ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 14
আমানের কথা শোনার পরেই নীতা দরজার দিকে তাকালো আর আতকে উঠলো, নীতার সাথে সাথে মীরা আর আমানের আম্মুও অবাক হয়ে গেলো দরজার দিকে তাকিয়ে। নীতা তুতলিয়ে বললো।
নীতা– প..পু..পুলিশ ক..কে..কেনো আ..আমান?
আমানের কাছ থেকে কোনো উত্তর এলো না আমান নিজের মনে গেম খেলে যাচ্ছে ফোনে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে, নীতা আরো কিছু বলতে যাবে তখনই পুলিশ বলে উঠলো।
পুলিশ– মিস নীতা আপনার বিরুদ্ধে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আছে, আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।
নীতা– হোয়াটটটট!!! (চিৎকার করে)
পুলিশ– এই তোমরা ওনাকে হ্যান্ডকাফ পড়াও। (মেয়ে পুলিশ দের ইশারা করে।)
নীতা– এসব কি বলছেন আপনারা? আমান, আমান ওনারা এসব কি বলছেন? (আমান কে উদ্দেশ্য করে)
আমান কোনো প্রতিক্রিয়া না করায় নীতা রাগে গর্জে উঠল! চিৎকার করে বললো।
নীতা– আমাননননন!!এসব কি হচ্ছে?? ওনারা কি বলছেন?? (চিৎকার করে)
আমান– ওফ ওহ! এতো চিৎকার করছো কেনো কানের সামনে?? আর ওনারা যা বলছেন তা তো শুদ্ধ বাংলা ভাষায় বলছেন, বুঝতে কোথায় অসুবিধা?? ওহ তুমি তো আবার উচ্চ শিক্ষিত, তাহ ইংলিশে বলতে হবে নাকি??
নীতা– ওহ তার মানে তুমি পুলিশ ডেকেছো??
আমান– এই তোহ! তাই বলি নীতা তো এতটাও বোকা নয় যে কথা বুঝবে না।
নীতা– তুমি, তুমি আমার সাথে বেইমানি করলে?? তুমি না আমাকে বলেছিলে আমাকে সঠিক জায়গায় পাঠাবে?? সেখানে গিয়ে আমায় যত্ন করবে??
আমান– হা হা হা হা!!(আমান হাসতে লাগলো) লাইক সিরিয়াসলি নীতা?? হা হা হা হা!!
নীতা– আমানননন!!(ঝাড়ি দিয়ে)
আমান– ওকে ওকে নাও আই অ্যাম সিরিয়াস!! তাহ তুমি কি জানো বলছিলে?? আমি তোমাকে কি বলেছিলাম??
নীতা– তুমি, তুমি আমাকে…
আমান– তোমাকে তোমার সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেবো, রোজ যত্ন করবো। তাই তো করলাম। তোমাকে তোমার সঠিক জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে ফেলেছি আমি।
নীতা– মানে??
আমান– তুমি কি ভাবলে, তুমি আমান খানের বাসায় বসে আমান খানের সাথে চালাকি করবে, আমান খানের কলিজার উপর অত্যাচার করবে তাও আবার আমাকে দিয়ে, এগুলো সব আমান খান মেনে নেবে?? (নীতার চারি পাশে পকেটে হাত দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে)
নীতা– ম..মা..মানে ক..কি বলতে চ..চা..চাইছো ত..তুমি?? (ভয়ে ভয়ে)
আমান– প্রথমত, জালিয়াতি অভিযোগ এনেছি আমি তোমার নামে। কারণ টা নিশ্চয় তুমি জানো। তাও আবার একবার বলছি। আমার কোম্পানির জন্য আমি যাকে ডিজাইনার হিসেবে সিলেক্ট করেছিলাম, তুমি তার সাথে চিটিং বাজি করে আমার কোম্পানিতে তার জায়গায় জয়েন করতে চেয়েছিলে। দ্বিতীয়ত, আমার সাথে ছলনা করে, আমার বাসায় প্রবেশ করে আমার ওয়াইফ কে বাসা থেকে বের করে আমার সাথে বিয়ে করে আমার সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে করার চেষ্টা করেছো। ইটস মিন ইউ আর আ ফ্রড।
নীতা– আমান আমি তোমার সাথে ছলনা করিনি। সত্যি সেদিন ছেলে গুলো আমার ইজ্জত নেওয়ার চেষ্টা করছিলো, তাও কার কথায় জানো?? এই, এই মীরার কথায়। (আমার দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে)
আমান– ওহ রিয়েলি?? সত্যি টা না হয় ঐ যে কাজ টা করেছে তার থেকেই জানা যাক। তোমরা ভিতরে আসো। (ইশারা করে)
আমানের ইশারা পেতেই ৪ টে ছেলে বাসার ভিতর প্রবেশ করলো আর নীতা ওদের দেখে ৪ কদম পিছিয়ে গিয়ে আমার সাথে ধাক্কা খেলো। নীতা আমার সাথে ধাক্কা খেতেই আমান হ্যাঁচকা টান দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো।
আমান– মীরাকে টাচ করার চেষ্টাও করবি না। এর পরিণাম ভয়ানক হবে।
আমনের হিংস্র চাহুনী দেখে নীতা সহ আমিও ভয় পেয়ে গেলাম, মনে হচ্ছে জানো এক্ষুনি ভষ্ম করে দেবে আমান নীতা কে।
১ম ছেলে– স্যার, স্যার আমরা বাধ্য হয়েছি কাজ টা করতে।
২য় ছেলে– আমাদের কে প্রাণের হুমকি দিয়েছিল, ঐ মেয়েটা। (আঙুল দিয়ে নীতার দিকে ইশারা করে)
৩য় ছেলে– আমরা যদি ম্যামের ইজ্জত নেওয়ার নাটক না করতাম তাহলে উনি আমাদের এবং আমাদের পরিবার কে শেষ করে দেবে বলেছিল।
৪র্থ ছেলে– সেই ভয়ে আমরা সেদিন আমান স্যার যে পথ দিয়ে আসছিলেন সে পথে নীতা ম্যামের কথা মতো ম্যাম কে মলেস্ট করার নাটক করছিলাম।
১ম ছেলে– উনি নিজেই নিজের গায়ের জামা ছিড়ে ছিলেন আর গলায় কাঁধে নখের দাগ, খামচি এসব বসিয়েছিলেন, তাও আমাদের সামনে।
নীতা– ম..মি..মিথ্যে স..স..সব মিথ্যে।
আমান– ওকে ফাইন, মেনে নিলাম ছেলেগুলো মিথ্যে বলছে বাট এটা কি নীতা??
আমান সঙ্গে সঙ্গে সেদিনের ভিডিও ওন করে দিলো যেদিন নীতা আমার সামনে বলেছিল ও সম্পত্তির জন্য এসব করছে, ও আমাকে আমানের থেকে দুরে সরাতে চায়। এছাড়া যে ভিডিও টা আমি করেছি, ঐ ভিডিও টাও দেখাচ্ছে, একের পর এক। নীতা এসব প্রমান দেখে চুপ করে গেলে আমান বলে ওঠেন।
আমান– তুমি কি ভেবেছিলে, মীরার সাথে জালিয়াতি করবে আর পার পেয়ে যাবে?? মীরা তোমাকে ক্ষমা করে দিতেই পারে বাট আমি না। এটা আমান খানের বাসা, এখানে সিসি টিভি ক্যামেরা থাকবে না তুমি ভাবলে কি করে?? ইউ নৌ না আই অ্যাম মিস্টার আমান খান, আমার সব কিছুই সবার থেকে আলাদা। সবাই যেমন সিসি টিভি ক্যামেরা শো অফ করে আমি করিনা। তোমার ঘরের প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় সিসি টিভি ক্যামেরা ছিলো, তোমাকে যেদিন আমি রাস্তায় পেয়েছিলাম, সেদিনই কাজের লোক কে বলে তোমার ঘরে সিসি টিভি ক্যামেরা এক্সট্রা করে সেট করিয়েছিলাম। এতো লোক থাকতে তুমি আমার গাড়ির সামনেই পরলে সাহায্য চাইতে?? হাউ ফানি!! আমি তখনই বুঝেছিলাম তোমার কিছু মতলব আছে, তাছাড়া আমিও একটা সুযোগ খুঁজছিলাম তোমাকে শিক্ষা দেওয়ার, সেই সুযোগ টা যখন তুমি নিজেই করে দিলে তখন আর সেটা মিস করলাম না, একেবারে মকে পে ছক্কা মেরে দিলাম। ভালো করেছি না মীরু বেবস!! (ভ্রু নাচিয়ে আমার দিকে)
মীরা– (মনে মনে– কি আশ্চর্য!! এই তো একটু আগে ওনার হিংস্র চাহুনী দেখে গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল আর এখন এতটা শান্ত চাহুনী?? এই লোকটাকে কি আমি আদৌ বুঝতে কোনদিন সক্ষম হবো?? কিছুক্ষণ আগেই নীতার কতো কেয়ার করছিল, কে জানতো উনি নীতা কে বলি দেওয়ার জন্য যত্ন করছিলো এতো?? বাপ রে বাপ!! কি ডেঞ্জারাস!!)
আমান– ওহ মীরু বেবস!! এতো কি ভাবছো?? ওকে তোমাকে পরে হ্যান্ডেল করছি আগে তোমার এই গুনধর গুনমতি বোনের ব্যবস্থা টা পাকাপাকি করি। ইন্সপেকটর!!
পুলিশ– ইয়েস স্যার!!
আমান– নিয়ে যান একে, নিয়ে গিয়ে ভালো করে খাতির দারি করুন, আমি পরে আসবো ওর খাতির দারি দেখতে আই মিন ওর যত্ন করতে, ওকে নীতা বেইইইইবিইইইই??(টোন কেটে বাঁকা হেসে)
নীতা আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না তার আগেই নীতা কে মেয়ে পুলিশ গুলো এসে নিয়ে চলে গেলো, তারপর আমান কিছুক্ষণ পুলিশের সাথে কথা বললো, কথা বলার সময় অর্নিল প্রবেশ করলো, অর্নিল কে দেখে আমান পুলিশ কে বিদায় দিয়ে দিলো আর অর্নিল কে নিয়ে ভিতরে এলো।
অর্নিল– ভাই কি হয়েছে?? পুলিশ এসেছিল কেনো?? এনিথিং রং??
আমান– তার আগে বল তোর গাল এমন লাল হয়ে রয়েছে কেনো?? আর তোর চোখ মুখই বা এতো শুকনো লাগছে কেনো??
অর্নিল– আব, তুই আমার কথা বাদ দে, আই অ্যাম অলরাইট। এবার বল কি ব্যাপার।
আমান অর্নিল কে সব টা বলার পর আম্মু আমান কে জিজ্ঞেস করলেন।
আম্মু– আমান আমি এক্তা জিনিস বুঝতে পারলাম না।
আমান– কি আম্মু??
আম্মু– তুই এতদিন ধরে নীতার সাথে নাটক করছিলি?? এমনকি আজ সকালেও অর্থাৎ কিছুক্ষণ আগে যেটা ঘটল সেটাও নাটক??
আমান– হ্যাঁ আম্মু সব টা নাটক। নাটক টা না করলে ও নিজের ঘরে নিজের পার্টনার কে জানাতো না যে ওদের প্লান কাজ করছে।
অর্নিল– ভাই সব তো ঠিক আছে বাট বিয়ে?? বিয়ের কথাটা কেনো বলেছিলি??
আমান– ওটা আমার প্লানে ছিলো না, কারণ নীতা চেয়েছিল আগে মীরা কে এই বাসা থেকে বের করতে, কোম্পানি থেকে বের করতে, ইভেন আমার মন থেকে বের করতে, একবার এই কাজে সাকসেস পেলেই ও ঠিক চালাকি করে আমার সাইন নিয়ে নিতো প্রপার্টির পেপারে।
অর্নিল– তুই তাহলে বিয়ের কথা…
আমান– মীরা কে জেলাস করার জন্য সিম্পল! অ্যান্ড ইউ নৌ অর্নিল এটা কাজ ও করেছে। আমি তো ভাবিইনি মীরা জেলাস ফীল করবে, বিয়ের কথা বাদ দে নীতা আমার কাছে আসলেও ওর মুখটা শুকিয়ে যেতো (প্রশস্ত হাসি দিয়ে)
অর্নিল– ভ..ভা..ভাই আমার মনে হয় এবার তোর মুখ শুকিয়ে যাবে, শুধু মুখ নয় মুখের সাথে সাথে অনেক কিছু শুকিয়ে যাবে।
আমান– মানে?? কি বলছিস এসব?? আমার মুখ কেনো শুকাতে যাবে??
অর্নিল– প..পিছন ঘুরে দ..দেখ একবার।
আমান– তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো বল তো?? তুই অর্নিল খান ওকেই?? (পিছনে তাকাতে তাকাতে) এই আম…আম…আম..আ..
অর্নিল– আমান খান!!
আমান পিছন ফিরে দেখলো আমি কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে হাতে একটা ঝাড়ু নিয়ে ওনার দিকে রাগী দৃষ্টি আর রনচন্ডী মূর্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার এই রুপ পিছন ফায়ার দেখতেই নিজের নাম টাও ঠিক করে বলতে পারলেন না তোতলাতে লাগলেন, অর্নিল আমানের নাম টা পুরো বলতেই আমান ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো আর অর্নিল মুখে আঙুল দিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
মীরা– কি বলছিলেন আপনি?? আরেকবার বলুন?? (ওনার দিকে এগোতে এগোতে)
আমান– ক..কি ব..বলছিলাম আ..আমি?? ক..কিছু না ত..তো, কিছু ন..না।
মীরা– আমাকে জেলাস করার জন্য বিয়ের কথা বলেছিলেন, আপনার সাথে নীতা কে দেখলে আমার মুখ শুকিয়ে যায়??
আমান– ভাগ আমান ভাগ!! বাঁচালে আপনি জিন্দেগি!! ভারনা ইয়ে ডায়েন থুক্কু, রনচন্ডী তেরি মাসুমসি জিন্দেগি লে লেগি। (বলেই পিছন ফিরে ভোঁ ছুট)
আমান দৌঁড় দিতেই আমিও ওনার পিছনে তারা করতে লাগলাম, উনি একবার এদিকে যাচ্ছেন তো আরেকবার ওদিকে, একবার সোফার পিছনে লুকাচ্ছে তো আরেকবার আম্মু আর অর্নিলের পিছনে, আমিও হাল ছাড়িনি, এদিকে আম্মু আর অর্নিল এই দৃশ্য দেখে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে, আমান দৌঁড়াচ্ছিল তখনই ইসমি ভিতরে প্রবেশ করলো, আমান ছুটে ইসমির পিছনে গিয়ে ইসমি কে সামনে রেখে বললো।
আমান– শালি সাহেবা! আমার আধি ঘারওয়ালি!! তোমার এই আধা ইনোসেন্ট স্বামী কে বাঁচাও পিলিজ!!
মীরা– সুমি!! সরে যা বলছি!!আজ ওনাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না আমার হাত থেকে।
আমান– ও বউ, বউ এরম কেনো করছো?? আমি না তোমাকে কতো ভালোবাসি?? দেখো তোমার চুড়েল ডায়েন চুন্নি বোন কে বাসা থেকে সহ আমার মন থেকে বিদায় করে দিয়েছি।
মীরা– ওও তার মানে নীতা আপনার মনে ছিলো??
আমান– কাম সারসে। শালি সাহেবাআআ!!
ইসমি– আরে বাবা এরম বাচ্চাদের মতো ছুটোছুটি করছিস কেনো??
মীরা– সুমি তুই সরে যা। নাহলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
ইসমি– আরে কি করে সরব?? একবার তুই টানছিস তো একবার জিজু।
মীরা– তাও ঠিক।
আমান এই ফাঁকে ইসমি কে আমার দিকে ঠেলে নিজের রূমের দিকে ছুটলেন, আর আমি সেটা দেখতে পেয়ে ইসমির দিকে খেয়াল না করে, ইসমি কে না ধরে আমানের পিছনে গেলাম। এদিকে আমান ইসমি কে ধাক্কা টা একটু জোরে দেওয়ায় আর সেটা হঠাৎ হওয়ায় টাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পরে যেতে নিলো।
ইসমি পরলো ঠিকই কিন্তু সেটা মেঝেতে না অর্নিলের বুকের উপর, অর্নিল ইসমির কোমর জড়িয়ে ওকে ধরে নিলো শক্ত করে আর ইসমি অর্নিলের বুকের শার্ট চোখ বুজে খামচে ধরলো।