© অদৃশ্য ভালোবাসা অনুভূতি- পর্বঃ- ৬
আমি শুধু একবার আয়াত বলে ডাক দিলাম তারপর আর কিছু মনে নাই।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করলাম। দেয়ালে টানানো ডিজিটাল ঘড়ির দিকে চোখটা আটকে গেলো। কারন আমি যেদিন পরে গেছিলাম সেদিন ছিলো ৭ তারিখ আর আজ ১০ তারিখ তার মানে তিন দিন পর আমার জ্ঞান ফিরলো। ঘড়িতে 3:00 Am টাইম ছিলো। পাশে তাকাতে দেখলাম আয়াত চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে। এখন অনেক রাত আয়াত না ঘুমিয়ে চেয়ারে আমার পাশে বসে আছে। আয়াতের চোখ মুখ বসে গেছে, চুল গুলো উসকো খুসকো, চোখের নিচে কান্নার দাগ পরে গেছে। মানুষ অনেক সময় ধরে কান্না করলে আর চোখের পানি চোখে শুকিয়ে গেলে চোখের নিচে কান্নার দাগ পড়ে যায়। একবার ভাবলাম ওকে ডাক দেই তারপর ভাবলাম থাক একটু ঘুমাক। আমি জানি গত তিন দিনে ও নিজের চোখের পাতা এক করেনি।
তারপর ধীরে ধীরে হাতটা নিজের পেটের উপর রাখতেই চমকে উঠলাম। কারন আমার ভিতরে প্রানের যে অংশটা ছিলো তার অস্তিত্ব আমি পাচ্ছি না। তার কোন অনুভুতি পাচ্ছি না। কলিজাটা কেঁপে উঠলো তারমানে আমার বাচ্চাটা আর পৃথিবীতে আসবে না। ভাবতেই ভিষন কষ্ট হচ্ছে, বুক ফেটে কান্না আসছে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করলাম। কিন্তু আমি যতই ধীরে কান্না করি না কেন তার কান পর্যন্ত তা কিভাবে যেনো পৌছে যায়। আমার ফুপিয়ে কান্নার শব্দে আয়াত ধরপরিয়ে জেগে উঠলো।
আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে খুশি হলেও আমার কান্না দেখে বুঝতে পারলো আমি কেন কাঁদছি। তারাতাড়ি ডাক্তারকে ডাকলো। তিনি দেখে বললেন এখন বিপদমুক্ত। কিন্তু এখনো কদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। তারপর আমাকে ইনজেকসন দিয়ে আমার অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে চলে গেলো। তারপর আয়াত আমার পাশে বসলো। আমার চোখের জল মুছে দিয়ে আমার একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো—–
আয়াতঃ যা হয়েছে ভুলে যাও। এমন ভাবো যেন কিছু হয়নি। ভাববে আল্লাহ চায়নি ও আমাদের মাঝে আসুক। হয়তো আল্লাহ আমাদের জন্য ভালো কিছু ভেবে রেখেছেন। কষ্ট পেয়ো না।
তনয়াঃ তুমি কথা গুলো বলে কাকে বুঝ দিচ্ছো আয়াত ? আমাকে না নিজেকে?
এবার আয়াত নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। আমার বুকে আস্তে করে নিজের মাথা রেখে বাচ্চাদের মত কাঁদতে শুরু করলো। আমি আয়াতের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম
তনয়াঃ তুমি এভাবে ভেঙে পরলে আমাকে কে সামলাবে?
আয়াতঃ জানো তিন দিন আমার উপর দিয়ে কি গেছে? সেদিন তোমার কল আসার পর আমার নাম ডাক দিয়ে আর কোন কথা বললে না। তারাতারি বাসায় চলে আসলাম , দড়জায় বেল বাজাচ্ছিলাম কিন্তু তুমি খুলছিলে না । ভাগ্যিস আমার কাছে ডুপলিকেট চাবি ছিলো। দড়জা খুলে দেখলাম তুমি রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে পড়ে আছো। জানো তখন মনে হচ্ছিলো আমার পৃথিবীটা থমকে গেছে। তারাতারি তোমাকে নিয়ে হাসপাতালে আসলাম। কিন্তু ডাক্তার বললো এত রক্ত গেছে বাঁচানো মুশকিল হবে। ডাক্তার তোমার চিকিৎসা শুরু করলো কিন্তু বাচ্চাটাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অাতরিক্ত রক্তক্ষনের ফলে তুমি টেমপোরারি কোমায় চলে গিয়েছিলে। এই তিন দিন তোমাকে অক্সিজেন মাক্স পরানো অবস্থায় দেখে আমার কলিজা ছিড়ে যেতো। ঘন্টা দু আগে ডাক্তার এসে তোমাকে দেখে বললো এখন তুমি বিপদমুক্তো। ঘন্টা দুয়ের মধ্যে তোমার জ্ঞান ফিরবে। জানো তনয়া তোমাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখবো তা চিন্তাও করিনি কখনো। বেবি হলে তুমি কষ্ট পাবে, তোমাকে হারানোর ভয় থাকবে বলে বেবি নিতে আমার ভয় করতো। কিন্তু আল্লাহ যখন দিলো তখন আর না করলাম না। কিন্তু আল্লাহ দিয়েও কেন নিয়ে নিলো আমাদের মেয়েটাকে।
তনয়াঃ আয়াত! তারমানে আমাদের বাচ্চাটা মেয়ে ছিলো?
আয়াতঃ হ্যা তনয়া একটা ছোট্ট পরী ছিলো।
আয়াত যেনো বাচ্চা হয়ে গেছিলো। বাচ্চাদের মত কাঁদতে লাগলো। ওর দিক দিয়ে ভাবছিলাম মানে আয়াতের মত করে ভাবছিলাম। একটা অচেনা দেশে একটা ছেলের স্ত্রীর বাচ্চা জন্মাবার আগেই মারা যায়, আর তার স্ত্রী মৃত্যুর মুখোমুখি ছিলো তার মনের উপর ঠিক কতটা ঝড় গেছে সেটা ভেবেই কান্না পাচ্ছিলো। এই তিন দিন আয়াত ঠিক কতটা টেনশনে ছিলো সেটা ভেবে নিজের কষ্টটা কেন যেনো হালকা হয়ে গেলো। কারন এখানে আমার সাপোর্টের জন্য আয়াত ছিলো কিন্তু আয়াতকে সাপোর্ট করার মত তো এখানে তেমন কেউ ছিলো না। আয়াতের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম।
তনয়াঃ প্লিজ কান্না বন্ধো করে আয়াত! তুমি কাঁদলে আমার কি হবে? আমাকে কে ভরশা দিবে? দেখো আমি ঠিক আছি। তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। এখন মাথাটা তোলো। আর বিছানায় উঠে শোও।
আয়াত মাথা তুলে হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো
আয়াতঃ আমি তোমার বিছানায় উঠে কেন শোব?
তনয়াঃ বেশি কথা না বলে আমার পাশে শুয়ে পড়ো তো। দেখো এই কয়দিন ধরে যে তোমার খাওয়া ঘুম বন্ধ ছিলো তা আমি খু্ব ভালোভাবে বুঝতে পারছি। দেখো রাত এখনো অনেক বাকি তুমি আমার পাশে একটু শুয়ে ঘুমাও।
আয়াতঃ না তোমার কষ্ট হবে। আমি বাকিটা রাত তোমাকে দেখেই কাটিয়ে দিতে পারবো।
তনয়াঃ আয়াত বেশি কথা বলবে না বুঝলা। দেখো আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তুমি কিন্তু আমাকে দিয়ে বেশি কথা বলাবে না। তার থেকে বরং চুপ করে আমার পাশে শুয়ে পড়ো।
আয়াত তনয়ার কথায় আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ ওর পাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো যাতে তনয়ার কষ্ট না হয়।
তনয়াঃ আয়াত!
আয়াতঃ হুমমম
তনয়াঃ তোমার মাথাটা আমার বুকে রাখো। আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
আয়াতঃ নাহ। বললাম না তোমার কষ্ট হবে।
তনয়াঃ চুপচাপ যা বলছি তাই শোন। বুকে মাথা রাখো।
আয়াত আমার বুকে মাথা রাখলো। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই আয়াত ঘুমিয়ে পড়লো। অনেক বেশি ক্লান্ত থাকলে যা হয় আরকি। তিনদিন কোমায় থাকার পরও কেন যেনো চোখ ভেঙে ঘুম আসছে। আয়াতের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। কারো হালকা কাশির শব্দে ঘুম ভাঙলো। আয়াত তখনো আমার বুকে মাথা রাখা অবস্থায় ঘুমাচ্ছিলো। একটু কষ্ট হচ্ছিলো আমার কিন্তু আয়াতের ভারী গরম নিঃশ্বাসের সাথে কষ্টটাও উড়ে যাচ্ছিলো। অনেকটা ক্লান্ত আয়াত তাই এখনো ঘুম ভাঙেনি। বাইরে আলো ফুটেছে। পাশে দেখলাম নার্স দাড়িয়ে আছে আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। হয়তো আমাদের জাগানোর জন্য ওনিই কাশি দিছিলো। আমি নার্সকে ইশারায় চুপ করতে বললাম। কিন্তু নার্স আমাকে ইশারায় ঘড়ির দিকে তাকাতে বললো আর বললো আমার মেডিসিনের টাইম হইছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সকাল আটটা বাজে। কিন্তু আয়াতকে ডাকতে ইচ্ছা হলো না। তিন দিন ওর ওপর দিয়ে যা ধকল গেছে। নার্সকে ইশারায় বললাম কিছুক্ষন পর। নার্স মুচকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। আমি ধীরে ধীরে আয়াতের মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম। আমার হাতের ছোয়া পেতেই আয়াত জেগে উঠে বললো—–
আয়াতঃ আরে তনয়া তুমি আমায় জাগালে না কেন? তোমার কষ্ট হচ্ছিলো না।
তনয়াঃ না। তুমি তো আমার হৃদয়। আমার হৃদয়টা হৃদয়ের কাছে ছিলো তাতে কষ্ট কেন হবে?
আয়াতঃ (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) ওহ সিট তোমার মেডিসিন নেবার টাইম হইছে। ওয়েট আমি নার্সকে ডাকছি।
নার্স এসে আমাকে ইনজেকশন দিচ্ছিলো। আর আয়াত চোখ বন্ধ করে ছিলো।
তনয়াঃ আয়াত তুমি বাসায় যাও ফ্রেস হয়ে খাবার খেয়ে তারপর আসো।
আয়াতঃ পাগল নাকি? তোমাকে রেখে কোথাও যাবো না আমি। বাসায় তো একদমই না।
তনয়াঃ দেখো আয়াত জেদ করবা না। বাসায় না যাও একলিস্ট নিচে গিয়ে কিছু খেয়ে তো আসবে। দেখো ডাক্তার বললো বিকালের আগে আমি কিছু খেতে পারবো না। কিন্তু তোমার তো খাওয়া দরকার। যাও খেয়ে আসো। যাও বলছি। (রাগ দেখিয়ে)
আয়াতঃ ওকে। কিন্তু নার্স আমি না আসা পর্যন্ত আপনি এক মুহূর্তের জন্যও তনয়াকে একা রেখে যাবেন না। নার্সটা ইন্ডিয়ান ছিলো তাই তিনি বাংলা বু্ঝতেন।
নার্সঃ হাসি দিয়ে ওকে। আয়াত চলে যাবার পর নার্স বললো তুমি খুব লাকি যে এমন বর পাইছো!
তনয়াঃ কিভাবে বুঝলেন?
নার্সঃ সেদিন তোমাকে তোমার বর নিয়ে আসার পর পাগলের মত অবস্থা হইছিলো। সে কি কান্না! আমরা তো তার কান্না দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম। অপারেশনের সময়ও সে তোমার পাশে হাত ধরে দাড়িয়ে ছিলো। আমরা সাধারনত শুধু বাচ্চা হবার সময় হ্যাজবেন্ডকে কাছে থাকতে দেই। কিন্তু তোমার হাজবেন্ড কেঁদে কেঁদে যে হাল করেছিলো তাতে সবাই আসচর্য্য হয়ে গেছিলাম। এই তিন দিন তোমার বরকে আমিই জোড় করে একটু খাওয়াতে বাধ্য করছিলাম। তাও এটা বলে যে, দেখো আমি তো তোমার বড় বোনের মত আর তোমার স্ত্রী সুস্থ হবার আগে যদি তুমি অসুস্থ হও তবে তাকে কে দেখবে। তারপর সামান্য করে খেতো। সে এক মুহূর্তের জন্যও তোমার থেকে দূরে যায়নি। পাগলের মত ভালোবাসে তোমায়। এরকম বৌ পাগল হ্যাজবেন্ড আমার কেরিয়ারে আমি খুব কম দেখছি।
নার্সের কথা শুনে নিজের সব ব্যাথা, যন্ত্রনা আর কষ্টগুলো যেনো নিমিষেই দূর হয়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে আয়াত চলে আসলো।
তনয়াঃ আরে এত তারাতাড়ি তুমি কিভাবে খেলে? আয়াত তুমি সত্যিই খেয়েছো তো?
আয়াতঃ না মানে আসলে খাবার নিয়া আসছি। তোমার কাছে বসে খাবো।
তনয়াঃ ঠিক আছে খাও। নার্সকে উদ্দেশ্য করে আপু অনেক ধন্যবাদ যে এই তিন দিন আপনি ওর খেয়াল রাখছেন।
নার্সঃ কোন সমস্যা নাই। তোমরা আমার থেকে অনেক ছোট হবা। আর আমার ছোট ভাইটা তো একদম তোমার হ্যাজবেন্ড এর বয়সি। তারপর নার্স চলে গেলো।
তনয়াঃ আয়াত শোন! কাছে আসো।
আয়াতঃ হ্যা বলো।
তনয়াঃ আমার মুখের কাছে তোমার কানটা আনো।;
আয়াতঃ কেনো?
তনয়াঃ যা বলছি করো।
আয়াতঃ ওকে।
তনয়াঃ উম্মমমম্মাহ। আই লাভ ইউ। এখন খাও আয়াত প্লিজ।
আয়াতঃ লাভ ইউ টু। আয়াত আমার সাথে কথা বলতে বলতে খাবার খেলো।
দুদিন পর বাংলাদেশ থেকে আমার মা বাবা, আর আয়াতের বাবা মা আসছে। তারা আসার পর আয়াত আর আমি স্বস্তি পাই। তার কয়েকদিন পর আমি হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসি। আয়াত সহ বাড়ির সবাই অনেক খেয়াল রাখতো। আয়াতের ভালোবাসায় আর কেয়ারে খুব তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠলাম। কিন্তু বাচ্চাটার কথা মনে পরলে ভিষন কষ্ট হতো। কিন্তু আয়াত তার ভালোবাসা দিয়ে আমার সব কষ্টগুলো দূর করে দিতো। তারপর আয়াতের কথামত লেখাপড়ায় মন দিলাম। আবার সময়টা খুব ভালো কাটতে শুরু করলো। দেখতে দেখতে আমার কোর্স শেষ হয়ে গেলো। কোর্স শেষ হবার কদিন পরই আমরা বাংলাদেশে চলে আসি। এখানে এসেও দিন গুলো অসাধারন চলছিলো কারন এখানে আমাদের দুজনেরই পরিবার আছে।
ছোট বেলা থেকেই আমার গল্প লেখার ভিষর শখ ছিলো। সবসময়ই টুকিটাকি লিখতাম, লিখে আয়াতকে শুনাতাম। ও ভিষন ভালোবাসতো আমার লেখা গুলোকে। একদিন আমার লেখা কিছু জিনিস ওকে পড়ে শুনাচ্ছিলাম তখন কথায় কথায় আয়াত বললো
আয়াতঃ তুমি এত সুন্দর লেখো তাহলে তুমি বই কেন বের করো না।
তনয়াঃ যাহ! বই কিভাবে বের করবো?
আয়াতঃ আরে বোকা এতে লজ্জা পাবার কি আছে। দেখো তোমার লেখা আমি তো পড়ছি আমার বেশ ভালো লাগছে। আশাকরি অন্য সবারও ভালো লাগবে। দেখো বই বের করতে যা যা করনীয় তা আমি করে দিবো। তুমি শুধু লেখা তৈরী করে ফেলো।
তনয়াঃ রিয়েলি! থেঙ্কস আয়াত। আই লাভ ইউ। উমমমম্মাহ। খুশিতে আয়াতে গালে কিস করে নিজেই লজ্জা পেলাম।
আয়াতঃ যাক তাও ভালো। এই বাহানায় ম্যাডাম নিজে থেকে কিছুতো দিলো।
তনয়াঃ যাহ পাজি।
কিছুদিন পরই বাজারে আমার বই বের হবে। ভাবতেই ভালো লাগছে। বইয়ের নাম দিবো #বই। কারন একটা #বইয়ের মাধ্যমে আমার সাথে আয়াতের দেখা হয়েছিলো। একটা #বইয়ের জন্যই আমি আয়াতকে পেয়েছি। বইতো এখানে শেষ করলাম কিন্তু আমাদের গল্পের কোন শেষ নেই। এজন্য #বই গল্পের কোন সমাপ্তি নাই। কারন গল্পটা আয়াত আর তার তনয়ার। তাদের ভালোবাসার যার কোন শেষ নাই তেমনি তাদের গল্পেরও শেষ নেই। আয়াত আর তনয়ার ভালোবাসা সময়ের সাথে সাথে শুধু বাড়বে। সময় যত গভীর হবে তাদের ভালোবাসা গভীর থেকে গভীরতম হবে। এটা তনয়া আর আয়াতের বিশ্বাস। আমার বিশ্বাসও এটাই। যে ভালোবাসা সময়ের স্রোতের সাথে সাথে কমে যায় সেটা কোন ভালোবাসা না। ভালোবাসাতো সেটাই যেটা সময়ের সাথে সাথে বাড়ে শুধু বাড়ে। আর এ ভালোবাসা কখনো কমেনা । ভালো থাকুক ভালোবাসায় গড়া সকল সম্পর্ক ভালো থাকুক আয়াত আর তনয়ার ভালোবাসায় গড়া সম্পর্ক।
সমাপ্ত
বইটা বন্ধকরে আয়াত নিশীর দিকে তাকালো। নিশী পুরো ঘেমে গেছে। আয়াতের চোখ থেকে জল পড়তে পড়তে তা রক্তবর্ন ধারন করছে যেটা দেখে নিশীর খুব ভয় লাগতে ছিলো। আয়াত নিশীর দিকে তাকিয়ে বললো
আয়াতঃ কেমন লাগছে গল্পটা নিশী?
নিশীঃ ভা ভা ভালো।
আয়াতঃ গুড। তোমাকে একটা সিক্রেট বলি এই #বই গল্পটার সব কাহীনি বাস্তব থেকে নেয়া। বইটার মধ্যে আমার আর তনয়ার জীবনের খুব সুন্দর কিছু মুহূর্ত দেয়া। আমরা দুজন সাথে থাকতে এর থেকেও অনেক বেশি সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশে আসার প্রায় নয় মাস পর সব ওলোট পালট হয়ে গেছে। তুমি জানো এই বইতে তনয়া একটা কথা লেখেনি। তুমি জানো বই বের হবার পরের ঘটনা। জানো (ধমক দিয়ে)
নিশীঃ ননননা না।
আয়াতঃ ওহ তাহলে আমি বলি কেমন! ওয়েট ওয়েট। তার আগে তুমি এটা শুনবে না তনয়া বইতে কোন কথাটা লেখেনি। শুনবে?
নিশীঃ ভয়ে মমম মানে?
আয়াতঃ সেটা হলো আমাদের বাচ্চার কথা।
বাচ্চার নাম শুনে নিশী হতবম্ভ হয়ে চোখ বড় বড় করে আয়াতের দিকে তাকালো।
আয়াতঃ কি অবাক হলে। হ্যা আমাদের একটা ছেলে আছে আর আগামীকাল তার একবছর পূর্ন হবে। আমার ছেলেটা জন্মের একমাস পর তার মাকে হারালো, তুমি তাকে গত এক বছর যাবত বাবার আদরটাও পেতে দিলে না। কেন নিশী কেন? মানুষ এতটা জঘন্য কি করে হয়? ওসব কথা পরে শোনাই তার আগে শোন বই বের হবার পর কি ঘটেছিলো।
চলবে————
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।