সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 20

হসপিটালে এসেই এই কেবিনে ওই কেবিনে ছুটে বেড়াচ্ছি আমি।উনি রিসিপশনের থেকে কেবিন নাম্বার শুনে আমার পিছনে ছুটছে।আমাকে এসে শক্ত করে টেনে ধরলেন উনি।আমার হাত ধরে নিজের সামনে এনে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে বললেন আমায় শান্ত হতে।আমি টলমল চোখে উনার শার্টের কলারটা চেপে ধরলাম।ভাঙা ভাঙা কন্ঠস্বরে আস্তে করে বললাম, আমার বোনটা কি বেঁচে আছে? উনি নিশ্চুপ। আমার ভেতরের ভয়টা আরও গভীর হচ্ছে।উনার শার্টের কলারটা হাতের আঙুলে পেঁচিয়ে শক্ত করে টেনে ধরে বললাম, বলুন না আমার বোনটা কি বেঁচে আছে? কোনো উত্তর নেয়। উনার বুকে নিজের কপালটা ঠেকালাম আমি।শব্দ করে কেঁদে উঠে বললাম, আমার সহজ সরল বোনটার সাথে এমনটা কেন হলো আহান? উনি আমার মাথায় হাত রাখলেন।আমাকে শান্ত হতে বললেন।নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আমাকে নিয়ে এলেন বোনের কেবিনের সামনে।
🍁
কেবিনের সামনের বেঞ্চটাতে বসে আছে রুহান।রুহানকে দেখা মাত্র আমার চোখ উল্টে গেলো।ভয়ে উনার শার্টের হাতাটা আরও শক্ত করে খামচে ধরলাম আমি।কিছু ভেবে উঠার আগে এক চিৎকার দিয়ে উঠলাম।আমার সামনে পুরো পৃথিবীতে আধার নেমে এলো।সব কিছু ঝাপসা দেখলাম চোখে।ছোট বোন মাইশার হাসিমাখা মুখটা ভেসে আসলো চোখের সামনে।মাথাটা এক হাতে চেপে ধরে অন্যহাতে উনার কাঁধে ভর দিয়ে দাড়াবার চেস্টা করলাম।কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।অচেতন অবস্থায় ঢুলে পড়লাম মাটিতে।তারপর আর কিছু মনে নেয় আমার।যখন চোখ খুললাম দেখলাম উনি আমার বেডের পাশে বসে আছে।আমার শরীরে হসপিটালের পেশেন্টের ড্রেস।বাম হাতে স্যালাইন চলছে।রুমের ভেতরে আর কেউ নেয়।আমি উঠে বসার চেস্টা করলাম।উনি দেখে আমাকে ধরে উঠিয়ে বালিশে পিট ঠেকিয়ে বসালেন।
-এখন কেমন লাগছে তোমার?
-আমার বোন কেমন আছে আহান?
উনার মুখে আমার প্রশ্নের কোনো জবাব নেয়।আমি চিৎকার করে উঠলাম,
-বলুন আমার বোন কেমন আছে? ওকি বেঁচে আছে?…বলুন?
কোনো উত্তর নেয়। আমি পারছি না উনার এই চুপ করে থাকাটা মেনে নিতে। আমাকে আমার বোনের কাছে যেতে হবে।এক্ষুনি,,, হাতের স্যালাইনটা টেনে খুলে ফেললাম আমি।উনি শান্ত মেজাজে বললেন আমাকে,
-কি করছো কি আরু? প্লিজ শান্ত হও।
বেড থেকে পা’দুটি নিচে নামিয়ে উনার শার্টের কলারটা টেনে ধরে বললাম,
-আমার বোরখা কোথায় আহান? বলুন আমার বোরখা খুলে কোথায় রেখেছেন?
উনি আমায় ইশারায় দেখালে আমি আর এক মুহূর্তও দেরি না করে বোরখা পরে ছুটতে লাগলাম বোনের কেবিনের দিকে।রুহান এখনো সেই বেঞ্চটাতেই বসে আছে।চোখে মুখে কান্নার স্পষ্ট ছাপ।আমি ছুটে এসে রুহানের সামনে দাড়ালাম।রুহানের কাছে জানতে চাইলাম আমার বোন কি বেঁচে আছে রুহান? আমার কথায় নিস্তব্ধ রুহান যেন নড়েচড়ে উঠলেন। চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে এবার হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলেন বাচ্চাদের মতোন।আমার আর বুঝতে বাকি নেয় রুহানের কান্নার ইঙ্গিত। বেঁচে নেয় তাই না? মেরে দিলো? আমার বোনটাকে ওরা মেরে ফেললো? আপনি না আমার বোনকে ভালোবাসেন রুহান? ওকে না ভালোবেসে বিয়ে করলেন? তাহলে পারলেন না ওকে একটু বাচিয়ে রাখতে?
উনি এসে পেছনের থেকে আমার কাঁধ ধরে দাড়ালেন।আমাকে টেনে রুহানের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে আনতে চাইলেন।আমাকে টেনে বললেন,
-এখান থেকে চলো আরু।রুহানের মনের অবস্থা এখন ভালো না।ওর সামনে এসব বলো না।ওকে এখন একটু একা থাকতে দাও।
হুট করে একজন পুলিশ এসে রুহানের সামনে দাড়ালো।আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পুলিশের মুখের দিকে তাকালাম।পুলিশ চোখদুটো নিচু করে আছে।নিচু গলার কাঁপা কাঁপা কন্ঠস্বরে আস্তে করে বলছে রুহানকে,
-ছেলেগুলোকে খুঁজে পেলাম না স্যার।
রুহান উঠে দাড়িয়ে দেয়ালের সাথে নিজের হাতটায় আঘাত করতে লাগলেন।কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
-কেন এমন হলো? কেন? আমার মাইশার শরীরটা নিয়ে খেললো ওই জানোয়াড় গুলো। আমি কিছুই করতে পারলাম না।সব দোষ আমার! আমি আমার মাইশার মুখটাও দেখতে পারছি না।এক্সিডেন্টে থেতলে গিয়েছে ওর মুখ।এখন ওর শরীরটা নিয়ে কাটাছেঁড়া হচ্ছে।সব আমার জন্য! সব আমার জন্য!
উনি গিয়ে রুহানকে টেনে ধরলেন। ডক্টর, নার্সকে ডেকে বললেন রুহানের হাতে ড্রেসিং করে দিতে।রুহানকে শান্ত করতে বললেন,
-এমন ভাবে ভেঙে পরো না ভাই।
-ভেঙে পরবো না? আমার মাইশার সাথে ওরা এমনটা কেন করলো? জানো আহান, আমি যখন রাস্তায় ভীর ঠেলে বেড়িয়ে আসলাম তখন পাশের দোকানে টিভিতে নিউজটা দেখলাম।একটা মেয়ে নগ্ন শরীরে এক্সিডেন্টে রাস্তায় পরে ছটফট করছে।মেয়েটির সমস্ত শরীর থেতলে গেছে। শুধু এক্সিডেন্টের জায়গাটাতে একটা কানের দুল পড়ে ছিলো।আর কিছু পাওয়া যায় নি সেখানে।ওই দুলটা নিউজের হেডলাইনে বারবার দেখাচ্ছিলো।আমার মাইশার দুল ওটা।আমি হসপিটালে ছুটে আসলাম।মাইশার লাশটা তখন ও.টি থেকে সাদা কাপড়ে ঢেকে বেড়িয়ে নিয়ে আসলো।ওকে মর্গে রাখতে চেয়েছিলো এরা।আমি রাখতে দেই নি।আমার মাইশাকে এই কেবিনে নিয়ে এসেছি।এরা এখন কাটা ছেঁড়া করছে আমার মাইশার লাশটাকে।
সবার আগে আমার গল্প পেতে চাইলে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
রুহান কাঁদছে। ওর কান্নায় হসপিটালের ডক্টর, নার্সের চোখেও পানি চলে এসেছে। রকস্টার রুহান খান।যার একটা কনসার্টের টিকিটের জন্য বড় বড় সেলিব্রেটিরাও মরিয়া হয়ে পরে সে আজ একটা সাধারণ মেয়ের জন্য কাঁদছে।
🍁
রুহানের মা, রিমি হসপিটালে এসে রুহানকে এমন অবস্থায় দেখে অবাক হয়।ছেলেকে আজ প্রথমবার এভাবে কাঁদতে দেখছে মা।রিমিরও খুব কস্ট হচ্ছে তার ভাইকে কাঁদতে দেখে।দুজনে গিয়ে রুহানের সামনে দাড়ায়। যদিও মাইশাকে তাদের পছন্দ ছিলো না।কিন্তু মৃত্যুর কথা শুনে তাদেরও মায়া লাগছে মাইশার জন্য। দুজনকে দেখে চোখ মুখ মুছে উঠে দাড়ালেন রুহান।আজ বড্ড অপরাধি মনে হচ্ছে মা-বোনকে তার।কস্টে, ঘৃণায় মায়ের আলতো হাতটা নিজের গাল স্পর্শ করার আগেই মাকে সজোড়ে ধাক্কা দিয়ে দূর সরিয়ে দেয় রুহান। তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে লাগে সে।রিমি ধরে বসে।অসহায় দৃষ্টিতে দুজনেই তাকিয়ে থাকে রুহানের দিকে।
🍁
আমার মা চিৎকার করতে করতে হসপিটালে আসে।আমাদের দেখে ছুটে এসে আমাকে ঝাপটে ধরে কাঁদতে থাকে। আমার কলিজার টুকরা, নয়নের মণি, পরাণটা এভাবে চলে গেলো? আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো? আমার ভেতরটা খা খা করছে আরু।শূন্য হয়ে গেলো আমার বুক।মারে ও আমার মা। এভাবে চলে গেলি তুই আমায় ছেড়ে? ও আরুরে আমার পরাণটা বের হয়ে গেলো। কেউ আমার পরাণটাকে আমার কাছে এনে দে।আমি যে আর পারছি না শ্বাস নিতে।কস্ট হচ্ছে আমার। আমার কলিজার টুকরাকে কাছে এনে দে।
মাকে আমি কি বলে শান্তণা দেবো? আমার নিজেরই যে বড্ড কস্ট হচ্ছে আজ। আমার বোনটা এভাবে চলে গেলো? এতো নৃশংস ভাবে হত্যা হলো ওর? মাথাটা আমার ভার ভার লাগছে।চোখের কণিষে ব্যাথা করছে কাঁদতে পারছি না আর। উনি আমার কাঁধে হাতের ভর দিয়ে দাড়ালেন যেন আমি পরে না যায়। আমাকে কিছু বলতে চাইলেন উনি। তার আগে আমার মাথাটা ঘুরে উঠলো।আমি পরে যেতে নিলে উনার শক্ত হাতের স্পর্শে স্বাভাবিক হয়ে ফিরলাম আমি।ঘোলাটে ঘোর কাটিয়ে উঠে চোখের সামনের সব ঝাপসা আধার স্পষ্টতায় ভরে উঠলো।সোজা হয়ে দাড়ালাম আমি। মাকে ধরে শান্তণা দিতে বললাম,
-মা কেঁদো না এভাবে।তুমি কাঁদলে আল্লাহ নারাজ হবেন।বোনের আত্নার কস্ট হবে।বোনকে আজাবের ফেরেস্তারা প্রশ্ন করবে, কি নিয়ে এসেছিস তুই দুনিয়া থেকে যার মায়ায় তোর আপন জনেরা কাঁদছে? চোখের পানি মুছে নাও মা।মাটিতে গড়িয়ে পরতে দিও না।দোয়া করো।জিকির করো।আল্লাহর কাছে তোমার নিষ্পাপ মেয়ের আত্নার মাগফিরাত কামনা করও।
চলবে,,,
.