সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 21

উনি আমার হাতদুটো শক্ত করে ধরে আছেন।তিনবার মাথা ঘুরে পরে যাওয়ায় উনি আমাকে আর এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল হতে দিচ্ছেন না। বিছানার উপরে জোড় করে বসিয়ে রেখেছেন আমায়। বোনের বিধস্ত লাশটা আমাকে দেখতে দেবেন না উনি।দেখবো আমি আমার বোনটাকে প্লিজ যেতে দিন? অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার মুখের দিকে।উনি কিছুই বলছেন না।হাত দুটো দিয়ে শক্ত করে বিছানার সাথে চেপে ধরে রেখেছেন আমায়।আমি এবার দাপাদাপি ঝাঁপাঝাপি শুরু করেছি বোনের কাছে যাবো বলে।বোনকে শেষবারের মতোন একবার দেখবো বলে।কিন্তু কিছুতেই পারছি না উনার থেকে নিজেকে ছাড়াতে।উনার সাথে দস্তাদস্তি করে এখন ক্লান্ত আমি।শরীরটায় আর শক্তি নেয় আমার।ক্লান্ত শরীরে বালিশে মাথা ঠেকিয়ে নিস্তেজ হয়ে পরলাম।আস্তে করে চোখ বুজলে কিছুক্ষণের মধ্যে গোটা রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিলো আমার চোখের পাতায়।
🍁
বাইরে কান্নাকাটির আওয়াজ।পাশের রুমে মা কাঁদছে আর পাগলের মতোন বোনকে ডাকছে। বোনকে রাখা হয়েছে বাড়ির আঙিনায় খাটলিতে শুইয়ে মুখের উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে।নিচের গ্লাসে আগরবাতি জ্বলছে। মাকে কিছু প্রতিবেশী আন্টিরা শান্ত হতে বলছেন।রুহান বোনের লাশের খাটলিটার পায়ার কাছে বসে আছেন।আর ছটফটিয়ে কাঁদছেন।বারান্দায় পাড়ার কিছু ভাবিরা এসে কোরআন তেলওয়াত করছে কেউ বা তাসবি হাতে কলেমা জিকির করছে।আমার ঘুম ভাঙলে আমি ধর ফরিয়ে উঠে বসলাম।সামনে তাকিয়ে দেখলাম দরজার সাথে কাঁধ ঠেকিয়ে বাইরের দিকে মুখ করে চেয়ে আছেন উনি।আমি চিৎকার করে উঠলে উনি দরজাটা বন্ধ করে ছুটে এলেন আমার কাছে। আমাকে এসে আবার ধরলেন বিছানার সাথে চেপে।প্লিজ ছাড়ুন! আমি যাবো আমার বোনের কাছে।ওকে একটাবার দেখবো। উনি আমার দুই বাহু শক্ত করে ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-পাগলামি করো না আরু।প্লিজ নিজেকে শান্ত করো।দেখতে পারবে না মাইশাকে।এক্সিডেন্ট ওর সমস্ত শরীর ভয়ংকর ভাবে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে।থেতলে গেছে ওর মুখটা।ভয় পাবে তুমি। বোঝার চেস্টা করো।
আমি উনার কোন কথায় শুনলাম না।উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। বিছানার উপর থেকে ওরনাটা টেনে মাথায় জড়ালাম। তারপর মুখটা ঢেকে ছুটলাম বোনের লাশের কাছে।সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
🍁
বোনের লাশের পাশে বসে কাঁদছি।চোখের পানি মাটিতে গড়িয়ে পরার আগেই মুছে নিচ্ছি। বোনকে ঝাকিয়ে বলছি, ওঠ না মাইশা।একটু দেখ তোর জন্য আজ কত মানুষ কাঁদছে। এভাবে চলে যাবি তুই আমাদের ছেড়ে? উনি এসে আমার কাঁধ ধরে উঠিয়ে দাড় করিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।আমাকে বোঝাচ্ছেন এমনটা করো না।মাইশা আর আসবে না।সেটা তো আমিও জানি।মাইশা আর আসবে না।কখনো আমায় আপু বলে ডাকবে না।তবুও আমার যে খুব কস্ট হচ্ছে।বিশ্বাস হচ্ছে না আমার বোনটা এইভাবে চলে যাবে।প্লিজ আহান আমার বোনটার কাছে আর একটু সময় থাকতে দিন।দেখুন আমি ভয় পাচ্ছি না।প্লিজ।
উনি আমায় ছেড়ে দিলে আমি বোনের পাশে এসে বসলাম।বোনের খাটলিটার সাথে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগলাম।আমার মাথার উপর বোনের হাতের স্পর্শ পাওয়ায় মাথাটা তুলে দেখলাম বোনের হাতটা কাফনের কাপড় থেকে বেড়িয়ে এসেছে।হাতটা আমি কাফনের কাপড়ের মধ্যে ঢুকাতে যাবো এমন সময় খেয়াল করলাম হাতের পিঠে অনেক বড়সড় গোলাকৃতির একটা জটলা।
🍁
মানুষের ভীর জমে উঠেছে।ঈমাম সাহেবও চলে এসেছে।উনি এসে আমাকে ধরে উঠতে বললেন, চলো মাইশাকে এখন দাফনে নেওয়া হবে।আমি চোখ মুছে উনাকে ধরে বললাম, ওও আমার বোন না আহান! আমার কথাটা যেন উনি বিশ্বাস করলেন না।হ্যাঁ ও তোমার বোন না এবার রুমে চলো।আমাকে টানতে লাগলেন উনি রুমের দিকে।আমি হেঁচকা টানে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম উনার থেকে।চিৎকার করে বললাম, আমি সত্যি বলছি আহান আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না? ও আমার বোন না।আমার চিৎকারে সকলে আমার দিকে তাকালেন।পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন, বোনকে হারিয়ে মেয়েটা কি যে বকছে আজ।আমি তার কথায় পাত্তা না দিয়ে আবারও বললাম, আমার বোনের হাতে কোনো জট নেই আহান! উনি আমার দিকে তাকালেন, আমি আঙুল দিয়ে লাশটার দিকে ইশারা করে দেখালাম।সকলের উদ্দেশ্যে বললাম। এই লাশটার হাতে একটা জট দেখেছি আমি। আমার বোনের হাতে কোনো জট নেই।এই লাশটা আমার বোনের নয় অন্য কারও।আমার কথাটা শুনে সকলে অবাক। রুহান কান্না থামিয়ে আমার দিকে তাকায়।লাশের খাটলিটা উঠানো হয়েছে রুহান চিৎকার করে থামতে বলে সবাইকে। লাশটাকে নিচে নামাতে বলে।লাশটাকে নিচে নামালে রুহান পাগলের মতোন হাটু গেড়ে লাশটার কাছে ছুটে যায়। বাম হাতটাতে খুঁজে কোনো জট না পেয়ে ভেঙে পরে রুহান। হাউ মাউ করে আবারও কান্না শুরু করে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে ঘুরে এসে ডান হাতটা কাফনের কাপড় উঠিয়ে বের করে।
🍁
রুহান নিস্তব্ধ। ওর কান্নার ভাষাও হারিয়ে গেছে। ছুটে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলছে, সত্যিই কি আমার মাইশার হাতে কোনো জটলা ছিলো না? আমি উত্তরে না বললে রুহান সোজা হয়ে দাড়ায়। হালকা ঠোঁট কাঁপিয়ে বলে তাহলে আমার মাইশা মরে নি! ও বেঁচে আছে! রুহানের মুখ থেকে কথাটা বের হতেই মিডিয়া ছুটে আসে রুহানের কাছে।এতোক্ষণ দূর থেকে নিউজ বানাচ্ছিলো মিডিয়া।এখন কাছে এসে একটার পর একটা প্রশ্ন করে চলেছে রুহানকে। আপনার স্ত্রী সত্যি কি বেঁচে আছে? আপনি কি শিউর? আমাদের যানা দরকার! প্লিজ বলুন?
🍁
উনি চোখের ইশারায় উনার গার্ডগুলোকে এগিয়ে আসতে বললেন।রুহানের মনের অবস্থা চিন্তা করে গার্ডদের বললেন রুহানের থেকে মিডিয়াকে দূরে সরাতে।
🍁
রুহানের মা, বোন ছুটে আসলেন রুহানের কাছে।রুহানকে তার মা কান্নাজড়িত কন্ঠস্বরে বললেন, বাবা ক্ষমা করে দে আমাকে।আমি সত্যিই ভুল করে ফেলেছি।টাকা, পয়সা, অর্থ, সম্পদ আপনজনদের থেকে বেশি বড় না।তুই বৌমাকে এতোটা ভালোবাসবি আমি জানতাম না।আমার সাথে কথা বল বাবা।আমি আর এমনটা করবো না।রুহান কোনো কথা না বলেই তার গার্ডদের নিয়ে মাইশাকে খুঁজতে বেড়িয়ে পরেন।উনি ফোন করে পুলিশকে বলে দেন মাইশাকে খুঁজতে।মাইশা বেঁচে আছে।
🍁
মা এখনো কেঁদে চলেছে তার আদরের মেয়েটা বেঁচে থাকলেও গেলও কোথায় সেটা ভেবে।আমি মাকে বুঝিয়ে খাইয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়েছি।মাথাটা ব্যাথায় চিড়ে যাচ্ছে আমার।শ্বাশুড়ি মা এসে বললেন আমি ওবাড়িতে যাচ্ছি আরু তুই তোর মায়ের কাছে এবাড়িই কিছুদিন থাক। মাইশার খবর পাওয়া পর্যন্ত তোর মাকে সামলানো খুব প্রয়োজন।আমি মাথা নাড়িয়ে তার কথায় হ্যাঁ সম্মতি জানালাম।দুই তিনটা গার্ড আর তিন চারটা সার্ভেন্ট রেখে শ্বাশুড়ি মা চলে গেলেন।সার্ভেন্ট খাবার এনে আমাকে ডাকতে লাগলো।মাথার ব্যাথায় শক্ত করে মাথাটা চেপে ধরে উঠে বসলাম আমি।
চলবে,,,,