অবশেষে তুমি আমার

অবশেষে তুমি আমার !! Part- 36

– ইশু রুমে ঢুকলেই অধরা বলে,’ইশু আমি চাই না কোন দুশ্চরিত্রবান ব্যক্তি আমার কলিজার টুকরাকে স্পর্শ করুক। যে আমার কলিজার টুকরার জন্মের আগেই মেরে ফেলতে চেয়েছিল।
– রাজের দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বেবিটাকে অধরার পাশে রেখে কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে রেখে দিল।
– অধরা অগ্নদৃষ্টি দিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। রাজ অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।
– কি হলো যাচ্ছেন না কেন?
– রাজ আর কিছু বললো না চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
– ইশু আর তিয়াস পাশেইই ছিল। রাজ চলে যেতেই তিয়াস বললো,’ অধরা তুমি কিন্তু এখন বড্ড বারাবারি করছো! রাজ ভাইয়াকে এতটা কষ্ট দেওয়া ঠিক না। আমি চাই তুমি ভালো থেকো। আর আমি এটাও জানি তুমি রাজ ভাইয়াকে ছাড়া ভালো থাকবে না।
– তিয়াস একটা মানুষের হৃদপিন্ড কয়টা থাকে জানো? রাজ আমার হৃদপিন্ড। হৃদপিন্ড ছাড়া মানুষ বাঁচে না। তেমনি রাজকে ছাড়াও আমি অনেক কষ্টে আছি। এমন কোন রাত নেই ওর জন্য না কাঁদি। আরেকটা কথা ভালোবাসলেই যে সবাইকে আপন করে পাওয়া যাবে এমন কোন কথা নেই।
– অধরা আমি সবই বুঝি। তুমি রাজ ভাইয়ার ভুলক্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে কাছে টেনে নাও। আর সামনে শুক্রবার আমার ফ্লাইট। চলে যাবো এ দেশ থেকে। আমি তোমাদের মাঝে বিরক্তির কারণ হতে চাই না।

– তিয়াস তুমি রাজকে মেনে নিতে বলো, ‘ বলোতো নিজ চোখে কোন স্ত্রী তার স্বামীকে পরনারীর সাথে পরকীয়া করা দেখলে সেটা মেনে নিতে পারবে? আমিও পারিনি। বিশ্বাস ছিল আমার রাজ কখনো অন্য মেয়ের সাথে অশ্লীল কাজজ করবে না কিন্তু কি করলো? শুধু আনিশা হলেও ভেবে দেখতাম। তার খালাতো বোন ত্রিযামিনীর সাথেও তার অবৈধ সম্পর্কের ভিডিও নিজ চোখে দেখছি। দেখার পর বিশ্বাস করতে পারিনি। তাই সাইবার স্পেশালিস্টকে দিয়ে পরীক্ষা করে পেয়েছি ভিডিও অরজিনাল। কোন ইডিট করা নেই। এর পরেও কিভাবে বলো তাকে মেনে নিতে? আমাকে কত অত্যাচার করছে। সব ভালোবাসা ভেবে মেনে নিছি। একটি প্রতিবাদও করিনি। তোমার মনে আছে কিডনাপারদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও তুমি। সেদিন হোটেল থেকে পালিয়ে এসেছিলাম। আমার তো মন আছে! আর কতো কষ্ট পাবো আমি। পাহাড়সম ভালোবেসেও প্রিয় মানুষটিকে নিজের করে নিতে পারছি না।
– তিয়াস অধরার সাথে যুক্তিতে হেরে গিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।
– ইশু অধরার পাশে বসে আছে। অধরা ইশুকে ইশারা দিয়ে বললো,’বেবিটা তার বুকে দিতে।
-ইশু বেবিটা অধরার বুকে দিতেই। অধরা বেবিটার কপালে চুমু দিয়ে বললো,’ মা রাগ করেছিস? রাগ করিস না। তোর বাবাইকে বকেছি। তাই অভিমান করে আছিস? কি করবো মা আমি যি পারছি না তোর বাবাইকে আমার করে নিতে। নিয়তী আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।!অধরা এখন আর তার চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না। বর্ষাকালে নদী যেমন টুইটুম্বর থাকে তেমনি অধরার চোখে জলে টুইটুম্বর হয়ে আছে। মাঝে তাঝে উপড়ে পড়ছে। বুকের ভেতরটা মনে হয় ফেটে যাচ্ছে।
– এদিকে রাজ বাসায় এসে শুয়ে পড়ে। আনিশা খেতে বললেও বলে খিদে নেই। আনিশা বুঝতে পারলো রাজের মন খারাপ। তাই ভাবলো রাজকে যদি খুশি করা যায়?
-যে ভাবা সেই কাজ।

– আনিশা শাড়ির কুচিটা খুলে দিয়ে বললো,’ রাজ শাড়ির কুচি দিতে পারছি না। তুমি না অধরা আপুর শাড়ির কুচি দিয়ে দিতে। আমারটা একটু দিয়ে দিবে?
– আনিশা প্লিজ আমাকে একা থাকতে দাও।
– রাজ তোমার কি হয়েছে? বাহির থেকে এসেছ থেকেই তোমার মন খারাপ! বলবা আমায়?
– আনিশা আমাদের মেয়ে হয়েছে। মেয়েটাকে ঠিকমতো কুলেও নিতে পারিনি। অধরা বলেছে,’ আমি নাকি দুশ্চরিত্রবান। তাই আমার কলিজার টুকরা। আমার রাজকন্যাকে মন ভরে দেখতেও পারিনি।
– জানো আজকের মতো খুশি আমি জীবনেও হয়নি । যতটা খুশি আমাদের রাজকন্যাকে দেখে হয়েছিলাম।
– রাজ আর কিছু বলতে পারছে না । গলাটা ধরে আসছে।
– আনিশা আর কিছু জানতে চাইলো না! শুধু বললো,’ আল্লাহর উপর ভরসা রাখো সব ঠিক হয়ে যাবে।
– রাজের খুব কষ্ট হচ্ছে পৃথিবীটা বিষাদময় লাগছে । রাজের মন খারাপ দেখে আনিশার অধরার সাথে কয়েকবার দেখা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অধরার সাথে দেখা করতে পারেনি।
– দেখতে দেখতে রাইমার বয়স তিন মাস হতে চললো। তিন মাসে রাজ কতবার অধরার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল কিন্তু পারেনি।
– রাজ দিনরাত শুধু পুতুলটার সাথেই কথা বলতো।
এদিকে আনিশার বাবার শরীরটাও ভালো না। আপন বলতে তার বাবা ছাড়া কেউ নেই। ছোট্টবেলায় আনিশাকে জন্মদিতে সময় তার মা মারা যায়। আনিশার জন্য আনিশার বাবা পরিবর্তীতে আর বিয়ে করেনি।আনিশা ভাবল রাজকে বলে সে আমেরিকা চলে যাবে। তাই রাজের কাছে গিয়ে বললো,’ রাজ তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
– হুম বলো।
– আগে বলো কথাটা বলার পর ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট করবে না তো?
– আশ্চর্য! তুমি বলো। তোমার কোন কথায় আমি কষ্ট পাবো না।
– তাহলে শুনো। কলেজ জীবন থেকে যে ছেলেটাকে ভালোবাসতাম। যাকে নিয়ে প্রতিটা স্বপ্ন সাজিয়েছি বিন্দু বিন্দু জলের মতো। যার জন্য আমেরিকা ছেড়ে দেশে এসেছি। যার জন্য আজ পর্যন্ত কোন ছেলেকে আমার হৃদয়ে জায়গা দেয়নি । হৃদয়ের সম্পূর্ণটা জুড়ে শুধু সেই রয়েছে। সে কে জানো?
– আনিশা বলো কে এমন ভাগ্যবান পুরুষ?
– সে ভাগ্যবান পুরুষটা আর কেউ নয় তুমি।
– আনিশা তুমি যোক করছো তাই না?
– রাজ আমি সত্যি বলছি সে আর কেউ নয় তুমি।
– আনিশা পাগল হইছো? তুমি জানো না আমার নিঃশ্বাসের সাথেও অধরার অস্তিত্ব মিশে আছে। ওর জয়গায় কাউকে বসাতে পারবো।
– রাজ আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না রাজ। একবার ভালোবাসার অধিকারটা দাও আর কখনো তোমার চোখে জল আসতে দিব না ।
– আনিশা ক্ষমা করবে । পারবো না আমি।
– আনিশা এবার হু হু করে হেসে উঠল।
– আরে হাসছো কেন?
– আরে পাগল আমাকে পাগলা কুকুরে কামড়াইছে যে তোমাকে ভালোবাসমু? আরে হৃদ কে কিভাবে বলবো তা তোমার কাছ থেকে রিয়ারসেল করে নিলাম। আর এই দেখ হৃদ। আনিশা তার ফোন থেকে একটা পিক দেখিয়ে বলল।
– ও তাহলে এতদিন পর তোমার ভালোবাসার মানুষকে দেখতে পেলাম।
– হুম। আরেকটা কথা। হৃদের সাথে দেখা করতে দেশে যাবো আজ কালের মধ্যে।
– আচ্ছা। আমাকে নিবে না?
– নিবো না। হৃদকে শুধু আমিই দেখবো। তুমি অধরা আর তোমাদের বেবী নিয়ে দেশে ফিরবে।
এদিকে রাজ জানতে পারলো তাদের মেয়ে রাইমার জন্য একটা পার্টির ব্যবস্থা করেছে। রাজ ভাবলো আজ যদি রাইমা আর অধরাকে এক নজর দেখতে পারে। সেজন্য সন্ধ্যায় পার্টিতে সবার সাথে রাজও লুকিয়ে ঢুকে পড়ে।
– বাড়ির ভেতরটা আজ অন্যরকম ভাবে সাজানো। অধরা আজ অনেকদিন পর শাড়ি পরেছে। শাড়িতে তাকে সাক্ষাৎ পরী পরী লাগছে।তার পাশেই তিয়াস দাঁড়িয়ে আছে একটা নীল রঙা পাঞ্জাবী পরে। এক কথায় বলতে গেলে অধরার ড্রেসের সাথে ম্যাচ করে। তবে আজ সবচেয়ে সুন্দর লাগছে রাইমাকে। মনে হচ্ছে একটা বেবীডল। এতো সুন্দর কোন মেয়ে হয় নাকি। মনে হচ্ছে আল্লাহ তাদের ঘরে একটা পরী দিয়েছে। সবাই রাইমার দিকে চেয়ে রয়েছে।
-এদিকে সবাই বলতেছে ম্যাম বেবীর আব্বু কোথায়?
– হঠাৎ অধরা সবাইকে চুপ করেরে দিয়ে বললো,’সে মারা গিয়েছে!
-কে বললো বেবির বাবা নেই আমিই তার বাবা।
– অধরা রাজকে দেখেই বললো,’ আপনি এখানে? আপনাকে তো ইনভাইট করা হয়নি?
– মেয়ের অনুষ্ঠানে বাবাকে ইনভাইট করতে হয় না?
– এই সিকুয়েটি এসব পাগল লোক কিভাবে বাসায় ঢুকে ইনভাইট ছাড়া?
– সবাই নিশ্চুপ হয়ে আছে। এমন সময় ইশু বললো,’ হ্যালো গাইস আগামী মাসের ২১ তারিখ আপু আর তিয়াস ভাইয়া বিয়ে করতে যাচ্ছে আপনারা সবাই আমন্ত্রিত। অধরা মুচকি হাসলো ইশুর কথা শুনে।
তিয়াস ইশুর পাশে এসে দাঁড়ালো।

– রাজের বুক ফেটে কান্না আসছে। এদিকে পার্টি শেষে সবাই যখন চলে গেছে তখন রাজ অধরার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,’ কলিজার টুকরা সত্যিই আমি তোমার কাছে মরে গেছি? দেখো আজকের পর আর কখনো তোমার সামনে আসবো না। একটা সময় পাগলের মতো হন্য হয়ে খুঁজবে আমায়। একটাবার বুকে আসার জন্য আমার কাছে ভালোবাসা ভিক্ষা চাইবে। আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে। আর আজকের পর আপনাদের মাঝে আর বাঁধা হতে আসবো না। তবে যাওয়ার আগে সত্যি কয়েকটা কথা বলে যায়, ‘ আচ্ছা বলেন তো ”””
চলবে”””””