অবশেষে তুমি আমার !! Part- 37
– রাজের বুক ফেটে কান্না আসছে। এদিকে পার্টি শেষে সবাই যখন চলে গেছে তখন রাজ অধরার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,’ কলিজার টুকরা সত্যিই আমি তোমার কাছে মরে গেছি? দেখো আজকের পর আর কখনো তোমার সামনে আসবো না। একটা সময় পাগলের মতো হন্য হয়ে খুঁজবে আমায়। একটাবার বুকে আসার জন্য আমার কাছে ভালোবাসা ভিক্ষা চাইবে। আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে। আর আজকের পর আপনাদের মাঝে আর বাঁধা হতে আসবো না। তবে যাওয়ার আগে সত্যি কয়েকটা কথা বলে যায়, ‘ আচ্ছা বলেন তো আপনার মাকে যদি আমি পতিতা বলে সম্বোধন করি তখন কেমন লাগবে? আমার বাবা যদি আপনার মা-বাবাকে মেরে ফেলতো তখন কেমন লাগত আপনার? আপনার কাকার জন্য আমার মায়ের মমতা দেওয়া ফুপিটা আত্মহত্যা করেছিল। কি অপরাধ ছিল? আপনার চাচাকে বোকার মতো বিশ্বাস করা?
এতো কিছুর পরও আপনাকে মন থেকে সরাতে পারিনি। আপনার দেওয়া সেই পুতুলটার কথা মনে আছে আপনার? আপনি না বলেছিলেন যখন আমার কথা খুব করে মনে পড়বে তখন আমার পুতুলটার সাথে কথা বলবে মনে হবে আমার সাথে কথা বলছো। জানেন আমি প্রতি রাতে আপনার দেওয়া পুতুলটাকে বুকে নিয়ে কান্না করেছি। বাহিরে বাহিরে আপনাকে যতই অপমান করেছি কিন্তু মনে মনে তার চেয়েও বেশি ভালোবেসেছি। জানি না আর কতটা ভালোবাসা যায়। আপনার অধিকারটা এখনো পর্যন্ত কাউকে দেয়নি। আপনি শুধু বাহিরটাই দেখেছেন। ভেতরটা কখনো দেখেননি। তার পরেও বলছি না জেনে আপনাকে যা কষ্ট দিয়েছি সেজন্য মন থেকে ক্ষমা করবেন। আপনাকে অনেক বিরক্ত করেছি। আর হ্যাঁ রাইমাকে একটু আমার কুলে দিবেন?
– অধরা চুপ করে আছে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। বুকের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। চোখের সাগরে বান আসছে মনে হচ্ছে।
– কি হলো দিবে না আমার কুলে? আর তো কোনদিন এ দেশে আসা হবে না। শেষবারের মতো রাজকন্যাটাকে দেখে যায়।
– অধরা আর কিছু বললো না রাইমাকে রাজের কুলে তুলে দিল।
– রাজ রাইমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয় কপালে চুমু দিয়ে বললো,’ মা আমি সত্যিই হতভাগা পিতা। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তোর কাছে থাকতে পারছি না। তোর মায়ের কাছে যে আমি মৃত! তুই একদম মন খারাপ করিস না। যেখানে থাকি তোর কথা সব সময় মনে পড়বে। যতবার নামায পড়বো ততবার আমার মোনাজাতে তুই থাকবি। তুই যে আমার মা। আর একদম কান্না করবে না। মমের সব কথা শুনবে । রাজ রাইমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে এভাবে একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে। চোখ থেকে টপটপ করে জল চোখের কার্ণিশ বেয়ে নিচে পড়ছে।
– রাজের পিছন পিছন আনিশাও আসছে। আনিশা রুমের বাহির থেকে সবকিছু দেখছে।
– রাজ রাইমার কপালে আরেকটা চুমু দিয়ে অধরার কুলে তুলে দিয়ে বললো,’ ভালো থেকো কলিজার টুকরা। বড্ডবেশি ভালোবাসতাম। আর এই নাও পুতুল। এটার আর কোন দরকার নেই। এতদিন ভাবতাম তোমার মনে একবিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা আমার জন্য আছে কিন্তু না। যা আছে পুরোটায় ঘৃণা । কথাটা বলে শেষবার অধরার মুখের দিকে তাকালো রাজ। অধরা রাইমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– রাজের খুব করে ইচ্ছে করছে, ‘ অধরাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে। কিন্তু সেটা সম্ভব না। সে অধিকার যে সে অনেক আগেই হারিয়ে ফেলছে। রাজ শার্টের হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে অধরার বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
– অধরা এবার চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। এমন সময় আনিশা অধরার সামনে এসে বললো,’ আপু আপনার সাথে আমার একটু কথা আছে!
– কোন বাজারি মেয়ে আমার বোন হতে পারে না। এবং এমন মেয়ের সাথে আমার কথাও নেই।
-সরি ম্যাডাম! চরিত্রহীন মেয়ের আপনার বোন হতে পারে না। সর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।
– হুম আপনি কিভাবে বাসায় ঢুকলেন? বের হয়ে যান।
– ম্যাম আমার কথা শেষ হলেই বেরিয়ে যাবো।
– আপনার মতো মেয়ের সাথে আমার কোন কথা নেই। আনিশাকে দেখলেই রাজ আর আনিশার অশালীন ভিডিওটার কথা মনে পড়ে। যে ভিডিওর কথা ভেবে সে একটা রাত ঘুমাতে পারে না। বুকে শত কষ্ট জমা রেখে রাজকে যার জন্য নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিল।
– কি হলো ম্যাম?
– আপনি আসতে পারেন।
– ম্যাম আপনার কাছে পাঁচমিনিট সময় ভিক্ষা চাচ্ছি। আমার কথা শেষ না হলে যাবেন না।
– আচ্ছা বলেন।
– ম্যাডাম রাজ কিন্তু আপনাকে সত্যি সত্যিই অনেক ভালোবাসে। আপনি একটা কথা ভেবে দেখবেন? আপনাকে সে চুত্তি করে কিনেছিল কত টাকার বিনিময়ে? এতটাকা দিয়ে আপনার চেয়ে হাজারগগুণ সুন্দরীর সাথে রাত কাটাতে পারতো। বিদেশী ক্লাইটদের মনোরঞ্জন করতে পারতো। আচ্ছা আপনার মনে নেই রিফাত আপনাকে পার্টিতে বাজে কথা বলেছিল বলে রাজ আপনার সামনে কিছু বলিনি তবে পরের দিন আপনাকে নিয়েই হসপিটালে দেখা করতে গিয়েছিল। আপনাকে হোটেলে রেখে কে পুলিশ পাঠিয়েছিল জানেন? রাজ পাঠিয়েছিল। হোটেল রুম থেকে পালানোর প্ল্যান কে করেছিল জানেন? রাজ করেছিল। রাজ নিজে থেকেই নিজেকে আপনার সামনে খারাপ ভাবে উপস্থাপন করেছিল। সে পারেনি তার মা -বাবার খুনিকে নিজের করে নিতে। সে কতটা আপনাকে ভালোবাসতো সেটা আল্লাহ জানে। সে জানতো না আপনি তার মা-বাবাকে এবং তাকে বাঁচাতেই ওসব বলেছিলেন। আপনি সে সব কথা তাকে আগে কোনদিন বলেননি। যাই হোক রাজকে এতটা কষ্ট না দিলেও পারতেন।
– কথা শেষ? নেক্সট টাইম কোন চরিত্রহীনের বিষয় নিয়ে উকালতি করতে আমার সামনে আসবেন না। নিজের চরিত্রেরই ঠিক নাই অন্যের সাফাই গাইতে আসছে।
– মিস অধরা চৌধুরি। নিজেকে কি মনে করেন? কত হাজার কোটি টাকার মালিক আপনি? আরে এতো সম্পদ আপনার বাবা বানিয়েছে কি করে জানেন? রাজের বাবার সম্পত্তি আত্মসাৎ করে। এই সম্পদ নিয়ে অহংকার করেন? রাজ আপনার সম্পদের জন্য আপনাকে ভালোবাসে এটাই তো ভাবেন? আরে আপনাদের মতো বড়লোক আমেরিকায় আমার বাবার সাথে দেখা করতে গেলেও সিডিউল নিতে হয়। রাজ সে সম্পদের দিকে ফিরেও তাকায়নি। আরেকটা কথা আমি নিজেও রাজকে ভালোবাসি। কিন্তু রাজ জানে না। যাই হোক আমার ভালোবাসার মানুষটা যেন ভালো থাকে এটাই চেয়েছিলাম। ভালো থাকবেন। আমার কথায় মনে কষ্ট পেলে ক্ষমা করে দিবেন। কথাটা বলে আনিশা চলে গেল।
– অধরা রাইমাকে নিয়ে তার রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিল। এখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। বুক ফেটে কান্না আসছে। এতটা ভালোবাসার পরও প্রিয় মানুষটাকে বুকে জড়িয়ো নিতে পারলো না। রাজের দেওয়া ছেলে পুতুলটা বুকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। চোখের সামনে আনিশা আর ত্রিযামিনী সাথে রাজের অশ্লীল ভিডিওটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তার কলিজার টুকরা এতটা খারাপ হবে। তার ভালোবাসার ভাগ অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছে।মনে হচ্ছে দেহ থেকে প্রাণটা বের করে দেয়।
– এদিকে রাজ বাসায় গিয়ে সেদিন রাতটা আর ঘুমাতে পারেনি। সারা রাত কান্না করছে। চোখের সামনে বারবার অধরার মায়ামাখা মুখটা ভেসে উঠছিল!আনিশা খাবার জন্য কয়েকবার ডেকেছিল। রাজ আর রুম খুলেনি। পরের দিন আনিশাকে নিয়ে রাজ দেশে ব্যাক করে। ব্যাক করার পর দেশে এসে কোর্টে থেকে ডির্ভোস পেপার নিয়ে অধরার ঠিকানায় ফ্যাক্স করে পাঠিয়ে দেয়। আর ছোট্ট করে একটা মেইল করে,’ কলিজার টুকরা আগের ডির্ভোস পেপারটা ভুল ছিল। ‘ সেটা কোর্টের কাগজ ছিল না। তাই তখন তুমি সাইন করলেও ডির্ভোস হয়নি। তুমি তো তিয়াসকে বিয়ে করতেছি। তাই একজনের বউ হয়ে আরেকজনকে কিভাবে বিয়ে করবে? এজন্য তোমাকে মুক্ত করে দিলাম। তোমার যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে থাকতে পারো। আমি আর বাঁধা হবো না। আর রাজকন্যাটার যেন কোন কারণে কষ্ট না হয়। এটাই হয়তো শেষ মেসেজ। বিরক্তি করার জন্য ক্ষমা করে দিয়ো।
ইতি,
মৃত।
-অধরা ডির্ভোস লেটারটা সাইন করবে এমন সময় রাইমা জোরে জোরে কান্না করে উঠল। অধরা ডির্ভোস লেটার রেখে রাইমার কাছে ছুটে গেল। রাইমা এখনো কাঁদতেছেই। ইশু রাইমাকে কুলে নিয়ে এটা সেটা বলছে কিন্তু কান্না থামছে না। অধরা রাইমাকে কুলে নিতেই রাইমার কান্না থেমে যায়। ঠিক এমন সময় তিয়াস অধরার কাছে এসে বললো,’ অধরা আমি কাল দেশে চলে যাচ্ছি।’ আমি আসছিলাম তোমার মুখে হাসি দেখার জন্য। খুব করে চেয়েছিলাম রাজ ভাইয়া আর তোমাকে এক করে দিতে। কিন্তু তুমি।
– তিয়াস প্লিজ। আমি রাজের একটা নয় কয়েকটা ভিডিও দেখেছি। একটা মানুষ এতটা নারীলোভী হতে পারে কি করে? তারপরেও তুমি তার পক্ষ নিয়ে কথা বলছো?
– অধরা আমি তোমাকে ভালোবাসি বলতে গেলে নিজের থেকেও বেশি। আমি চাই আমার ভালোবাসা। আমার কলিজাটা সবসময় হ্যাপি থাকুক। কিন্তু না। তাই আমি তোমার কষ্ট এখানে থেকে দেখতে পারবো না। যেখানেই থাকি তোমার প্রতি ভালোবাসাটা সবসময় একই রকম থাকবে। আমি এখন আসি?কথাগুলো ঠিকঠাক মতো বলতে পারলো না। কান্না জড়ানো কন্ঠো শুনে অধরার বুঝতে বাকি রইল না তিয়াস কাঁদছে।
– আচ্ছা যাও।
– তিয়াস চলে গেলে ইশু বললো,’ আপু এখনো সময় আছে। তুই তিয়াস ভাইয়াকে যেতে দিস না। মানুষটা তকে বড্ডবেশি ভালোবাসে। এমন মানুষ হারালে সারাজীবন কাঁদতে হবে। কথা বলার সময় কাঁদছিল তিয়াস ভাইয়া। সত্যি তিয়াস ভাইয়ার মতো মানুষ হয় না। এতিম খানার বাচ্চাগুলোর হাসির দিকে তাকালে তিয়াস ভাইয়ার কথা মনে পড়ে। তিয়াস ভাইয়া ঠিক নিজের ভাইয়ের মতো ব্যবহার করে। তাই আমি বলতে চাচ্ছি তিয়াস ভাইয়াকে সব ভুলে মেনে নে। তোর কান্না আমি যে বোন হয়ে সহ্য করতে পারি না।
– অধরা ইশুকে কিছু না বলে রুমে চলে গেল। পরের দিন অধরা তিয়াসকে কিছু না বলেই তার বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে দেখে তিয়াসের রুম খোলা। বিছানায় বসে ল্যাপটপে ভিডিও কলে কথা বলছে।
– অধরা জানালা দিয়ে তাকিয়ে থমকে গেল। তিয়াস ত্রিযামিনীর সাথে কথা বলছে।
– তিয়াস ত্রিযামিনীকে বলছে জান আর কয়েকদিন তারপর আমরা দু’জন হবো হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। এখন অধরাকে বিয়ে করা সময়ের ব্যাপার।
– অধরাকে বিয়ে করে আবার আমাকে ভুলে যেয়ো না।
– তোমাকে ভুলে গেলে বাঁচবো কিভাবে? পাঁচবছরের ভালোবাসা কি একটা বিবাহিত মেয়ের জন্য নস্ট করবো।
-চলবে””