসেই তনয়াকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো কনগ্রেচুলেশন ভাবি, কাল রাতে ভাইয়ার কাছ থেকে খবরটা পাবার পর থেকে তোমাকে দেখার জন্য মনটা অস্থির হয়ে ছিলো। কি যে খুশি লাগছে তা বলে বোঝাতে পারবো না আমাদের ঘরময় ছোট্ট দুটো পা ঘুরে বেড়াবে উহ ভাবি ভাবতেই নাচতে মন চাইছে। বাবা তো অনেক খুশি, আসলে আমরা সবাই অনেক দিন ধরে তোমার কাছ থেকে এই খুশির খবরটা শুনতে চাইছিলাম কিন্তু বলার সাহস হতো না। যখন কাল রাতে ভাইয়া খবর দিলো তারপর সকালে নামাজ পড়েই বাড়িতে রওনা দিলাম। আনিকা আপুও বাচ্চাদের স্কুল থেকে সোজা এখানে আসবে।
তনয়াঃ হুমম সব বুঝলাম এখন আমার সাথে চলো দুপুরে মেহমান আসবে।
আস্ফিঃ এ অবস্থায় তুমি কাজ করবে?
তনয়াঃ এখন কাজ করলে কিছু হবে না। চল তো ।
আস্ফি, তনয়া সাথে কাজের খালা তিনজন মিলে কাজ শুরু করে দিলো। আয়াত রান্না ঘরে এসে দেখে তনয়া ভারি পাত্র উঠানোর চেষ্টা করছে সেটা দেখে আয়াত তনয়াকে ধমক দিয়ে বললো, তোমার কমনসেন্স কম নাকি? তুমি জানো না এ সময় ভারী জিনিস উঠানো ঠিক না , তারপরও এসব করছো! খুবতো বাচ্চা বাচ্চা করো, তো প্রেগন্সেসির টাইমে যে সাবধানে থাকতে হয় তা জানো না। এসব ভারী কাজের জন্য বাড়িতে লোকের অভাব নাই তাদের বলবে। কান খুলে শুনে রাখো , বেবির জন্য যদি তোমার কোন ক্ষতি হয় তাহলে আমি কি করবো তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। আজ থেকে আমি তোমাকে সব কাজে রুটিন বানিয়ে দিবো, সে রুটিন অনুসারে না চললে তোমাকে সারাদিন রুমে বন্ধ করে রাখবো।
তনয়াঃ এতটুকুর জন্য এত বকা দেয়া লাগে?
আয়াতঃ এটা বকা না ভালোবাসা। দাও আমি উঠিয়ে দিচ্ছি।
দুপুরবেলা ডাক্তার ইমন, তার স্ত্রী আর তার বাবা আসলেন। তনয়া সব খাবার ভিতর থেকে ঘুছিয়ে দিচ্ছিলো আর আয়াত তা সবাইকে পরিবেশন করে দিচ্ছে। ইমনের স্ত্রী গিয়ে তনয়ার সাথে অনেক কথা বললো। দুপুরের পর তারা চলে যায়, আর বিকালের দিকে আয়াত তনয়াকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়, সাথে আস্ফিও ছিলো । সব পরীক্ষা করে রিপোর্টের জন্য ওয়েট করতে থাকে। আয়াত হসপিটালে কিছু জরুরি কাজ সারতে যায়। আস্ফি আর তনয়া বসে কথা বলতে থাকে তখন তনয়ার ফোনে প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল আসে। তনয়া বুঝতে পেরে ফোনটা কেঁটে দেয়, কয়েক বার রিং হয় তারপর বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করে বলে কি সমস্যা কি আপনার বিরক্ত কেন করছেন?
—–দুঃখীতো তনয়া। আমি কিছু কথা বলে ফোনটা রাখবো প্লিজ ফোনটা কেটো না। আমি সবসময় চাইতাম তোমার আর আয়াতের ভিতর ভুল বোঝাবুঝি হোক। কিন্তু সবসময় অসফল হয়েছি কিন্তু কালকে যখন তুমি কান্না করলে তখন কেমন যেনো মনে হলো কেউ কলিজা ছিড়ে বের করে নিচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছিলো তখন। তাই ভাবলাম নাহ্ তোমাদের মাঝে আর দেয়াল হয়ে থাকবো না মানে তোমাদের মাঝে আর ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করবো না। কিন্তু হ্যা তোমাকে দেখার আশা কিন্তু আমি ছাড়িনি! খুব শিগ্রই হয়তো তোমার সাথে আবার দেখা হবে!
তনয়াঃ আবার মানে? আমরা কি আগেও দেখা করেছি?
—–হ্যা তনয়া, অনেক আগে কিন্তু তখন আমি তোমায় ভালোবাসতাম না, তারপর থেকেই তোমার গল্প পড়া শুরু করে তোমার মাঝে ডুবে গেছি। তখনো আমি তোমায় দেখিনি, তাই তোমাকে দেখার ইচ্ছাটাকে মারতে পারছি না। চিন্তা করে না খুব শিগ্রই দেখা হচ্ছে। বাই। তারপর ফোনটা কেটে গেলো।
তনয়া ভাবছে তার মানে আমার ধারনা সত্যি এই আওয়াজটা আমি কোথাও তো শুনেছি কিন্তু কোথায় সেটা মনে করতে পারছি না। আস্ফির ডাকে ধ্যান ভাঙলো তনয়া।
আস্ফিঃ কি হলো ভাবি কার ফোন ছিলো।
তনয়াঃ রং নাম্বার থেকে।
আয়াত রিপোর্ট নিয়ে আসার সাথে সাথে আস্ফি প্রশ্নের বন্যা বইয়ে দিলো। ভাইয়া রিপোর্টে কি আসছে? ভাবি শরীর ঠিক আছে তো? ছেলে না মেয়ে? বেবি ঠিক আছে তো? আরে বলো না।
আয়াতঃ চুপ! মাত্র সাত সপ্তাহ হলো এর মধ্যে ছেলে না মেয়ে কি করে বোঝা যাবে আজব মেয়ে তো। চল যেতে যেতে সব বলছি। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে তনয়া আস্ফি পিছনে বসে বকবক করছে আর আয়াত সামনে বসে বলছে জানো মেয়েদের মুখ দু মিনিট বন্ধ থাকে না যে এই মহান বানীটি যে করছে তাকে পেলে সালাম করতাম কারন সে সত্যি বলে গেছে। এত কথা তোমাদের পেটে কোথা থেকে আসে আল্লাহই জানে। সারাদিন বকবক করতেই থাকে।
আস্ফিঃ তুই চুপ কর। আমরা জরুরি কথা বলছি। শুনতে মনে না চাইলে গাড়ি থেকে নেমে যা।
আয়াতঃ তুই যে ছেলেকে পছন্দ করিস তার কথা বলছিস তো!
আস্ফিঃ তু তু তুই কি করে জানলি? ভাবি তুমি বলছো? (তনয়ার দিকে তাকিয়ে)
আয়াতঃ নারে ও কিছু বলেনি। তুই যে রোজ আমাকে দিয়ে ফোনে গাদা গাদা টাকা রিচার্জ করাস তাতে বুঝেছি। তা কত দূর এগোলো? এসব বাদরামি বন্ধ করে বাসায় আসতে বল, তোকে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে আপদ বিদায় করি।
আস্ফিঃ ভালো হচ্ছে না কিন্তু ভাইয়া। আর তাছাড়া ও শুধু আমার বন্ধু। এখন পর্যন্ত আমরা কেউ কাউকে কিছু বলিনি।
আয়াতঃ দেখ বোন ভালোবাসা অন্যায় না কিন্তু ভালোবাসার মোহে পরে বিয়ের আগে নোংড়ামি করা পাঁপ। আমি জানি আমার বোন কখনো পাঁপ করতে পারে না। পছন্দ করাটা অন্যায় না কিন্তু পছন্দের দোহাই দিয়ে নোংড়ামি করা পাঁপ। তাই বলছি ছেলেটা কে বল?
আস্ফিঃ ও আসলে বাবার বন্ধু রহমান আঙ্কেল এর ছেলে রায়হান।
আয়াতঃ কি? ও তো আমার বন্ধু জয়ের ছোট ভাই। কিন্তু তোদের মাঝে কিভাবে কি হলো? বুঝতে পারছি না।
আস্ফিঃ না না ভাইয়া তেমন কিছু হয়নি। শুধু সামান্য কথা হয়েছে, আমিই ওকে পছন্দ করি কিন্তু ও করে কি না জানি না তবে ওর কথায় তো মনে হয় ও আমাকে—-
চলবে———
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
খুব তারাহুরো করে লিখছি। তাই বানান ভুল হলে দয়া করে ইগনোর করুন।