অদৃশ্য ভালোবাসা অনুভূতি– পর্বঃ- ৪
লেখাঃ শারমিন আক্তার ( সাথী )
–ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। পার্কে আর বসা যাচ্ছে না। আয়াত বইটা বন্ধ করে কিছু কাজ সেরে সোজা বাড়ি চলে গেলো। তখন রাত প্রায় আটটা বেজে গেছে। আয়াত বইটা নিয়ে ড্রয়িং রুমে টেবিলের উপর রাখলো।
নিশীঃ আরে আয়াত সেই দুপুরে বের হইলা আর এখন আসলা? কোথায় ছিলা এতক্ষন?
আয়াতঃ একটু কাজ ছিলো। খেতে দাও খুব ক্ষুদা পাইছে!
নিশীঃ হুমমম যাও ফ্রেস হয়ে আসো। নিশী টেবিলের উপর বইটা দেখে আয়াতকে জিগেস করলো আয়াত বইটা কি তুমি আনছো?
আয়াতঃ হ্যা। আরে সকালে যেটা খুজছিলাম সেই বইটাই মানে আবার নতুন করে লাইব্রেরি থেকে কিনে আনছি। পড়া প্রায় শেষ।
নিশীঃ মা মা মানে কত দূর পর্যন্ত পড়েছো?
আয়াতঃ কেন? তুমি কি পড়ছো বইটা?
নিশীঃ না মানে তুমি সকালে এমন ভাবে খুজছিলে তাই জিগেস করলাম। বই কেমন আরকি?
আয়াতঃ দারুন একটা বই। মিষ্টি একটা ভালোবাসার গল্প দেয়া।
নিশীঃ ওহ!
আয়াতঃ হ্যা। ওদের বিয়ে হবে পর্যন্ত পড়েছি কিন্তু বাকিটা রাতে পড়বো।
নিশীঃ ফ্রেস হয়ে নাও। তারপর মনে মনে ভাবছে আমার এত দিনের ত্যাগ কি তবে বৃথা যাবে? আয়াত কি আমায় কখনো গ্রহন করবে না? না না এ হতে পারে না! আমি আয়াতকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। আমার আয়াতকে চাইই চাই। না না এ বইয়ের শেষ পর্যন্ত আয়াতকে পড়তে দেয়া যাবে না। তাহলে যদি ওর——-? নিশী জলদি করে বইটাকে রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে ছিড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।
আয়াতের মা সেটা দেখে বললো
আয়াতের মাঃ এত চেষ্টা করেও কি শেষ রক্ষা হবে নিশী?
নিশীঃ জানি না মা। তবে চেষ্টা করতে তো কোন দোষ নাই।
আয়াতের মাঃ হুমম তাও ঠিক। আচ্ছা নিশী আয়াতের হাতে আমি একটা তাবিজ বেঁধে দিয়েছিলাম সেটা দেখলাম না। ও কি খুলে ফেলছে?
নিশীঃ জানি না মা!
আয়াতের মাঃ কেমন কথা বলছো তুমি? তুমি না ওর স্ত্রী!
নিশীঃ (তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিয়ে) স্ত্রী হুমমম। শুধু নামের স্ত্রী। ও আজ পর্যন্ত আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে? দিয়েছে আমায় স্ত্রীর অধিকার। ও তনয়াকে ভুলে গেলে কি হবে ওর মনে তনয়ার ভুতটা এখনো বসে আছে। সেটাকে শত তাবিজ কবোজ আর মন্ত্র দিয়ে তাড়াতে পারবো কিনা সন্দেহ?
আয়াতের মাঃ আল্লাহ জানে কি হবে? গত কয়েক মাস আগে আমাকে এসে বলতো একটা মেয়ে স্বপ্নে সবসময় ওর সাথে কথা বলে। মেয়েটা নাকি অসম্ভব সুন্দর তারপর মেয়েটার রূপের যে বর্ণনা দিলো তাতে মনে হলো তনয়া। তাই হুজুরের কাজ থেকে একটা তাবিজ এনে দিলাম। তারপর সেটা সাথে রাখছে কিনা জানি না।
নিশীঃ ঠিক আছে মা আমি দেখছি।
আয়াত ওয়াশ রুম থেকে গোসল করে টাওয়াল পরে বের হলো। তখন নিশী হঠাৎ করে রুমে ডুকে পরলো। আয়াত ভিষন লজ্জা পেয়ে বললো
আয়াতঃ আমি চেঞ্জ করে আসছি। তুমি যাও।
নিশীঃ আয়াত আমার কাছে তোমার এত লজ্জা পাবার কি আছে? আমি তোমার স্ত্রী। আচ্ছা আয়াত! তোমার ডান হাতে একটা তাবিজ বাঁধা ছিলো সেটা কোথায়? না মানে মা জানতে চেয়েছে।
আয়াতঃ সেটাতো আমি কবেই খুলে রেখেছি। কোথায় রেখেছি তাও মনে নাই। তাবিজটা দিলে অসস্তি লাগে। মনে হয় কেউ দূরে চলে যাচ্ছে।
নিশীঃ ওহ। খেতে আসো।
রাতে খাবার খেয়ে আয়াত আর বইটার খোঁজ করছে না দেখে নিশী সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। নিশী আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছিলো। তখন আয়াত এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। নিশী হতভম্ব হয়ে গেলো। কারন বিয়ের পর প্রথম আয়াত এমন করলো। কিন্তু আয়াতের জড়িয়ে ধরাতে নিশীর খুব কষ্ট হচ্ছিলো মনে হয় ওর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে শরীরটা জ্বলছে মনে হয় কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও সহ্য করছিলো। তারপর আয়াত নিজে থেকে নিশীকে ছেড়ে দিয়ে নিজের দিকে ঘোরালো। নিশী সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে উৎসুক দৃষ্টিতে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াত নিশীর মুখের উপরে থাকা চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো
আয়াতঃ কাল আমাদের বিয়ের তিন মাস পূর্ন হবে। তাইতো?
নিশীঃ হুমম।
আয়াতঃ কাল থেকে আমরা নতুন জীবন শুরু করবো?
নিশীঃ আয়াত তুমি ঠিক আছো তো?
আয়াতঃ কেনো?
নিশীঃ না মানে তুমি আমার সাথে এমন করছো তাই?
আয়াতঃ অবাক হবার তো কেবল শুরু । কাল তোমার জন্য সুন্দর একটা সারপ্রাইজ আছে। তুমি সারা জীবনেও ভুলতে পারবে না। এখন যাও ঘুমাও। আমার একটু কাজ আছে। সেগুলো শেষ করে ঘুমাবো।
আয়াতের কথা শুনে নিশী আয়াতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু আয়াত নিশীকে এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো যে, নিশীর দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। আয়াত নিশীকে ছেড়ে দিয়ে স্টাডি রুমে চলে গেলো। আর নিশী হাসি হাসি মুখ করে ঘুমিয়ে পরলো। আর ভাবতে লাগলো কালকের কথা। কাল কি সারপ্রাইজ আছে? আয়াত কাল ওকে কতটা কাছে টেনে নিবে। এসব সুন্দর সুন্দর ভাবনা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো।
স্টাডি রুমে এসে আয়াত নিজের হাতে থাকা সেই তাবিজটা ড্রয়ার থেকে বের করে হাতে নিয়ে রহস্যময়ী একটা হাসি দিয়ে তাবিজটাকে জানালা দিয়ে ছুরে বাইরে ফেলে দেয়। আর ভাবে এটা যখন আমি নিজের শরীরের সাথে রাখি তখন তোমাকে স্বপ্নে দেখতে পাই না। তোমার অনুভুতি গুলো পাই না। রোজ তুমি আমার স্বপ্নে আসো। তোমার ভালোবাসার পরশ গুলো আমি অনুভব করতে পারি। জানি তুমি নেই তবুও তুমি আছো! তোমার অনুভুতিগুলো আমি বুঝতে পারি। তোমার উপস্থিতি আমি টের পাই। যখন থেকে মা তাবিজটা দিলো তখন থেকে তুমি আমার স্বপ্নে দূরে বসে কান্না করতে আমার কাছে আসতে না । তাইতো নিজ থেকে ওটা খুলে রাখছি। জানি তো তুমি কখনো আমার কোন ক্ষতি করবে না। তুমি শুধু আমায় ভালোবাসবে। এও জানি তুমি থাকো আর না থাকো তোমার অনুভুতি গুলো আমার সাথে মিশে থাকবে।
পরের দিন সকালে
আয়াত নিশীকে নিয়ে সুন্দর একটি জায়গায় যায়। সারাদিন ঘোরা ফেরা করে। সন্ধ্যার দিকে আয়াত নিশীকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবার সময় যে রাস্তা দিয়ে যায় সে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বুক কেঁপে ওঠে নিশীর। ও আয়াতকে বলে
নিশীঃ আমরা কোথায় যাচ্ছি আয়াত?
আয়াতঃ আরে ভয় পেয়ো না। তোমাকে মেরে ফেলবো না। এই তো পৌছে গেছি।
হঠাৎ করে নিশীর মাথার পিছনটায় কিসের যেনো আঘাত লাগলো। জ্ঞান হারিয়ে ফেললো নিশী। যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে চেয়ারের সাথে বাঁধা পায়। সারা ঘরময় অন্ধকার। শুধু টেবিলের উপর একটা মোমবাতি জ্বলছে। বুঝতে পারছে না নিশী কোথায়? মাথার পিছনটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। কিন্তু নিশীর হাত পা শক্ত করে বাঁধার ফলে নড়তে পারছে না। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে চেয়ারে আয়াত হাসি হাসি মুখ করে বসে আছে নিশীর দিকে তাকিয়ে । নিশীর জ্ঞান ফিরতেই নিশীকে বললো
আয়াতঃ যাক ম্যাডামের ঘুম ভাঙলো। আমি ভাবছি সারা রাতই ঘুমিয়ে পার করবে!
নিশীঃ এসব কি হচ্ছে আয়াত? আমাকে বেঁধে রেখেছো কেন?
আয়াতঃ সারপ্রাইজ ডিয়ার সারপ্রাইজ! আজ থেকে না আমরা নতুন জীবন শুরু করবো তো তার জন্য একটু কষ্ট করবে না?
নিশীঃ ভিত চোখে তাকিয়ে মমম মানে?
আয়াতঃ প্রথমে তুমি ঘরে থাকা তনয়ার ছবি, কাপড় সমস্ত স্মৃতি পোড়ালে, তারপর পর পর ওর দুটো বই পোড়ালে? কি ভাবছিলে আমি কিছু দেখিনি? আচ্ছা তুমি চেয়েছিলে আমি যাতে বইটা না পড়ি তাই তো। বইয়ের শেষটা যাতে না জানি? কিন্তু ডিয়ার বইতে যে গল্পটা আছে সে গল্পে তো আয়াত তনয়ার জীবন শর্টকাট করে দেয়া বিস্তারিত আমার কাছ থেকে শুনবে? ওয়েট ওয়েট তুমি জানতে চেয়েছিলে না বইটা কত দূর পড়েছি? তারপর কি হলো জানতে চেয়েছিলে তাইতো,? তবে আমি বলছি ঠিক যেভাবে বইতে লেখা সেভাবে! মাঝখানে ভুল হলে তুমি বলো কিন্তু হ্যা—— বাদ দেও তার থেকে বরং বইটা পড়েই শোই। তারপর সেই বইটার আরেকটা কপি বের করে গল্পটা পড়তে শুরু করলো।
——–খুব সুন্দর ভাবে আয়াত আর আমার বিয়ে হয়ে গেলো। আমার বান্ধবীরা আমাকে আয়াতের রুমে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো। অজানা এক ভয় আর ভালোবাসার শিহরনে মনটা কাঁপছে। কিছুক্ষন পর আয়াত আসলো। আমি ওকে সালাম করতে নামতে নিবো এমন সময় আয়াত বললো
আয়াতঃ দাড়াও!
তনয়াঃ কেন?
আয়াতঃ তুমি সালাম করবে আমি তোমায় ধরে বলবো তোমার স্থান পায়ে নয় আমার বুকে এ ধরনের বাংলা ছবির শুটিং করা লাগবে না। তুমি বারাবরই আমার বুকে থাকবে আর তোমার স্থান সবসময় আমার সমান থাকবে। বুঝলা!
তনয়াঃ হুমমম বুঝলাম। কিন্তু সালাম করাটাওতো স্বামীর প্রতি ভালোবাসার একটা অংশ।
আয়াতঃ জ্বি না। একে অপরকে সম্মান করাটা ভালোবাসার সব থেকে বড় মূল মন্ত্র। আর আমি তোমাকে খুব সম্মান করি।
তনয়াঃ সেটাতো আমিও করি। কিন্তু—–
আয়াতঃ হুসসসস। (তনয়ার ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে) আর কোন বাজে কথা না। এতটা জিনিস দেখবে?
তনয়াঃ হুমম।
আয়াতঃ ওয়েট আগে লাইটটা বন্ধ করে আসি।
তনয়াঃ (লজ্জায় লাল হয়ে) যাহ পাজি!
আয়াতঃ এতে পাজির কি হলো? তুমি যা ভাবছো তা কিন্তু এখন না কিছুক্ষন পর। সেটা বলে তনয়াকে একটা চোখ মারলো।
আয়াত রুমের লাইট অফ করে ব্যাগ থেকে একটা কাচের জার বের করলো। জারটা আলোয় পরিপূর্ন। আয়াত জারের মুখটা খুলে দিতেই শতশত জোনাকি পোকায় পুরো ঘরটা ভরে গেলো। পুরো ঘরটা জোনাকি পোকার আলোয় ঝলমল করছে। তনয়া শক্ত করে আয়াতকে জড়িয়ে ধরে বললো।
তনয়াঃ তোমার মনে আছে?
আয়াতঃ কেন থাকবে না! তুমিই তো বলেছিলে যাকে ভালোবাসো তার সাথে একদিন এমন ভাবে থাকতে চাও। জোনাকি পোকার আলোয় সাজানো ঘরে!
তনয়াঃ হ্যা। কিন্তু এত জোনাকি পোকা কোথায় পেলে?
আয়াতঃ জোগার করতে কষ্ট হয়েছে বাট করে ফেলছি। আফটারঅল আমার কিউট বউটা বলছে না শুনে থাকতে পারি!
তনয়ার চোখ থেকে মুক্তর দানার মত টুপটাপ করে জল ঝড়ছে। আর বলছে
তনয়াঃ কখনো ভাবিনি কেউ আমার স্বপ্নগুলো নিয়ে এতটা গভীর ভাবে ভাববে।
আয়াতঃ (জলগুলো মুছে দিয়ে) তোমার সব স্বপ্ন গুলো নিয়ে আমি গভীর ভাবে ভাববো। তোমার স্বপ্নে নিজেকে হারিয়ে বার বার তোমায় ভালোবাসবো।
জীবনের প্রতিটা সময় প্রতিটা মুহূর্ত তোমার সাথে আর তোমার জন্য কাটাবো। প্রমিজ। কারন তোমায় খুব বেশি ভালোবাসি তনয়া। খুব বেশি।
আয়াত বইটা বন্ধ করে অঝোড় ধারায় কাঁদছে আর জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বলছে
আয়াতঃ খুব ভালোবাসি তোমায় তনয়া! খুব ভালোবাসি! আর সারা জীবন বাসবো।
কেন নিশী কেন? তুমি আমার জীবনে তনয়া জায়গা নেয়ার চেষ্টা করছো? কেন? চিৎকার করে?
আয়াতের চিৎকার শুনে নিশী ভয়ে কেঁপে উঠলো।
চলবে———
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন
আয়াতঃ একটু কাজ ছিলো। খেতে দাও খুব ক্ষুদা পাইছে!
নিশীঃ হুমমম যাও ফ্রেস হয়ে আসো। নিশী টেবিলের উপর বইটা দেখে আয়াতকে জিগেস করলো আয়াত বইটা কি তুমি আনছো?
আয়াতঃ হ্যা। আরে সকালে যেটা খুজছিলাম সেই বইটাই মানে আবার নতুন করে লাইব্রেরি থেকে কিনে আনছি। পড়া প্রায় শেষ।
নিশীঃ মা মা মানে কত দূর পর্যন্ত পড়েছো?
আয়াতঃ কেন? তুমি কি পড়ছো বইটা?
নিশীঃ না মানে তুমি সকালে এমন ভাবে খুজছিলে তাই জিগেস করলাম। বই কেমন আরকি?
আয়াতঃ দারুন একটা বই। মিষ্টি একটা ভালোবাসার গল্প দেয়া।
নিশীঃ ওহ!
আয়াতঃ হ্যা। ওদের বিয়ে হবে পর্যন্ত পড়েছি কিন্তু বাকিটা রাতে পড়বো।
নিশীঃ ফ্রেস হয়ে নাও। তারপর মনে মনে ভাবছে আমার এত দিনের ত্যাগ কি তবে বৃথা যাবে? আয়াত কি আমায় কখনো গ্রহন করবে না? না না এ হতে পারে না! আমি আয়াতকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। আমার আয়াতকে চাইই চাই। না না এ বইয়ের শেষ পর্যন্ত আয়াতকে পড়তে দেয়া যাবে না। তাহলে যদি ওর——-? নিশী জলদি করে বইটাকে রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে ছিড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।
আয়াতের মা সেটা দেখে বললো
আয়াতের মাঃ এত চেষ্টা করেও কি শেষ রক্ষা হবে নিশী?
নিশীঃ জানি না মা। তবে চেষ্টা করতে তো কোন দোষ নাই।
আয়াতের মাঃ হুমম তাও ঠিক। আচ্ছা নিশী আয়াতের হাতে আমি একটা তাবিজ বেঁধে দিয়েছিলাম সেটা দেখলাম না। ও কি খুলে ফেলছে?
নিশীঃ জানি না মা!
আয়াতের মাঃ কেমন কথা বলছো তুমি? তুমি না ওর স্ত্রী!
নিশীঃ (তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিয়ে) স্ত্রী হুমমম। শুধু নামের স্ত্রী। ও আজ পর্যন্ত আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে? দিয়েছে আমায় স্ত্রীর অধিকার। ও তনয়াকে ভুলে গেলে কি হবে ওর মনে তনয়ার ভুতটা এখনো বসে আছে। সেটাকে শত তাবিজ কবোজ আর মন্ত্র দিয়ে তাড়াতে পারবো কিনা সন্দেহ?
আয়াতের মাঃ আল্লাহ জানে কি হবে? গত কয়েক মাস আগে আমাকে এসে বলতো একটা মেয়ে স্বপ্নে সবসময় ওর সাথে কথা বলে। মেয়েটা নাকি অসম্ভব সুন্দর তারপর মেয়েটার রূপের যে বর্ণনা দিলো তাতে মনে হলো তনয়া। তাই হুজুরের কাজ থেকে একটা তাবিজ এনে দিলাম। তারপর সেটা সাথে রাখছে কিনা জানি না।
নিশীঃ ঠিক আছে মা আমি দেখছি।
আয়াত ওয়াশ রুম থেকে গোসল করে টাওয়াল পরে বের হলো। তখন নিশী হঠাৎ করে রুমে ডুকে পরলো। আয়াত ভিষন লজ্জা পেয়ে বললো
আয়াতঃ আমি চেঞ্জ করে আসছি। তুমি যাও।
নিশীঃ আয়াত আমার কাছে তোমার এত লজ্জা পাবার কি আছে? আমি তোমার স্ত্রী। আচ্ছা আয়াত! তোমার ডান হাতে একটা তাবিজ বাঁধা ছিলো সেটা কোথায়? না মানে মা জানতে চেয়েছে।
আয়াতঃ সেটাতো আমি কবেই খুলে রেখেছি। কোথায় রেখেছি তাও মনে নাই। তাবিজটা দিলে অসস্তি লাগে। মনে হয় কেউ দূরে চলে যাচ্ছে।
নিশীঃ ওহ। খেতে আসো।
রাতে খাবার খেয়ে আয়াত আর বইটার খোঁজ করছে না দেখে নিশী সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। নিশী আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছিলো। তখন আয়াত এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। নিশী হতভম্ব হয়ে গেলো। কারন বিয়ের পর প্রথম আয়াত এমন করলো। কিন্তু আয়াতের জড়িয়ে ধরাতে নিশীর খুব কষ্ট হচ্ছিলো মনে হয় ওর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে শরীরটা জ্বলছে মনে হয় কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও সহ্য করছিলো। তারপর আয়াত নিজে থেকে নিশীকে ছেড়ে দিয়ে নিজের দিকে ঘোরালো। নিশী সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে উৎসুক দৃষ্টিতে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াত নিশীর মুখের উপরে থাকা চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো
আয়াতঃ কাল আমাদের বিয়ের তিন মাস পূর্ন হবে। তাইতো?
নিশীঃ হুমম।
আয়াতঃ কাল থেকে আমরা নতুন জীবন শুরু করবো?
নিশীঃ আয়াত তুমি ঠিক আছো তো?
আয়াতঃ কেনো?
নিশীঃ না মানে তুমি আমার সাথে এমন করছো তাই?
আয়াতঃ অবাক হবার তো কেবল শুরু । কাল তোমার জন্য সুন্দর একটা সারপ্রাইজ আছে। তুমি সারা জীবনেও ভুলতে পারবে না। এখন যাও ঘুমাও। আমার একটু কাজ আছে। সেগুলো শেষ করে ঘুমাবো।
আয়াতের কথা শুনে নিশী আয়াতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু আয়াত নিশীকে এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো যে, নিশীর দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। আয়াত নিশীকে ছেড়ে দিয়ে স্টাডি রুমে চলে গেলো। আর নিশী হাসি হাসি মুখ করে ঘুমিয়ে পরলো। আর ভাবতে লাগলো কালকের কথা। কাল কি সারপ্রাইজ আছে? আয়াত কাল ওকে কতটা কাছে টেনে নিবে। এসব সুন্দর সুন্দর ভাবনা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো।
স্টাডি রুমে এসে আয়াত নিজের হাতে থাকা সেই তাবিজটা ড্রয়ার থেকে বের করে হাতে নিয়ে রহস্যময়ী একটা হাসি দিয়ে তাবিজটাকে জানালা দিয়ে ছুরে বাইরে ফেলে দেয়। আর ভাবে এটা যখন আমি নিজের শরীরের সাথে রাখি তখন তোমাকে স্বপ্নে দেখতে পাই না। তোমার অনুভুতি গুলো পাই না। রোজ তুমি আমার স্বপ্নে আসো। তোমার ভালোবাসার পরশ গুলো আমি অনুভব করতে পারি। জানি তুমি নেই তবুও তুমি আছো! তোমার অনুভুতিগুলো আমি বুঝতে পারি। তোমার উপস্থিতি আমি টের পাই। যখন থেকে মা তাবিজটা দিলো তখন থেকে তুমি আমার স্বপ্নে দূরে বসে কান্না করতে আমার কাছে আসতে না । তাইতো নিজ থেকে ওটা খুলে রাখছি। জানি তো তুমি কখনো আমার কোন ক্ষতি করবে না। তুমি শুধু আমায় ভালোবাসবে। এও জানি তুমি থাকো আর না থাকো তোমার অনুভুতি গুলো আমার সাথে মিশে থাকবে।
পরের দিন সকালে
আয়াত নিশীকে নিয়ে সুন্দর একটি জায়গায় যায়। সারাদিন ঘোরা ফেরা করে। সন্ধ্যার দিকে আয়াত নিশীকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবার সময় যে রাস্তা দিয়ে যায় সে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বুক কেঁপে ওঠে নিশীর। ও আয়াতকে বলে
নিশীঃ আমরা কোথায় যাচ্ছি আয়াত?
আয়াতঃ আরে ভয় পেয়ো না। তোমাকে মেরে ফেলবো না। এই তো পৌছে গেছি।
হঠাৎ করে নিশীর মাথার পিছনটায় কিসের যেনো আঘাত লাগলো। জ্ঞান হারিয়ে ফেললো নিশী। যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে চেয়ারের সাথে বাঁধা পায়। সারা ঘরময় অন্ধকার। শুধু টেবিলের উপর একটা মোমবাতি জ্বলছে। বুঝতে পারছে না নিশী কোথায়? মাথার পিছনটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। কিন্তু নিশীর হাত পা শক্ত করে বাঁধার ফলে নড়তে পারছে না। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে চেয়ারে আয়াত হাসি হাসি মুখ করে বসে আছে নিশীর দিকে তাকিয়ে । নিশীর জ্ঞান ফিরতেই নিশীকে বললো
আয়াতঃ যাক ম্যাডামের ঘুম ভাঙলো। আমি ভাবছি সারা রাতই ঘুমিয়ে পার করবে!
নিশীঃ এসব কি হচ্ছে আয়াত? আমাকে বেঁধে রেখেছো কেন?
আয়াতঃ সারপ্রাইজ ডিয়ার সারপ্রাইজ! আজ থেকে না আমরা নতুন জীবন শুরু করবো তো তার জন্য একটু কষ্ট করবে না?
নিশীঃ ভিত চোখে তাকিয়ে মমম মানে?
আয়াতঃ প্রথমে তুমি ঘরে থাকা তনয়ার ছবি, কাপড় সমস্ত স্মৃতি পোড়ালে, তারপর পর পর ওর দুটো বই পোড়ালে? কি ভাবছিলে আমি কিছু দেখিনি? আচ্ছা তুমি চেয়েছিলে আমি যাতে বইটা না পড়ি তাই তো। বইয়ের শেষটা যাতে না জানি? কিন্তু ডিয়ার বইতে যে গল্পটা আছে সে গল্পে তো আয়াত তনয়ার জীবন শর্টকাট করে দেয়া বিস্তারিত আমার কাছ থেকে শুনবে? ওয়েট ওয়েট তুমি জানতে চেয়েছিলে না বইটা কত দূর পড়েছি? তারপর কি হলো জানতে চেয়েছিলে তাইতো,? তবে আমি বলছি ঠিক যেভাবে বইতে লেখা সেভাবে! মাঝখানে ভুল হলে তুমি বলো কিন্তু হ্যা—— বাদ দেও তার থেকে বরং বইটা পড়েই শোই। তারপর সেই বইটার আরেকটা কপি বের করে গল্পটা পড়তে শুরু করলো।
——–খুব সুন্দর ভাবে আয়াত আর আমার বিয়ে হয়ে গেলো। আমার বান্ধবীরা আমাকে আয়াতের রুমে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো। অজানা এক ভয় আর ভালোবাসার শিহরনে মনটা কাঁপছে। কিছুক্ষন পর আয়াত আসলো। আমি ওকে সালাম করতে নামতে নিবো এমন সময় আয়াত বললো
আয়াতঃ দাড়াও!
তনয়াঃ কেন?
আয়াতঃ তুমি সালাম করবে আমি তোমায় ধরে বলবো তোমার স্থান পায়ে নয় আমার বুকে এ ধরনের বাংলা ছবির শুটিং করা লাগবে না। তুমি বারাবরই আমার বুকে থাকবে আর তোমার স্থান সবসময় আমার সমান থাকবে। বুঝলা!
তনয়াঃ হুমমম বুঝলাম। কিন্তু সালাম করাটাওতো স্বামীর প্রতি ভালোবাসার একটা অংশ।
আয়াতঃ জ্বি না। একে অপরকে সম্মান করাটা ভালোবাসার সব থেকে বড় মূল মন্ত্র। আর আমি তোমাকে খুব সম্মান করি।
তনয়াঃ সেটাতো আমিও করি। কিন্তু—–
আয়াতঃ হুসসসস। (তনয়ার ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে) আর কোন বাজে কথা না। এতটা জিনিস দেখবে?
তনয়াঃ হুমম।
আয়াতঃ ওয়েট আগে লাইটটা বন্ধ করে আসি।
তনয়াঃ (লজ্জায় লাল হয়ে) যাহ পাজি!
আয়াতঃ এতে পাজির কি হলো? তুমি যা ভাবছো তা কিন্তু এখন না কিছুক্ষন পর। সেটা বলে তনয়াকে একটা চোখ মারলো।
আয়াত রুমের লাইট অফ করে ব্যাগ থেকে একটা কাচের জার বের করলো। জারটা আলোয় পরিপূর্ন। আয়াত জারের মুখটা খুলে দিতেই শতশত জোনাকি পোকায় পুরো ঘরটা ভরে গেলো। পুরো ঘরটা জোনাকি পোকার আলোয় ঝলমল করছে। তনয়া শক্ত করে আয়াতকে জড়িয়ে ধরে বললো।
তনয়াঃ তোমার মনে আছে?
আয়াতঃ কেন থাকবে না! তুমিই তো বলেছিলে যাকে ভালোবাসো তার সাথে একদিন এমন ভাবে থাকতে চাও। জোনাকি পোকার আলোয় সাজানো ঘরে!
তনয়াঃ হ্যা। কিন্তু এত জোনাকি পোকা কোথায় পেলে?
আয়াতঃ জোগার করতে কষ্ট হয়েছে বাট করে ফেলছি। আফটারঅল আমার কিউট বউটা বলছে না শুনে থাকতে পারি!
তনয়ার চোখ থেকে মুক্তর দানার মত টুপটাপ করে জল ঝড়ছে। আর বলছে
তনয়াঃ কখনো ভাবিনি কেউ আমার স্বপ্নগুলো নিয়ে এতটা গভীর ভাবে ভাববে।
আয়াতঃ (জলগুলো মুছে দিয়ে) তোমার সব স্বপ্ন গুলো নিয়ে আমি গভীর ভাবে ভাববো। তোমার স্বপ্নে নিজেকে হারিয়ে বার বার তোমায় ভালোবাসবো।
জীবনের প্রতিটা সময় প্রতিটা মুহূর্ত তোমার সাথে আর তোমার জন্য কাটাবো। প্রমিজ। কারন তোমায় খুব বেশি ভালোবাসি তনয়া। খুব বেশি।
আয়াত বইটা বন্ধ করে অঝোড় ধারায় কাঁদছে আর জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বলছে
আয়াতঃ খুব ভালোবাসি তোমায় তনয়া! খুব ভালোবাসি! আর সারা জীবন বাসবো।
কেন নিশী কেন? তুমি আমার জীবনে তনয়া জায়গা নেয়ার চেষ্টা করছো? কেন? চিৎকার করে?
আয়াতের চিৎকার শুনে নিশী ভয়ে কেঁপে উঠলো।
চলবে———
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন