সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 19
মাইশার গালে পরলো এক চর।মাইশা আচমকা এমন চর পরায় গালে হাত দিয়ে শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নাক মুখ ফুলছে মাইশার।নাকের ডগায় লাল বর্ণ ধারণ করেছে।যেন এখনই কেঁদে দেবে।মাইশার খুব করে ইচ্ছা করছে কাঁদতে। কিন্তু কাঁদছে না। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে ওর চোখ দুটি অন্য কাউকে খুঁজছে।মনে মনে ভাবছে, কোথায় গেলো আমার স্বামীটা?
-এই মিডিলক্লাস মেয়ে? বল কোথা থেকে এসেছিস? কোন সমাজে তোর বসবাস? আমার ছেলের মতো রকস্টার।যাকে সাড়া দুনিয়া চায় সে তোকে বিয়ে করেছে? তোর মতোন মেয়েকে? যে কিনা খাবার টেবিলে বসে আমাদের সাথে খাওয়ার যোগ্যতা রাখে না।রাইশাকে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে কথা গুলো বলল তার শ্বাশুড়ি।
-ছিঃ মা দুনিয়ায় কি আর কোনো মেয়ে ছিলো না? ভাইয়া শেষে কিনা এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করলো? সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না মা।পারবে না উঁচু সমাজে একে নিয়ে দাড়াতে।
-আপনারা এমন কেন করছেন? কি করেছি আমি? কাঁদো কাঁদো গলার কন্ঠস্বরে বলল মাইশা।
-কি করেছো বুঝতে পারছো না? লোভী ঠক মেয়ে কোথাকার। আমার ভাইটাকে কিভাবে ফাসিয়েছো তুমি?
-এই মেয়ে তাকা আমার দিকে।বল কোথা থেকে এসেছিস? কি তোর বংশ পরিচয়? কোথায় তোর বাড়ি? মাইশাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আরও রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলল তার শ্বাশুড়ি।
-বস্তিতে বাড়ি। আমার বাবা-মা কখনো এভাবে আমাকে বকে নি।আপনারা এতো খারাপ ভাবে কেন কথা বলছেন আমার সাথে? আমার অপরাধ কি?
-শোনো মা শোনো।আবার বলে অপরাধ কি? ধরে আচ্ছা করে দু’চারটে কষিয়ে দাও চর।বেয়াদ্দপ মেয়ে। তোমার মুখে মুখে কথা বলছে দেখও।যেন লাট সাহেবের বেটি। নবাব নন্দিনী। এসেছে যেন কোনো রাজপ্রসাদ থেকে এমন ভাবে কথা বলছে।আশ্চর্য! এখন আমি আমার ফ্রেন্ডের সামনে মুখ কিভাবে দেখাবো? ওদের আমি বলে ফেলেছি আমার ভাই ব্রেস্ট কাউকে বিয়ে করেছে।ছিঃ এই মেয়ে আমার ভাইয়ের বউ।
পিছনের থেকে কেউ রিমি বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে।মাইশা ঘুরে তাকিয়ে দেখে রুহান।মাইশার যে খুব কস্ট হচ্ছে এসব কথা শুনে।মাইশা পারছে না আর কিছু শুনতে। ছুটে গিয়ে রুহানকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আর কাঁদতে থাকে।হিচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-আমাকে আপনি বাড়িতে দিয়ে আসবেন? আমার খুব কস্ট হচ্ছে এসব শুনতে।আপনি আমায় কেন বিয়ে করেছিলেন? বলুন না আমি কি আপনার যোগ্য না? আমাকে আপনি আপনার থেকে দূরে সরিয়ে দেবেন? বলুন? রুহানের শার্ট খামচে ধরে রুহানকে বলে মাইশা।
-দেখও মা দেখও কি নাটক করে মেয়েটা।এভাবেই হয়তো ফাসিয়েছে ভাইয়াকে।
রুহান রাগি লুকে মাইশাকে সরিয়ে দিয়ে এগিয়ে এসে রিমির সামনে দাড়ায়।রিমির গালে কষিয়ে দেয় এক চর।চরটা এতো জোড়ে ছিলো যে মাইশাও কেঁপে ওঠে সেই চরের শব্দে।রুহান রিমির ডান কাঁধ শক্ত করে ধরে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে বলে,
-তোর সাহস কি করে হয় আমার মাইশার সাথে এভাবে কথা বলার? ও আমাকে বিয়ে করতে চাইনি।আমি ওকে বিয়ে করেছি।ভালোবাসি ওকে আমি তাই।এতোটা ভালোবাসি যদি কেউ আমাকে বলে ওর জন্য নিজের জীবনটা দিয়ে দিতে সেটাও দিতে পারবো।
-এতো ভালোবাসা? যে নিজের বোনের গায়ে হাত তুললি তুই? এই মেয়ে খুশি হয়েছো তুমি? তোমার মতোন বস্তির মেয়ের জন্য আজ আমার ভাই আমাকে মেরেছে। কেড়ে নিয়েছো আমার ভাইকে আমার থেকে আমার মায়ের থেকে। দেখও মা দেখও। তোমার ছেলে আর তোমার নেয়। ওই বস্তির মেয়ের ভালোবাসায় বন্দি হয়ে আছে।
মাইশা আর কিছু শোনার আগেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।রুহান মাইশার পেছনে ছোটে।কিন্তু রাতের অন্ধকারে বেশি দূর যেতে পারে না রুহান।কিছুটা এগিয়ে আসলেই লোকালয়ে রুহানের ফ্যানেরা রুহানকে ঘিরে ধরে।ভীরের মধ্য রুহান দূর থেকে আবছা দেখে মাইশাকে।মাইশা ছুটছে।কোথায় যাচ্ছে ও? রুহান ভীর ঠেলে এগোতেও পারছে না।ফ্যানেরা ঘিরে ধরে রুহানের সাথে সেলফি তুলছে।অটোগ্রাফ চাচ্ছে।আর রুহান ছলছল চোখে কাছে যাবার ব্যাকুলটায় দূর থেকে মাইশাকে শুধু দেখে চলেছে।অবশেষে অন্ধকারে মিলিয়ে যায় মাইশা।
🍁
বিছানায় পা এলিয়ে দিয়ে বসে সারা রুমে আটি ছড়িয়ে আম খাচ্ছি আমি।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে উনি এসেছেন রুমে। আমার দিকে ভাবলেশহীন ভাবে চেয়ে আছেন।যেন আকাশ থেকে পড়লো।আমার পাশে এসে বসে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন আড়চোখে।আমি উনাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলাম। এঁটো আমের হাতটা ভালোভাবে চেটেপুটে অন্য একটি আম উঠালাম।আমটা উনার মুখের সামনে ধরে ঠোঁট ভাজ করে আহ্লাদী স্বরে বললাম, খাবেন? উনি মুচকি হেসে আমার ডান গালটা টেনে দিয়ে বলল, না তুমি খাও। আমি চোখ দুটো ছোট করে দাঁত দিয়ে আম ফুটো করতে করতে বললাম, আচ্ছা আহান আপনার বাবা হতে ইচ্ছে করে না? আমার কথায় যেন উনি হাসি থামিয়ে দিলো।চোখ উল্টিয়ে আমার দিকে তাকালো।মন খারাপের মতোন মুখ বানিয়ে বলল আমাকে, করে তো! কিন্তু কি আর করার আমার সন্তানের মা কে হবে? আমি ভ্রু ভাজ করে চোখ দুটো ছোট করে উনার মুখের দিকে তাকালাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি বললেন, তুমি হবে আমার সন্তানের মা? আমি কিছু বলতে যাবো উনাকে এমন সময় শ্বাশুড়ি মা এসে দরজায় নক করলো।দুজনের চোখ দরজার দিকে পরতে দেখলাম শ্বাশুড়ি মা হাঁপাচ্ছে। যেন কোথাও থেকে দৌড়ে এসেছে।উনি উঠে এগিয়ে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে মা জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলেন।তারপর একটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন, আহান! আরু….আরু!! মা ছুটে আসলেন আমার কাছে। আমার পাশে এসে বসে আমার হাতটা ধরে বললেন, টিভিতে..মাইশা..ওর অবস্থা..একটু থামলেন।আবারও দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বললেন, হসপিটালে চল আরু।
🍁
খাবারের বিল মিটিয়ে টেবিলে এসে প্যাকেটগুলো খুলে দেখলে চোখ উল্টে যায় রুহানের মার।পাশের সোফায় বসে ফোন টিপটে টিপটে মায়ের কাছে জানতে চায় রিমি, কিসের খাবার ওগুলা? রিমির কোনো উত্তর না দিয়ে রেগে প্যাকেট গুলো দূরে ছুড়ে ফেলেন তিনি।আচমকা এমন হওয়ায় রিমি ফোনের স্কীন থেকে চোখ উঠিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকায়।মুখটা রাগে ফুসসে দেখে ফ্লোরে তাকিয়ে দেখে খাবারগুলো।ভাত, আলু ভর্তা, ডাল আর ফুলকপির সবজি। যা এবাড়িতে কেউ খাই না।
-সিরিয়াসলি মা? এসব খাবার ভাই অর্ডার করেছে? আমার ভাবতেও অবাক লাগছে মা।একটা বস্তির মেয়ের জন্য এসব খাবার রেস্টুরেন্টে অর্ডার দিয়েছে রকস্টার রুহান খান।
-ওই ছোটলোকের মেয়ে।বস্তির মেয়ে।কি আছে ওর মধ্যে যে আমার ছেলে ওকে বিয়ে করেছে?এতো রাতে ছেলেটা আমার কোথায় গেলো আল্লাহ ভালো যানে।একটা গার্ডও সাথে করে নিয়ে গেলো না।না জানি কোথায় আছে! কি অবস্থায় আছে! যেভাবেই হোক ওই মেয়েকে আমার ছেলের জীবন থেকে সরাতে হবে।
-হ্যাঁ। সেটাই ভালো হবে।ভাইয়াকে ডির্ভোস দিইয়ে আমাদের শ্রেণীর কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে হবে।রকস্টার রুহান বলে কথা।ব্রেস্ট কাউকে লাগবে আমার ভাইয়ের পাশে।তখনই হবে পার্ফেক্ট জুটি।
চলবে,,,,